নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভীষণ একলা থাকা মানুষ আমি ভীষণ আমার ভেতর থাকি!

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর

জীবন জুড়ে থাকা পরাজয়, হয়েছে ম্লান চিরকাল!

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ষকের প্রেম

২০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৪৫

এইযে অল্পক্ষণ আগে আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্তটি নিয়েছি এই নিয়ে আক্ষেপ করবেনা একজনও। বরং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী 'বন্দুক যুদ্ধে শীর্ষ সন্ত্রাসী খুন' হয়েছে বলে বাহবা নেয়ার সুযোগ পাবে। আমার মৃত্যুর খবরটি আগামীকাল দেশের বহুল প্রচারিত সকল দৈনিকসমূহ যে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করবে তা মোটামুটিভাবে নিশ্চিত করেই বলা যায়। দেশের সকল মানুষ আমার মৃত্যুর খবর জানবে, অথচ কেউ একজনও কান্না করবে না! মরার মাত্র মিনিট কয়েক আগে এমন স্বাভাবিক বিষয়টা কেন আমার কাছে এতো 'অস্বাভাবিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ' হয়ে উঠলো আমি বুঝে উঠতে পারছি না!

আমি মো: আশিকুর রহমান ভুঁইয়া। কিন্তু আকিকা দিয়ে রাখা আমার এই নাম কেউ জানেনা। রাষ্ট্র আমাকে চিনে 'শীর্ষ সন্ত্রাসী রকি' বলে। একবার হাজতে গিয়ে নিজের ছবির পাশে 'আব্বাস' নামটাও দেখেছিলাম। আসলে প্রয়োজনের তাগিদে আমাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম নিতে হয়েছে। আমার নামে এখন পর্যন্ত খুনের মামলা ৯৭টি, ধর্ষণের মামলা ৫৪ টি। অথচ আমি নিজ হাতে এখন পর্যন্ত খুন করেছি মাত্র ২টি। এই দুইটি খুনও করেছি মাত্র ঘন্টা খানেক আগে। এখন পর্যন্ত মামলা হয়েছে কিনা সেই তথ্য কানে আসেনি। অথচ আমার ইচ্ছে ছিল দেশের কাছে শীর্ষসসন্ত্রাসী হলেও একজন নিষখুনা মানুষ থাকবো। কিন্তু আমি পারিনি, আমার প্রতিজ্ঞাবাক্য আমি রাখতে ব্যার্থ হয়েছি!

আমার ব্যার্থ না হয়ে উপায় ছিল না। সুমন্তীর পাশে অন্য পুরুষ ঘুমাবে, এই সত্য মেনে নেওয়া আমার পক্ষে কষ্টের ছিল। আমি যে সুমন্তীকে ভালোবাসি, সুমন্তী তা জানবে না, জানলেও গ্রহন করবেনা, এ আমার জানা ছিল। কারণ, আমি অগ্রহণযোগ্য!

সুমন্তীকে ভালোবাসি একথাটা আমি প্রথমবারের মত বুঝেছিলাম যেদিন নির্বাক সুমন্তীর ঠোটে অচামকা কাপুরুষের মত একটার পর একটা চুমু খেতে গিয়ে দেখি নিশ্চুপ সুমন্তীর চোখে জল! দুচোখ দিয়ে অঝড়ে জল বেয়ে বিছানায় পড়ছে। তবুও কিচ্ছু বলছেনা, চিৎকার করছে না, বাধা দিচ্ছেনা। শুধু কষ্টের জলটুকু স্থান পরিবর্তন করছে চোখ থেকে বিছানায় চাদর পর্যন্ত ।

মগবাজার এলাকায় যে ছোট্ট বাসাটাতে অস্থায়ী আস্তানা গড়েছিলাম সেইখানেই সুমন্তীর সাথে আমার প্রথম দেখা। আমি টিস্টলে চা খাচ্ছি, সুমন্তী ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরছে। বাসার সামনে রিক্সা থেকে নেমে রিক্সাওয়ালার সাথে ভাড়া নিয়ে তর্ক করার এক মুহুর্তে আমি গিয়ে রিক্সাওয়ালাকে দিলাম কসায়ে এক থাপ্পড়। আমার সাঙ্গ-পাঙ্গ গুলা এ দৃশ্য দেখে রিক্সাওয়ালাকে পিটিয়ে প্রায় আধমরা করে ফেলেছে। সুমন্তী এ দৃশ্য সহ্য করতে পারেনি, সরাসরি আমার সামনে এসে সজোরে আমাকে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বললো-
'আপনাকে বলেছি আমার এ উপকার করতে!? অভস্য, ইতর! যান বাড়ি যান, বাড়ি যেয়ে মাস্তানি করবেন!'

কোন মেয়ের কাছ থেকে এই ধরনের সাহসীপূর্ন আচরন এইটাই ছিল আমার জীবনে প্রথম। আমাকে থাপ্পড় দিয়ে সুমন্তী সস্তিতে ছিল কিনা জানিনা, কিন্তু ভয় পেয়েছিল পুরো এলাকা। কারণ ওরা জানত সুমন্তী একটু পরেই মারা পরবে।

জীবনের প্রথমবারের মত এই তিক্ত অভিজ্ঞতা আমি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারলাম না। ক্রোধে বারবার ফেটে উঠছিলাম যেন। এই ক্রোধ কমানোর জন্যে সন্ধ্যায় কয়েক স্টিক গাঁজা ধরিয়ে বুদ হয়ে আছি রুমে। হটাত দরজায় নক-
'কে?'
'ভাই আমি মির্জা'
'কি বলবি বল?'
'বাই, মালডারে ধৈরা নিয়াইছি, পাশের রুমে আছে যান'
'কোন মাল?'
'বাই সকালে যেইডা আফনেরে চড় মারসে'
'আইচ্ছা, যা তুই, আমি দেখতাসি'


আমার নামে ধর্ষন মামলা ৫৪টা হলেও এই জীবনে কোন মেয়েকে জোর করে কিছু করিনি। কিন্তু আমার ছোটভাই গুলা আমার নাম করে ইচ্ছামত ধর্ষন করেছে যাকে খুশি। মামলা মাত্র ৫৪ টা হলেও এই সংখ্যা যে কত ব্যাপক তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু সুমন্তীর প্রতি আমার তীব্র ক্রোধ। ওকে সামনে পেলে কাচা খেয়ে ফেলবো- এমন ভাবনা আমার সেই দুপুর থেকেই কাজ করেছে।

দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই দেখি সুমন্তী পিছন দিক ফিরে ঠাই দাড়িয়ে আছে। আমি হাতের বোতলটা ফ্লোরে ফেলে আমার আগমনী বার্তা প্রকাশ করলাম। তাও সুমন্তী কেপে উঠলো না, একদম ভয় পেলোনা। একটু পর আপনা আপনিই নিজের জামা খোলা শুরু করলো। ওড়না থেকে শুরু করে ভিতরের অন্তর্বাস পর্যন্ত। একটা পূর্ণ নগ্ন মেয়ে আমার সামনে দাড়ানো যাকে এখনি আমি ধর্ষণ করতে যাচ্ছি। সুমন্তীর নারী নামক অমোঘ সত্ত্বা আমাকে আরো কামাতুর করে ফেললো। আমি স্থির থাকতে পারলাম না। মনেহলো সহস্র জনম ধরে কাটানো এই ব্রক্ষ্মচারী জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার আজই শ্রেষ্ঠ দিন! আমি পিছন থেকে ওর স্তনে হাত দিয়ে ঝাপটে ধরে ওর সাড়া শরীরে কামড় বসাতে লাগলাম। যেন শত্রুকে পরাস্ত করে নিজের বিজয় ঘোষনা করতে বসেছি। সুমন্তী কোন শব্দ করলো না, হাত দিয়ে বাধা দিলো না, শুধু নির্বাক পেঁচার মত চোখ মেলে তাকিয়ে রইলো।
ওকে চুমু খেতে যেয়ে ওর চোখে চোখ পড়লো আমার। চোখের মধ্যে যেন এক সমুদ্র জল! তবুও সুমন্তী শব্দহীন। একটা চিৎকার শব্দহীন হলে, একটা নীরবতা নাকি অনেক কথা বলে!
সেদিন সুমন্তীর শব্দহীন চিৎকার, আর এক সমুদ্র চোখের জল আমার ভিতরের পশুটাকে সহসায় খুন করে ফেললো। আমি সুমন্তীর পাশে চিৎ হয়ে শুয়ে জোরে নি:শ্বাস নিতে লাগলাম, প্রথমবারের মত হালকা স্বরে সুমন্তীর কান্নার আওয়াজ কানে এলো। চিৎকার ক্রমেই আর্তনাদে রুপ নিলো। এই আর্তনাদে যেন ঘরের ছাদ বেয়ে আকাশ ভেঙে পড়লো আমার মাথায়। একটার পর একটা আর্তনাদ আমাকে বুলেটের মত বিদ্ধ করতে লাগলো।
কি করবো ভেবে না পেয়ে আমি সুমন্তীকে জড়িয়ে ধরে বললাম- 'সরি, শান্ত হও!'

সুমন্তীকে আমি নিজে রিক্সায় করে ওর বাসায় পৌছে দিয়ে আসলাম সেদিন। আমার ছেলেরা সুমন্তীকে ধরে নিয়ে এসেছে এই খবর বাতাসের আগে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়লো। তারপর থেকে বাইরে বের হলেই সবাই মেয়েটির দিকে আড় চোখে তাকায়। যেন সব দোষ সুমন্তীর! যেন সুমন্তী সেচ্ছায় আমার কাছে এসেছিলো তার নারী সত্ত্বাকে বিসর্জন দিতে!

এলাকার মানুষদের অতিষ্ট যন্ত্রনায় সুমন্তীর বাবা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু তাতেও নিস্তার মেলেনা কোত্থাও। সুমন্তীর কোন সম্বন্ধ আসেনা। পাত্র পক্ষের কাছে নাকি আগেই খবর চলে আসে-
'জানেন এই মেয়ে তো বেশ্যা, রকি মাস্তানের লগে রাত কাটায়'!

মাত্র একটা ঘন্টা আমার বাসায় অবস্থান সুমন্তীর জীবনকে কতোটা দূর্বিষহ করে তুলেছে তা নিজ চোখে দেখেছি, একটা পরিবার সমাজের কাছে কতোটা অগ্রহনযোগ্য হয়ে গেছে তা দেখেছি। এই সমাজের প্রতি আমার যে ঘেন্না ছিল, তা আরো প্রবল হলো। এই সমাজ আমার মতো ধর্ষককে ভয় পায়, অথচ সুমন্তীর মতো সতী নারীকে দোষ দিয়ে বেড়ায়! অপরাধ যেন ধর্ষকের নয়, ধর্ষিতার!

ইতোমধ্যে এক মামলায় আমি গ্রেফতার হয়ে দুইবছর জেলে কাটিয়ে জামিনে বাইরে বেড়িয়ে আসলাম। খোজ নিয়ে জানলাম সুমন্তীর গ্রেজুয়েশন এর চার বছর পেরিয়ে গেছে, তবুও বিয়ে হয়নি।
সেদিন সুমন্তীর বাসায় যেয়ে ওর বাবাকে সাহস করে বলে ফেল্লাম -
'আংকেল, সুমন্তীকে আমি বিয়ে করতে চাই, আমি ভালো হয়ে গেছি।'
২য় দিনের মত সুমন্তী আবারো আমার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
আমি রাগ করিনি এবার। নি:শব্দে বাসা থেকে বেড়িয়ে এসেছি। পরে জানতে পারলাম সুমন্তীর বিয়ে ঠিক হয়েছে, ওর এক কলিগ এর সাথে। সে সব জেনে শুনেই সুমন্তীকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।

আমি সব শুনে নিরব থাকলাম। জীবনে প্রথম বারের মত বুকের ভিতর কেমন একটা শুন্যতা অনুভব করলাম। বুকটাতে কেমন একটা হাহাকারের শব্দ শুনলাম।
সুমন্তী আমার হবেনা এই ভাবনা আমাকে যন্ত্রনা দিচ্ছে। আমি কোন ভাবেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারলাম না।

সেদিন বিকেলে ধানমন্ডীর একটা রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে বের হচ্ছিল সুমন্তী, সাথে হাসসোজ্জল তার হবু বর।
হবু বরের এমন হাসিমাখা মুখ আমার পছন্দ হয়নি, কোমর থেকে পিস্তলটা বের করে সুমন্তীর সামনে গেলাম।
'সুমন্তী, আমি তোমাকে ভালোবাসি' বলেই প্রথম গুলিটা ওর মাথায় ঠেকিয়ে দিলাম।
২য় গুলিটা আমাকে ফেরাতে আসা ওর হবু বর উপহার পেল!

দুটি নিথর দেহ রাস্তায় পরে আছে।
৩য় নিথর দেহটি পরে রবে মগবাজার মধুবাগের ছোট্ট সেই বাড়িটিতে। যেখানে সুমন্তীকে প্রথম দেখেছিলাম আমি। আগামী কয়েক ঘন্টা কেউ জানবেনা নিজ-হত্যার এই গল্পটি!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.