নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভীষণ একলা থাকা মানুষ আমি ভীষণ আমার ভেতর থাকি!

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর

জীবন জুড়ে থাকা পরাজয়, হয়েছে ম্লান চিরকাল!

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

উদ্দেশ্য নেই, উদ্দেশ্যহীন...... গন্তব্য নেই, গন্তব্যহীন।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫৩

সারাদিনের আলো বিলিয়ে সূর্য যখন পশ্চিমাকাশে প্রকৃতির দিগন্তে হারিয়ে যাবার উপক্রম হয়,তখন-ই শুরু হয় সন্ধ্যার লগ্ন! ঠিক তেমনি ভাবেই তো জীবনের সব আলো যখন বিলিয়ে দিয়ে শেষ বেলায় এসে তখন হিসেবের খাতায় শুন্যতা বিরাজমান হয়......যদি সেই জীবন হয় লক্ষ্য বিহীন!
জীবনের তো একটা তাতে লক্ষ্য থাকা চাইই-চাই!

সেই ছোট বেলা থেকেই সকল কাজের ‘লক্ষ ও উদ্দেশ্য’ জানতে আর জানাতে গিয়ে এই টিপিক্যাল লাইফটা সত্যিই বোরিং হয়ে গেছে আমাদের আর আমরা এ বয়ে বেড়াতে গিয়ে জগন্যভাবে টায়ার্ড! আচ্ছা এমন কিছু কি হতে পারেনা যেখানে কোন ‘উদ্দেশ্য থাকবেনা’ বেরিয়ে পড়বো কোন এক অজানা গন্তব্যে?
ভাবনার স্ফুলন ঘটাতে পারবো কখনো এমনটা সত্যিই কাল্পনিক ছিলো। সময়টা ছিলো ২০১৪ এর ১লা ডিসেম্বর। টার্ম পরীক্ষা শেষ হলো সেইদিন মাত্র। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহসানউল্লাহ হলের ২২৩ নাম্বার রুমে থাকি তখন। সন্ধ্যায় টিউশন থেকে ফিরে সুমন ভাই প্রথমে আমাকে বললো - যাবি?
আমি বললাম- যাব।
সুমন ভাই বললো- আমরা কিন্তু সত্যি সত্যিই যাবো।
আমি বললাম- আমিও ভাই সত্যি সত্যি যাবো।

কিন্তু কোথায় যাব? তখনো জানিনা।
শেষমেষ সুমন ভাইয়ের ‘মাথায় উঠা ক্যাড়া’ দেখি অনেকেরই আছে। কিছু না ভেবেই বেড়িয়ে পড়লাম কাধে একটা ব্যাগ ও তাতে কয়েকটা কাপরচোপড় নিয়ে। পকেটে কারোই ত্যামন কোন টাকা নেই। তাতে কি! আছে উদ্দ্যোম, অদম্য স্পৃহা!


ছবিঃ আমরা ছ'জন (বামদিক থেকে) আমি, শেখরদা, মাহমুদ, রিয়াদ ভাই, সুমন ভাই, তাহমিদ

বেড়িয়ে পড়লাম ছ’জন। অজানার উদ্দেশ্যে......। সুমনভাই, রিয়াদ ভাই, শেখরদা, বন্ধু মাহমুদ-তাহমীদ ও তাদের সাথে আমি! খুলনা স্টেশনে গিয়ে জানতে পারলাম পরবর্তি যে ট্রেনটি আছে সেটা রাত ২টার দিক। ততক্ষন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। নিউমার্কেটে গিয়ে খাটি দুধের চা খেয়ে শুরু আমাদের এই যাত্রা পথ...।।


ছবিঃ যাত্রা শুরুর মুহূর্ত, খুলনা স্টেশন।

যেট্রেনে উঠেছিলাম সেটা ছিলো একটা মেইল ট্রেন। নামটা সঠিক মনে নাই। একটা সময় ট্রেন ছাড়লো এবং একটু পর টিটি আসলো টিকিট চ্যাক করার জন্য। টিটিকে বললাম যে টিকিট নাই ।
-টিকিট ক্যান নাই? কই যাবেন?
:- জানিনাতো ভাই কই যাবো! (টিটির বয়স কম ছিলো )
-(ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে!)ফাযলামি করেন মিয়া! কই যাবেন ঠিক কইরা কন।
:- আচ্ছা ঠিকাছে যেখানে ভোর হবে সেখানে নামায় দিয়েন!
টিটি ভাই বুঝতে পারলো যে এদের সাথে কাপযাপ করে খুব একটা লাভ হইবে না! একটা সময় চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে ওনি চলে গেলেন বাকিদের টিকিট চ্যাক করার জন্য। পুনরায় যখন ফিরে আসলেন তখন তাকে ডেকে পাশে বসালাম। ওনার সাথে গল্প করতে লাগলাম......।।



রাত শেষে ভোর। একটি স্নিগ্ধ ভোর দর্শনের সুযোগ পেলাম চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনাতে। স্টেশনের নাম দর্শনা হল্ট।


ছবিঃ সদ্য ট্রেন থেকে নেমে, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা।

আমরা যখন দর্শনায় নামী তখনো ঘুম থেকে জাগেনি সেই শহরতলি,সড়ক-চিহ্ন। অস্ফুট ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাদের চিত্তকে। আকাশের ছায়াটুকু নিয়ে কুয়াশা ছড়ানো স্নিগ্ধ সকাল। ঘুম ঘুম সাতসকালে তিন রাস্তা দেখে ‘টস’ দ্বারা নির্ধারিত আমাদের গন্তব্যস্থল। রেললাইনের দুপাশজুড়ে চোখে পড়ছে শিকড় শুদ্ধ সমূলে উপড়ানো বড় বড় গাছ-গাছালির অগণিত ভাঙা ডাল, দোমড়ানো বস্তিঘর, মোচড়ানো রাস্তার ডি’ভাইডার, হেলে পড়া বিদ্যুতের খুঁটি, ঝুলে থাকা ক্যাবল। এরপর জাতীয় সড়ক, সেখানে আসতেই মসৃণ সড়ক পথ। চলে গেছে কুষ্টিয়ার দিকে। সেইখান থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পথে। কর্তব্যরত বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ এর কর্মকর্তা আমরা খুলনা থেকে এসেছি শুনে বেশ কদর করলেন। ওনিও একজন খুলনার সন্তান কিনা! যতদূর পর্যন্ত পাসপোর্ট ছাড়া যাওয়া সম্ভব সেই পর্যন্ত নিয়ে গেলেন আমাদেরকে। বেশ খানিকটা সময় কাটালাম সেখানে। বর্ডার-মেঠোপথ-চ্যাকপোষ্ট আর তারসাথে সেলফি!


ছবিঃ এবং একটি সেলফি!

বিজিবি আংকেলকে বিদায় জানিয়ে আবারো টসভাগ্যে নতুন পথ নির্ধারন। হাটছি...হাটছি... জানিনা কোথায় শেষ সেই পথ। একটা সময় চোখে পড়লো মাটিকাটা এক ট্রাকের দিকে। ট্রাকে থাকা মামারা কাধেব্যাগওয়ালা ছয় বোহেমিয়ানকে দেখে বললো “যাবেন নাকি?”
এই অফার কি আর মিস করা যায়! দৌড়ে উঠে পরলাম ট্রাকে। মাটির উপর গিয়ে বসে পরলাম। ট্রাক চলছে ট্রাক চলছে ট্রাকের বাড়ি কই......।।


ছবিঃ মাটিকাটা ট্রাকে আমরা ক'জন।

একটা সময় ট্রাকের গন্তব্য শেষ হয়ে গেলো। আমরা ট্রাকে থাকা মামাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে নেমে পড়লাম। সামনেই একটা টি-স্টল। এক বৃদ্ধ চাচা (বয়স পঞ্চাশোর্ধ হবে) চায়ের দোকানদার । পাশের মাঠে গতসপ্তাহব্যাপী মেলা ছিলো। গতকাল রাতে মাত্র শেষ হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখলাম দোকানদাররা তাদের সরঞ্জাম সরাচ্ছেন। চায়ের দোকানের পাশেই ক্যারাম খেলার জায়গা আছে। সেখানে টাকা দিয়ে ক্যারাম খেলতে হয়। ৬ টাকায় এক গেম। আমি আর তাহমীদ ছাড়া বাকিরা খেলা শুরু করলো। ।
তবে চাচার দোকানে বসে রিয়াদ ভাই সুমন ভাইকে দান করলেন তার জীবনের অমূল্য রত্নটি (কি সেই জিনিস সেটা অপ্রকাশিতই থাক! )
যাইহোক, চাচার দোকানে বসে পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে লাল-চা খেয়ে আবারো শুরু করলাম হাটা।
দেখি ইটভাটা সামনে। গেলাম সেখানে। ছবি তোলার প্রতিযোগিতা চললো। সরিষা ক্ষেত আর আখক্ষেতের সমাহার ঐ অঞ্চলে। সুমন ভাই যেকরেই হোক সরিষা ক্ষেতের সামনে ছবি তুলবে! তার এই স্বপ্নকে স্বার্থক করে তুললো বন্ধু মাহমুদ। সুমনভাইয়ের চোখে-মুখে তখন আনন্দযুক্ত তৃপ্তির হাসি। একটু আগে মাত্র রিয়াদ ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া ‘অমূল্য গিফট’ আর তারসাথে ‘সরিষা ক্ষেতে’ ছবি! তবে সুমনভাইয়ের আনন্দকে কয়েকমাত্রায় বাড়িয়ে দিতে সবজায়গায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বন্ধু মাহমুদ!


ছবিঃ ভেড়ামারা পানি বিদ্যুৎ প্লাটের সামনের কোন এক জায়গায়

যাক। ততক্ষনে সকালটি আর স্নিগ্ধ নেই। রাস্তার পাশের কড়ই গাছের পাতা ভেদ করে সূর্য্যের তাপ পৌছে গেছে আমাদের শরীরে। গায়ে তখন সেই শীতল ভাবটি আর নেই। দুপুর দেড়টার কম হবেনা। আবারো দর্শনা বাজারে এসে এক হোটেলে দুপুরের খাবার সেড়ে আবার রেলস্টেশন ।
সেখান থেকে ভেড়ামারা। বন্ধু তাহমীদের কল্যানে পানি বিদ্যুৎ প্লাট পরিদর্শন –সেইখান থেকে লালনশাহ সেতু-হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। লালনশাহ সেতুতে গিয়ে ঘটালাম অন্য এক কাহিনী! কুষ্টিয়াতে বসে সিঙ্গারা-পেয়াজো আর ছোলাবাজা! অদ্ভূত স্বাদ ছিলো তাতে।
সেইখান থেকে ঈশ্বরদী। “সামা-রা” নামট এক এক ভিন্ন প্রজাতির খাবার পাওয়া যায় সেখানে। দাম মাত্র পাচ টাকা। খেয়ে নিলাম সেখান থেকে পাবনার এই এন্ডেমিক খাবারটি।
গভীর রাতে পৌছালাম ঈশ্বরদী স্টেশনে। সেখান থেকে অজানা কোন স্টেশনের উদ্দেশ্যে নতুন কোন ট্রেনে। এক ট্রেনে উঠে পৌছালাম রহনপুর । ভোর হওয়ার আগেই ট্রেনে বসে চুরি হলো আমার আর মাহমুদের ক্যাডস জোড়া। সাথে সুমন ভাইয়ের সানগ্লাস। তীব্র শীত সেখানে। সকালে উঠে নগ্ন পায়ে হাটতে হলো । রোমাঞ্চ তখন যন্ত্রনার কাতারে। কোন দোকানও খুলেনি তখন যে নতুন জুতা কিনবো!


ছবিঃ আড্ডায় মগ্ন যখন

যাইহোক নতুন একটি ভোরের শুরু গরম ভাপা পিঠা খেতে খেতে। রেললাইনের উপর পড়ে থাকতে দেখলাম একজোড় ছেড়া-জীর্ণ-শীর্ন ও হাজারো জীবাণুযুক্ত জুতা! লুফে নিলাম সেটি পায়ের উপর! এই জুতা নিয়েই বাকি কয়েকটাঘন্টা...।
রহনপুরের মানুষগুলা খুব ভালো। সবাই বেশ হেল্পফুল। এখনো মহিষের গাড়ি, গরুর গাড়ির প্রচলন আছে সেখানে। আমার জীবনের একটি ইচ্ছা গরুর গাড়ি বাস্তবে দেখার। সেই ইচ্ছাটাও পূরণ হলো এইখানে এসে । ভরপুর খেয়েদেয়েও দেখি 'বিল ম্যালা কম!!বাহহ!!'



ছবিঃ মোকাররম্পুর ব্রিজে দেখা মিললো গরুর গাড়ীর।

সেইখান থেকে পাখি পার্কি-গোমস্তাপুর – কাউন্সিল বাজার-মকরমপুর ব্রিজ দেখা শেষ করে টস ভাগ্যে নতুন পথ চাপাই নবাবগঞ্জ। সেইখানকার বিখ্যাত জাহাঙ্গীর হোটেলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে অতপর নতুন ট্রেনে উঠে সেখান থেকে আমনুরা। আমনুরা থেকে রাজশাহী হয়ে সেখান থেকে আবারো ঈশ্বরদী। ততক্ষনে সবার পকেট ফাকা। টিটিকে টাকা দেওয়ার মত সামান্যটুকুও নেই। পরের দিন গভীর রাতে খুলনার ট্রেনে উঠে চিরচেননা এই শহরে ফিরে আসা।!



ছবিঃ পাখি পার্ক ও আবার আক্রান্ত রিয়াদ ভাই

এইভাবেই জীবনের কিছু অসাধারন মূহুর্ত কাটিয়ে পুরোনো গন্তব্যে ফিরলাম ছয়জন। অটোরিক্সাওয়ালা মামাকে ভাড়া দিলাম হলে এসে বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়ে।


ছবিঃ ট্যুরের ফাঁকে.।

সর্বমোট ছয়জনের এই তিনদিনের ট্যুরে সর্বসাকল্যে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০০০-৪৫০০ টাকার মত মাত্র!
একযাক ক্লান্তি নিয়ে হয়ত রুমে ফিরেছি তবুও... সাথে ছিলো কয়েক হাজার গ্যালন প্রাণভরা নিঃশ্বাস আর কয়েকটন আনন্দভরা মুহূর্ত ।
হয়ত এমনি করে অন্যকোনদিন বেরিয়ে পরবো। অন্যকোন ট্রেনে...অন্যকোন পথে অন্য কোন অজানা গন্তব্যে...।।
'চলছে রাতের ট্রেন...নীবরবতা ভেঙ্গে দিয়ে' শুনতে শুনতে!

ছবিঃ বেঁচে থাকুক উল্লাস

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.