নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভীষণ একলা থাকা মানুষ আমি ভীষণ আমার ভেতর থাকি!

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর

জীবন জুড়ে থাকা পরাজয়, হয়েছে ম্লান চিরকাল!

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুদ্ধি তো হয়েছে, বেড়ে উঠবো কবে?

১৪ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:২৫




খুব ছোট্টবেলা থেকেই আমি এমন কিছু বন্ধুর সাথে বড় হয়েছি যারা আসলে কখনোই শিশু ছিল না। এদের ছোট্ট শরীর এর মধ্যে বসবাস করতো ভীষণ বুদ্ধিমান এবং ম্যাচিওরড একজন মানুষ। এরা সব কিছু বুঝত , বুঝত যে ক্লাস বাঙ্ক মারতে হয় না , সন্ধ্যে হলেই পড়তে বসতে হয় ,পরীক্ষার আগেই সব পড়া শেষ করে ফেলতে হয় , পরীক্ষায় সব প্রশ্নের উত্তর লিখে আসতে হয় ,বাসার টিচারের পড়া কখনো ফেলে রাখতে হয় না । এরা জানতো পড়ার বই এর ভিতর গল্পের বই রেখে পড়তে হয় না , স্কুলের পড়া শেষে তারপর পড়তে হয় । আরেকটু বড় হবার সাথে সাথে এরা বুঝে যেত ইন্টারমিডিয়েট শেষ করার আগে প্রেমে পড়া যাবে না , সন্ধ্যার পর আড্ডা দেওয়া যাবে না । ভীষণ ভালো ছিলো আমার বন্ধুগুলো। ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে এদের কোন অসুবিধে হতো না । আমার বন্ধুরা সবাইই লাইফে আমরা যাকে বলি "শাইন" করা সেটা করেছে। দেখুননা স্কুলের ৭ জন বন্ধুর মধ্যে ১জন ঝরে পড়েছিলো কলেজে উঠার আগেই...বাকি ছয়জনে দু'জন বুয়েটে, ১ জন বুটেক্সে, ১ জন, চুয়েটে, ১ জন রুয়েটে। আর আমার কপালে কোন 'ET' ঝুটেনি । আমি সাধারন ভাবেই আছি ।

আমি কখনোই যে আমার এই বন্ধুদের মত ছিলাম না, বিষয়টা এমন না। কিন্তু বরাবরই আমি অন্যরকম হতে চাইতাম। একটু ভিন্ন...অনেকটা সতন্ত্র! স্কুলে ফাঁকি খুব কম দিয়েছি কিন্তু স্যার এর পড়া করিনি দিনের পর দিন। গভীর রাতে পড়ার ভান ধরে বই পড়েছি...গল্পের বই। পেকে গিয়েছিলাম দ্রুতই। জাফর ইকবার স্যারের বই ছেড়ে সুনীল ধরেছি ক্লাস নাইনেই। শেকসপিয়ারের ২৯টা নাটকের বাংলা অনুবাদের পার্টটাও সেই ক্লাস নাইনেই শেষ করা! তারপর প্রেম, ক্রাশ, দুঃখ...তারপর হাসি। হা হা হা ।
কোথায় যেন পড়েছিলাম - কবিতা প্রেমী মানুষেরা যদি খারাপও হয় তবে সেই খারাপের একটা নির্দিষ্ট সীমা থাকে। সেই থেকেই কবিতা প্রেমী! ভালো মানুষ হতে চাইতাম খুব...আমার কাছে পৃথিবীর দুইটি ভালোমানুষের উদাহরন ছিলো আমার আব্বা আর বড় ভাই :) । কিন্তু আমি আজও ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারনি। যেটুকু দেখা যায় সেটুকুও যেন ভান ধরা!

আমি জানিনা আমার ফিউচারটা ব্রাইট কিনা। এই নিয়ে অবশ্য খুব একটা চিন্তা অথবা আক্ষেপ নেই। কেননা আমি কখনোই ভালো ছেলেমেয়েদের মত টিপিক্যাল হতে চাইনি। কারণ এটা না যে , ওরা বোরিং । আমি ওদের মত হতে চাইনি কারণ আমি আলাদাকরে ভাবতে পছন্দ করি। আমি খুব ছোটবেলা থেকেই আর পাঁচটা বাচ্চা থেকে অনেক বেশি অন্যরকম ছিলাম, এমন একটা শিশু যে ভিন্ন কোন স্বপ্ন ধারণ করার ক্ষমতা রাখত , ভীষণ রোম্যান্টিক এবং অনুভূতিপ্রবণ একটা মন ছিল আমার । যে পরিমান পটেনশিয়ালিটি নিয়ে আমি আমার জীবনটা শুরু করেছিলাম সে পরিমান স্কিল অর্জন করতে পারিনি কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে আমার জীবনটা নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই।

আমার প্রচুর বন্ধুবান্ধব। একজন বন্ধুর জন্যে আমি কি করতে পারি তা কেবল আমিই জানি। আমার কাছের বন্ধুরাও জানে। জীবনে প্রচুর বন্ধু জুটেছে আমার। একজন/দুজন না। গড় হিসেবে তিন-চারশো ক্রস করবে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আমার খুব স্পেশাল।
আমার মনে আছে একবার স্কুলের বার্ষিক ট্যুরে আমার যাওয়ার অনুমতি মিলছিলো না। ঢাকা থেকে জাস্ট মুন্সিগঞ্জ যাবো-এটুকুতেও পরিবারে বাঁধা! আসলে...ছোট বলে ভয় পাচ্ছিলো বাসার সবাই। সেদিন স্কুলের প্রায় ২০/২৫ জন বন্ধু আমার বাসায় চলে গিয়েছিলো আম্মা-আব্বা ও ভাইয়াকে কনভিন্স করতে। বাসার ভিতর এতো জনের জায়গাও হচ্ছিলো না...তাই কেউ কেউ বাইরের সিড়িতে অপেক্ষা করছিলো। এতোজন বন্ধুকে একসাথে দেখে আম্মা অবশ্য ভাবনার পরিবর্তন করেছিলো- এই ছেলে একা না! ও যেতে পারে। আজও স্কুলের সেই ট্যুর আমার জীবনের প্রথম সেরা ট্যুর!

খুব একটা মেধাবী ছিলাম না কখনোই। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে 'গাধা-ই' ছিলাম। পড়াশোনা খুব কম-ই ঢুকতো মাথায়। কিন্তু বাসার বড়রা আমাকে না বুঝেই ঠিক ঐ আদর্শ বাচ্চাগুলোর মত করে আমাকে বড় করে তুলতে চেয়েছেন। সেটা করেছেন আমার ভালর জন্যই কিন্তু তাতে শুধু তাদের কষ্টের - পরিশ্রমের অপব্যবহার ছাড়া কিছু হয়নি । ওনারা চাইতেই বন্ধুদের মত আমাকে মেধাবী ভাবতে কিন্তু আমিতো ছিলাম মেধাশুন্য! তাই, তাদের এই প্রবল চেষ্টার কারণে আমি যা হতে পারতাম সেটাও হতে পারিনি। আমি আজও তাদের খুশি হওয়ার মত কোন উপলক্ষ দিতে পারিনি, তারাও পারেননি আমার শ্রেষ্ঠ দিকগুলোকে বুঝতে । এভাবে ভাবলে আমাদের দুই প্রজন্মকেই দুর্ভাগা মনে হয় হয়তো কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে আমি তাদের কাছে ভীষণভাবে ঋণী । প্রথমত নিজের ভুলকে শুধরে নিয়ে কিভাবে নতুন করে শুরু করতে হয় এটা আমি আমার বড় ভাইয়ার কাছে শিখেছি। আমাকে বড় হতে , স্বপ্নবান হতে শিখিয়েছেন আমার এই আদর্শের মানুষটি। একটা মানুষ কতোটা নিঃস্বার্থ হতে পারে ভাইয়াকে না দেখলে শিখতাম না। একটা মানুষ কতোটা নরম আর মায়াময় হতে পারে তা আব্বাকে দেখে শিখেছি।

আমার মা ছিলেন অন্যরকম। স্কুলের কারো সাথে ঝামেলা বাঁধিয়ে আসলে আম্মাকে বলার সাহস পেতাম না। কেননা দোষ যারই হোকনা ক্যানো আম্মা আমাকে শাসাতেন। যেন -সব দোষই আমার। কিন্তু অগোচরে ঠিকই সে বন্ধুকে শাসিয়ে আসতেন। আমাকে সেই বন্ধুর সামনে কখনোই শাসাতেন না কেননা আমি ২য় দিন মারামারি করার সাহস না করে ফেলি আবার! আম্মা চাইতেন সব সময় যেন সেরা কিছু হই। বাচ্চাদের কাব স্কাউটে আমার নামটা আম্মাই লিপিবন্ধ করে দিয়েছিলেন। সফলও হয়েছিলাম তখন- আর আম্মা হয়েছিলেন বেশ খুশি!

আমি এখন যদিও বেশ বড় হয়েছি তবুও বাসার সকলের কাছেই ছোট-ই রয়ে গেছি। কোনভাবেই বাসায় 'বড় হয়েছি' ভাব নিতে পারিনা। তবে আমি ছোট-ই থাকতে চাই।
ছোট থেকে ছোটদের নিয়ে কাজ করতে চাই। মানুষকে ভালোবাসতে চাই।
রাস্তায় কোন জির্ণ-শীর্ণ শিশুকে দেখলে আমার খুব খারাপ লাগে। আমি জানি একটা শিশুর মন কতটুকু সংবেদনশীল হতে পারে, আমি তাদের কল্পনার জগতটাকে আরেকটু কাছে এনে দিতে চাই। জানি এই যুগে এইটা কতোটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। কেননা ওরা তো জন্ম থেকে বড় হয়ে জন্মাচ্ছে-
গোল্ডেন এ+, ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার এই টার্মগুলো ওদের জন্মের পর থেকেই ফিক্সড করে দেওয়া হচ্ছে। এগুলো ওদের মস্তিষ্কে এমনভাবে ঢুকে গেছে যে এরা নিজেদের ভুলেই গেছে । এরা খেলতে চায় না , বই পড়তে চায় না, ফাঁকি দিতে চায় না , সব রোবট যেন একেকটা। আমি ছাত্র অনেক দেখি কিন্তু শিশু দেখি না , কিশোর কিশোরী দেখি না । মাঝে মধ্যে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হয় , খুব বেশিই সৌভাগ্যবান! আমি অন্তত নিজেকে হারিয়ে ফেলিনি ভীড়ের একজন হওয়ার চেষ্টা করতে করতে।
আমি বাচ্চাগুলোকেও সৌভাগ্যবান করতে চাই এবং এইটাই আমার স্বপ্ন :)

-- আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর
রুম # ৩১৩, আহসানউল্লাহ হল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়!
(২০১৫ সালে হলে বসে লেখা)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর ,




যেটুকু লিখলেন , যে ভাবে লিখলেন তা-ই বলে আপনি বেশ বেড়ে উঠেছেন ।

বেড়ে ওঠাটাই আসল নয় , "মানুষ" হয়ে উঠুন । সে গুনাবলীর ছটা আছে আপনার অনুভবে ।

১৪ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪৮

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর বলেছেন: ধন্যবাদ জি এস ভাই :) আপনার কমেন্ট বরাবরই আমাকে অনুপ্রেরণা দেয় :) । ভালো থাকবেন।

২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪৩

ধ্রুবক আলো বলেছেন: এইটা একটা মজার সমস্যা, বাসার মানুষের কাছে বিশেষ করে বড়দের কাছে বড় হওয়া হয় না!!
ছোট থেকে ছোটদের নিয়ে কাজ করতে চাই। মানুষকে ভালোবাসতে চাই। শুভ কামনা রইলো, তবে কাজটা খুব কঠিন, কারণ টা হলো, আপনি লেখায় বললেন, শিশুরা সব রোবট হয়ে যাচ্ছে!! আমাদের দেশের অভিভাবকগনেরা শিশুদের, বাচ্চাদের লেখাপড়ার দিকে ঝুকিয়ে দিচ্ছে। উনারা শুধু মার্কস দেখতে চান। এই বিষয় নিয়ে আমার একটা লেখা আছে যা কিছুদিনের মধ্যে পোস্ট করবো।

লেখাটা খুব ভালো লিখেছেন ++++

১৪ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪৯

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর বলেছেন: এই বিষয়ক আপনার লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকবেন ধ্রবক'দা :)

৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:৪৮

ওমেরা বলেছেন: আমি পরিবারে সবার ছোট হিসাবে অনেক আদর যেমন পাই তার চেয়ে ও অনেক বেশী শাসন পাই যদি ও এটা আমি উপভোগ করি তবু মাঝে মাঝে মনে হয় আমি বড় হব কবে !!

ধন্যবাদ লিখা ভাল লেগেছে ।

১৪ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৩

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর বলেছেন: ছোট হওয়াটা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আনন্দের। কারণ সবার নিরেট ভালোবাসা কেবল ছোট জনই পায় :)

৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৫

অনাকাঙ্খিত কেউ বলেছেন: "আমি বাচ্চাগুলোকেও সৌভাগ্যবান করতে চাই এবং এইটাই আমার স্বপ্ন।" স্বপ্নটা সুন্দর।
সফল হোক।

১৪ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৪

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। দোয়া রাখবেন।

৫| ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১:২৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আমার আমির প্রতিচ্ছায়া দেখতে পাচ্ছি।। বেচে থাকুক এটাই।।

১৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ২:৩১

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর বলেছেন: বেঁচে থাকুক :)

৬| ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:২৪

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আপনার সপ্ন পূরন হোক। শুভ কামনা থাকল আপনার জন্য।

১৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৪৪

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর বলেছেন: ধন্যবাদ সোহেল ভাই :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.