নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভীষণ একলা থাকা মানুষ আমি ভীষণ আমার ভেতর থাকি!

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর

জীবন জুড়ে থাকা পরাজয়, হয়েছে ম্লান চিরকাল!

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতলান্তিকে বসতি

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৮

রুপন্তির সাজঘরে বাড়ির সবার ঢুকতে মানা!
শোনা যায়, তার সাজঘরে নাকি স্বয়ং তার স্বামী পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারেনি আজ অবধি। তাছাড়া স্বামীর সময়-টাই বা কোথায় যে রুপন্তি'র সাজঘরে ঢুকে অল্প-আধটু রঙচঙ করবে!
রুপন্তির স্বামী ইয়াসির খান। পরপর দুই মেয়াদে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাছাড়া সবসময় সরকারি দলে থাকার বৌদলতে এ এলাকার রাজনীতিতে তার বিশাল প্রভাব। এম্নিতেই আমাদের দেশের সরকার দলীয় এমপি'র চেয়ে গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের ব্যাস্ততা বেশী। সেদিক থেকে হিসেব করলে ইয়াসির সাহেবের ব্যাস্ততা কিছুটা কম। সপ্তাহের প্রায়ই তাকে ঘরে ফিরতে দেখা যায়!

ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙে রুপন্তি দেখল বিকেল পাঁচটা বাজে। কেমন একটা তরিঘরি'র মাঝে রুপন্তি সাজঘরে ঢুকলো। একটু পরেই অনিক আসবে। অনিক রুপন্তির ফিজিওথেরাপিস্ট। বছর দুই আগে সিলেটে বেড়াতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে গিয়েছিলো রুপন্তির। দু'পায়েই বেশ বড় রকমের আঘাতও পেয়েছিলো।মাস কয়েক সিআরপিতে থেরাপি নেয়ার পর ডাক্তার অবশ্য বলেছে বাসায় বসেই বাকি থেরাপিগুলো নিতে পারবে। রুপন্তি তাই করেছিলো। এক প্রসিদ্ধ ফিজিও'র অধীনে বাসাতে বসেই থেরাপি চলতো তার। কিন্তু অনিককে নিয়োগ দেয়ার পর পূর্বের ফিজিওকে ছাটাই করা হয় কোন কারন ছাড়াই।

আজ মঙ্গলবার। রুপন্তি বিশ্বাস করে প্রতি মঙ্গলবার তার সবচেয়ে মঙ্গলের দিন। কেননা প্রায় বছরখানেক ধরে মঙ্গলবারে ঠিক বিকেল সাড়ে পাঁচটায় অনিক দরজায় এসে কড়া নারে। রুপন্তি এ মধ্য তেত্রিশে এসেও ইয়োগা ড্রেসটা খুব যত্ন করে পড়ে প্রতি মঙ্গলবার! তার স্বামী সর্বদাই কাজে ব্যস্ত। গুণে হয়ত কয়েক ঘন্টা বাড়িতে থাকে সপ্তাহে। কাজেই অনিকের আসা নিয়ে তার কোনো চাপ সামলাতে হয়না।

অনিকের খোঁজ রুপন্তি পেয়েছি তাঁর বাড়িতে একটা পার্টিতে। সেদিন পার্টিতে ইয়াসিরের ঘনিষ্ট বন্ধু সম্রাটের স্ত্রীকে রুবিনাকে একে একে পাঁচ-পাঁচ'টা প্যাগ মারতে দেখে জিজ্ঞ্যেস করেছিল, এত বড় বাড়িতে আপনি একা থাকেন, মানে আপনাদের তো কোনো ইস্যুও নেই, কী করে সময় কাটান, শুনি?
রুবিনা কথার ধাঁচ বুঝেছিলো। হালকা চোখ টিপে তাকে বলেছিলো, 'সময় কাটানোর উপায় বলে দিতে পারি, লাগবে নাকি?' বলে তাকে অনিকের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন।

রুপন্তি প্রথমে বুঝতে পারেনি এক রোগের দুই চিকিৎসক দিয়ে সে কী করবে! একাকীত্ব কাটাতে অনিককে একদিন ডেকেই নিয়েছিল। সেদিন প্রথম অনিক তাকে এমন চিকিৎসা দিয়েছিলো যে রোগের চিকিৎসাহীনতায় ভুগছে সে দীর্ঘদিন!

সন্তান হওয়ার পর থেকে ইয়াসিরের কাজের চাপ আরো বেড়ে গেছে, আরো নিরাসক্ত হয়ে গেছে সে। ছেলে হওয়াতে তার প্রয়োজন বোধহয় ফুরিয়ে এসেছে স্বামীর কাছে। যদিও ছেলে ছ’বছরের হতেই তাকে বোর্ডিং স্কুলে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইয়াসির নাকি চায় না তার রাজনৈতিক কীর্তিকলাপের প্রভাব ছেলের ওপর পড়ুক।

ঠিক ঘড়ির কাটা ৫টা বেজে ৩০ এর কাটা ছুঁতেই কলিং বেল বেজে উঠলো। রুপন্তি সাজ ঘর থেকে বের হয়ে তার ঘরে গেলো। অনিককে দেখে মুচকি হেসে বললো- বেশ সময়ানুবর্তিতা শিখেছো দেখছি! এতোটা সময়ানুবর্তিক কি করে হলে?
অনিক কিছু বলেনা।
রুপন্তি আবার প্রশ্ন করে- কিছু বলছো না কেন শুনি! এই সত্য করে বলোতো- তোমার নাম কি সত্যিই অনিক নাকি অন্যকিছু?
স্বভাবে শান্ত এবং প্রচন্ড মিতভাষী অনিক মৃদু গলায় বললো- আমার নাম অনিক না হয়ে ইয়াসির খান হলে কি আপনার ভাল লাগত, ম্যাডাম?
প্রেমের চৌষট্টি কলা জানা এমন পুরুষের সাথে কথায় পেরে উঠা যাবে না,রুপন্তি তা জানে! প্রতি মঙ্গলবারের মত আজও অনিক রুপন্তিকে একটু একটু করে জাগিয়ে তুলে। নিঃশ্বাস ভারি হতে থাকে তার। যে মুহুর্তে রুপন্তি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না, আবেশে তার চোখ বন্ধ, তার ভেতরে অনিকের শত জনমের প্রেম – ঠিক সেই মুহুর্তে একটা ছোট্ট ধারালো ছুরি নির্ভুলভাবে তার হৃদপিন্ড ভেদ করে গেল। নিপুণ দক্ষতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলার আগেই অনিক বেরিয়ে এল রুপন্তির ভেতর থেকে। ছুরির বাঁট থেকে আঙুলের ছাপ মুছে ফেলল, তার কাজ শেষ!

খুব ছিমছাম আর চুপিসারে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো অনিক। কিন্তু হাটতে হাটতে তার বোধ হচ্ছে ম্যাডামের সঙ্গে অভিনয় করতে শেষের দিকে তার ক্যামন একটু খারাপই লাগছিল!

সে ভাবছে ম্যাডাম কখনো জানবে না যে এই এসাইনমেন্টটা তাঁর স্বামীই অনিককে দিয়েছিলো।
'স্যার, কাজটা শেষ'
'সাব্বাশ ব্যাটা'
মোবাইলটা কান থেকে নামিয়েঅদূরে গিয়ে অটো রিক্সাতে উঠতেই পিছন থেকে একটা গুলি, লাগলো অনিকের মাথায়! অনিক মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লো।

ইয়াসির সাহেব পার্টি অফিসে। মাত্র সাংবাদিকদের ঘর থেকে বিদায় দিলেন। কাল পত্রিকায় কি লেখা হবে সেটাও প্রুফ রিডিং হয়ে গেছে!
এলাকায় দ্রুত এ খবর পৌছালো। স্থানীয় এমপি রশিদ সাহেব সমবেদনা জানাতে ইয়াসির খানকে ফোন দিলো। ইয়াসির খানের মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো-
'আমার পরাণ যাহা চাই, তুমি তাই... তুমি তাই গো...।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.