নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"তোমার হৃদয়ে থাকিবো আমি, ভাসিবো চোখের পলকে।তোমাকে ভুলে যাইবো আমি, তবু আমাকে দেবোনা ভুলিতে !! \" -সাইফুল্যাহ আমিন

সাইফুল্যাহ আমিন

সাইফুল্যাহ আমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

"লং ট্যুর" একটা স্বপ্নের নাম-২ !!

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৪

"লং ট্যুর" এর প্লান অনুযায়ী খাগড়াছড়ি থেকে আমরা চলে গেলাম "লাল পাহাড়ের দেশ" খ্যাত রাঙ্গামাটিতে। প্রায় রাত ৮ টায় রাঙ্গামাটি পৌঁছে আমরা পূর্ব নির্ধারিত রাঙ্গামাটি শহরের 'হোটেল প্রিন্স' এ চেক ইন করলাম। যে যার মতো ফ্রেশ হয়ে ডিনার কমপ্লিট করে কেউ কেউ হারিয়ে গেলো ঘুমের রাজ্যে, কেউ গিয়েছিলো পার্শ্ববর্তী স্থানে একটা মেলায়, সেটা থেকে কেনাকাটা করতে, কেউ কেউ আড্ডায় মাস্তিতে কাটিয়ে খুব কম ঘুমিয়েছে।

আমাদের পরেরদিনের ট্রিপ ছিলো দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ 'কাপ্তাই লেক' এ। কাপ্তাই লেক সম্পর্কে একটু জেনে নিলাম আগেই, কাপ্তাই লেকটা রাঙামাটি জেলার তথা বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান। লেকটি রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত একটি মানবসৃষ্ট লেক। যার আয়তন ১১০০ বর্গকিলোমিটার। এটি ইংরেজি এইচ (H) অক্ষরের মতো দেখতে। এর দুটি পাড় সুভলং ঝর্ণার কাছে একটি সংকীর্ণ গিরিসংকট দ্বারা পরস্পরের সাথে সংযুক্ত, যা কর্ণফুলীর দুটি মূল শাখার সাথে মিশে আছে।

১৯৫৬ সালে কর্ণফুলী নদীর উপর "পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র" স্থাপনের জন্যে বাঁধ নির্মাণ করা হলে আশপাশের প্রায় ৫৫ একর জায়গা পানিতে তলিয়ে গিয়ে এই চমৎকার মনোমুগ্ধকর নীল পানির কৃত্রিম লেকের সৃষ্টি হয়। মূলত এই কাপ্তাই লেক'কে ঘিরেই রাঙ্গামাটি জেলার পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও প্রসার ঘটেছে। এই লেকের উপরেই রয়েছে রাঙামাটির বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রীজ, লেকের ধারে ছবির মতো সুন্দর করে সাজানো উঁচু নিচু সবুজ পাহাড় আর টিলা, লেকের মাঝেই বিখ্যাত প্যাদা টিং টিং রেস্টুরেন্ট, বৌদ্ধ মন্দির, আদিবাসীদের গ্রাম, শুভলং জল প্রপাতসহ আরো অনেক আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। বাঙালি ও আদিবাসীদের প্রাণচাঞ্চল্যে এখানকার প্রকৃতিকে দিয়েছে এক নিবিড় বৈচিত্র্যের মেলবন্ধন।

রাঙামাটিতে এই লেক ছাড়াও আপনি আশেপাশের আরো সব অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য এক জীবন্ত দৃশ্যের মতো সাজানো আছে মনে হয়। যা আপনার জন্যে এক অনন্য অভিজ্ঞতা বয়ে আনবে। কাপ্তাই লেকের ধারে আছে নতুন চাকমা রাজবাড়ী, বৌদ্ধ মন্দির, পিকনিক স্পট, শেখ রাসেল ইকোপার্ক। এছাড়াও এই লেকে কায়াকিং এর ব্যবস্থা আছে। জেলার অন্যস্থানে আরো বেতাবুনিয়া স্টেশন, কর্ণফুলী পেপারমিল সহ আরো অসংখ্য পর্যটন স্পট। আপনি চাইলে সারাদিনের জন্যে জিপ, ট্রলার, স্পিড বোট ও নৌকা ভাড়া করে পুরো লেক ও এর আশেপাশের এলাকাসহ বাকীসব ঘুরে আসতে পারেন।

রাতেই আমাদের দায়িত্বশীল বন্ধুগন এবং স্যার'রা ইঞ্জিনচালিত নৌকা ঠিক করলেন, যেহেতু আমরা সংখ্যায় একটু বেশি তাই স্পিড বোট নেওয়া হয়নি। সকালে ছয়টায় ঘুম পুরানোর আগেই আমরা রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে সব বন্ধু মিলে উঠে গেলাম নৌকাতে। আমার লাইফে আমি অনেক ছোট খাটো নৌ ভ্রমণ করেছে, তবে এত সুন্দর মনোরম দৃশ্যরূপ আমি কখনো দেখিনি। উইকিপিডিয়ায় পাওয়া তথ্য আর ইউটিউবে দেখা ভিডিও যখন আমি নিজ চোখে অবলোকন করছিলাম, বিশ্বাসই হচ্ছিলোনা আমার, দুই চোখে যাই দেখছিলাম মনো হচ্ছিলো স্বর্গ দেখছি, লেকের আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এক কথায় অসাধারণ সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর।

ছবির মতো সুন্দর করে সাজানো উঁচু নিচু সবুজ পাহাড় আর টিলা, লেকের স্বচ্ছ নীল জলরাশি, মাঝে মাঝে জেগে উঠা ছোটো ছোটো সবুজ দ্বীপ, লেকের মধ্যে পাড় ঘেসে আদিবাসীরা ছোট নৌকা ব্যাবহার করে ঝাল দিয়ে মাছ ধরছে। আমি সত্যিই অবাক হচ্ছিলাম এতো সুন্দর দৃশ্য দেখে, ঠিক যেনো ছবির মতো চোখে ভাসে !!

সত্যিই, নৌকা ভ্রমণ ছিলো আমাদের জন্য অনেক ইন্টারেস্টিং, বিশেষ করে আমাদের সাথে কিছু বন্ধু বান্ধবী সাঁতার জানতোনা, এই বিধায় তারা অনেক ভয় পেতো, আমরাও মজা করে ভয় দেখাতাম। এই ব্যাপারে বন্ধু রমজানের কথা না বললেই নয়, মনে মনে ভাবি সাঁতার না জানা এই ছেলেটা হাবুডুবু খাওয়ার ঐ রমনীর ভালোবাসার সাগর কিভাবে পাড়ি দিবে?

কাপ্তাই লেকটা যে সুভলং ঝরণার জন্য বিখ্যাত, সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারিনি পুরোপুরি। কারন আমাদের দূর্ভাগ্য যে সেটাতে জলপ্রপাত ছিলো না, যা ছিলো খুব সামান্য, তাই আমরা অনেকেই ওটা দেখিনি, তবে সত্যিই আপসোস করেছি, ইশ !! যদি জলপ্রপাত পুরোপুরি থাকতো তাহলে কেমন হতো?? ঠিক এই আপসোসটা আমরা একটু হলেও পূরণ করেছি তার পাশেই থাকা আরেকটা ছোট আকারের ঝরনায়, যার নামটা মনে পরছেনা !! যেটাতে আমরা প্রায় অনেকেই গোসল করেছি,গোসলের সময় অনেক মজা করেছি এবং পাহাড় বেয়ে উপরেও উঠেছি, এই জন্য স্যারের বকাও খেয়েছি, বকা খেয়ে বলেছি, স্যার আমরা পাহাড়ি মোরগ ধরতে গিয়েছি !!

আমরা ঝরনায় গোসল শেষে আবার নৌকায় উঠে পড়লাম, তারপরে গেলাম বৌদ্ধ মন্দিরে। সেখানে দেখার মতো তেমন কিছুই নেই মন্দির ছাড়া, তবে কম দামে শাল ও তোয়ালে কিনতে পারবেন, আমাদের কেউ কেউ কিনছেও, আর কলাতো সস্তাই, যেটা না খেলে অপরাধ হবে !! এর কিছুক্ষন পরে আমরা পৌঁছে গেলাম রাঙ্গামাটির বিখ্যাত পর্যটন স্থান ঝুলন্ত ব্রীজে, এটা দেখতে একটু ভালো লাগলেও ঝুলন্ত ব্রীজ নামকরনের সার্থকতা আমার বোধগম্য হলোনা, কিংবা তেমন একটা মজা পাইনি ব্যাক্তিগত ভাবে আমি।

তবে ব্রীজের এপার ওপার করে ইতড় টাইপের বন্ধুরা দুলুনি দিলে ব্রীজে দোল খাওয়াটা নেহাত মন্দ না !! ব্রীজের পাশেই পাহাড়ের উপরে আদিবাসীদের দোকান আছে, অবশ্যই আদিবাসী মেয়েরা দোকান করে, তাদের সাথে মজা না করলে কি চলে?? কিন্তু ঝুলন্ত ব্রীজে গিয়ে রাঙামাটিতে চাষ করা রসে টস টসে ফাকা আনারস খেতে একটুও ভুল করিনি, একদম ফ্রেশ আনারস যে কেমন মিষ্টি তা গিয়ে না খেলে বুঝবেন না।

প্রকৃতির এ অপরূপ সৌন্দর্যের আসলে কোন তুলনা চলে না, ভাষায় প্রকাশ করাও সম্ভবও না। যতদুর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি, আর মাঝে মাঝে ভেসে আছে পাহাড়। সামনে এগোতে এগোতে দূরের পাহাড়গুলো স্পষ্ট হতে শুরু করে। ইচ্ছে করে থেকে যেতে, কিন্তু প্রকৃতির তো ঠেকা পড়েনি আমাদের রেখে দিতে, তাই আমরা ফিরে এলাম নৌকায়, লান্সের আগেই আমরা রাঙ্গামাটি শহরের নৌঘাটে চলে আসলাম, লান্স শেষ করে হোটেলে গিয়ে আবারো বেরিয়ে পড়লাম। -কোথায় বেরিয়ে পড়লাম?? জানতে চোখ রাখুন পরবর্তী লং ট্যুর নামক পোস্টে....
#Ranggamat
#LongTour2K18
#Dept_of_CSE_DUET

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৮

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: শুভলং এখন মৃত, ছোট ঝর্ণাটাই এখন আগের থেকে আরো উচ্ছল। রাঙামাটি আমার অন্যতম সেরা ফেবারিট যায়গা.......ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৬

সাইফুল্যাহ আমিন বলেছেন: আসলেই ভাই, শুভলং ঝর্না এখন মৃত। আমরা ছোট ঝর্নাটাতেই গোসল করছি, অনেক মজা করছি। আর সত্যিই রাঙ্গামাটি অনেক সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর জায়গা..

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৬

সাহিদা সুলতানা শাহী বলেছেন: প্রকৃতির কি মনোরম দৃশ্য! দেখে মন ভরে গেল।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৭

সাইফুল্যাহ আমিন বলেছেন: সত্যিই আমাদের বাংলা, আমাদের দেশ অনেক অনেক সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। বিশেষ করে রাঙ্গামাটি অনেক সুন্দর...

৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: তিন মাস পর পর বেড়াতে যাবেন। অনেক অভিজ্ঞতা হবে।

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৪৬

সাইফুল্যাহ আমিন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। চেষ্টা করব বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে।

৪| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:৪৬

প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: পার্বত্য চট্রগ্রামের কিছুই দেখা হয়নি আপনাদের ।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০৭

সাইফুল্যাহ আমিন বলেছেন: আমরা চট্রগ্রামে যাইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.