নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“পাহাড়ের কান্না গুলা গড়িয়ে সমুদ্রে আঁছড়ে পড়ে ঢেউ তোলে, আর সেই ঢেউয়ে ভাসিয়ে তলিয়ে নিয়ে যায় জীবন তরী”

সৈকত মিত্র বড়ুয়া

❝পাহাড়ের কান্না গুলা গড়িয়ে সমুদ্রে আঁছড়ে পড়ে

সৈকত মিত্র বড়ুয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

একুশ আমার অহংকার, একুশ আমার চেতনা।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:০৫

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আজকের এই দিনে ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে রচিত হয় অমর একুশে। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের বাঙ্গালী জাতির জন্য একটা গৌরবোজ্বল দিন। আজকের এই দিনটি বাঙ্গালী জাতিকে এনে দিয়েছিল মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য তাদের নিজের দেশের ভাষা।







১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন পল্টন ময়দানে এক ভাষণে বলেন, “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা”। - এ ঘোষণায় পরপরই ছাত্র-জনতা বারুদের মতো জ্বলে উঠে। ৪ ফেব্রুয়ারী ঢাকা শহরে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয় এবং ২১ ফেব্রুয়ারী প্রদেশব্যাপী ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারী সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে ৪ জনের অধিক সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ সহ অনেকেই ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার বিপক্ষে মত দেন, কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারী গভীর রাতে নেতৃস্থানীয় ছাত্র নেতারা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার জন্য একটি পরিকল্পনা নেন। তাদের প্রথম যে সত্যাগ্রহী দলটি বের হবে তাদের প্রথম গ্রুপের নেতৃত্ব দেবেন হাবিবুর রহমান শেলী। কারণ শেলী ছিলেন তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সেরা ছাত্র।





১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী সকাল থেকেই বিভিন্ন স্কুল কলেজ থেকে দু’জন করে ছাত্র-ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জমায়েত হতে শুরু করে। সকাল ১১টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। চারদিক থেকে ধ্বনিত হয়-“১৪৪ ধারা মানি না, মানি না”। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় দশ-দশ জন করে একেকটি দলে বিভক্ত হয়ে ভাষার দাবিতে শ্লোগান দিয়ে পরিষদ ভবনের দিকে যাবে।

এ সিদ্ধান্তে একের পর এক সত্যাগ্রহীর দল ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানে এগিয়ে যেতে থাকলে, পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে গাড়িতে তুলতে থাকে। এক পর্যায়ে ছাত্রদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষে হয় পুলিশের। পুলিশ বেপরোয়া গুলি চালালে, গুলির নির্মম আঘাতে রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা আরও অনেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য শাহাদত বরণ করেন। ঢাকার রাজপথ তখন রক্তে রঙ্গিন হয়ে যায়। পবিত্র শিক্ষাঙ্গন হয়ে উঠে কলুষিত। সারাদেশে ছড়িয়ে যায় বিদ্রোহের আগুন। রাতারাতি তৈরী হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।







আজ একুশে ফেব্রুয়ারি অনেকেই যাবে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। শুধু মাত্র আজকের এই দিনটাকে শ্রদ্ধায় টুইটুম্বুর করে দিবে। বেশ কিছুদিন আগে সময় টিভির একটা শর্ট ভিডিও দেখেছিলাম সেখানে প্রশ্ন করা হয়েছে যে- ১৯৫২ সালেএকুশে ফেব্রুয়ারিতে কি হয়েছিল ?



*একটা ছোট্ট মেয়ে উত্তর দিয়েছিল-হুমম সেদিন যুদ্ধ হয়েছিল।

*অরেকজনের উত্তর- এবার কিন্তু ছোট্ট না কলেজে পড়ুয়া মেয়ের উত্তর- ভাল করে তো বলতে পারব না।

*এবার পাশের জন, সম্ভবত মেয়েটির মা - একুশে ফেব্রুয়ারিতে আসি,সবসময় যাদের আত্ব.... করেছে তাদের জন্য আমরা....

এরপর সাংবাদিক : কোথায় এবং কি হয়েছিল...? মহিল- না সেটা আমি সঠিক বলতে পারব না।

* এবারে দেখুন একজন কলেজ পড়ুয়া ছাত্র কি বলে- অনেক যুদ্ধের পর আমাদের এই স্বাধীনতা ........ সাত মাস যুদ্ধ করার পর আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি।

সাংবাদিক: একুশে ফেব্রুয়ারি... আমরা কি জন্য পালন করি এটা ? ছেলেটি - আমাদের অনেক বীর মুক্তি যুদ্ধা এই দিনে শহীদ হয়েছে তাই আমরা এই দিনটা গভীর শোক হিসেবে পালন করি।

* এবারে আরেকজন কলেজ পড়ুয়া ছাত্র- একুশে ফেব্রুয়ারি তো অমর শহীদের রক্ষে রাঙ্গানো, সে দিন জাষ্ট যুদ্ধ হয়েছিল।

* এরপরে কতগুলা ছোট ছোট বাচ্চা উত্তর দিয়েছিল, কেউ বলেছে স্বাধীনতা যুদ্ধ, কেউ বলেছে মুক্তিযুদ্ধ, আবার কেউ বলেছে জানিনা ভাইয়া।







এবারে দেখুন জাতি হিসেবে আমরা কতটুকু লজ্জিত। ছোট ছোট গুলার কথা তো বাদ দিলাম কিন্তু কলেজে পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত জানে না আসলে ২১শে ফেব্রুয়ারিটা কি। কি জন্য আমরা এই দিনটা পালন করি। যেখানে মা-বাবা জানেন না , সেখানে তাদের ছেলেমেয়েরা জানবে কোথা হতে। যেখানে স্কুলের ছোট ছোট শিশুদের জানার কথা কথা সেখানে তারা বলতেছে ভিন্ন কথা।



যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকের আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা অর্জিত তাদেরি বা কতটুকু শ্রদ্ধা আমরা করি। শুধু মাত্র একটি দিন নয়, তাঁরা আমাদের হৃদয় মন্দিরে থাকবে বছরের পর বছর। যুগের পর যুগ। রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত আরো নাম না জানা অনেক শহীদের রক্তে আমাদের আজকের প্রাণের বাংলা ভাষা। বাংলার আকাশে-বাতাসে তোমরা থাকবে আজীবন।







আমরা রক্তের বিনিময়ে আমাদের মাতৃভাষা অর্জন করেছি। যে দেশের মানুষ মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে পারে অথচ সে দেশের অগনিত মানুষ বর্ণমালার সাথে পরিচিত নন। এটা আমাদের জন্য অনেকটা লজ্জা জনক সাথে আমাদের দুর্ভাগ্য। এখনি হতে যদি আমরা সচেতন না হয় তাহলে অধুর ভবিৎষতে আমাদের প্রজন্ম ভাষার মাসটার কথায় ভুলে যাবে।



তাই আসুন এই ঐতিহাসিক দিনটিতে আমরা আমাদের ভাষা ও বিশ্বের ভাষাগত বৈচিত্র্য রক্ষায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর শপথ গ্রহণ করি। এটাই হউক উত্তরাধিকারীদের কাছে আমাদের অঙ্গীকার। তাইতো কবিতার সুরে সুরে বলতে হয়- একুশ মানে প্রভাতফেরি নতুন রাঙা ‍ভোর, একুশ মানে কন্ঠে কন্ঠে প্রতিবাদী স্বর। একুশ মানে কৃষ্ণচূড়ার অমর রক্ত বর্ণ, একুশ মানে মাতৃভাষা অমূল্য স্বর্ণ। একুশ মানে নগ্ন পায়ে শোকের আত্মপ্রকাশ, একুশ মানে বিজয় পথে নেয়া মুক্তশ্বাস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.