নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি সম্ভাবনার অপমৃত্যু.........!

১৫ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:১৮

মেয়েটি ছাত্রী হিসেবে যথেষ্টই মেধাবী, প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত কখনোই ৩য়র নিচে নামেনি, কোন পরীক্ষার ফলাফলই। তাই পরিবারের সবার প্রত্যাশা একসময় বেশ ভালো একটা ডিগ্রী নিয়ে, মানসম্মত কিছু একটা করবে এবং পরিবারের সবাইকে করবে আনন্দিত ও গর্বিত... বেশ ভালোই চলছিল সকাল-দুপুর-সন্ধা-রাত্রি, হেসে-খেলে, হাসি-আনন্দে, মান-অভিমানে, সুখ-দুঃখের আর ব্যাথা-বেদনার সংমিশ্রণে...

হঠাৎ এলো ঝড়, না কালবৈশাখী, না নার্গিস, না আইলা! এ যেন সুনামি বয়ে গেল জীবন ও বেঁচে থাকার উপর দিয়ে, ছিনিয়ে নিল স্বপ্ন, ভেঙে দিল আশা, উড়ে গেল সব সম্ভাবনা, এক নিমিষেই, কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই! হাঁয় এখন? কি হবে? কি আর হবে, আমাদের দেশের চিরাচরিত নিয়ম ও বাস্তবতার চিত্র, সমস্ত আবেগ আর আশাকে পুড়িয়ে ফেলে এই একা মেয়েটিকেই হাল ধরতে হবে সংসারের। কিন্তু কিভাবে?

মেয়েটি এবার তার পড়াশুনাকে গৌণ করে সংসারের হাল ধরাটাকে মৌলিক বা অবশ্যম্ভাবী করে তুলল, সকাল থেকে টানা টিউশানি, টিউশানির ফাঁকে যেঁটুকু সময় পায় ক্লাস করা বা পরীক্ষায় বসা, বাসায় ফিরে একটু বিশ্রাম বা পেটের চাওয়ার কাছে নিজের আত্ন-সমর্পণ এ ছাড়া যে বিকেলের টিউশানিতে মনোযোগ দিতে পারবেনা! বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত আবার টিউশানি, বাড়ি ফিরে ক্লান্তি আর খাটুনির কাছে অসহায় আত্ন-হনন!

নিজের পড়াশুনা? সেতো শিকেয় উঠেছে...! কিভাবে সম্ভব সারাদিনের এই ক্লান্তিকর আর ঘাম ঝরানো, অল্প বয়সের অতিরিক্ত মানসিক চাপ সামলে আবার নিজের পড়াশুনাও স্বাভাবিক ভাবে চালিয়ে নেয়া? মানুষ তো দেবতা নয়, মানুষ তো মানুষ-ই, স্বাভাবিক মানুষ।
অথচ এই সময়ে ইচ্ছে হয় একটু টিভি দেখার, একটা সিনেমা দেখার, বন্ধুদের সাথে একটু আড্ডা দেয়ার। বিকেলে ইচ্ছে হয় একটু নদীর পাড়ের ঝিরঝিরে বাতাস গায়ে ছোঁয়াতে, মুঠো-মুঠো বালু তুলে নদীর পানিতে ছুড়ে মারতে, স্বচ্ছ জলে পা ভেজাতে, ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে জুবুথুবু হতে, গায়ে-পায়ে কাঁদা মাখাতে, কলের তোলে মাথা নোয়াতে... আরও কত কি? বন্ধুদের সাথে ভাঁজা খেতে, দু-একটি চিঠি পেতে! কাউকে নিয়ে আবেগে বাসতে!

কিন্তু সেই ভাবনা গুলোর ভাবার সময়ই তো নাই। এই ভাবে দিন যেতে-যেতে, ধীরে-ধীরে মেধাবী ছাত্রী থেকে মাঝারী আর মাঝারী থেকে “কোন রকম চলে” মানের ছাত্রীতে অবনতি হল! অথচ এমন কথা ছিলনা, আদৌ ছিলনা। হতে পারতো অন্য রকম, স্বাভাবিক-সুন্দর ও হাসি-খুশি একটা জীবন।

এভাবে দিন-দিন পড়াশুনার ফলাফল খারাপ হতে থাকাতে পারিবারিক চাপ আরও বাড়তে থাকলো, সেই সাথে বাড়তে থাকলো পরিবারের দায়িত্তের চাপও। ছোটদের পড়াশুনা, বৃদ্ধ জনের অসুস্থতা, সাথে উপরি হিসেবে আছে লাঞ্চনা-বঞ্চনা আর গঞ্জনা, আর আছে নিজেকে নিজের থেকে হারিয়ে ফেলে অর্থ ও উদ্দেশ্যহীন জীবন-যাপন করা! বেঁচে থেকেও না থাকা, স্বপ্ন থেকেও না দেখা আর ভাবনা এসেও বাতাসে মিলিয়ে যাওয়া!

এইভাবে পরিবারের সকলের জন্য সম্ভব-অসম্ভব সবটুকু করে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে নিঃশেষ হয়ে, সৌন্দর্যের পড়ন্ত আর বয়সের মধ্য বেলায় এসে দেখতে পেল...... ছোটরা পড়াশুনা করে বড় হয়েছে, নিজেদের মত কর্মসংস্থান করে চলে গেছে দূরে বহু দূরে, বাড়ির বৃদ্ধদের কোন রকম দু-চার টাকা দিয়ে দায়িত্তের শেষ সেরে ফেলে আর সেই বোনকে পরিত্যাক্ত করে সাথে আজেবাজে আর গাঁ ঘিনঘিনে মন্তব্য! এমনকি বাড়ির বড়রাও সেই স্রোতের সাথে মিশে গিয়েছে! হাঁয় জীবন কি নির্মম!

এমন নয় যে জীবনে প্রেম আসেনি, আসেনি ভালোবাসা, এমন নয় যে কেউ ভালোবাসা বা ভালোলাগার কথা বলেনি? এমন নয় যে কেউ দাড়িয়ে থাকেনি বর্ষাকালে ছাতা হাতে, সন্ধ্যায় দেয়নি রিক্সা ঠিক করে, ফোন দিয়ে নিশ্চিত হয়নি পৌছালাম কিনা? হাত বাড়িয়ে দেয়নি অনিশ্চয়তায়, সাথি হয়ে চায়নি সব কিছুর, ভাগাভাগি করতে চায়নি একে-অন্যের সুখ-দুঃখ, পাশে থাকতে চায়নি সবসময়ের, সব অবস্থার!

উপেক্ষা করেছিল সব-সব-সব কিছুই, পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে ভেবে, কটু কথার ভঁয়ে, পরিবার আর ছোটদের আগামীর কথা ভেবে আর এই ভেবে যে শেষে না আরও বেশী কষ্টের হয়ে ওঠে এই জীবন, যে আনন্দ হয়ে উঠবে আরও বিষাদময়, আরও অসহনীয়, আরও অবাস্তব! কারণ, একেবারে না পাওয়ার কষ্টের চেয়ে, পেয়ে হারানোর কষ্ট অনেক-অনেক-অনেক বেশী।

কিন্তু এ কি হল শেষে এসে? সবই কি তবে মিছে, এতদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি, নিজের সম্ভাবনার নিজ হাতে চুরমার করে ফেলা? সকলের অবজ্ঞা আর অবহেলার পাত্রী হয়ে যাওয়া, সবাই সব কিছুই ভুলে গিয়ে দিব্যি আছে হাসি-আনন্দে, নিজেদের মত করে.....

করে মেয়েটিকে অপাংতেয়............! সমাজ-সংসার আর নিজের কাছেই.........!!

এটি একটি গল্পের নেতিবাচক অংশ......

(ইতিবাচক অংশ! ঝড়... বয়ে যাও, উড়িয়ে নিওনা......! )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.