নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাৎসরিক চুরি উৎসবের দিন! (সেই বৈশাখ, এই বৈশাখ)

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৩৫


বৈশাখ কি এখন আর বৈশাখ আছে? প্রশ্ন নিজের কাছেই নিজের! অন্তত আজ থেকে ২০ বা ২৫ বছর আগের সাথে যদি মেলাতে যাই। অবশ্য থাকবেনা যে সেটাই স্বাভাবিক। বদলে গেছে প্রায় সব সব সব কিছুই, জীবন-যাপন, চিন্তা-চেতনা, ধরন-ধারন, সামাজিকতা, আতিথিয়তা, প্রযুক্তিগত ব্যাপার-স্যাপার। আর বদলেছি আমরা সবাই।

আজ থেকে ২০ বা ২৫ বছর আগে আমরা যেভাবে বৈশাখকে দেখেছি, আমার পরবর্তী প্রজন্ম কি সেভাবে বৈশাখ দেখেছে? নাহ দেখেনি, দেখার প্রশ্নই আসেনা। ওদের কাছে এখনকার বৈশাখ উদযাপনই আজ থেকে ২০ বছর পরে মনে হবে সঠিক বৈশাখ উদযাপন! ২০ বছর পরের পরিবর্তনগুলো হয়তো ওদেরকে অবাক করে দেবে, এ কি হচ্ছে? ঠিক যেমন আজকালকার বৈশাখ উদযাপন আমাদের অবাক করে দেয়, এ কি হচ্ছে? ঠিক তেমনি।

আমাদের কাছে সেই সময়ের বৈশাখ ছিল এখনকার তুলনায় একেবারেই প্রাকৃতিক বৈশাখ! এখন যেটা আধুনিক, ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল বৈশাখ! নয় কি? ভেবে দেখিতো একটু! আমাদের বৈশাখে নতুন কাপড় ভাবনাতেই ছিলনা, দুই থেকে পাঁচ টাকা ছিল অরাধ্য স্বপ্ন! দুই টাকা খুব স্বাভাবিক ছিল, তবে পাঁচ বা দশ টাকা ছিল আকাশের চাঁদ হাতে পাবার সমতুল্য! সেই দুই বা পাঁচ টাকারও কত উপযোগিতা ছিল।


মাটির পুতুল আর পাতিলের দোকানে দল ধরে ভিড় করা, যেন দুই চারটি চুরি করা যায়! আর হয়েও যেত সেই চুরি সফলভাবে! অতশত মানুষের ভিড়ে একজন দোকানি আর কতজনের দিকে চোখ রাখবে? সেই সুযোগে দুরুদুরু বুকে, কেউ-কেউ পুতুল আর কেউ কেউ মাটির পাতিল চুরি করে বৈশাখের প্রথম সফলতার দারুণ এক “ভয়ার্ত সুখ” ভোগ করতাম! এরপর চার আনার বাঁশি, আট আনার খোরমা পাতিলে ভরে, পরবর্তী চুরির সুযোগ খুঁজতে থাকতাম।

অনেকে মিলে রঙিন বরফ উৎসব করে, টাকা না দিয়েই চলে আসতাম! অন্যান্যরা ভিড় করার পরে। আর তারপর সেকি আনন্দ, যে টাকা লাগলোনা! টাকা না দিয়েই নাগর দোলায় চড়া, কয়েকবার ঘুরে-ঘুরে এটা-সেটা-ওটা চুরি করে ব্যাগ ভর্তি করে ফেলা! আহা কি যে সুখ ছিল সেই সব চুরিকরা জিনিষে! আর সেই সব বৈশাখের সবথেকে আকর্ষিণীয় জিনিষ ছিল স্টিলের পিস্তল! যার সাথে থাকতো লাল রঙের চিকন ফিতার মাঝে মাঝে দিয়াশলাইয়ের বারুদের অংশ, যেটা ভিতরে দিয়ে পিস্তল চালাতে শুরু করলেই সামান্য ধোঁয়া ছড়ানো ঠাস ঠাস শব্দের এক অদ্ভুত আনন্দের শিহরণ বয়ে যেত। পুরো বৈশাখের সমস্ত রোমাঞ্চ ছিল ওই স্টিলের পিস্তল আর তার লাল-কালো বারুদের ফিতায়!


চুরি উৎসব ততক্ষণই চলতো বা অন্তত চেষ্টা চলতো যতক্ষণনা একটা পিস্তল নিজের আয়ত্ত করা যায়! আর একটা পিস্তল নিজের করে নিতে পারলে সেটা হত সেই সময়ের সেরা রোমাঞ্চকর ঘটনা। তবে এই সেরা রোমাঞ্চের স্বাদ পেতে হলে অপেক্ষা করতে হত, অনেক অনেক সময়। কারণ ওইসব দোকানে একজন দোকানি থাকতোনা, সব সময়ই একের অধিক দোকানি থাকতো। কেউ বেচাকেনায় আর কেউ কেউ চারপাশের ছেলে-ছোকরাদের পাহারায়। তাই সেই চুরিটা ছিল সবচেয়ে রোমাঞ্চকর!

এরপর বাঁশি বাঁজাতে বাঁজাতে আর ঢোল পেটাতে পেটাতে, ফিরে আসা। গ্রামের ধুলো ওড়া কাঁচা রাস্তা দিয়ে, বাড়ির কাছে, তবে বাড়িতে নয়! কেন? কারণ এতো এতো জিনিষ যে কিনেছি! (চুরি করেছি!) সেটা বাড়িতে দেখলে তো আর রক্ষে নেই! তাই সেগুলোকে গাছের ঝোপ-ঝাড়ের মাঝে সংগোপনে লুকিয়ে রেখেই না বাড়ি ফেরার সাহস যোগাতাম! ও হ্যাঁ একটা কথাতো এখনো বাকি থেকে গেছে, সেই দুই বা পাঁচ টাকা থেকে কিন্তু অর্ধেকের চেয়েও বেশী টাকা এখনো রয়েগেছে পকেটে! বিকেলে মার্বেল খেলার জন্য! অথবা ম্যাচের খোসা দিয়ে তাস বানিয়ে, চারা খেলার জন্য!

ইস ইস ইস, কি সব বৈশাখ ছিল, সেই সব বৈশাখ! সত্যি কারের রঙিন বৈশাখ, সত্যি কারের আনন্দের দিন, সত্যিকারের উৎসবের দিন। সত্যিকারের বর্ণিল বৈশাখ ছিল, সেই সব বৈশাখ। আহা আজকালকার বৈশাখ! (বৈশাখের ছবি) দেখি আর সেইসব বৈশাখের সৃতিচারণ করি আর আজও হারিয়ে যাই, ঢোল-বাঁশির মূর্ছনা আর স্বপ্নের পিস্তলের ঠাসঠাস রোমাঞ্চকর শব্দের সৃতিতে!


আর আজকালকার বৈশাখ? শহর তো শহর, গ্রামেও নেই সেই বৈশাখ। আজকাল বৈশাখ, হয় নতুন আর দামি-দামি ব্রান্ডের কাপড়ে, হাজার হাজার টাকায় কেনা ইলিশে, রঙবেরঙের ছবি তুলে রাঙিয়ে তোলা ফেসবুকে, কে কোন ঢঙে সেলফি তুলতে পেরেছে সেটা দেখিয়ে শতশত লাইক পেতে। খুব উঁচু রুচির যারা, তারা কিছু সময় কাটিয়ে আসে চারুকলা বা রমনার বটমূলের রঙিন বেদীতে। সেখানেও আছে সেলফি, ফেসবুক আর আধুনিকতার নামে ডিজিটাল মাধ্যমের ঝনঝনানি।


সেই বাঁশিও নেই, সেই ঢোল ও নেই, আর নেই সেই রোমাঞ্চকর স্টিলের পিস্তলের সাথে লাল-কালো বারুদের গন্ধ! যেটা ছিল আমাদের বর্ণিল বৈশাখ। এখনকার বৈশাখ হল আমাদের পরের প্রজন্মের বৈশাখ। রঙিন বৈশাখ, আধুনিক বৈশাখ, ডিজিটাল বৈশাখ। যদি বেঁচে থাকি তো দেখতে চাই আগামী ২০ বা ২৫ বছর পরের বৈশাখ!

ভাবছি কেমন হতে পারে সেই বৈশাখ?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৫০

সভ্য বলেছেন: ভালো লিখেছেন, সত্যি তখনকার বৈশাখের মজাটাই ছিলো অন্যরকম, বন্ধু বান্ধব নিয়ে বৈশাখী মেলায় ছোট-খাটো চুরির রোমান্স আর থ্রিল ছিলো আলাদা, তবে শেষ কথা এই যে, সব সময়ের বৈশাখে যেটা কখনো হারিয়ে যাবে না, তা হলো গান, "এসো হে বৈশাখ, এসো এসো..তাই না। ভাল থাকবেন।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৫৫

সজল জাহিদ বলেছেন: ভালো থাকুন আপনিও, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.