নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চালতা’র সামাজিক মর্যাদা......!

১৪ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:১৬


আচ্ছা, চালতা ফল না সবজি না অন্যকোন ভোগ্য গোত্রের অন্তর্ভুক্ত?

তার চেয়েও বেশী গুরুত্তপূর্ণ চালতা নামক বস্তুটা সবার চেনা-জানা বা পরিচিত কিনা?

কারণ, আজকাল এই ডিজিটাল ও ভার্চুয়াল সময়ে এসে আমরা অধিকাংশ মানুষই তো বাস্তবতা ও সত্যিকারের প্রকৃতি বা স্বাভাবিকতা ভুলতে বসেছি।

সুতরাং যে কথা বলছিলাম, চালতা, হ্যাঁ এটা অজো পাড়া গাঁয়ে বা সত্যিকারের গ্রাম্য বন-জঙ্গলে বা অত্যন্ত পরিত্যাক্ত ঝোপঝাড়ে বেড়ে ওঠা এক বড়সড় গাছ, যেখানে বছরের কোন এক সময়ে সাদা আর হলুদের মায়াবী ও মোহনীয় সংমিশ্রণে চমৎকার গন্ধ যুক্ত বেশ বড় আকারের ফুল ফোটে, সেই ফুল স্বাভাবিক নিয়মে ঝড়ে গিয়ে একসময় চালতা নামক বস্তুর আকার ধারন করে।

এই বস্তু খেতে ভীষণ-ভীষণ টক হয়, আমি সাধারণত টক খাইনা বা খেতে পারিনা, তবুও ছোট বেলার কথা যতদূর মনে পরে বাড়ির বড়রা কেউ যখন এক-আধ চিলতে দিত, খেতে না চাইলেও! আমি ঘরে থাকা ঝোলাগুড় দিয়ে ডুবিয়ে চালতার রুক্ষ ও তিক্ত স্বাদকে মিঠে আর খাবার যোগ্য করে খেতাম!

ওই বস্তুকে গ্রামে বা মফস্বলে থাকার সময় পর্যন্ত রাস্তা-ঘাট বা পরিত্যাক্ত বাগানেই পড়ে থাকতে দেখতাম, অবশ্য এই বস্তু বোধয় বয়সের ভারে একসময় একটু হলুদাভ রঙও ধারন করতো, তখন তার স্বাদ কেমন হয় চেখে দেখার সেই ইচ্ছা কখনো হয়নি বা ততটা মনোযোগ কখনো পায়নি। অবশ্য আঁচার বানানোর একটা ভাল উপাদান হিসেবে এই বস্তুকে মাঝে-মাঝে বিভিন্ন বাড়িতে ক্ষীণ সমাদর? না আসলে ঠিক সমাদর নয়, সামান্ন গুরুত্ত পেতে দেখেছি বলে মনে পড়ে।

তো যে কারণে এই ফালতু চালতা নিয়ে এতো কথার অবতারণা, সেটা হল, যে চালতার সার্বিক Social Status (সামাজিক মর্যাদা) এতটা তুচ্ছ-তাচ্ছিলের বা সেই পর্যায়ের সে আজকাল এই ঢাকা শহরে এসে অনেক উঁচু বা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে! যা আমাকে অনেকটাই হতবাক বা ধাক্কা দিয়েছে!

কেমন? সেই গল্পটাই মুলত বলতে চাইছি, তার উপরের এই ভণিতাটুকু না দিলে ঠিক চালতা’র বর্তমান সামাজিক মর্যাদা যে কতটা সকিং সেটা ঠিক বোঝা যেতনা। তাই উপরের এই প্রলাপ।

সেদিন সন্ধ্যায় এক আত্মীয়র বাড়িতে গেলাম কোন একটা কাজে, তো আমার স্বাভাবিক স্বভাব এটা যে কাউকে যদি সামান্ন আপন বলেও মনে হয় তো সেখানে আমার আর তেমন আড়ষ্টতা থাকেনা, সেই সব জায়গায় এটা-ওটা টুকটাক কাজ আমি নিজেই করে নেই। এই যেমন পানি ঢেলে খাওয়া, খাবার শেষে পাত্রটা বা কোন বাসন নিজেই যথা জায়গায় রেখে দেই।

তো বেশ গরমের ছোট্ট কিন্তু ভিড়ে ঠাসাঠাসি বাস যাত্রা শেষে সেই বাসাতে পৌঁছে একটু ঠাণ্ডা পানি খেতে ইচ্ছা হল, যেটা আমি সাধারণত করিনা। তবুও একটু ঠাণ্ডা পানি খেতে সেই বাসার ফ্রিজ খুলে বোতল বের করছি, হঠাৎ চোখ আটকে গেল এক বস্তুর দিকে, বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঠাহর করতে পারলাম ওটা চালতা! তবুও নিশ্চিত হবার জন্য ভালো ভাবে পরখ করে হাত দিয়ে নেড়ে দেখলাম হ্যাঁ ওটা চালতা-ই!

আমি ফ্রিজের ওখানেই বসে পড়লাম! অন্যরা বেশ অবাক হল, ঘটনা কি? আমি কি খুবই ক্লান্ত না কি খারাপ লাগছে, না অন্য কোন সমস্যা?

নাহ, সমস্যা আসলে কিছুই না, আমি তাদের কে বললাম, চালতাও কি তাহলে আজকাল ফ্রিজে রাখা হয়? চালতা তো দিন-সপ্তাহ-মাস বাইরে বা রাস্তায় পড়ে থাকলেও কোন ক্ষতি বা নষ্ট হবার কিছু নাই। তাহলে এ বস্তু কিভাবে ফ্রিজে জায়গা পেল! চালতার সামাজিক মর্যাদা এতটা উঁচু হল কবে থেকে বুঝতে বা জানতেই পারিনি। এটা কিছু হল?

আমার সেই অবাক অভিব্যাক্তি আর কথাবার্তা শুনে ওনারা বোধয় ক্ষীণ লজ্জা পেলেন! তবে কিছুই বললেন না। আমিও এ নিয়ে আর কথা বাড়ালাম না, পাছে তারা বিব্রত হন!

আসলে ঘটনা তো এমন কিছুনা, আসলে এতে কারো কোন ক্ষতি হয়নি বা হবার তেমন সম্ভাবনাও নেই। তবুও আজকাল এই ডিজিটাল ও ভার্চুয়াল যুগে এসে আমাদের বোধ ও স্বাভাবিকতা এতো ঠুনকো পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে সত্য-বাস্তবতা-সম্পর্কের সেই গভীরতা বা টানটা নেই। যেটা আগে ছিল যার-যখন-যেটা আর যেভাবে প্রাপ্য, সে-সেটা-ঠিক সেই ভাবেই পেয়ে যেতেন, সব সময়। এসব নিয়ে ভাবতে হতনা এতটুকুও।

আর আজকাল আমাদের মূল আনন্দ-সুখ-সাচ্ছন্দ-ভালোলাগা-খারাপলাগা-সম্পর্কের সূক্ষ্মতা ও স্বাভাবিকতা-কে কাছের আর কে দূরের বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষী এসবই নির্ভর করে ভার্চুয়াল জগতের উপস্থিতি ও নিয়মিত কার্যকারণের উপরে।

স্বাভাবিকতা আর বাস্তবতা আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। সত্যিকারের আবেগ আর ভালোবাসা আমরা হারাতে বসেছি, প্রয়োজন আর অপ্রয়োজনের বোধ আমাদের লুপ্তের পথে, সঠিক-ভুল আমাদের সুবিবেচনার বাইরে।

তা না হলে চালতা কিভাবে ফ্রিজে রক্ষিত হবার মত বস্তু হতে পারে আমার বোধে আসেনা কিছুতেই।

সেও আস্ত-কচকচে-কাঁচা আর একেবারে সবুজ চালতা!

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:২১

বিজন রয় বলেছেন: চালতা আমার পছন্দ না।
তবে আচার ভাল লাগে।

ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

১৪ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:২২

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা, ধন্যবাদ আপনাকেও।

২| ১৪ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:২২

বিজন রয় বলেছেন: তবে চালতার কবিরাজী অনেক গুণ আছে বলে শুনেছি।

১৪ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:২৬

সজল জাহিদ বলেছেন: যেহেতু জংলী জিনিষ! একেবারেই প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়, তাই কবিরাজিগুন থাকাটাই স্বাভাবিক। ধন্যবাদ।

৩| ১৪ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:৪২

আব্দুল্লাহ তুহিন বলেছেন: আমার চলতা এবং ফুল দুটাই খুব পছন্দ!!
আমাদের গ্রামের বাড়িতে রান্না ঘরের পিছরে একটা বেশ বড় চালতা গাছ আছে!!"

১৫ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৮:৫২

সজল জাহিদ বলেছেন: গুড, ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

৪| ১৮ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:০০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: চালতা ভর্তার কথা মনে করিয়ে দিলেন!

২০ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:০৪

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা, ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

৫| ২২ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:০০

রানা আমান বলেছেন: চালতার আচার আর চালতা দেয়া ডাল আমার খুব ভালোই লাগে খেতে । আমাদের নরসিংদীর বাসার চালতা গাছের কথা মনে পড়ে গেল ।

২২ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৫২

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা, ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.