নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তখন ক্লাস টু বা থ্রি তে পড়ি, ঈদের কয়েকদিন আগে, আমরা নানু বাড়ি যাব, আমি, আব্বা আর আমার ছোট বোন, এই তিনজন, কোন এক কারনে আম্মা পরে আসবে। সেই সময়...... ট্রেনে উত্তর বঙ্গ যেতে হত ময়মনসিঙ্ঘ-জামালপুর-বাহাদুরাবাদ হয়ে...তিন ঘণ্টার যমুনা নদীর স্রোতের বিপরিতে পেরিয়ে, যা প্রচুর সময় সাপেক্ষ এবং ছোট বাচ্চাদ্র নিয়ে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এই জন্য যে...... ওই সময় ওই অঞ্চলে প্রচুর ডাকাতের উৎপাত ছিল, খুব কম ট্রেন এবং তার যাত্রীরাই রেহাই পেয়েছেন এই যন্ত্রণা থেকে। সেটা আম্মা বেশ ভালোভাবে জানতেন, তাই আব্বাকে বারবার বলে ও বুঝিয়ে দিয়েছেন এইসব ডাকাতের ঝামেলা ও সে ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ে দুটো নিয়ে কি করনীয়......সেই সব......
মনে আছে, আম্মা অনেক খাবার দিয়েছিলেন সাথে করে... পরটা, মাংস, ভাজি, অনেক পানি ও শুকনো খাবার...... যথারীতি গাড়ি চলছে...... ট্রেন লেট হতে, হতে একসময় সকালের ট্রেন জামালপুর পৌঁছালে সন্ধার পরে, সেখানে আরও ঘণ্টা খানেক থেকে ছাড়ার পরে, যথারীতি ঘটলো সেই অনুমেয় বিপত্তি, ডাকাত পড়লো ট্রেনে, আজ এতো দিন পরে মনে হচ্ছে, ট্রেন যেন পরিকল্পিত ভাবে ডাকাতদের জন্যই অতক্ষণ জামালপুরে দাড়িয়েছিল......
যাইহোক, ডাকাতরা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন রসদ নিয়ে আমাদের কাছে এলো...... আব্বার সাথে বাকবিতণ্ডার শেষে আমাদের দুই-ভাইবোন কে দেখে, কিছুটা দয়া করেই বোধয় কিছু নিলনা! ফিরে যাচ্ছিল... এই সময় হঠাৎ একজন...... ট্রেনের বাঙ্কারের উপরে রাখা আমাদের খাবার টিফিন ক্যারিওর আর ব্যাগ নিয়ে, চলন্ত ট্রেনের দরজা দিয়ে লাফ দিলেন, মুহূর্তের ভিতর ব্যাপার টা ঘটে গেল, কেউ, কিছু বুঝে ওঠার আগেই...... আর আমাদের আব্বাও ডাকাতের পিছনে ছুটে ধরার জন্য লাফ দিতে উদ্ধত হলেন......!!
অন্য যাত্রীরা তাকে জড়িয়ে ধরে পথ আটকালেন আর বললেন “আপনি যে লাফ দিচ্ছিলেন, আপনি কি আর উঠতে পারতেন?? আর আপনার ছোটছোট ছেলেমেয়ে দুটোর কি হত? মানুষ এতো বোকা কিভাবে হয়! এইবার তিনি থামলেন, তার বোধোদয় হল, আমাদের জন্য, অন্য যাত্রীদের কথা...... হাঁয় আব্বা, আপনি এতো বোকা কেন......? এখনো প্রশ্ন করি, প্রায় প্রতিদিনি, খেতে বসে, গল্প করতে বসলে আর আমাদের আব্বা বোকার মতই চেয়ে থাকেন...
আব্বার বোকামি এখানেই শেষ হতে পারত এবং তাই হওয়া উচিৎ ছিল, যদি বোকা না হয়ে সরল হতেন...... কিন্তু ওই যে বলেছি বোকা, সরল নয়! তার প্রমান ওই একই যাত্রায় পরের দিন.........
এভাবে প্রায় দের দিন পরে, অন্য যমুনার অন্য পারে পৌঁছে যেটা করলেন সেটা আরও ভয়াবভ...... যেহেতু আমাদের খাবার ডাকাতরা নিয়ে গেছে, সেহেতু আব্বা, আমাদের দুই ভাইবোন কে একটি ট্রেনে বসিয়ে রেখে, খাবার কিনতে গেছেন...... একটু পরে ট্রেন টি ছেড়ে দিল! কি করবো? এখন...... আব্বাতো ফেরেনি! আমি, আমার বোনের হাত ধরে, দুই ভাইবোন মিলে ট্রেন থেকে লাফ দিলাম!! এবং বসে রইলাম, ওখানেই, আব্বা না ফেরা পর্যন্ত...... আমার ছোট বোন কাঁদছে আর আমি রাগে ফুঁসে উঠছি আব্বার উপর......
কারণ যে ট্রেনে আব্বা আমাদের রেখে গিয়েছিলেন, সেটা আমাদের গন্ত্যব্যের ঠিক উল্টো দিগের ট্রেন! এরপরে ওখানেই আর একটা ট্রেন এসে দাঁড়ালো, আমি গার্ড কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম “এই ট্রেন কোথায় যাবে?” গার্ড বলল, পার্বতীপুর, আমাদের গন্ত্যব্যে...... অনেক্ষন পরে আব্বা এসে জিজ্ঞাসা করলেন...... সেই আমরা নিচে, এখানে কেন? আর সেই ট্রেন কোথায়......!!!!
সেদিন থেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, জীবনে আর যাই হই, কখনই, কখনই, কখনই আমার বাবার মত হবনা! হাঁয় আব্বা, আমার জানা মতে, আপনিই বোধয় পৃথিবীর একমাত্র বাবা যার ছেলে তার বোধের আগে থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আপনার মত বোকা বাবা হবেনা.........
কি হত আজ, যদি সেদিন হারিয়ে যেতাম...... কি হত আমাদের দুই-ভাই বোনের? কোথায় থাকতাম আমরা? কে হত আমাদের বোকা আব্বা? এটা তো সিনেমা নয়, যে একদিন খুঁজে পেতাম!
সেই থেকে আমি দুর্ধর্ষ......
সব কিছুতে, চাওয়া-পাওয়ায়, আশা-আকাঙ্ক্ষায়, স্বপ্নে-বাস্তবতায়, ছিনিয়ে নেওয়ায়............
আজ আমার ছেলে সব কিছুতেই আমার মত হতে চায়...... আমি বলি, তুই হ, আরও দুর্ধর্ষ.........
সবকিছুতেই, আমার চেয়েও......... পাহাড়ে, জঙ্গলে, সমুদ্রে, সাহসে আর অপার ভালোবাসায়.........
ছিনিয়ে নিস সবকিছু, তোর মত করে.........
তোর বাবার চেয়েও দুর্ধর্ষ হয়ে.........
১৯ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:১৬
সজল জাহিদ বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ
২| ১৯ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫
আরাফআহনাফ বলেছেন: দারুন লাগলো,
২০ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৮:৩৮
সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:০৩
ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লাগল জীবনের অতীতের মন ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা।