নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নের ভাঙা-গড়া......! (নো ম্যান্স ল্যান্ড! ৩য় অধ্যায়)

২১ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৮:৫৫


অরণ্য যেদিন ভিসা পেয়েছিল, কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়েছিল খুশিতে, আনন্দে, উচ্ছ্বাসে যেটা হয় আর কি! কখনো কখনো অনেক কাঙ্ক্ষিত, স্বপ্নের আর কল্পনার কিছু পেয়ে গেলে এমন হয়! সবকিছু স্তব্ধ হয়ে কয়েক মুহূর্তের জন্য! অরণ্যরও তেমন হয়েছিল। চুপচাপ লেকের পাশে বসেছিল বেশ কিছুক্ষণ। মনে মনে ভাবছিল কতদিন ধরে কতশত চেষ্টা করে আজ ভিসা পেল আরণ্য, অধরার সাথে দেখা করতে যাবে বলে। সেই দিন তবে এসেই গেল, অরণ্য আর অধরার জীবনে। এবার ওরা ভাঙবে “নো ম্যান্স ল্যান্ড!” এর বাঁধা!

বেশ কিছুক্ষণ এম্বাসির পাশে অবস্থিত লেকের পাশে বসে থেকে, যখন চেতনা ফিরে পেয়েছিল তখন কানে হেডফোন লাগিয়ে প্রিয় গানের সুর ছড়িয়ে দিচ্ছিল উচ্চস্বরে, সাথে গলাও মেলাচ্ছিল গুনগুন করে। এরপর হেটে-হেটে গিয়ে বাসে উঠেছিল। বাসে উঠতেও বাইরে শুরু হল ঝড়ো হাওয়া! কালো মেঘের আনাগোনা, টিপটিপ বৃষ্টি। সবকিছুই যেন সৃষ্টিকর্তার হাতে ধরে সাজিয়ে দেয়া। যেন ঝড়ো হাওয়া নয়, অধরার উচ্ছ্বাস! যেন কালো মেঘ আকাশের ঢেকে যাওয়া নয়, অরণ্যকে অধরার জড়িয়ে রাখা! যেন টিপটিপ বৃষ্টি নয়, অধরার সুখের অশ্রু! যেন বিদ্যুৎ চমক নয়, অধরার আনন্দের উচ্ছ্বাস! ঠিক এমনই মনে হচ্ছিল অরণ্যর!

বাইরে বৃষ্টির বেগ বাড়লো, অরণ্যর বাড়লো আনন্দের শিহরণ! ধীরে ধীরে জানালার কাঁচ খুলে বাইরে হাত দিল অরণ্য, একটু ছুঁয়ে দেখবে অধরাকে! বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখাই হবে অধরাকে ছুঁয়ে দেখার মত অনন্য অনুভূতি! তাই অরণ্য ছুঁয়ে দিল, ঝরে পড়া বৃষ্টিময় অধরাকে। আর বৃষ্টিতে হাত ভেজাতেই কল্পনায় ভেসে গেল ওদের অনেক দিনের লালিত স্বপ্নের ঠিকানায়... জলপাইগুড়ির স্বর্গছেড়া চা বাগানের সবুজ সমুদ্রে! যেখানে তুমুল বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া মিলেমিশে তৈরি করেছে এক অদ্ভুত সুখের ঢেউ! পুরো চা বাগান জুড়ে যেন অজানা আনন্দের ঢেউ খেলে যাচ্ছে বৃষ্টি-বাতাস আর সবুজে ছেয়ে থাকা দিগন্ত জুড়ে!

জানালার বাইরে বৃষ্টিতে হাত ভিজিয়ে অরণ্য চোখ বন্ধ করে ফেলল অজান্তেই, আর দেখতে পেল চা বাগানের সেই তুমুল ঝড় বৃষ্টির মাঝে একটি হলুদ ছাতার নিচে অরণ্য আর অধরা একসাথে, রেখে হাতে হাত, মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ! অধরার কমলা রঙের স্কাটের উপরে চাপিয়েছে একটি নীল রঙের জামা, মাথায় সাতরঙা হ্যাট, কপালে একটি ছোট্ট কালো টিপ, গলায় একটি টকটকে লাল মুক্তোর মালা, দুহাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি, খোপায় সদ্য ফুটে ওঠা আর মাদকতাময় ঘ্রাণ ছড়ানো কদমফুল, আর ধপধপে খালি পায়ে পড়েছে সুর তোলা নূপুর! যদিও বৃষ্টির গানের কাছে নূপুরের ঝংকার তখন শব্দহীন। তবুও ভালো লাগছিল দেখতে... আর এমন করে ভেসে যেতে কল্পনার রঙিন জগতে, স্বর্গছেড়া চা বাগানের সবুজ সমুদ্রের উচ্ছ্বসিত ঢেউয়ে!

ও ভাই নামবেন না......?

উহ বাস কন্টাকটারের কর্কশ কণ্ঠ! ঘুমের জগতে গিয়ে সুখের স্বপ্ন দেখছিল অরণ্য!

জি ভাই নামবো।

কিন্তু কিভাবে নামবে? যে বৃষ্টি বাইরে! তবুও নামতেই হল, কোন উপায় নেই যে। বৃষ্টিতে নেমে, পকেট গেঞ্জি দিয়ে কোন মতে ঢেকে রেখে, ছুট দিল অরণ্য কোন দোকানের টিনের তলায়, পাছে পাসপোর্ট আর এতো সাধের ভিসা ভিজে গিয়ে অকার্যকর হয়ে যায় আবার!

বৃষ্টি একটু ধরতেই রিক্সা নিল অরণ্য, বাসায় যাবে। বাসায় গিয়েই অধরার সাথে শুরু হল কথোপকথন। দুজনে মিলে প্ল্যান করলো, অরণ্য অফিস থেকে ছুটি নেবে দুইদিন, রবি আর সোম, সাথে থাকবে শুক্র আর শনি, অরণ্য ঢাকা থেকে বাসে উঠবে বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে। ব্যাকগ্রাউনডে যেন বেজে উঠলো এই গান...

“আহা কি আনন্দ, মেঘেতে-বৃষ্টিতে! (আকাশে-বাতাসে)”

দারুণ আনন্দ আর উত্তেজনা নিয়ে পরদিন অফিসে গেল অরণ্য। গিয়েই ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিল “আসছি অধরা!”

অরণ্যর ফেসবুক স্ট্যাটাস ভেসে যেতে লাগলো বন্ধুদের রেসপন্স আর উৎসাহে, কারণ ওরা সবাই জানে সেই তেতুলিয়ায় “নো ম্যান্স ল্যান্ডের!” চা বাগানে অরণ্যর সাথে অধরার দেখা হওয়ার পর থেকে সবাই মিলে কত কাঠখড়-ই না পুড়িয়েছে একবার ভিসা পাবার জন্য! সইতে হয়েছে কতশত লাঞ্ছনা, গঞ্জনা আর দুর্ভোগ। তাই সবাই উচ্ছ্বসিত অরণ্য আর অধরার জন্য। দেখার ও শোনার অপেক্ষায় ওদের পরের গল্পর।

অরণ্য পাসপোর্ট-ভিসার ফটোকপি করলো। ছবি ঠিক করলো, ব্যাগ বাংলাবান্ধা পোর্ট এর খোঁজ খবর নিল, বাসের টিকেটের খোঁজ নিল। এখানে এসেই আটকে গেল! কারণ বাংলাবান্ধা বা তেতুলিয়া পর্যন্ত বাস যাচ্ছেনা, বাস যাচ্ছে দিনাজপুর পর্যন্ত, ওদিকে কোন ঝামেলা হয়েছে তাই আপাতত বন্ধ আছে। এক সপ্তাহ পরে বাস চলবে বলে জানা গেল। বেশ কষ্ট পেল অরণ্য আর অধরাও, তাই সেই সপ্তাহে না গিয়ে পিছিয়ে দিল এক সপ্তাহ।

ঠিক এক সপ্তাহ পরে আবার জলপাইগুড়ি যাবার তোড়জোড় শুরু করলো অরণ্য। ওপারে অপেক্ষায় অধরা। দাড়িয়ে “নো ম্যান্স ল্যান্ডে!” একই চা বাগান অথচ মাঝখানে কাঁটাতার! এ যেন সীমান্তে নয়, হৃদয়ে কাঁটাতার। তবে সান্ত্বনা এই যে আর যাইহোক বাঁধা তো নেই অন্তত ভিসার, ডিঙ্গাতে তো হবেনা ভিসার কোন পাহাড়ের!

অফিসে গেল অরণ্য। সবকিছু ঠিকঠাক। ছুটির আবেদন করলো দুই দিনের, সাথে NOC র (No Objection Certificate)। চাকুরীরত প্রার্থীর দেশের বাইরে যেতে সেটা আবশ্যক। বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী সহ নানা পরিচিত জনেরা অপেক্ষায় অরণ্য আর অধরার দেখা হবার।

কিন্তু আবারো ভেঙে গেল ওদের স্বপ্ন! যেতে পারলোনা অরণ্য! সেই সপ্তাহেও! কারণ, অফিস থেকে ছুটি পায়নি অরণ্য, ঈদের ঠিক আগে আগে ছুটি দেবেনা অরণ্যকে অফিস বা অফিসের বস! তাই এ যাত্রাও যেতে পারলোনা অরণ্য! ভেঙে গেল নতুন করে গড়ে তোলা স্বপ্ন, ছিড়ে গেল কল্পনায় বোনা রঙিন জাল, ধূসর হল বর্ণিল ভাবনা গুলোও!

তবে কি সেই ঈদের ছুটির অপেক্ষায় থাকতে হবে? তখনও কি যেতে পারবে অরণ্য, পেরিয়ে পরিবারিক বাঁধা? কতদিন চলবে অরণ্য আর অধরার স্বপ্নের এই ভাঙা-গড়ার খেলা?

কে জানে......?

তাই আবারো অপেক্ষা......

অরন্য আর অধরার,

একে অন্যকে কাছে পাবার, ছুঁয়ে দেখার, স্পর্শে শিহরিত হবার......

১ম গল্প “নো ম্যান্স ল্যান্ড!” এর লিংক Click This Link

২য় গল্প অধরার জন্যর...... লিংক Click This Link

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১০:০৫

অবনি মণি বলেছেন: ভালো লাগলো।

২১ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৩৭

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২১ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:২৫

রানা আমান বলেছেন: চমৎকার লেখা। ফেসবুকে অবশ্য আগেই পড়েছি । লিখতে থাকুন , অপেক্ষায় আছি পরের পর্বের ।

২১ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৫৬

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা, ধন্যবাদ

৩| ২২ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৮:৪৫

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: ঝরঝরে লেখা, মজা করে পড়লাম অনেক।
ধন্যবাদ।

২২ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৯:২১

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।

৪| ২৮ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৯

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সুন্দর একটি গল্প পড়ে খুবই ভালো লাগলো। ভালো থাকুন নিরন্তর।

২৮ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১:০৯

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.