নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাতি-ঘোড়া ও গাঁধার গল্প......!!!

২৩ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৫৯

একটি ডিপার্টমেন্টের প্রতিটি ক্লাসেই সকল ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এমন কোন কোন ছাত্র-ছাত্রী থাকে যাদেরকে হাতি-ঘোড়া আর গাঁধার সাথে তুলনা করা যেতে পারে অনায়াসেই! আজকে তেমন একটি ডিপার্টমেন্টের একটি ক্লাসের তিন জনের গল্প বলবো। যারা অনেকটা হাতি-ঘোড়া আর গাঁধার মতই! যাদের জীবন-যাপন আর পথচলা ঠিক এমনই!

তবে আর দেরী না করে গল্পটা শুনি?

আচ্ছা মূল গল্পটা শোনার আগে হাতি-ঘোড়া আর গাঁধার একটু বর্ণনা দেখা দরকার! যদিও আমরা এদেরকে চিনি এবং জানি তবুও গল্পের সার্থকতা ও সামঞ্জস্যতা বোঝাতে আর একটু বর্ণনা না দিলেই নয়! তাই......

প্রথমে আসি হাতির বর্ণনায়ঃ

হাতি যখন আমরা দেখি, তখন কি দেখি আসলে? দূরে দাড়িয়ে থেকে দেখি এক বিশাল হাতিকে, ওর পথচলা কে, এদিক-ওদিক তাকিয়ে ছোট ছোট চোখ দিয়ে মিটিমিটি হাসি দিয়ে নিজের মত করে এগিয়ে যায়। ওর দিকে তাকিয়ে থাকা শতশত আর হাজারো মানুষকে একটু হুশহাশ দিয়ে এগিয়ে চলে শূর নাড়িয়ে। সে তার মতই বিশাল-বিরল আর অতিকায় তার সবকিছু। ওর আশেপাশে বা আগে পিছের কোন কিছুকে তেমন পরোয়া করেনা। প্রয়োজনও নেই। তাই হাতিকে আমরা শুধু দেখেই যাই আর দেখেই যাই। দেখে-দেখে গল্প করি, মজা পাই।

এরপর ঘোড়াঃ

ঘোড়া কি করে সাধারণত?

আমরা তো সবাই জানি ঘোড়ার দ্রুতগামিতা, চটপটে এগিয়ে যাওয়া, চোখ-কান আর হৃৎপিণ্ড সব সময়ে সজাগ রাখা, ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করে মনিবের সুনজরে থাকা। যদিও ঘোড়া সব সময় এমন চটপটে ভাব দেখায়না, চুপচাপ থাকে, চারদিক দেখে, যখন দেখে কেউ কোনদিক থেকে এগিয়ে গেল, অমনি সে জেগে ওঠে আর তার সামরথের প্রমাণ দিয়ে সবাইকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যায়। এবং পরিশেষে সবার হাততালি আর বাহবা পেয়ে সুখের ঘুমে হারিয়ে যায়।

আর গাঁধা?

গাধাকেও আমরা চিনি-জানি কম আর বেশী। তবুও একটু অবতারণা না করলেই নয়। গাধা কো করে? সকাল থেকে সন্ধা সারাদিন ঘাটে-মাঠে-হাটে, রাস্তায়, বনে-জঙ্গলে, ঝোপে-ঝাড়ে, আনাচে-কানাচে হাটে-বসে-দাড়ায় একটু একটু আগায়, আবার পিছায়, এদিক-ওদিক তাকায়, কি ভাবে, না ভাবে, কি করে, না করে, কি করবে আর করবেনা এইসব নিয়ে ভাবে কি ভাবেনা, এর লাথি, ওর গুঁতো, কারো ঝাঁঝালো মন্ত্যব্য, কারো পিটোন, কারো টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে চলা, মালপত্র বয়ে চলা, সময়ে কাজে লাগায় কেউ, অসময়ে ছুড়ে ফেলে দেয়! এভাবেই কাটে গাধার সকাল-সন্ধা-রাত, দিন-মাস আর বছর। যে যাই বলুক, করুক আর যেভাবেই ওকে ঘাঁটাক না কেন, গাঁধার কিন্তু কখনো কোন বিকার নেই! ও গাঁধা, গাঁধার মতই! তাই তো ওর নাম হয়েছে গাঁধা!

উহ অনেক হয়েছে মূল গল্প বাদদিয়ে অযথা প্যাঁচাল! আসলে এই প্যাঁচালেই আছে মূল গল্পের আসল রস! কারণ মূল গল্প তো অল্পতেই শেষ হয়ে যাবে। খুব বেশী কিছু বলার থাকবেনা মূল গল্পে। তবে চলে যাই এবার মূল গল্পে......?

হুম মূল গল্পটা উপরের ছবিতেই আছে, কেউ জানেনা বা বুঝতে পারছেনা, যে কারনেই এই গল্পটি লেখা!

সর্ব ডানে যে আছে সে হল এই গল্পের হাতি! গড়নে হাতি না হলেও অন্য সবদিক থেকেই হাতি! শিক্ষায়-দক্ষতায়-যোগ্যতায়-সামাজিক ও অতি অবশ্যই ভাবেই নিজস্ব পেশা ও আর্থিক অবস্থানের দিক থেকে।

ডিপার্টমেন্টের সেই ক্লাস শুরুর সময় থেকেই ও হাতি সমতুল্ল! সবাই যেখানে বনানী ম্যাডামের একটা ইংরেজি শব্দের অর্থ খুঁজতে ডিকশনারিতে হুমড়ি খেয়ে পড়তো, সে তখন সেই শব্দের শুধু অর্থ নয়, সেই শব্দের তিনটা বা চারটা সমার্থক আর বিপরীতার্থক শব্দসহ বলে দিত!

যা বাবা, কি ছেলেরে! এতো দেখছি চলমান ডিকশনারি! আর এর পরের গল্প? সেতো ডিপার্টমেন্টের ইতিহাস! সব পরীক্ষায় সব সময় প্রথম, সব শিক্ষকের প্রিয়, বাধ্যগত আর সুবোধ ছাত্র! যখন যেখানেই যাই না কেন, সে শুধু পড়ে পড়ে আর পড়ে! আমরা সবাই শুধু চেয়ে-চেয়ে দেখতাম আর দেখাতাম! কিচ্ছু করার ছিলোনা কারো, সেই সামরথই তো কারো ছিলোনা যে!

এরপর? এরপর কোথায় লোক প্রশাসন আর কোথায় ব্যাংক ব্যাবস্থাপনা! পুরোই উল্টো রথে চড়লো সে! কিন্তু তাতে কি? সেখানেও শতভাগ সফল সে! নাহয়ে আর উপায় কি? হাতি বলে কথা! এমনি এমনি তো আর হাতি বলিনি! যার প্রমাণ এই ৩২ বছর বয়সেই একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যাবস্থপনার অন্যতম কর্ণধার! সাথে গাড়ি-বাড়ি আর ...... তো আছেই ফ্রিতে!! ভাবা যায় বলেন?

যেখানে তারই সহপাঠীরা কেউ কেউ এখনো এন্ট্রি লেভেলই টপকাতে পারেনি! তাহলে সেকি অন্যদের কাছে হাতির সমতুল্য নয়? প্রশ্ন আপনাদের কাছেই। আমার কাছে তো হাতি অন্তত!

যাক হাতি বাদদিয়ে এবার ঘোড়ার প্রসঙ্গে আসি?

হুম ঘোড়া... ঘোড়ার যে বর্ণনা আগে দিয়েছি, সেটার সাথে যদি মেলাই তবে তা এমনঃ উপরের ছবির বামে যাকে দেখছেন, সে হল এই গল্পের ঘোড়া! হ্যাঁ ঘোড়াই! কারণ ডিপার্টমেন্টের সবার মধ্যে শুরুতে কখনোই তাকে আলাদা করা যায়নি। অন্যদের মতই বেশ চুপচাপ আর সাধারণ হয়েছিল ঘোড়ার মতন! কিন্তু ১ম আর ২য় বর্ষের ফলাফল বের হতেই, সে যেন নড়েচড়ে বসলো। আরে অন্যরা তো অনেক অনেক এগিয়ে গিয়েছে, তাহলে তো এখন নিজেকে জানান দিতেই হয়! সে ঠিক সেই কাজটাই করলো এবং বাকিটা ঘোড়ার রেসের মতই গতিশীল ও সফলতার দারুণ গল্প!

সেও সেই যে ৩য় বর্ষে সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠলো তাকে আর কেউ আটকাতে পারলো কই? ঘোড়ার রেসের মত করে তরতর করে এগিয়ে গেল, এক হাতি বাদে সবাইকে ছাড়িয়ে! এক বছরের মধ্যেই বিভাগের আর ওই ক্লাসের দ্বিতীয় সেরা ছাত্র আর শিক্ষকদের কাছে ২য় পছন্দের আদরের ছাত্র হয়ে গেল। এরপর হাতির দেখাদেখি আর পরামর্শ নিয়ে, সেও হাতির মত সেই উল্টো রথে চড়ে বসলো! মানে লোক প্রশাসন থেকে টার্ন নিয়ে ব্যাংক ব্যাবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রী নিতে নিজেকে শামিল করলো।

যার ফলাফল স্বরূপ, এখন সেও একটি বেসরকারি ব্যাংকের বেশ উঁচু পদে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। আর সেই সফলতার প্রভাব স্বরূপ পদন্নোতিও পেয়ে চলেছে একের পর এক! আর হাতির মত গাড়ি-বাড়ি ও ......? সেতো এলো বলে আর পেলো বলে। একটু আগে আর পরে এই যা! কারণ সেতো ঘোড়া, হাতির মত তো আর নয়?

এই তো গেল হাতি আর ঘোড়ার গল্প।

গাঁধার গল্প কি আর বলার প্রয়োজন আছে কোন?

নেই মনে হয়, কারণ গাধা কে সে এতক্ষণে নিশ্চয়ই সবাই বুঝে গিয়েছেন? আর কেউ যদি এখনো বুঝে না থাকেন যে ছবির ওই তিনজনের মধ্যে কে গাধা? তার চেয়ে বড় গাধা আর কে হতে পারে সেটা কোন গাঁধাও ভালো বলতে পারবেনা!

হ্যাঁ গাঁধা ওই ছবির মাঝের গাধাটাই!
হে হে হে...... এবার বুঝেছেন নিশ্চয়ই?

সেই চেনা-জানার পর থেকে, মানে ১ম বর্ষ থেকে ক্লাস করা তো দূরের কথা পরীক্ষাই ঠিকমত দেয়নি কখনো! পাশ করলেই যে খুশি তার আবার অত ক্লাস-ফ্ল্যাশ করে, ইনকোরস পরীক্ষা দিয়ে সময় নষ্ট করে কি হবে?

ডিপার্টমেন্টে দেখা যেত শুধুমাত্র ফাইনাল পরীক্ষার সময়! অন্য কোন সময় গাধাকে পেতে হলে খুঁজতে যেতে হত, কোন আম বাগানে, ইবলিশ চত্তরের সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠে, প্যারিস রোডের কোন এক বেঞ্চিতে, সাবাস বাংলাদেশে বেদীতে, দেবদারুর আড়ালে! অসহ্য ধুলোময় বাস স্টপেজে, তাও ছেলেদের নয়, মেয়েদের কোন বাসের কাছে বা আশেপাশে! এক হাতে ছাতা আর অন্য হাতে চুরি করা গোলাপের থোকা!

এই ভাবেই ১ম থেকে মাস্টার্স শেষ করে এখন পুরদস্তুর কেরানী। শতভাগ কেরানী কোন মতে জীবনকে ঠেলেঠুলে চালিয়ে নিয়ে যেতে! আর আগে যেখানে পড়ে থাকতো গাছের তলায়, রাস্তার কোনায়, রোদে পুড়ে, বাসের হাতলে, মেছের বারান্দায়, আর অন্য বন্ধুদের দয়ায়।

এখনো তেমনই আছে, তবে একটু আপগ্রেডে ভার্সনে এই যা......

এখন কখনো সবুজ পাহাড়ে হাটে, কখনো বরফে মোড়ানো কোন চুড়ায় বসে থাকে, কখনো সমুদ্রের ঢেউয়ে ভাসে, কখনো গহীন জঙ্গলে হারায়, কখনো কোন নদীতে নিজেকে সতেজ করে নেয়, কখনো চা বাগানের সবুজের প্রেমে পড়ে! আর কখনো আলতু-ফালতু অগোছালো শব্দ-কথা লিখে অন্যদের গাঁয়ে জ্বালা ধরায়!

এই হল গাধা! যার কোন স্বপ্ন নেই! তাই নেই স্বপ্ন ভেঙে গিয়ে কষ্ট পাবার কোন সুযোগ! যার কারো কাছে কোন প্রত্যাশা নেই! তাই নেই আশা ভঙ্গের বেদনা। যার কোন আকাঙ্ক্ষা নেই! তাই নেই হতাশার পাহাড়!

তবে গাঁধার একটাই মন্ত্র, জীবন হবে সহজ, স্বাভাবিক, সুন্দর, যখন-যেথায়-যেমন............

তাই তো গাঁধা গায়......... “এই বেশ ভালো আছি!”

আচ্ছা এই কঠিন যুগের, কঠিন সময়ে একে গাঁধা না বলে কি পারা যায় বলেন?

এ তো গাধাই, আস্ত গাঁধা......!

এই হল হাতি-ঘোড়া আর গাঁধার গল্প............!!!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:২৬

রানা আমান বলেছেন: এটাতো মনে হচ্ছে আমারো (গাঁধা অংশটুকু) গল্প ।

২৩ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৮

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা ফেনটসটিক!!!

২| ২৪ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:২৭

প্রবালরক বলেছেন: সুখপাঠ্য

২৬ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:১৯

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.