নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুস নিয়ে, ঘুস ফেরত...!

২৮ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৩৮


এটি একটি নিখাদ ভ্রমণগল্প বা ভ্রমণে ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমসে ঘটে যাওয়া স্বাভাবিক ভাবে ঘটে যাওয়া গল্প, তবে এবারের গল্পটি ঘটনাচক্রে নিজের বিজ্ঞাপন বা একটি অনন্য সম্মানের গল্প। কারো পড়তে আপত্তি থাকলে বা বিরক্তিকর মনে হলে শুরুতেই এড়িয়ে যাবার আন্তরিক অনুরোধ করছি।

তবে এবার মূল গল্পে ফেরত যাই, কি বলেন? অন্যরকম একটা আনন্দ আর প্রাপ্তির গল্প এটি।

ভারতের ফুলবাড়ি সীমান্ত পন্য পরিবহন যে সীমান্তের মূল কার্যক্রম ছিল, সম্প্রতিসাধারণ ভ্রমণ কারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে মাস দুয়েক হল। তেতুলিয়া-বাংলাবান্ধা ভ্রমণে গিয়ে খোঁজ পেয়েছিলাম যে এই সীমান্ত দিয়েও সাধারণ ভ্রমণকারীদের যেতে দেয়ার অনুমতি মিলেছে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে পরেরবার ভারতের ভিসা নিলে এই সীমান্ত দিয়ে নেব। নতুন একটা পোর্টের অভিজ্ঞতা ও সুবিধা-অসুবিধা যাচাই করার জন্য। নতুন একটা রোমাঞ্চের সাধ জেগেছিল মনে। যে কারণে নতুন ভিসার আবেদনের সময় এই পোর্ট দিয়ে ভিসা প্রাপ্তির অনুমোদনের চেয়েছিলাম। এবং সৌভাগ্যক্রমে পেয়েও গিয়েছিলাম। সেটা যে এমন একটা দুর্লভ সন্মান বয়ে আনবে সেটা দূরতম কোন কল্পনাতেও ছিলনা। তবে শুনি গল্পটা?

যখন এই সীমান্ত পেরিয়ে যাই, খুব বেশী নয় সামান্য কিছু বিড়ম্বনা তো সবাইকেই পোহাতে হয়। এই যেমন ৫০ বা ১০০ টাকার লেনদেন। কম-বেশী সবার ক্ষেত্রেই এটা হয়ে থাকে। কেউ দেন, কেউ দেননা, নয় কি? আমি সাধারনত অন্য কোন সময় এই ক্ষেত্রে কোন রকম সহযোগিতা করিনা। স্বচ্ছ ভাবে যাই আর ঠিক তেমনি স্বচ্ছ ভাবে ঘাড় বেকিয়ে আর বুক ফুলিয়ে চলে আসি। কেউ কিছু বলার সাহসও আর পায়না। স্বাভাবিক ভাবেই।

কিন্তু এবার যেহেতু একদম একা দেশের বাইরে যাচ্ছি, একদম নতুন একটা সীমান্ত পেরিয়ে, আর যেদিন গিয়েছিলাম সেদিন একমাত্র আমিই ছিলাম তখন পর্যন্ত ওই সীমান্তের গমনাগমনকারী এবং ফিরতেও হবে একা একা, সাথে কিছু কেনাকাটা থাকবে, কোন রকম হয়রানীর স্বীকার যেন না হই, তাই আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম যে এবার কোন ঝামেলা বা ঘাড় তেড়ামি করবোনা। তাই-ই করেছিলাম। যাবার সময় বাংলাবান্ধা সীমান্তে তিন জায়গায় ২৫০ আর ওপারের ফুলবাড়ি সীমান্তে দুই জায়গায় ২০০ সাথে আর সাথে কিছু রুপী থাকায় জরিমানা স্বরূপ আরও ১০০ রুপী গুনতে হয়েছিল কোন রকম ঝামেলা এড়াতে।

যাবার সময় দুই প্রান্তেই খবর নিয়ে গিয়েছিলাম যে বিকেল ৫ টা থেকে ৫:৩০ পর্যন্ত পোর্ট খোলা থাকবে। সুতরাং এই সময়ের মধ্যে আমাকে ফিরতে হবে। যে কারণে আরও একটু নিশ্চিভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত পৌছাতেইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এর সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার জন্য ৩ টায় শিলিগুড়ি দিয়ে রওনা হলাম। ৩:২০ এ ফুলবাড়ি সীমান্তে পৌঁছে সেই আগের মত ব্যাগ চেক করার প্রস্তুতি। একজন ইমিগ্রেশনের কাগজ লিখছে আর একজন আমার ব্যাগের চেন খুলে সবকিছু দেখছে...... ভাগ্যিস ওরা আমাকে আমার ব্যাগ খুলতে না বলে, নিজেরাই খুলতে আরম্ভ করেছিল। আমাকে খুলতে বললে আর এই অভূতপূর্ব ঘটনা টা ঘটত না।

কি সেটা?

বলছি......

ইতিমধ্যে ফর্ম পূরণ আর কি একটা কাজে ১৫০ রুপী আমার কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছে, আমিও সুবোধ ছেলের মত দিয়ে দিয়েছি কোন রকম ফালতু ঝামেলায় না পড়তে। ওদিকে একজন ব্যাগের এটা ওটা দেখতে দেখতে আমার অফিসের একটি খাম বের করে জিজ্ঞাসা করলো কি এটা?

বই।

কিসের বই?

গল্পের বই।

কি গল্প?

ভ্রমণগল্প।

কার বই?

আমার বই!

এরপর খাম খুলে অদিতি নামের এই মহিলা, বইটি বের করে মলাট খুলে বলল......

“ইস মে তো আপকে তাছবির হ্যায়!, কিসকা বই হ্যায়?”

জি মেরা বই হ্যাঁয়।

আপকা বই ইয়ে তো ছামঝে, লিকেন ইছমে আপকা তাছবির কিউ? রাইটার কন হ্যাঁয়?

দেখিয়ে, ইয়ে মেরা বই ওর মেরাহি লিখা হুয়া ট্রাভেল স্টোরি বুক, জো পিছলে বুক ফেয়ার মে পাবলিশ হুয়া!

ও হো, লিকেন পাসপোর্ট আপকা নাম এক ওর কিতাব মে অউরএক কিউ?

ম্যেয় ইস নাম পে লিখতা হু। সজল জাহিদ।

এবার একজন বাঙালি এলেন, সেখানে। যিনি কাছেই দাড়িয়ে ছিলেন এতক্ষণ। এসে জিজ্ঞাসা করলেন?

কি নিয়ে লেখেন আপনি?

মুলত ট্রাভেল নিয়েই লিখি, অন্যান্য বিষয় নিয়েও লিখি। এই বইয়ে কি আছে?

এই তো চারটি ভ্রমণের ধারাবাহিক গল্প, বাংলাদেশের বান্দরবান, নিঝুমদ্বীপ, আর ভারতের দার্জিলিং এবং সিমলা-মানালি।

রিয়েলি! আমাদের দেশের গল্পও আছে?

জি খুলে দেখুন।

এরপর খুলে দেখে, নেড়েচেড়ে দেখে দাম জানতে চাইলো। বললাম।

চলুন আমাদের বড় বাবুর কাছে চলুন।

গেলাম বড় বাবু মানে ইমিগ্রেশনের বড় কর্তার অফিস রুমে।

বইটি ওনারা কিনবেন! আমি তো বিস্মিত! বলে কি?

আরে না কিনতে হবেনা, আপনারা সত্যি নিতে চাইলে আমি এমনিতেই দেব। তবে একটা শর্ত আছে?

কি শর্ত?

বইটি কেউ পার্সোনালই নিতে পারবেনা, এই ইমিগ্রেশন অফিসেই থাকবে, যার যখন ইচ্ছে হবে, সে যেন তখন পড়তে পারে।
হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই...

এবার সবাই এক জায়গায় হলেন, যারা দূরে ছিলেন তাদেরকেও ডাকা হল... এক অদ্ভুত আর অভিভূত বই বিনিময় বা প্রদান অনুষ্ঠান হল...!

স্যার বসুন না?

স্যার? কে স্যার? আমি স্যার হয়ে গেলাম!! বাহ! চমৎকার তো?

তবে আমাদের নিয়েও লিখবেন কিন্তু?

অবশ্যই লিখবো।আমি আমার ভ্রমণের প্রতিটি পদক্ষেপই লিখে রাখি গল্পের মাধ্যমে।

ভালো ভালো লিখবেন কিন্তু?

জি নিশ্চয়ই ভালো হলে ভালো লিখি আর খারাপ হলে খারাপ লিখি।

এরপর কে যেন কাকে কি ইশারা করলো, সাথে সাথে পূর্বে যে ১৫০ রূপি নেয়া হয়েছিল, ফেরত দিয়ে দিল!

ওয়াও অসাধারণ তো!

ঘুস নিয়ে কেউ ঘুস ফেরত দেয় কখনো?

সপ্নেও এমন ভাবিনি, কিন্তু তাই হল!

পরে হল, নাম্বার বিনিময়, কিছু অগোছালো শব্দ-কথা আর কিছু খোস গল্প। এরপর সসম্মানে ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে দিয়ে এগিয়ে দিল গেট পর্যন্ত।

আর আমার জীবনে ঘটে গেল এক অদ্ভুত প্রাপ্তি ও অনন্য আনন্দের গল্প। হ্যাঁ আমার কাছে তেমনই।

ঘুস নিয়ে, ঘুস ফেরত পাবার সাথে কিছু আন্তরিক সম্মানের অসম্ভব গল্প......!!!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:১২

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: চমৎকার কাহিনী। পড়ে খুব মজা পেলাম।









ধন্যবাদ। ভালো থাকুন নিরন্তর।

২৮ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১:০৮

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০৫ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:২৭

রাজীব বলেছেন: বইয়ের লিংক দেন। পড়ি।

০৫ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৫২

সজল জাহিদ বলেছেন: ভাই বয়ের লিংক তো নাই, হার্ড কপি......!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.