নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেষ দুপুরে অধরাকে উঠে যেতে হল। শিলিগুড়ি ফিরতে হবে বলে। সন্ধ্যা লাগাদ বাসায় না ফিরলে, অনেক কৈফিয়ত দিতে হবে। কারন মিরিক এসেছে যে, সেটা বাসায় বলে আসেনি। বলে এলে আর তেমন সমস্যা হতনা। তাই ফেরার তারা কিছুটা হলেও।
অরন্যকে তেমন বোঝাতে হলোনা, অরন্যও অধরার সমস্যাটা বুঝলো। আর তাছাড়া অরণ্যরও তো খুব বেশি সময় নেই। আজকে রাতে থেকে কাল সকাল বা দুপুরেই তো ধরতে হবে ঢাকার পথ। তাই খুব বেশিক্ষণ অধরাকে আর ধরেও রাখতে চাইলোনা। পাহাড়ি পীচ ধালা পথ ধরে নেমে এলো ওরা। নির্জন-নিশ্চুপ আর ঘন জঙ্গলে আচ্ছাদিত রাস্তা। বেশ গভীর আর গা ছমছমে একটা পরিবেশ।
শেষ দুপুরের শেয়ার জীপে করে চলে গেল অধরা শিলিগুড়ির দিকে। মিরিকে রয়ে গেল অরণ্য আর মাধবী। ওরাও যাবে তবে শেষ জীপে করে। বাকি সময়টা মিরিকের চা বাগান, কাছের পাহাড়, কি একটা যেন গুহা আছে সেটা দেখবে আর পাহাড়ি পথে কিছুটা হাঁটবে। সেই বিলাসী সময়টুকু ছিলোনা অধরার হাতে, তাই চলে যাওয়া। অনিচ্ছা সত্ত্বেও, বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে।
আর অরণ্য তো আসছেই আবার, পারলে ঈদের ছুটিতেই। এখন তো আর ভিসার সমস্যা নাই, মাল্টিপল ভিসা আছে, যখন আর যতবার খুসি যেতে বা আসতে পারবে অধরার কাছে। তখন অধরাও সময় করে রাখবে। সুতরাং খুব একটা মন খারাপ করলোনা কেউই।
আর তাছাড়া এটা তো সেই পুরনো দিনের বাংলা সিনেমা না যে, ভালোবাসার মানুষ একটু দূরে যাবে বলে কেঁদে-কেটে নাকের জল আর চোখের জল এক করে ফেলবে কেউ। বা তাকে জর করে তার বাড়ির লোকজন নিয়ে গেছে বলে, ছেলেটা দুহাত তুলে ধরে, পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করবে অধরার নাম ধরে! যেখানে পাহাড় থেকে বারবার প্রতিধ্বনিত হবে অধরার নাম!
অধরা......... অধরা...... অধরা..... বলে! অরণ্য হাঁটু গেড়ে বসে পড়বে, প্রতিজ্ঞা করবে অধরাকে ছিনিয়ে নেবেই সে, নেবেই নেবে...!!
সেইসব হাস্যকর আবেগের দিন এখন আর নেই। এখন সবাই বাস্তববাদী আর জীবনমুখী চিন্তা করে। নইলে এতো এতো টানা পড়েনের পরে যাদের দেখা হল, সেই সব দিন হলে, পৃথিবী-পরিবার আর সমাজ থাকতো একদিকে আর অরণ্য-অধরার অসীম বাঁধা পেরিয়ে ভালোবাসার মানুষের কাছে থাকা একদিকে। ওরা চলেই যেত বহু-বহু দূরে, ছেড়েছুড়ে সব সব, সবকিছু। কিন্তু বাস্তববাদী বলেই ওরা সেইসব কিছু করলোনা, তেমন চিন্তাই আসেনি ওদের মাথায়। এখন ফেসবুক, হোয়াটস আপ আর ভাইবারের যুগে, দেখা করা–কথা বলা তেমন কোন কঠিন বা দুরূহ কিছু নয়। তাই তেমন পালাই পালাই আবেগটাও নেই।
হাঁটছিল পাশাপাশি মাধবী আর অরণ্য। পাহাড়ি উঁচুনিচু পথ ধরে। একপাশে সবুজ চা বাগান, থরে-থরে উথেগেছে উচু পাহাড়ের গায়ে-গায়ে, একপাশে গভীর খাঁদ পাহাড়ের শেষ সীমানা। কয়েকটি পাহাড়সম খাঁদ পেরিয়ে ওপারে আরো পাহাড়, সিঁড়ির মত স্তরে-স্তরে যেন ছুঁয়েছে কোন এক আকাশের আঙিনা! এক-এক পাহাড়ের গায়ে এক-এক রঙের মেঘের খেলা, কোন পাহাড়ে ধুসর মেঘ, কোন পাহাড়ে সাদা, কোন পাহাড়ে আবার মেঘের সাথে সূর্যের আলো মিলেমিশে হয়েছে বর্ণিল মেঘ! আর সবুজ পাহাড় সেজেছে নীল শাড়িতে! কোন-কোন পাহাড় থেকে গড়িয়ে পরছে সুখের অশ্রু, সাথে পেয়ে বৃষ্টির জল!
এভাবে হেটে-হেটে ওরা চলে গেল বেশ কিছুটা পাহাড়ি পথ। চা বাগানের সবুজে মাড়িয়ে, রঙিন মেঘে ভেসে আর পাহাড়ের নীলে হারিয়ে। বিকেল শেষ হতে চলেছে। পাহাড়ের বিকেল একটু আগে ভাগেই শেষ হয় যায়, উচু-উচু পাহাড়ে সূর্যের ঢেকে যাওয়াতে। এবার চা বাগানে ছেয়ে গেল সাদা মেঘেদের দলে, মেঘের রঙ হয়েছে সোনালি! অদ্ভুত সোনালি এক মেঘ ছুয়ে গেল অরণ্য আর মাধবীকে। সবুজ চা বাগানে সাদা মেঘের মাঝে শেষ বিকেলের হলুদ সূর্যের আলো পড়ে মেঘেরা সেজেছে সোনালি শাড়িতে! এক অদ্ভুত আবেগ আর এক অজানা শিহরণ ছুঁয়ে দিল ওদের দুজনকেই।
অরণ্য ছুঁয়ে দেখছিল সেই সাদা আর সোনালি মেঘ! সবুজ চা পাতায় জমে থাকা মুক্তো দানার মত ঝিলিক তোলা বৃষ্টির ফোটা, পায়ের তলে ভিজে থাকা নরম ঘাস, চোখ ছিল পলকহীন দেখে দূরে নীল আকাশে আর নীল সাঁজে সেজে থাকা নীল-নীল পাহাড়ের সিঁড়িতে!
এসব দেখতে-দেখতে কখন যেন সময় হারিয়ে গেল কোন এক অজানাতে। ফেরার পথ ধরলো ওরা। বাস বা ট্যাক্সি জংশনে পৌছাতে-পৌছাতে শেষ জীপের সব ছিট শেষ হয়ে গেছে! এবার ওরা ফিরবে কিভাবে? ফিরতে হবে দুজনকেই, অরণ্যর কাজ আছে আর মাধবীর হোস্টেল। কিভাবে ফিরবে সেই ভাবনা ভাবতে ভাবতেই জীপের ড্রাইভার বলল, একমাত্র জীপের ছাদে করে আর জীপের টায়ারে বসেই ওরা পৌছাতে পারে আজ শিলিগুড়িতে! এছাড়া আজকে আর কোন উপায় নেই তেমন, যদি না যায় ২০০০-২৫০০ টাকা রিজার্ভ ট্যাক্সি ভাড়া করে!
সে ওরা কিছুতেই করবেনা, সেই সাধ আর সাধ্য ওদের দুজনের কারোরই নেই। তবে কি জীপের টায়ারে করে আর জীপের ছাদে করেই যাবে শিলিগুড়ি?
হ্যা তাই যাবো, যদি তোমার আপত্তি না থাকে, মাধবীকে অরণ্যর জিজ্ঞাসা?
আমার? আমার কোন আপত্তি নাই!
তবে চল যাই, উঠে পড়ি জীপের ছাদে?
হ্যা তাই চল...!
উঠে পড়লো ওরা জীপের ছাদে! অরণ্য আর মাধবী একসাথে......!!!
দেড়-ঘণ্টার রোমাঞ্চকর বাঁক......!! (নো ম্যান্স ল্যান্ড-৭) পরের গল্প!
১৮ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৬
সজল জাহিদ বলেছেন: হুম সেটা ঠিক, আসলে কোনটা কতটুকু হবে সেভাবে ভেবে লিখিনা, লিখতে লিখতে যেখানে গিয়ে মনে হয় এই পর্ব এখানে শেষ হলে নিজের ভালোলাগে সেখানেই সেই পর্ব শেষ করে ফেলি...!! এই আর কি? অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:২৮
রানা আমান বলেছেন: প্রতি পর্বের দৈর্ঘ আরও একটু দীর্ঘ হলে ক্ষতি কি ?