নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিন মজুরের কাছে পাবদা মাছ......!! (ভ্রমণ রম্য)

১৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:১৩


“পাবদা মাছ” নামে তো সবাই-ই চেনেন। কিন্তু সর্বশেষ কে কবে খেয়ে চিনেছেন?
আমি বলতে চাইছি, কিছু সাধারণ, একেবারেই অতি সাধারণ এক শ্রেণীর মানুষের কথা। যে বা যারা অনেকটা আমার মত জঘন্য-নগন্য-সামান্যদের কথা। যারা এই তালিকায় পড়েন, নিজের কথা ভেবে তাদের সকলের জন্য এই লেখা!

আচ্ছা, তার আগে সবার মাথায় এই ভাবনা নিশ্চয়ই এসেছে যে ভ্রমণের সাথে “দিন মজুর” আর “দিন মাজুরের সাথে পাবদা মাছের” কি সম্পর্ক? আজব আর অদ্ভুত তো!
আসলেই আজব আর অদ্ভুত! তো চলেন জেনে নেই দিন মজুরের সাথে, পাবদা মাছের কি সম্পর্ক!

আচ্ছা আজকাল পাবদা মাছ কারা খায়, বা কিনে খেতে পারে? বিশেষ বনেদী শ্রেণীর মানুষজন, কোন দিন মজুর পাবদা মাছ খাওয়া তো দূরের কথা, কেনা, এমন কি দাম জিজ্ঞাসা করতেও ভঁয় পায়, মাছের বাজারে গিয়ে! কারণ ৮০০-১০০০ এর নিচে পাবদা মাছের কেজি নেই কোন বাজারেই! যেখানে অন্যান্য সকল মাছ মোটামুটি অর্ধেক দামে কেনা যায়। সেখানে পাবদা মাছ কিভাবে কেনা বা খাওয়া সম্ভব একজন দিন মজুরের কাছে?

ঘটনা হল, একজন অনেকদিন পরে ভারতের ভিসা পেয়েছে! ওর কাছে যেটা অনেকটা চাঁদ হাতে পাবার মতই অবস্থা! কারণ বলদ ঘুরতে খুব পছন্দ করে, কিন্তু অর্থাভাবে ইচ্ছেমত কখনও কোথাও যেতে পারেনা। তবুও কষ্ট সাধ্য করে, দেশের আনাচে-কানাচের অনেকটা দেখে ফেলেছে।

এবার একটু দেশের বাইরেটা দেখতে চায়, কিন্তু কিভাবে? দেশের বাইরে মানেই তো বিমান ভাড়ার প্রশ্ন সবার আগে আসে। ও তো দেশে ঘুরতেই হিমশিম খায়, তো দেশের বাইরে কিভাবে যাবে জত্তসব। কিন্তু এক সহকর্মীর পরামর্শ মতে একবার দেশের কোথাও ঘুরতে না গিয়ে পাসপোর্ট করে ফেলল! এবং ঘুরেও এলো ধার-কর্জ করে ভারতের বেশ কয়েকটা দৃষ্টি নন্দন যায়গা! এবং ফিরে এসে হিসেব করে দেখলো যে দেশের সেরা ভ্রমণ কেন্দ্র কক্সবাজারের চেয়ে অর্ধেক খরচে সে ভারতে ঘুরে এসেছে!

আহ, তারপর থেকে কম টাকায় ভারত ভ্রমণের একটা বাতিক চেপে গিয়েছে বলদ এর মাথায়! কিছুদিন পরপর টাকা জমাতে পারলেই ভিসা করে দেয় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছুট!

বেশ কিছুদিন থেকে ভিসা জটিলতায় আর ভারতে বেড়াতে যেতে পারছেনা মনে-মনে ভেবে রাখা বিভিন্ন যায়গায়। তাই অনেক কষ্টে এবার ভিসা পেতে তার ভারত ভ্রমণের নেশাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো বিভিন্ন ভাবে! আর ঠিক করলো এই ভিসায় যত পারে তত ঘুরে নেবে ভারতের পছন্দের যায়গাগুলো! কারণ বলা তো যায়না, আবার কবে ভিসা পায় বা না পায়। তাই বেছে বেছে কিছু যায়গা নিয়ে ভ্রমণের একটা তালিকা বানালো। এরপর বিভিন্ন ভ্রমণ কিংবদন্তীদের সাথে পরামর্শ করতে লাগলো, কোথায়, কখন আর কিভাবে যাবে?

যার কাছেই পরামর্শ চায় তাদের কেউ বলে নেপাল যান, কেউ বলে ভুটান, কেউ কেউ শ্রীলংকা-মালদ্বীপ-ব্যাংকক-ইন্দোনেশিয়া-থাইল্যান্ড এরকম বিভিন্ন উন্নত ভ্রমণ লোকেশনের নাম বলতে লাগলো, যেখানে উড়োজাহাজে করে, উড়ে-উড়ে যেতে হয়, অন্তত ২০,০০০-৩০,০০০ টাকা শুধু হাওয়াই জাহাজের ভাড়াই!

এরপর থাকা-খাওয়া-লোকাল ভ্রমণ-সাইট সিয়িং আর টুকটাক খরচ মিলে ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকার বিলাসী আর অবাস্তব ব্যাপার-স্যাপার! যে টাকা থাকলে সে নিজেকে একজন অত্যন্ত ধনী বলে বিবেচনা করতো!

দিন মজুর যারা তারা অন্যান্য মাছ কেনে আর খায়, আর পাবদা মাছের দিকে শুধু তাকিয়ে থেকে চলে আসে বাজার থেকে। আর ভ্রমণের ক্ষেত্রে বলদ হল দিন মজুর শ্রেণীর ভ্রমণকারী! কোন মতে ঠেলেঠুলে বাসে বা ট্রেনে করে কোন মতে চেপেচুপে চলে যায়, এক-এক যায়গায়। থাকে কোন রকমে রাত কাটাতে পারে এমন কোন ছালাদিয়া হোটেলে! আর খায়, সে রাস্তা-ঘাটে যখন যেমন পায়!

আর অন্যান্য ধনী ভ্রমণকারীদের উড়োজাহাজে গিয়ে এদেশ-ওদেশ ঘুরে, যায়-আসে এসব ছবি দেখে, গল্প পড়ে আর বাজারে পাবদা মাছ দেখার মত করে নিজের মত বাই রোডে ভারতের বিভিন্ন যায়গা দেখে ফিরে এসে তৃপ্তির ছোট্ট ধেকুর তোলে!

আর উড়োজাহাজ? সে শুধু আকাশেই দেখেছে এখন পর্যন্ত! বাস্তবে কোন এয়ারপোর্টে পর্যন্ত পা দিতে পারেনি! তার কাছে বিমানে কোথাও যাওয়া বা যেতে চাওয়া মানে তো দিন মজুরের কাছে পাবদা মাছ খাবার মতই বিলাসী আর অসম্ভব ব্যাপার, নয় কি?

তাই যখন সেই দিন মজুর শ্রেণীর ভ্রমণকারীকে সবাই যে প্রস্তাব বা পরামর্শ দিচ্ছে বিমানে কোথাও যাওয়ার...!

তো এমন প্রস্তাবকে সে নাম দিল, মানে বাই রোডে ভারত পর্যন্ত যাবার সাধ্যের কাউকে বিমানে উন্নত দেশ ভ্রমণের পরামর্শ তো......

“দিন মজুরের কাছে পাবদা মাছই...!!” নয় কি?

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৩৪

অশ্রুকারিগর বলেছেন: নিজেকে খুঁজে পেলাম। সাধ আছে, সাধ্য কম। সুন্দর উপস্থাপন করেছেন।

১৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, আর নিজেকে খুঁজে পেলে সেটাই লেখাটার সার্থকতা!

২| ১৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৪৮

প্রামানিক বলেছেন: ভালই বলেছেন। ধন্যবাদ

১৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৪

সজল জাহিদ বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ।

৩| ১৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:২৩

জুন বলেছেন:
আমার মনে আছে প্রথম যেবার স্বপ্নের কক্সবাজার গিয়েছিলাম মুড়ির টিন বাসে চেপে । অনেক কষ্ট করে অনেক জায়গায় ঘুরেছি । পাবদা নয় ,আমাকে বলতে পারেন নাইলোটিকা মাছ খাওয়া পর্যটক :)
ভারতের ভিসা পাওয়া এখন অনেক দেশের চেয়ে এমন কি আমেরিকা ভিসা পাওয়ার চেয়েও কষ্টকর ।যাবতীয় দালাল সহযোগে রাত জেগে লাইন ধরে ইটা রেখে তাদের ভিসা নেয়ার কথা মনে হলে যাবার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলি । কত সহজ ছিল আগে । সকালে জমা দিতাম, বিকালে কাউকে পাঠিয়ে নিয়ে আসতাম।
ভাগ্যিস আগেই ভারতের প্রায় ৮০% ভাগ জায়গা দেখা শেষ ।

১৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৬

সজল জাহিদ বলেছেন: আপনি ভাগ্যবান, যে এই অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত ভু-খণ্ডের অর্ধেক দেখে ফেলছেন!! আমার এই একটাই সাধ এই দেশের সবটুকু ঘুরে দেখতে পারলেই জীবনের অন্যতম অর্জন হবে সেটি! অনেক ধন্যবাদ, ও হ্যাঁ আপনি যদি লাইলনটিকা হন, তো আমি ফরমালিনে ভরপুর কাচকি!

৪| ২১ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:১২

মাদিহা মৌ বলেছেন: ভারতের কথা ভাবছিই না! আগে চৌষট্টি জেলায় পা রেখে তো নিই! ওটুকু করতে পারলেই আলহামদুলিল্লাহ।
তাই এই পোস্ট পড়ে একটুও দুঃখ পেলাম না :P

২১ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:৩৬

সজল জাহিদ বলেছেন: শুভ সকাল, প্রথমে ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য, দ্বিতীয়ত, দুঃখ পাবার মত কোন পোস্ট তো এটা নয়, অযথা কেন দুঃখ পাবেন? আর তৃতীয়ত, বাংলাদেশের ৬৩ জেলা দেখার পরেই ভারত দেখতে বের হয়েছি। ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.