নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নানা রঙের মেঘের খেলা.... (নো ম্যান্স ল্যান্ড-৯)

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৩৫


হোস্টেলে গিয়ে মাধবীর নতুন এক অবস্থা হল, যেটা এর আগে মাধবী কখনো কোন কারনেই অনুভব করেনি। মাধবী যেন আর মাধবীর মাঝে নেই, হারিয়ে গেছে অন্য কোন ভুবনে, অন্য কোন পৃথিবীতে, অন্য কোন অজানায়! যার ঠিকানা, সঠিক কারণ মাধবী নিজেই জানেনা।

মাধবী যথেষ্ট চটপটে, ভালো বিতর্ক করে, সবার সাথেই দারুণ বন্ধুত্ত, হোক সে ছেলে বা মেয়ে, কারো সাথেই কখনো বন্ধুত্তের চেয়ে বেশী কোন রকম সম্পর্ক হয়নি, মাধবীর তেমন ইচ্ছাই জাগেনি কখনো, আর অন্য কেউ সেভাবে ভেবে এগিয়ে আসার সাহসও পায়নি, ওর বিশেষ ব্যাক্তিত্ত্ব আর একটি অন্য রকম দুরত্ত বজায় রাখার জন্য। অথচ এমন নয় যে গম্ভির, কথাকম বলে, কারো সাথে মেশেনা! সবার সাথেই দারুণ একটা সম্পর্ক।

সবাই ওকে কিছুটা সমীহ বা শ্রদ্ধার চোখে দেখে! সমবয়সী হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু এক-একজনকে এক-এক রকম ভাবে, ভক্তি-শ্রদ্ধা-শ্নেহ-ভালোবাসার চোখে দেখা যায়। তাতে সম্পর্কটা যেমনই হোক। কে কার কাছে কিভাবে বিবেচিত হবে সেটা একেবারেই যার যার ব্যাক্তিত্ত্বের উপরে নির্ভর করে। এটা আদায় করে নেবার মত কোন বিষয় নয়। স্বভাব-চরিত্র-কার্যক্রম আর সার্বিক জীবন-যাপন এগুলো ইমেজ তৈরিতে বিশেষ ভুমিকা রাখে। এটা চেয়ে নিতে হয়না, করে নিতে হয়না, এটা আপনা-আপনি চলে আসে, তৈরি হয়ে যায়।

মাধবীর ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছে। ওর সরলতা, ব্যাক্তিত্ব, সবার সাথে সমান ভাবে মেশা, সবার সাথে একই রকম আচরণ করা, যার সাথে যেমন উচিত বা যার যেটা প্রাপ্য, সবার বন্ধু হয়েও একটা অন্য রকম দুরত্বে রাখা নিজেকে। ওর এই ইমেজের কারণ, সবার কাছে ওর কথার, কাজের, স্বভাবের, মন্ত্যব্যের একটা দারুণ গ্রহনযোগ্যতা আছে। যেটা মাধবী নিজেও বুঝতে পারে। যেটা ওকে অন্য রকম একটা আনন্দ আর আত্ন-সন্মানে গর্বিত করে।

একমাত্র অধরার সাথেই মাধবী যা একটু বেশী মেশে, একটু না বেশ খানিকটা অন্য রকম বন্ধুত্ত। কারণ, অধরাও অনেকটা মাধবীর মতই, সবার সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ত কিন্তু কারো সাথেই একেবারে জানি দোস্তি নাই, নেই কোন বিশেষ ভালোলাগার জন্য!! নাহ নেই নয়, এখন আছে অরণ্য!

অধরা মাধবীর চেয়ে একটু বেশী চুপচাপ, শান্ত স্বভাবের, একটু লাজুকও। কথাও কম বলে বেশ। তবুও কিভাবে কিভাবে যেন চা বাগানে ক্যাম্পিং এ গিয়ে দেখা পেল অরণ্যর। আর ওদের মধ্যে হয়ে গেল এক অন্যরকম বন্ধুত্ত, যে বন্ধুত্ত এক সময় রূপ নিল আবেগ জড়ানো ভালোবাসায় আর বাধাহীন প্রেমে! যে ভালোবাসার টানে কতশত বাঁধা, ভিসার জটিলতা, অফিসের ছুটির সমস্যা, পারিবারিক টানা পোড়েন, এতো বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে অরণ্য এসেছে অধরার সাথে দেখা করতে, ওর সাথে একটু বেড়াতে আরও কত কি কথা বলতে, ওকে একটুখানি ছুঁয়ে দেখতে।

কিন্তু এসব কি হচ্ছে? এই এক দিনেই যেন কেমন এলোমেলো লাগছে মাধবীর নিজেকে। কেমন একটা অপরাধবোধ আবার একটা অন্য রকম ভালোলাগা, আবেশ, আবেগ আর অজানা আনন্দ ছুঁয়ে যাচ্ছে ওকে! কিন্তু ও তো কোন অপরাধ করেনি, তবে কেন অপরাধ বোধ? আবার এতো আনন্দে, আবেগে আর আবেশেই বা কেন ডুবে যাচ্ছে, সেটাও বুঝতে পারছেনা! তবে যাই হোক মন্দ লাগছেনা কিন্তু ওর এই মিশ্র অনুভূতি।

অধরার অরণ্য অধরারই আছে আর অধরারই থাকবে... এখানে মাধবীর কোন চাওয়া-পাওয়া নেই, থাকতে পারেনা, থাকতেও নেই। তবুও মাধবীর ভাবনায়, কল্পনায় আর সমস্ত চেতনায় কিভাবে কিভাবে যেন জড়িয়ে গেছে অরণ্য, জড়িয়ে আছে আরন্য, ঘটনাচক্রে আর বাস্তবতার ঘেরাটোপে! সমস্ত সত্তা জুড়ে ছুঁয়ে আছে অরণ্য, মাধবীকে!

অরণ্যর সাথে এক জীপে করে, ওর পাশে বসে মিরিক যাওয়া, মিরিক লেকের ভেজা রাস্তা ধরে, পাথরের রাস্তা দিয়ে, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে, পাহাড়ের চুড়ায় ওঠা, মেঘের মাঝে হারিয়ে যাওয়া, ভিজে-ভিজে একাকার হওয়া, গানে-গানে ভেসে যাওয়া...

আর এরপর... একসাথে জীপের ছাদে, জীপের টায়ারে বসে, পাহাড়ি আঁকাবাঁকা ভয়ানক বাঁকের রাস্তায়, গাছের ডালের আঘাত সয়ে, বাঁশের কঞ্চির ছোবল খেয়ে, কখনো আলিঙ্গনে বেঁধে, কখনো বুকে মাঝে হারিয়ে গিয়ে, কখনো একে অন্যের বাহুতে মিশে গিয়ে, সবুজ চা বাগানের মাঝে মিশে, সাদা মেঘে ভেসে, নীল পাহাড়ে হারিয়ে, বর্ণিল বিকেলে সেজে যে ওরা পৌঁছেছিল শিলিগুড়ি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে!

তাই অরণ্য, মাধবীর জীবনের এক অনন্য আনন্দ দিয়ে, সৃতির আকাশের ধ্রুবতারা হয়ে, একা-একা হাসার, একা-একা কাঁদার অকারণ কারণ হয়ে, সুখ হয়ে, দুঃখ হয়ে, মেঘ হয়ে, ছায়া হয়ে, পাহাড় হয়ে, অরণ্য হয়ে রয়ে যাবে অনন্ত কাল, অনন্ত সময়, অনন্ত যুগ ধরে......!

তাই মাধবী ভেবে রাখলো, কাল সকালে ও আর যাবেনা অরণ্য আর অধরার মাঝে কোন দেয়াল হতে! মাধবী পারবেনা সাক্ষী হতে কোন কষ্টের, কোন দুঃখের, কোন না পাওয়ার বেদনার সৃতি হতে, কোন কিছু হারাতে! যা পেয়েছে তা থাকুক সেভাবে, অটুট, অমলিন, অনিঃশেষিত আর অপার্থিব কিছু হয়ে......!

মাধবী অধরাকে ফোনে জানালো, ওর বাড়ি থেকে জরুরি ফোন এসেছে, ওকে আজ রাতেই বাড়ি যেতে হচ্ছে! সকালে আর দেখা হবেনা। পরে ফিরে এসে অধরার কাছে শুনবে অরণ্য আর অধরার বাকি গল্প, আবারো “নো ম্যান্স ল্যান্ডে!” ওদের বিচ্ছেদের গল্প! অরণ্যর আর অধরার জন্য সহস্র শুভ কামনা জানিয়ে ফোন কেটে দিল।

আর এরপর নিজের অজান্তেই ডুকরে উঠলো! কখন যেন চোখ ভরে গেছে জলে, জামা ভিজে গেছে অশ্রু ধারায়, এক হয়ে একাকার হয়েছে নাকের আর চোখের জল! কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি এতক্ষণ! যতক্ষণ কথা বলছিল অধরার সাথে।

ফোন রাখার পর, আয়নায় নিজের কান্না ঝরা মুখ দেখতে পেয়ে আর ধরে রাখতে পারলোনা নিজেকে...

নিজের চরিত্রের ঠিক উল্টো ভাবে গুমরে উঠলো মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে...

যেন শুনতে না পায়, নিজেই নিজের কান্না......!!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৪২

টাইম টিউনার বলেছেন: হুম।

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৫৮

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৪৫

মাধবী দেবনাথ বলেছেন: মাধবী যথেষ্ট চটপটে, ভালো বিতর্ক করে, সবার সাথেই দারুণ বন্ধুত্ত, হোক সে ছেলে বা মেয়ে, কারো সাথেই কখনো বন্ধুত্তের চেয়ে বেশী কোন রকম সম্পর্ক হয়নি, মাধবীর তেমন ইচ্ছাই জাগেনি কখনো, আর অন্য কেউ সেভাবে ভেবে এগিয়ে আসার সাহসও পায়নি, ওর বিশেষ ব্যাক্তিত্ত্ব আর একটি অন্য রকম দুরত্ত বজায় রাখার জন্য।
আরেহ , আপনি আমাকে চেনেন কিভাবে বলুন তো ? :P

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৫৬

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা, তাই নাকি? আপনি এমন নাকি! তবে তো আমার লেখার সার্থক! যে আমি কাউকে আঁকতে পেরেছি নিজের কল্পনা দিয়ে, যে বাস্তবেও আছে!!

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৫৭

সজল জাহিদ বলেছেন: তবে কি পরের ঘটনাও এমন নাকি?? হতে পারে কিন্তু, কারণ বেশী অন্য রকম মেয়েরাই হুট করে কাকে যেন ভালোবেসে ফেলে, যেটা সে নিজেই জানেনা আবার ফিরতেও পারেনা সেই আবেগ থেকে......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.