নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অরণ্য-অধরা আর নো ম্যান্স ল্যান্ড...! (নো ম্যান্স ল্যান্ড-১০)

০২ রা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৫১

সকালে অরণ্যর ঘুম ভাগলো প্রবল ঝড়-বৃষ্টি আর বজ্রপাতের বিকট শব্দে। ঘুম থেকে জেগে বাইরের এই রূপ দেখে দুঃখ পাবার পরিবর্তে বেশ খুশিই হল অরণ্য! কারণ, গতপরশু সারা রাতের বাস জার্নি, তারপর গতকাল সারাদিন পাহাড়ে পাহাড়ে হেটে বেড়ানো, আর শেষ বিকেলে মিরিকের আঁকাবাঁকা, ঝুঁকিপূর্ণ পথের অনবরত ঝাঁকুনি খেয়ে রুমে এসে একটু ফ্রেস হয়ে-খেয়ে, অধরার সাথে মেসেঞ্জারে কথা বলতে-বলতে ক্লান্তিতে কখন বিছানায় ঢলে পড়েছে নিজেই জানেনা।

আর সেই ক্লান্তি এই কয়েক ঘণ্টার ঘুমে কিছুতেই কাটছেনা, যে কারণে ঝড়-বৃষ্টির অজুহাতে আর একটা মিহি ঘুম না দিলেই নয়। অধরাকে একটি মেসেজ দিয়ে আবার ঘুমের দেশে হারিয়ে গেল অরণ্য।

ঘুম ভাঙলো, রুমের দরজায় বেয়ারার বার-বার ডাকে আর ধাক্কার শব্দে। ঘুম জড়ানো চোখে, কোন রকমে রুমের দরজা খুলতেই চমকে গেল অরণ্য!

আরে এ যে অধরা দাড়িয়ে দরজার সামনে! পরনে নীল-হলুদ জামদানী, উঁচু করে বাঁধা খোঁপায় মন মাতাল করা তাজা বেলি ফুলের মালা! পুরো রুমটা যেন ভরে গেছে পাগল করা কোন ঘ্রাণে! কপালের মাঝে ছোট্ট একটা লাল টিপ, চিকন করে কাজল দিয়ে আঁকা চোখ, নাকে একটি জ্বলজ্বলে নাকফুল, কানে রঙিন ঝুমকা, ঠোটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক, এক হাতে পড়েছে রঙ-বেরঙের রেশমি চুড়ি, আর এক হাতে ঘড়ি, হাতের সাথে ঝোলানো একটি লাল টকটকে ব্যাগ।

স্বপ্ন দেখছেনা তো অরণ্য? ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে অধরার দিকে।

এই কি হল, ঘুমের ঘোর কাটেনি তোমার এখনো? অরণ্যকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো অধরা।

বুঝছি না, আমি জেগে আছি নাকি ঘুমিয়ে? ঠিক দেখছি কিনা, তুমি কি সত্যি-ই এসেছ নাকি স্বপ্নে দেখছি আমি? তাও তোমাকে এমন রূপে! ঠিক আমার স্বপ্নে তোমাকে যেভাবে দেখবো বলে সাজিয়ে ছিলাম, ঠিক ঠিক তেমনি করেই যে দেখছি! তাই বুঝতে পারছিনা, স্বপ্ন না সত্যি?

হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি, আমি-ই, অধরা, তোমার মত করে, ঠিক ঠিক তুমি যেমনটি করে বলেছ, বহু-বহুবার! গতকাল এক আচমকা ঝামেলায় তোমাকে সময় দিতে পারিনি। জানো তবুও আমার একটুও মন খারাপ হয়নি, কারন আমিও চেয়েছিলাম, তোমার সাথে যেদিন প্রথম দেখা হবে, সেদিন তোমার মত করেই, সাজবো আর সাজাবো নিজেকে!

কাল সেই সুযোগ ছিলোনা, তাই আজকে তোমাকে চমকে দেব বলে, তোমাকে না জানিয়েই চলে এলাম তোমার হোটেলে! আর ভাগ্যিস তোমার হোটেল টাও আমার বাসার কাছাকাছি নিয়েছিলে বলে, রক্ষে। তোমার জন্য আমার এতো সাধের সাঁজ এতটুকুও নষ্ট হয়নি!

এখন ওঠো, মুখ ধুয়ে এসো, ক্ষুধা পায়নি?

ও হ্যাঁ, ক্ষুধা পেয়েছে যে ভুলেই গেছি যে, তোমাকে দেখে, তোমাকে পেয়ে আর তোমাকে এমন মনের মত সাঁজে দেখতে পেয়ে।

ওয়াশ রুম থেকে বের হতেই অরণ্য আরও অবাক হয়ে গেছে, দেখে বিছানায় বেছানো হয়েছে পেপার আর সেখানে রুমের টেবিলে রাখা প্লেটে বিরিয়ানি, লেবু, শসা, পিয়াজ, কাঁচা মরিচ সাজিয়ে বসে আছে অধরা! কি অদ্ভুত, কোথায় পেলে এসব? কি পাগলামি করেছ এসব?

কোন পাগলামি নয়, তোমার জন্য নিজের হাতে তৈরি করেছি, সেই ভোঁরে ঘুম থেকে উঠে!

কার কথা বলে আনলে এসব?

মাধবীর কথা বলে এনেছি, ওর জন্য আমি প্রায়ই নিয়ে আসি, মাও দেয়। ও হোস্টেলে কি না কি খায়, তাই আমাদের বাড়িতে ভালো কিছু রান্না হলেই মা মাধবীর জন্য তুলে রাখে, সব সময়।

আচ্ছা? তো মাধবীর জন্য এনে আমাকে খাওয়াচ্ছো, তো তোমার মাধবী, সে কোথায়?
ওহ, মাধবী? ওর হঠাৎ বাড়িতে কি যেন কাজ পড়েছে, তাই সকালেই চলে যাবে বলেছে। তোমাকে অনেক অনেক শুভ কামনা জানিয়েছে। ও জানে যে ওর কথা বলে তোমার জন্য খাবার এনেছি। নাও, এবার আর কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নাও ঝটপট।
বাইরে যাবো, তোমার সাথে রিক্সায় করে ঘুরবো, তোমার প্রিয় সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে, মহানন্দার পাড়ের চা বাগানে। চল চল তাড়াতাড়ি চল। আর দেরি করোনা।

এই বেলাটাই তো আছো শুধু মাত্র, তারপর তো তোমাকে কেড়ে নেবে আবার, আবার সেই তাড়কাটা ঘেরা “নো ম্যান্স ল্যান্ড!” তুমি আবার চলে যাবে, অনেক-অনেক দূরে, কাছে আর হৃদয়ের এতো-এতো পাশে থেকেও দূরে, কতদূরে! চাইলেই তোমাকে ছোঁয়া যাবেনা, তোমাকে সত্যি কারে স্পর্শ যাবেনা, তোমার হাতে হাত রাখা যাবেনা, তোমার সাথে ইচ্ছে হলেই রিক্সায় করে সবুজ সমুদ্রে ভাসা যাবেনা! বাঁধা শুধু এই দুই ভূখণ্ডের তারকাটা ঘেরা “নো ম্যান্স ল্যান্ড!”

বেরিয়ে পড়লো হোটেল রুমে তালা লাগিয়ে, ব্যাগ-পত্র বাইরে বের করে, হোটেল ক্লিয়ার করে দিয়ে, ব্যাগ অরণ্য হোটেলেই রেখে দিল, বেড়িয়ে, অধরাকে রাখতে এসে নিয়ে যাবে। হোটেল থেকে বেড়িয়ে একটা রিক্সা করে উঠে পড়লো ওরা। কি যে একটা অদ্ভুত আবেশে জড়িয়ে গেছে অরণ্যর মন-প্রাণ বোঝানো মুশকিল, আর আজকের আবহাওয়াটাও কিজে দারুণ!

রোদ নেই এতটুকু, নেই কোন ধুলো-বালি বা নোংরা কোথাও, সারারাতের অঝোর ধারায় ঝরা বৃষ্টিতে ধুয়ে-মুছে গেছে সবকিছু। চারপাশ সেজেছে দারুণ সাঁজে। মেঘলা আকাশ, ঝিরঝিরে বাতাস, রিক্সার টুং টাং শব্দ, মিহি পীচ ঢালা পথ, দুই পাশে বড় বড় দেবদারু অভিবাদন, দূর দূরান্ত পর্যন্ত সবুজের ছড়াছড়ি। সবকিছু মিলে একটা অদ্ভুত মায়াময় আর ছায়া ঘেরা পরিবেশ। সুখের আবেশ না ছুঁয়ে পারেইনা ওদেরকে।

কিছু সময় পরেই ওরা চলে এলো একেবারে মহানন্দার পাড় ঘেঁসে সেজে থাকা সবুজ চা বাগানের ভিতরে। ওহ এই সেই চা বাগান, যা আমরা আমাদের তেতুলিয়া থেকে দেখতে পাই?

হ্যাঁ এই সেই চা বাগান, আর ঐযে দেখ তোমাদের সেই তেতুলিয়ার বাংলো! যেখানে তুমি ছিলে সেবার, আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল যেবার!

ওহ তাইতো! তুমি চিনলে কিভাবে?

হ্যাঁ আমি চিনে নিয়েছি, এখানে এসেছি, খুঁজে-খুঁজে বের করেছি কোথায় তুমি ছিলে সেই দুই রাতে, একা-একা শুধু আমার জন্য! আমি এখানে এসেছি, নদীর পাড়ে দাড়িয়ে থেকে চোখ বন্ধ করে তোমাকে দেখতে পেয়েছি!

তুমি দাড়িয়ে আছো তোমাদের ওই বড়-বড় আম গাছের তলে, বসে আছো তোমাদের ওই যে দেখা যাচ্ছে কাঠের বেঞ্চি, ঠিক ওখানটাতে, কথা বলেছি তোমার সাথে একা-একা যতক্ষণ ইচ্ছে হয়েছে, চোখ বন্ধ করে অনুভব করেছি তোমার অস্তিত্ব! যখন আর পারিনি তখনই কেবল চোখ খুলেছি!

কারণ আমি জানতাম চোখ খুললেই তোমাকে আর দেখতে পাবোনা! তাই চোখ খুলতামনা, যতক্ষণ তোমার সাথে কথা বলতাম! কখনো কখনো ইচ্ছে হত, এই তারকাঁটা পেরিয়ে, শুকনো নদী হেটে-হেটে পার হয়ে চলে যাই, তোমার বাংলাদেশে। গিয়ে চিৎকার করে ডাকি তোমায়, যদি ছুটে আসো, যদি ছুটে আসো! হয়তো করেও ফেলতাম এমন পাগলামি, করিনি, পারিনি মাধবী ছিল বলে!

অরণ্য মন্ত্র মুগ্ধের মত শুনে যাচ্ছিল অধরার কথাগুলো, অধরা যে অরণ্যর চেয়েও পাগলামি করতে পারে সেটা কখনোই ভাবেনি। অধরার দুই হাত জড়িয়ে ধরেছিল অরণ্য কখন যেন নিজের অজান্তেই! ইচ্ছে করছে অধরাকে নিয়ে ছুটে পালায়, পেরিয়ে এই তারকাতার বেড়া, ওই নো ম্যান্স ল্যান্ড, আর ওই শুকনো মহানন্দা!

কিন্তু দুই ভূখণ্ডের কঠিন বাস্তবতার কাছে ওরা পরাজিত। সবকিছু আছে, ওরা এক আছে, ওদের নিখাদ ভালোবাসা আছে, আছে একই রকম অনুভূতি, কাছে থাকার, পাশে থাকার অদম্য ইচ্ছা, কিন্তু বাঁধা ওই তারকাটা আর নো ম্যান্স ল্যান্ড!

কখন যেন দুপুর গড়িয়ে গেছে, বুঝতেই পারেনি অরণ্য আর অধরা! হারিয়ে ছিল দুজন দুজনের মাঝে, একান্তে, আবেগে-ভালোলাগায়-ভালোবাসায়-আবারো দূরে হারবার বেদনায়, নো ম্যান্স ল্যান্ডের কঠোরতায়। উঠে পড়লো ওরা, রিক্সা করে আবার শহরে গিয়ে, হোটেল লবি থেকে ব্যাগ নিয়ে, ছুটলো ফুলবাড়ি সীমান্তের পথে। অধরাও যাবে, শেষ পর্যন্ত সাথে থাকতে অরণ্যর, পৌঁছে দিতে অরণ্যকে, দুই দেশের “নো ম্যান্স ল্যান্ডে!”

ফুলবাড়ি পৌঁছে অরণ্য ঢুঁকে গেল, ইমিগ্রেশনে। অধরা বাইরে দাড়িয়ে অরণ্যর জন্য। অরণ্য ফিরে এলো ওর কাজ শেষে, এসে হেটে চলেছে দুজন নো ম্যান্স ল্যান্ডের দিকে। অরণ্য দুটি রূপোর ব্রেসলেট কিনেছিল একই রকম, দিল অধরার হাতে, একটি তোমার আর একটি তোমার বন্ধু মাধবীর! কেমন হয়েছে বল?

আর অধরাও অরণ্যকে কিছু একটা, তবে সেটা এখন খোলা বাড়ন!

দারুণ! আর মাধবী আর আমার একার বন্ধু নয় এখন, তোমারও বন্ধু কিন্তু?

হুম ঠিক আছে। পৌঁছে গেছে ওরা হৃদয়ের কাঁটাতাঁরের, “নো ম্যান্স ল্যান্ডে!”

অরণ্য আবারো আসবে যতদ্রুত সম্ভব, অফিসের ছুটি আর বাসায় ম্যানেজ করতে পারলেই! ভিসা তো আছেই এখন! আসবে ফিরে ফিরে অধরার কাছে, জতবার খুশি!

অধরা ছুঁয়ে দিল অরণ্যর দুই কপোল, ছুঁইয়ে অধরার অধর...!

আর অরণ্যও অধরাকে......!!

ফিরে গেলো ওরা একে অন্যের ভূখণ্ডের দিকে, না তাকিয়ে একে অন্যের দিকে একবারের জন্যও!

পাছে ঘিরে ধরে, একে-অন্যকে, ওদের আবেগ-আকুলতা আর অবাধ্য ভালোবাসা.........

রেখে আবারো ফিরে এসে ঘিরে ধরা ভালোবাসার অপেক্ষায়......

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:০৩

প্রথমকথা বলেছেন:





ভীষণ ভাল লেগেছে।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:৫২

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

২| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৫

আপনার আপন বলেছেন: beautiful......pls conitue

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:৪৪

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.