নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাঞ্চনজঙ্ঘা-কেক আর কফি......!

২২ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:০১


খুব অদ্ভুত এই নাম...!

কোথায় কাঞ্চনজঙ্ঘা? আর কোথায় কেক-কফি!

হ্যাঁ, অদ্ভুত ঠিক আছে, তবে এই তিন প্রান্তের তিন প্রিয় জিনিষ মিলেই আমাকে উপহার দিয়েছিল এক শ্রেষ্ঠ সকাল! চারপাশের সবুজ পাহাড়, সাদা মেঘ, মাঝে মাঝে নীল আকাশ, রঙিন নাম না জানা পাহাড়ি ফুল, ঝলমলে বাড়ি আর পাথর বিছানো পাহাড়ি সরু রাস্তা ধরে চলছি সামনের দিকে। বাড়ির ছাদ থেকে যেহেতু কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেছে সামনে গেলে আরও ভালো ভিউ পাবো বলে জানালো সেই বাড়ির কর্তা। তাই এই মুগ্ধতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া।

১০ মিনিট হেটে সামনের পাহাড়ের ঠিক চুড়ায় এর একটি কটেজ। কটেজ তো নয় যেন এক স্বর্গের সিঁড়ি দিয়ে উঠে এসেছি স্বর্গের আর স্বর্গের জানালায়! যে কটেজে গেট এমন ভাবে করা যে, বাইরের রাস্তায় দাড়িয়ে-দাড়িয়েই দূরের কাঞ্চজংঘা দেখা যাচ্ছে! নিচের পাহাড়ের সাদা-কালো মেঘের এলোমেলো পথ চলা। পাহাড়ের গায়ে গায়ে লেপটে থাকা, উপরের আকাশ বেশ কিছুটা নীল আর সেই সাদা-কালো আর নীলের মাঝেই চোখে পড়লো কেমন যেন সোনালি একখণ্ড বরফের ফলা! সদ্য জেগে ওঠা সূর্যের আলো পড়ে যা ঠিক ঠিক সোনালি রঙ ধারন করেছে!

তাকিয়ে থাকবো, নাকি ছবি তুলবো, নাকি নিরুপায়ফি! (অনিচ্ছাকৃত তোলা সেলফি!) তুলবো? ভাবতে ভাবতেই কোথায় যেন হারিয়ে গেল সেই সোনালি রঙা বরফের খণ্ড! উহ ভালো আর খুশিতে ডগমগ করে ওঠা মনটা দুম করে খারাপ হয়ে গেল। আর নিজের সাথে জিজ্ঞাসা, তবে কি ভুল দেখেছি? ওটা কি মনের অলীক কল্পনা ছিল?

নাহ, তা কি করে হবে, ঠিক, ঠিক-ই দেখেছি। তবে এই কটেজের খোলা গেট দিয়ে সামনের খোলা বারান্দায় গিয়ে দাড়াই কিছুক্ষণ, আবার যদি দেখা দেয় ওই মোহময়ী! কটেজের কাঠের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম, আর আবার যেন বিদ্যুৎ চমকের মত দেখা দিল সে? উহ, হ্যাঁ তাই তো, এই তো আবার দেখা যাচ্ছে! তবে এবার কিছুটা হলুদাভ লাগছে রোদের ঝলকে। আরে বামেও তো দেখা যাচ্ছে আর একটি বরফ চুড়া!

সেকি কয়টা? আরে ডানেও তো বেশ কয়েকটা বরফ চুড়া, ছুঁয়ে ছুঁয়ে আছে একে অন্যকে! কি অদ্ভুত লাগছে। ক্ষণিকের মধ্যেই যেন সামনের আকাশের বরফ চুড়া গুলোতে রঙের হোলি খেলা শুরু হল... এই সোনালী, তো এই রূপালী আলোর রোশনাই। এই গোলাপি, তো এই লাল আবার কখনো হলুদাভ, কোথাও কোথাও কয়েকটি রঙের রেষারেষি যেন নিজেদের মধ্যে!


কোন রঙ থাকবে আর কোন রঙ থাকবেনা সেই নিয়ে। ধপধপে বরফের পাহাড় চুড়া গুলো যেন রঙের এই শিশুতোষ কাণ্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে। এসব দেখছি আর নিজের কাছে থাকা, পুরনো মডেলের, বাজারে অচল, কেউ কেনেনা, ৫০% ডিসকাউনটে কেনা লো প্রোফাইল মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে যতটুকু পারা যায় ছবি তুলছিলাম। হুট করে সবগুলো বরফ চুড়া গুলোই যেন হারিয়ে গেল দৃষ্টিসীমা থেকে!

মনটাও আবার খারাপ হয়ে গেল সাথে সাথে। মেঘেদের একান্ত খেলা এক। এই দূরে সরে গিয়ে আকাশকে নীল করে দেয়, তো এই ঘিরে ধরে ঢেকে দেয় সবকিছু, আর বেশী মন ক্যামন করলে গুমরে গুমরে উঠে মুখ ভার করে কালো হয়ে গিয়ে কান্না ঝরায়! এরই মধ্যে সেই কটেজের কেয়ারটেকার ঘুম থেকে উঠে এলেন। আর ফ্রেস হয়ে এলেন কথা বলতে অল্প সময়ের মধ্যেই।

তার সাথে গল্প করতে করতে জানা গেল যে এখানে থাকার খরচ খুবি কম, যখন মৌসুম তখনকার রুম ভাড়া মাত্র ১২০০/১৫০০ রুপী! তাও এক রুমে চাইলে চারজনও থাকা যায়, খাবার খরচ সারাদিনের জন্য পুরো প্যাকেজ জন প্রতি ৫৫০ রুপী! যার মধ্যে সকালের চা/কফি থেকে শুরু করে তিন বেলার খাবারসহ, সকাল-বিকেল আর রাতে স্ন্যাক্স আর চা/কফিও দেয়া হয়ে থাকে!

আর প্যাকেজ নিতে না চাইলেও ৬০০ রুপীর বেশী খাওয়ার উপায় নেই, কেউ যদি আলাদা, আলাদা করে কিনেও খায়, প্রতিবেলার খাবার। আর অফ সিজনে সেই রুম ভাড়া ৬০০/৮০০ এর মধ্যে চলে আসে।

কাঞ্চন ঢেকে আছে মেঘে। তার সাথে কথা বলি আর আশে পাশের পাহাড় দেখি, দেখি উড়ে যাওয়া মেঘ, ধরি ছুঁয়ে যাওয়া মেঘ! তবে এই মেঘ আনন্দের নয়, এই মেঘ কষ্টের আর হতাশার। কি এমন হত আজ, এই সময় এই মেঘেদের ছোটাছুটি না থাকলে? স্বচ্ছ আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে দেখতাম দূরের শ্বেত শুভ্র পাহাড় চুড়ায় নানা রঙের খেলা, বসে বসে, চুপচাপ।

কিন্তু কে শোনে কার কথা? মেঘেরা মেঘেদের মতই অবাধ্য, অসভ্য আর বেপারয়া। ওদের কাছে পরাজিত হয়েই উঠবো এমন সময়, মেঘেরা সরে গেল যেন দেখাতে বরফের হাসি! হ্যাঁ তাই-ই। তাই আবার বসে পড়লাম। তাকিয়ে রইলাম আবার মুগ্ধ চোখে, রেখে অপলক দৃষ্টি বরফ মোড়া পাহাড় চুড়া গুলোর দিকে।

কখন যেন কটেজের কেয়ারটেকার উঠে গিয়েছিল, নিয়ে এলো দুই কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি! উহ কফি? সে যে কি প্রার্থিত ছিল, সেই মুহূর্তে কিভাবে বোঝাই, তবে অব্যাক্ত। কারণ কোথায় কফি পাবো এখানে? তাই জিজ্ঞাসাও করিনি। অথচ মনে মনে আকাঙ্ক্ষা ছিল এই সামনে কাঞ্চনজঙ্ঘা-মেঘ আর রোদের লুকোচুরির মাঝে যদি পাওয়া যেত একটু কফি, কি অদ্ভুতই না হত! আর কি কপাল আমার, সেই ভাবনাটাই এমন বাস্তবে এসে ধরা দিল হাতে!

এরপর বের করলাম সাথে থাকা কেক, কাঁপে ধোঁয়া ওঠা কফি আর দূরে মেঘেদের সাথে লুকোচুরি কাঞ্চনজঙ্ঘার! সে যে কি অপার্থিব আর বিমোহিত এক সকাল বলে, লিখে বা ছবি দেখিয়ে বোঝানোর সাধ্য নেই আমার।

এই অপার্থিব সুখ আর মুহূর্ত উপভোগ করে সৃতির আকাশের ধ্রুব তারা করতে চাইলে, যেতে হবে রিশপ নামের এই পাহাড়ের স্বর্গ উদ্যানে। নীরব-নিস্তব্ধ-মিহি মেঘেদের দেশে।

ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি, সেখান থেকে জীপে করে কালিম্পং হয়ে লাভা। আর লাভা থেকে পায়ে হেটে বা জীপে করে স্বর্গ ভূমি রিশপের স্বর্গ উদ্যানে।

এটি এখন পর্যন্ত আমার কাছে ধরা দেয়া এই জীবনের অন্যতম সকাল, যে সকালে সাথে, আশেপাশে আর উপভোগের সবটুকু রেশে ছিল......

কাঞ্চনজঙ্ঘা-কেক আর কফি......

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৬

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: নেপালের সারেংকোটের এমনি বিল্ডিং এর ছাদে বসে ঠান্ডায় কাপতে কাপতে চায়ে চুমুক দিয়ে কৈলাস ও অন্নপূর্ণা পর্বতে সূর্যোদয়ের কথাটা মনে করিয়ে দিলেন ভাই। দার্জিলং গিয়েছি তবে কালিম্পং, লাভা যাওয়া হয়নি। বেঁচে থাকলে কোন একদিন হয়তো যাওয়া হবে............ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম ভাই।

২২ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা, অনেক অনেক এবং অনেক ধন্যবাদ ভাই, তবে আমার নেপাল যাওয়া হয়নি এখনো। দেখি আগামী বছর ইনশাল্লাহ।

২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৩

সাদা মনের মানুষ বলেছেন:

২২ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:১৬

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা, অনেক অনেক এবং অনেক ধন্যবাদ ভাই।

৩| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৯

রমিত বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
বন, মেঘ আর পাহাড়ের প্রতি আমার দুর্বলতা আমার চিরকাল।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৫২

সজল জাহিদ বলেছেন: আহা, ভাই বোন আর পাহাড় তো আমার প্রেম! অনেক ধন্যবাদ

৪| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:০০

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: অনেক ভাল লাগল , ধন্যবাদ ।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৫৩

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

৫| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৪৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: সজল জাহিদ,




দারুন লিখেছেন ---
মেঘেরা মেঘেদের মতই অবাধ্য, অসভ্য আর বেপারয়া।

ওয়াও .....

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৫৫

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

৬| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:২৬

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: আপনার সকালের বর্ণনা পড়ে শুধু মনে হচ্ছে ইশ এমন সকাল যে কবে আসবে।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৫২

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা আসবে ইনশাল্লাহ। অনেক ধন্যবাদ।

৭| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:২৩

মাদিহা মৌ বলেছেন: নিজেকে কড়া শাসনে রেখেছি, বাইরের দেশের ভ্রমণ পোস্টে আগ্রহী হব না। আগে নিজের দেশ দেখে নিই, তারপর বাইরে। কিন্তু যেই বর্ণনা দিয়েছেন, লোভ না লেগে উপায় নাই!

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:২২

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা তবেই না লেখা সার্থক! আমি নিজ দেশ শেষ করে তারপরেই ভারত দেখতে বেড়িয়েছি। অনেক ধন্যবাদ।

৮| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৪৫

অদৃশ্য বলেছেন:




বুঝতে পারছি, কি চরম সৌন্দর্য দেখবার সৌভাগ্য আপনার হয়েছে... আহা, কি দৃশ্য...

শুভকামনা...

২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৪৫

সজল জাহিদ বলেছেন: জি এটি আমার অন্যতম একটি সকাল ছিল, আপনাকে ধন্যবাদ।

৯| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৪৪

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা!!! তবে মিস করলাম, 'মিস কাঞ্চনজঙ্ঘা'-র ছবিগুলো!!!!! =p~

৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:১৬

সজল জাহিদ বলেছেন: হুম, অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.