নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাঝে-মাঝে তোর কাছে, জেনে-শুনে হেরে যাই......! (রম্য)

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৭

এই লেখাটা পরে ঠিক-ঠাক বুঝতে বা স্বাদ পেতে হলে নিচের লিংকে গিয়ে সবার আগেই অবশ্যই এই গানটি শুনতে হবে! তারপর লেখাটি পড়তে হবে। আর গানটি শোনা থাকলে তো কথাই নেই, পড়লেই নিজের মত করে বুঝে যাবেন এই লেখাটার স্বাদ!

https://www.youtube.com/watch?v=M8Sd1T5yVr4

বল্টু মাংসর চেয়ে মাছ বেশী পছন্দ করে। তবে মাংস পাশে পেলে বা টেবিলে থাকলে আবার ছাড়েওনা! এক-আধ টুকরা নিয়েই থাকে। একটু ঝোল বা মাংসের এক টুকরা আলু কিন্তু গরম ভাতের সাথে বেশ জোশ লাগে বল্টুর। যদিও সে সব সময় আর সবাইকে বলে বেড়ায় যে সে মাংসের চেয়ে মাছ বেশী পছন্দ করে।

গেল ঈদের প্রায় তিনদিন আগে থেকে বাসায় কম-বেশী প্রতি বেলায় খাবার টেবিলে মাংস ছিল। ছিল মাছ আর অন্যান্য সব্জি-ডাল এসবও। তবে বল্টু ছোট-মাছ আর সব্জির দিকেই বেশী আগ্রহী ছিল। কারণ মাংস তো আছে আর আসছেই, খেতে তো পারবেই যে কোন সময়, তাই আপাতত মাছের দিকেই সে মনযোগী।

তো যেটা ঘটলো, সেটা হল... ঈদের আগে মাংস, ঈদের (কোরবানির) অঢেল মাংস, মাংসের বিভিন্ন পদ, রান্না-ভাঁজা-ঝোল-শুকনা-ঝুরা-গুড়া-লাল-কালা! কতশত রকমের মাংসের বাহার আর গন্ধে মাথা আর স্বাদ গিয়ে ঠেকেছে অসহ্য পর্যায়ে। তাই আজকাল আর মাংসের আশে-পাশে আর ঘেঁসেনা বল্টু। তার মাছ চাই, সব্জি চাই, ডাল চাই আর ভর্তা চাই। কিন্তু মাংস কিছুতেই নয়, তাও যদি হয় আগের রান্না করা, বারে বারে জাল দিয়ে শুকিয়ে ফেলা আর বিরক্তিকর গন্ধ ছড়ানো মাংস।

অথচ বল্টুর বউ বল্টুকে প্রতি বেলায় খাবার সময় একটু মাংস নেবার জন্য অনেক জোর-জবরদস্তি করে থাকে, বল্টু নাকি শুকিয়ে যাচ্ছে দিন-দিন, ফালতু ডায়েট করে। যেটা বল্টুর বৌয়ের কাছে বেশী-বেশী আদিখ্যেতা মনে হয়। কিন্তু শত চেষ্টাতেও বল্টুকে মাংস খাওয়াতে পারেনা, আরো যদি হয়, আগের রান্না করে রাখা, জাল দিয়ে-দিয়ে শুকনো মাংস।

তবে সদ্য রান্না করা মাংস হলে যদিও একটু আধটু চেখে দেখে! কারণ সদ্য রান্না করা মাংসের স্বাদটাই আলাদা, কোন বিরক্তিকর গন্ধ নেই বা থাকেনা। ওটা একটু খাওয়া যায় আর কি? কিন্তু তবুও বল্টু আজকাল খেতে বসলেই মাংস থেকে নিজেকে দূরের রাখে স্বেচ্ছায়-ই। অথচ আগে এই রান্না করে জাল দিয়ে শুকনো করে ফেলা মাংসের কত কদর ছিল, সে সময় বাসায় কজনেরই বা ফ্রিজ ছিল। সবাই জাল দিয়েই মাংস সংরক্ষণ করে রাখতো দিনের পর দিন, আর সেটাই দারুণ ভাবে উপভোগ করতো পরিবার আর আত্মীয়-স্বজন নিয়ে।

আর আজকাল, এই ডিজিটাল যুগে এসে আমাদের চোখ-জিভ আর মনের সকল ইচ্ছা আর স্বাদ পরিবর্তন ঘটেছে আর ঘটছে প্রতিনিয়ত। আরে ডিজিটাল যুগ-না, এমনটা তো হবেই। সে যাই হোক, যেটা বলছিলাম, বল্টু আজকাল খাবার টেবিলে বসতেই চায়না যদি আগের রান্না করা মাংস টেবিলে থাকে। সে সবার খাওয়া হয়ে গেলে, পরিস্কার টেবিলে বসে একা-একা খায়। মাংস আর মাংসের গন্ধ এড়াতে।

তো সেদিন রাতের খাবারের আগে বল্টুকে তার বউ জিজ্ঞাসা করলো, রাতে কি খাবে?

বল্টুর সাফ জবাব, ডাল আর ভর্তা খাবে, তবে একটু করলা ভাজিও চলতে পারে।
বল্টুর বউ খাবার তৈরি করে, রাতে খাবারের টেবিল সাজিয়ে বল্টুকে ডাকলো। বল্টু টেবিলে গিয়ে বসলো আর পুরো টেবিলে চোখ বোলালো, আর দেখলো টেবিলে কি কি আছে......?

ডাল-করলা ভাজি-আলুভর্তা-পেঁপে ভাজি-চিংড়ী মাছ দিয়ে কাঁচা কলার ঝোল, আর ঠিক বল্টুর প্লেট ঘেঁসে রাখা আছে, ধপধপে কাঁচের বাটিতে সদ্য রান্না করা খাসির মাথা! আহ তার কি রঙ ছড়িয়েছে, ছোট-ছোট মাংসের টুকরো গুলো কসিয়ে বাদামী রঙের করা হয়েছে, প্রতিটি মাংস আবার হাড্ডির সাথে সংযুক্ত, যেটা বল্টুর সবচেয়ে পছন্দের! একেবারে সলিড মাংস বল্টু পছন্দ করেনা, হাড্ডির থেকে দাঁত দিয়ে মাংস খুলে খাওয়া বল্টুর সবচেয়ে বেশী পছন্দ! কারন যে মাংস হাড্ডির সাথে থাকে, সেই হাড্ডিটাও খেতে অনেক মজার আরাম দায়ক হয়, বল্টু অনেক গবেষণা করে দেখেছে!

তারপর আছে ছোট-ছোট আলুর টুকরো, বেশ হালকা হলুদ রঙ ধারন করে, সাইজটা এমন যে আলাদা করে সেই আলুর টুকরো ভাঙতে হবেনা, টুপ করে মুখে পুরে দেয়া যাবে। এমনকি একটা ভাতের লোকমার মধ্যে অনায়াসে এক টুকরো আলু দিয়ে মুখে পোরা যাবে, এমন মায়াবী এক-একটা আলুর টুকরো! আর সেই মাংসের ঝোল? উহ, সে-যে কি নান্দনিকতা নিয়ে তাকিয়ে আছে তার খয়েরি-লাল আর একটু মেরুন রঙে সেজে বল্টুর দিকে! যে খাসির মাংসের রূপ আর আকর্ষণ দেখে, বল্টু থালায় ভাত নেবার পরে অন্য ভর্তা-ভাজির পরিবর্তে সোজা হাত চলে গেল, খাসির মাংসের কাঁচের বাটির দিকে!

এবার বল্টুর বউ চোখ বড়-বড় করে আর কপট নিষেধাজ্ঞার সুরে জিজ্ঞাসা করলো, যে কেন বল্টু ভর্তা-ভাজি আর ডাল রেখে মাংসের দিকে হাত বাড়ালো? তার ডায়েটে সমস্যা হবেনা? তার কোমর আরও মোটা হয়ে যাবে, পেটে চর্বি জমবে, হাটতে পারবেনা, অফিসে কাজ করতে হাঁসফাঁস লাগবে এমন আরও অনেক কিছু।

কিন্তু বল্টু সেসব কথা উপেক্ষা করে, খাসির মাংসের রঙ আর আকর্ষণীয় বাটির দিকে তাকিয়ে গেয়ে উঠলো... উপরের গানটা...

“মাঝে-মাঝে তোর কাছে, জেনে-শুনে হেরে যাই!”

ভর্তা-ভাজি পাশে রাখি, ডালকেও ভুলে যাই! (কিছু কথা বলে ফেলি, কিছু কথা ছেড়ে যাই!) আসল গান!

এরপর বল্টুর বউ রেগে-মেগে আগুন হয়ে বলতে লাগলো, আমাকে নিয়ে তো কখনো এমন গান গাইলেনা আর এই মাংসের প্রেমে পড়ে গিয়েই গান ধরলে! আর ভণ্ডামি কর মানুষের সামনে যে তুমি মাংস পছন্দ করোনা, মাছ পছন্দ কর! রান্না করা মাংস পেলেই দেখি তোমার চোখ চকচক করে আর জিভ লকলক করে, আর চেহারার অভিব্যাক্তি-ই পরিবর্তন হয়ে যায়! খুশিতে ডগমগ থাকো! ভণ্ড কোথাকার!

এবার বল্টু আর এক কাঠি সরেস হয়ে সেই গানের-ই আরও আবেগিয় লাইন নিজের মত করে গাইতে থাকলো......

ভর্তা পড়ে থাক, ভাজি গুলো তুলে রাখ, ডালটা দূরে রেখে মাংসটা এগিয়ে......

বারে-বারে মনে হয় তোর (মাংসের) হাতে মরে যাই......!!!

এই গান শোনার পরে, বল্টুর বউ হেসে গড়াগড়ি খায় আর বল্টুর পাতে আর একটু মাংস তুলে দেয়, এভাবে খেতে-খেতে এক সময় পুরো মাংসের বাটি বল্টু শেষ করে ক্লান্ত হয়ে পরে। বল্টু ওর বৌয়ের রান্নাকে উদ্দেশ্য করে......

আর একা-একা চেয়ার থেকে উঠতে না পেরে আবার গান ধরলো......

“মাঝে-মাঝে তোর কাছে, জেনে-শুনে হেরে যাই”
“বারে-বারে মনে হয়, তোর হাতে মরে যাই!”

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১০

হোয়াইট ফায়ার বলেছেন: ভালো লাগল।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৫

সজল জাহিদ বলেছেন: থ্যাংকস

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.