নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সান্দাকুফুর স্বপ্ন শুরু....(স্বপ্নের সান্দাকুফু-১)

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৫


২০১২ সালে প্রথমবারের মত দার্জিলিং গিয়েছিলাম ছয় বন্ধু ও সহকর্মীর সমন্বয়ে। ৬ দিনের অনেক প্রাপ্তির একটা ভ্রমণ শেষে ফিরে এলাম বাংলাদেশে। এরপর যেটা হয়, সেটাই হল। আর আমাদের ক্ষেত্রে তারচেয়ে আর একটু বেশী হল। ফিরে এসে সবার মোবাইল আর ক্যামেরার ছবি একজায়গায় এনে সমন্বয় করা শুরু হল। পাশাপাশি ছবিগুলোকে একসাথে দেখা তো সবারই সব সময়ের অন্যতম প্রিয় একটি কাজ।

আমরাও সেটাই করতে লাগলাম। তবে আমরা শুধু ছবি-ই দেখছিনা, পাশাপাশি, ছবি গুলোর সাথে গুগল খুলে দার্জিলিং এর ওয়েব এ দেয়া ছবি গুলোর সাথে মিলিয়ে দেখছিলাম কোথায় কোথায় আমরা গিয়েছি! একটু অদ্ভুত না? আমরা এমনই অদ্ভুত ভাবে ভ্রমণ ও তার পরের প্রাপ্তি গুলোকে উপভোগ করে থাকি সব সময়।

তো আমাদের তোলা সেই ছবি গুলোর সাথে গুগলের ছবি মিলিয়ে দেখার সময় এমন একটি ছবি সামনে এলো যেখানে না চাইতেই চোখ আটকে গেল, নিজেদের অজান্তেই। আর বলে ফেললাম আরে এখানে তো আমরা যাইনি! এটা কোন জায়গা? খুঁজে দেখতে, সেই ছবিটায় ক্লিক করে দেখাগেল ছবিটা কোন এক অরন্যের, যেখান থেকে কাছে-দূরের বরফে মোড়া পাহাড় চুড়া দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট!

খুব অবাক হলাম, আর বললাম, আরে এটাও দার্জিলিং এ? অথচ আমরা গেলামনা কেন? এরপর আরও ভালোভাবে নেট ঘেঁটে দেখাগেল, ওটা সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কের ছবি, যেখান থেকে সব সময় কাঞ্চনজঙ্ঘা ও এভারেস্টসহ হিমালয় রেঞ্জের অন্যান্য বরফে মোড়া পাহাড় চুড়াগুলোকেও স্পষ্ট দেখা যায়, শুয়ে-বসে-হেটে বা গড়িয়ে! আর দেখালাম রিশপ-লাভার দারুণ কিছু পাহাড়ি গ্রামের ছবি।

সেদিন-ই সিদ্ধান্ত নিলাম, একদিন না একদিন সান্দাকুফু যাবো সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্ক আর সাথে বরফে মোড়া হিমালয় রেঞ্জ উপভোগ করতে। আর যাবো রিশপ-লাভার নীরব পাহাড়ি গ্রামে। কিন্তু এরপর কেটে গেছে ২০১৩/১৪ আর ১৫। দেখা হয়ে গেছে, তারও আগের স্বপ্ন বোনা সিমলা-মানালি, তাজমহল, দিল্লী-আগ্রাসহ ভারতের আরও কিছু আকর্ষণীয় জায়গা। কিন্তু কোনভাবেই আর সান্দাকুফুর পরিকল্পনায় ঠিক ঠাক হাত দেয়া হলনা। তার উপর শুরু হল ভিসা পাবার অসীম জটিলতা।

২০১৬ এর ঈদের আগে আগে হুট করে ভারতীয় দূতাবাসের ঘোষণা এলো যে ঈদের ভ্রমণ ভিসার জন্য আগ্রহীদেরকে কোন পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ছাড়াই ভিসা দেবে! এই ঘোষণা শোনা মাত্রই আর দেরি করলামনা। পরি-মরি করে, ফুলবাড়ি নতুন বর্ডারের নাম উল্লেখ করে, ভিসার ফরম পূরণ করে প্রথম দিনেই অনেক কষ্ট করে হলেও পাসপোর্ট জমা দিলাম। আর চারদিন পর দুরুদুর বুকে গিয়ে পাসপোর্ট ফেরত পেলাম ভিসা সহই! ভিসা পাবার পরেই তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত যে এবার এই ভিসায় স্বপ্নের সান্দাকুফু ট্রেকটা শেষ করতে চাই। সান্দাকুফুকে মাথায় রেখেই এই বর্ডার দিয়ে ভিসা চেয়েছিলাম।

ছয় মাসের ভিসা হাতে পেতেই মাথায় ভ্রমণের পাগলামিটা ঘুণ পোকার মত কুঁড়ে-কুঁড়ে খাচ্ছিল। আর ভাবনায় ছিল ছয় মাসের ভিসাটাকে যতটা সম্ভব কাজে লাগিয়ে রাখবো, পাছে আবার কবে ভিসা পাই বা না পাই সেই ভাবনায়।

টাকা? ভ্রমণের ক্ষেত্রে টাকা আমার কাছে কোন ব্যাপার-ই না! তার মানে এই নয় যে আমার টাকা আছে বেশ! না তা নয় আদৌ, আমার দিন আনি, দিন খাই অবস্থা। কিন্তু ভ্রমণের ক্ষেত্রে আমি নাছোড় বান্দা তার উপর আমি খুব কম খরচে ভ্রমণ করতে পারি। কারণ প্রকৃতির কাছে গেলে আমার ক্ষুধা কমে যায়!

দুই একবেলা না খেয়ে পাহাড় আর সবুজ দেখেই কাটিয়ে দিতে পারি বেশ! আর থাকার খেত্রেও আমার তেমন আরাম আয়েশের প্রয়োজন হয়না। মোটামুটি পরিষ্কার আর নিরাপদ একটা জায়গা পেলেই আমি খুশি। তাই খুব একটা টাকা আমার লাগবেনা।
যে কারণে ভিসা পেয়েই দুই দিনের জন্য মিরিক ঘুরে এলাম এক ছুটে। খরচ হয়েছিল মাত্র ২০০০ টাকা! হ্যাঁ তাই-ই।

আর সেটা ছিল আমার প্রথম সোলো ট্রাভেল বা একা একা কোথাও ভ্রমণ। খরচ আর একা একা ভ্রমণ আমার সাহস বাড়িয়ে দিয়েছিল বেশ। যার ফলাফল স্বরূপ আমি বাসায় এটা সেটা বলে কোন রকমে ম্যানেজ করে একমাস বাদেই ঘুরে এলাম অনেক দিনের কাঙ্ক্ষিত রিশপ-লাভায়। এরপর ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ রাখি আর ঈদের লম্বা ছুটি দেখে বাসায় ছুঁক ছুঁক করতে থাকি, কখন সময় সুযোগ বুঝে ঈদের ছুটিতে ভ্রমণে বের হবার কথা বলি? কিন্তু কোনভাবেই কোন উপায় করতে পারিনা।

এরপর আবার ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ রাখি আর সেই সাথে চোখ রাখি ওয়েব সাইটের ভার্চুয়াল ভ্রমণ জগতে। আর জানতে পারি লেহ-লাদাখ হল সেপ্টেম্বরে ভ্রমণের আদর্শ যায়গা আর সিঙ্গালিলা বা সান্দাকুফু ভ্রমণের আদর্শ সময় শুরু হয় অক্টোবর থেকে। তাই প্রাথমিক ভাবে ভাবি যা হবার হবে সেপ্টেম্বরে লেহ-লাদাখ আর অক্টোবরে স্বপ্নের সান্দাকুফু ট্রেক শেষ করতে চাই। একদিন সাহস করে বাসায় বলেই ফেললাম, যে আসছে ঈদে ১২ দিনের ছুটি আছে আমি হয়তো দেশে থাকবোনা।

বাসায় এই কথা শুনে অধিক শোকে পাথর হয়ে বলে দিল যা খুশি করতে পারি কারো কোন আপত্তি নাই। সেই কথায় কান না দিয়ে আমি আমার মত প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে এসে বিবেকের কাছে হেরে গেলাম।

যে এতোদিন আর এমন উৎসবমুখর সময় পরিবারকে সময় না দেয়াটা বড় অন্যায় হয়ে যাবে। বিবেকের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে। আমি আবার যাই করিনা কেন, বিবেকের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে এমন কিছু কখনোই করতে পারিনা। আমি সমাজ-সংসার-আইন-কানুন বা নিয়মের কোন কিছুই মানিনা, তবে নিজের বিবেক যদি কোন কাজে কখনো বাঁধা দেয়, সেটা কখনোই করতে পারিনা বা করিনা। তাই বিবেকের বাঁধার কাছে লেহ-লাদাখ ট্যুর বাদ দিলাম। আর বেছে নিলাম চার বছরের লালিত স্বপ্নের সান্দকুফু ট্রেককে।

আর সেভাবেই নিজের শরীর-মন আর মানসিকতাকে ঠিক করতে থাকলাম......

পাহাড় ও পারিবারিক সঙ্কট...!! (পরের গল্প)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:১৬

মোঃ আবু হেনা সাজ্জাদ বলেছেন: দুই একবেলা না খেয়ে পাহাড় আর সবুজ দেখেই কাটিয়ে দিতে পারি বেশ!

চমৎকার উপলব্ধি। অনেক ভাল লাগল। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:২১

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ, তবে আমি শুধু অনুভূতির কথা বলিনি, একদম সত্যকথা বলেছি।

২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:১৭

অন্তু নীল বলেছেন: "দুই একবেলা না খেয়ে পাহাড় আর সবুজ দেখেই কাটিয়ে দিতে পারি বেশ!"
এই বাক্যটা আমারও বেলায় ও সত্য।

চমৎকার পোস্ট। আপনার পোস্ট পড়ে ভ্রমনে অনেক সাহস পাই।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:২২

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ, তবে আমি শুধু অনুভূতির কথা বলিনি, একদম সত্যকথা বলেছি।

৩| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৫

অপ্‌সরা বলেছেন: সবুজ আর সবুজ !
সমুদ্রের চাইতেও পাহাড় আমার বেশি প্রিয়!

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৪

সজল জাহিদ বলেছেন: এটা পড়ু। আমার পাহাড় আর সমুদ্রের ভাবনা।
পাহাড় ও সমুদ্র, প্রেম ও অন্যকিছু...............

আমি তোমার অভিসারিণী হতে চাই! তার আহ্বান!!
সেতো সম্ভব নয়; ততটা প্রয়োজন বোধ করছিনা! আমার উত্তর।
তবে একটা পাহাড় হতে চাই! আবার ব্যাকুলতা!
ওরে বাবা, এতো আরও ভয়ংকর, পাহাড়ের ডাক উপেক্ষা করার সাধ্য আমার নেই!
নাহ, আমি, তোমার কিছু না, কিছু হতে চাই! চাইই, চাই! বল তুমি, আমাকে তোমার কি বানাবে?

ঠিক আছে, তবে তুমি সমুদ্র হও! তুমি আমার সমুদ্র হও!
সমুদ্র! আমি সমুদ্র হব! তোমার সমুদ্র হব!! এতো পাহাড়ের চেয়ে অনেক বেশী পাওয়া! ইস, কেন যে তোমার পাহাড় হতে চেয়ে, তোমার কাছে নিজেকে ছোট করতে গেলাম? তুমি আমাকে তোমার, সমুদ্র বানাবে এর চেয়ে বেশী আর কিই বা চাওয়ার থাকতে পারে? আমি খুশী, ভীষণ খুশী! কিন্তু, একটা প্রশ্ন?

তুমি আমাকে তোমার পাহাড় বানাতে রাজী হলেনা, অথচ সমুদ্র বানাতে রাজী হলে? পাহাড়তো অনেক আছে? অনেক, অনেক? আর সমুদ্র তো একটা বা দুইটাই হয়, এক, এক জায়গায়। তবে কি আমি বেশী প্রত্যাশিত? তোমার কাছে? বিশেষ ভাবে? প্লিজ, প্লিজ বলনা?
আমি নিশ্চুপ! বেশ জোড়াজুড়ির পরে বললাম, তবে শোন...............

সমুদ্র আমার কাছে অনেক ভাললাগার একটা জায়গা, সমুদের পাশ দিয়ে হাঁটতে আমার অনেক ভালো লাগে, সমুদ্রকে বসে, বসে দেখতে ও তার কান ফাটানো ব্যাকুলতা আমাকে আনন্দ দেয়, সমুদ্র আমার কাছে অন্যকিছু! যার পাশে চলতে বেশ ভালই লাগে, দেখতে ভালোলাগে, ভাবতেও ভাললাগে মাঝে, মাঝে, পাশাপাশি হাটার ফাঁকে, ফাঁকে ইচ্ছা ও অনিচ্ছাকৃত আঙুলের ছোঁয়াছুয়ি! যেমন সমুদ্রের জলে ভিজতে না চাইলেও, ওঁরা ভিজিয়ে দেয়, ওদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ঢেউ দিয়ে! যেটাতে আমাদের তেমন কোন আপত্তি থাকেনা, আপত্তি থাকলেও ওঁরা তার পরোয়া করেনা! আমাদেরও বেশ লাগে, মন্দ অন্তত লাগেনা! কিন্তু সমুদ্রের ডাকে, ওর বুকে আমার ঝাঁপ দেইনা, সচেতনরা তেমন দাপাদাপিও করেনা, অততা উচ্ছ্বাসে ভেসে যায়না! তবে বেশ উপভোগ করে, সমুদ্রের মাতলামি, পাগলামি, ব্যাকুলতা সবাইকেই কমবেশি টানে, কিন্তু এতে গা ভাসালেই সর্বনাশ! চিরদিনের মত হারিয়ে যাবার আশঙ্কা! সমাজ ও সংসার থেকে!

আর পাহাড়! আহ, সেতো বর্ণনাতীত, পাহাড়? সেতো আমার প্রেম! আমার প্রেমিকা, আমার পাগলামির সবচেয়ে নির্ভর আশ্রয়! পাহাড় আমার কাছে, প্রেমের পোর্টফলিওর মত! অনেক আছে, একদিন এর কাছে! একদিন ওর কাছে! আজ এই পাহাড়ের কোলে, তো কাল ওই পাহাড়ের বুকে! পরশু আর এক পাহাড়ের আলিঙ্গনে! পাহাড় আমাকে ছিনিয়ে নেয়, আমার কাছ থেকে, পাহাড় আমাকে উন্মাদ করে দেয়, ওকে পাবার, আহরন করার, জয় করার উম্নাদনায়! পাহাড়ের আহ্বান আমাকে বিশাল হতে শেখায়, আমাকে কষ্ট করে অর্জন করতে শেখায়, বিপদ থেকে মুক্ত হবার পথ দেখায়, পাহাড় আমাকে বিষম সাহসী করে তোলে, অর্জনের নেশায় অধ্যাবসায়ি হতে শেখায়। পাহাড় আমার, আরও অনেক, অনেক কিছু, যা বলে শেষ করা যাবেনা!

যদি, তুমি আমাকে পাহাড় আর সমুদ্রের মাঝে বেছে নিতে বল, তো বলব, ১০০ বারে ৯৯ বার পাহাড়! আর ০১ বার সমুদ্র!!

তবে আমি তোমার, পাহাড়ই হব! দরকার নেই আমার সমুদ্র হবার! বিশাল হবার! একমাত্র হবার! আমি তোমার প্রেমের পোর্টফলিওরই একটা ছোট্ট অংশ হব! একবার নয়, মাঝে, মাঝে, বারে, বারে তো আসবে! আমার ডাকতো তুমি উপেক্ষা করতে পারবেনা! আজ থেকে আমি তোমার পাহাড়!, পাহাড় আর পাহাড়!!!

৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৯

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেকদিন পর ব্লগে এলাম, এসেই আপনার এই লেখা দিয়ে পাঠচক্র শুরু করলাম। যাই পরের পর্ব পড়ি...

২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০৩

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.