নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

টংলু ভ্যালীর প্রেমে...(স্বপ্নের সান্দাকুফু-৫)

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৪


ধোত্রেতে সকালের নাস্তা শেষ করলাম বিফ মোমো আর সুপ দিয়ে। এরপর মেঘ কুয়াসার সাথে কিছুক্ষণের আন্তরিক আলিঙ্গন আর ছবি তুলে কিছু সুখের মুহূর্তকে নিজের কাছে ধরে রাখা। পাশেই একটি ম্যাপ আর সাইন বোর্ডে লেখা আছে সান্দাকুফু/টংলু এই দিকে...

শুরু হল টংলুর দিকে ট্রেক। দুইপাশে ছোট ছোট পাহাড়ি বর্ণিল ঘর-বাড়ি ঝলমলে উপস্থিতি। পাহাড়ের রিজ ধরে যেন গড়ে তোলা হয়েছে সেগুলো, দুই পাশের বাড়ি গুলোর বারান্দাই আমাদের ট্রেক রুট! খুব ধীর লয়ে উঠে গেছে আকাশের দিকে! এরপর আবার নেমে গেছে আকাশের সাথে মিশে থাকা অরণ্যর গভীরে! সে এক অদ্ভুত সমীকরণ আকাশ আর অরণ্যর। যেন দুজনে যুক্তি করে মিলেছে দুজনের সাথে।

পাহাড়ি বাড়ি ঘরের বারান্দার সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নামতেই একেবারে সমতলে গিয়ে পৌঁছালাম যেন আর ঠিক সেখানেই যে অরণ্যর শুরু সেটাই সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্ক! আহা দেখেই একটা বিদ্যুৎ চমক খেলে গেল মনে-প্রানে। কারণ গত চার বছর ধরে এই গভীর অরণ্যর স্বাদ নেব বলে এঁকেছি কতনা ছবি, করেছি কতনা কল্পনা, দেখেছি কতনা স্বপ্ন। আর আজ সেই অরণ্য, সত্যিকারের সিঙ্গালিলার পায়ের কাছে দাড়িয়ে আছি আমি আর আমরা। মনে মনে বললাম স্বপ্ন হল সত্য প্রায়, বাকিটা তিনদিন পরে। যখন এই অরণ্য, তার মেঠো পথ, সবুজের চাদর সরিয়ে একদিন পৌঁছে যাবো অনেক কাঙ্ক্ষিত সান্দাকুফুর চুড়ায়।

এই কথা ভাবতেই যেন নতুন উদ্যাম পেলাম নিজের মাঝে। ব্যাস ব্যাগটাকে আর সেঁটে নিলাম বুকের সাথে, মুখে পুরে নিলাম একটি কফি চকলেট আর শুরু করলাম স্বপ্নের অরণ্য উপভোগ করতে করতে সামনের উঁচু উঁচু পাহাড়ের চুড়া থেকে চুড়ায় ওঠার ট্রেক।

একটু এগোতেই এই ক মিনিট হবে? ১৫/২০। পেলাম এক দারুণ সবুজের মখমলে মোড়ানো মিহি ঘাসের কয়েকটি টিলা। সেই অরণ্যর মাঝেই। এখানে একটু না বসলেই নয়। আর সাথে দুই একটি ছবি তো চাই-ই চাই। আর তাই-ই হল, সাথে ট্রেক এর প্রথম বিশ্রাম। আবার শুরু স্বপ্নারন্যে পথ ধরে স্বপ্নের শেষ নিমানায় যাবার হাটা।


দুই একটি ছোট ছোট পাহাড় পার হয়ে আর একটু উঁচু পাহাড়েই নিজেদের আবিস্কার করলাম অনেক ছবি দেখা, গল্প পড়া আর একদিন ছুঁয়ে দেখবো বলে ভেবে রাখা রডেডনড্রনে বেষ্টিত পাহাড়ে সারি। ওয়াও বলে উঠলাম নিজের অজান্তেই। আর প্রথম বারের মত একান্ত আন্তরিকতায় আলতো করে ছুঁয়ে দেখলাম ওর পাতায় পাতায়, রঙিন কুঁড়িতে কুঁড়িতে জমে থাকা রোদের ঝিলিক দিয়ে যাওয়া রূপালী শিশির বিন্দু গুলোকে।
আর এক একটা রডেডনড্রন গাছে ধরে আছে এক এক রকমের ফুলের কুঁড়ি। নাহ ফুল নেই একটুও প্রস্ফুটিত। যা আছে সব কুঁড়ি। কারণ ফুলের সময় এই অক্টোবর নয়।

সেই বর্ণিলতার খেলা দেখতে হলে যেতে হবে কোন এক এপ্রিলে। তবে পাহাড়ে পাহাড়ে, রডেডনড্রনের আশেপাশে, সবুজের গালিচা ছুড়ে ফুটেছিল নাম না জানা শত রকম আর রঙের ফুল। যার রঙগুলো খুবই অদ্ভুত রকমের কমলা-হলুদ-বেগুনী-গোলাপি আর নানা রঙের শেডের মিশ্রণ এক একটা ফুলে। তবে একদম কমন কর রঙ নয় একটিতেও। একটা অদ্ভুত আচ্ছন্নতায় তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে এমন এক একটা রঙের ধরন করে ছিল প্রতিটি ফুলের নিজস্বতা।

পাহাড়ের পর পাহাড় পেরিয়ে, একটা সমতল ভ্যালীর মত পেলাম, যেখানে আবার বিশ্রাম। পুরো ভ্যালীটাই অদ্ভুত রকমের সমতল, যার চারদিকেই পাহাড়ে পাহাড়ে ঘিরে ধরা, কাছে বা দূরে। বেশ কিছু হলুদাভ ঘাস বা নাম না জানা কোন ফসলের গাছ পুরো ভ্যালী জুড়েই। দেখেই মনে হল, ইস যদি ক্যাম্পিং করা যেত একদিন এখানে। এই কথা ভাবতে ভাবতেই আমাদের সাথে যোগ দিল আর দুইজন, যারা তাদের অফিশিয়াল কাজ শেষ করে সময় মিলে যাওয়ায়, একটু ঝালিয়ে নিচ্ছেন পুরনো ট্রেকিং এর নেশার আর সৃতির জাবর কেটে সুখ পাচ্ছেন একান্ত ফেলে আসা সময়ের।

কিছুক্ষণ বিশ্রাম, শুকনো খাবার, চকলেট, গ্লুকোজ আর পানি দিয়ে ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মিটিয়ে চলার শুরু। সামনে তিনটা পাহাড়ের পরে যে চুড়াটা দেখা যাচ্ছে ওটাই টংলু। একজন বলে ফেললেন আরও তিনটা পাহাড়? জী দাদা আরও তিনটা পাহাড়! সেই সমতল ভ্যালী থেকে আবারো শুরু হল পাহাড়ের চুড়ায় ওঠা। এক চুড়া থেকে একটু নেমে, একেবেঁকে আর একটি চুড়ার পথ ধরা।

এভাবে দুইটি চুড়া পেরোবার পরে পেলাম একটু অন্যরকম কাঙ্ক্ষিত চুড়া, যেখানে দুই একটি ছবি না তুললেই নয়। একদম স্বপ্নময় ছবির লোকেশন যেন! করাও হল তাই। থেমে আর সেই পাহাড়ের চুড়ায় উঠে তোলা হল ছবি। যদিও আকাশ বড় ধুম ধরে আছে সেই সকাল থেকেই। নেই কোন নীলের দেখা বা দূরে কোন ভরফ মোড়া পাহাড়ের চুড়া, তবুও অভাবনীয় ছিল সেই মুহূর্তটুকু।

আর একটু পাহাড়ের চুড়ায় উঠলেই টংলু। ১৫ হবে হয়তো, পৌঁছে গেলাম টংলুতে। ওয়াও এটা তো কোন চুড়া নয়, একেবারেই সমতল টেবিলের মত এক ভ্যালী আবারো! যেটা স্নিগ্ধ সবুজের হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমাদের। এর উচ্চতা প্রায় ৯০০০ ফুটের কাছাকাছি। এতো উঁচু পাহাড়েও যে ভ্যালীর মত সমতল হতে পারে ভাবতেই পারিনি। একটু এদিক সেদিক তাকিয়ে, হেটে দেখে বোঝা গেল যে এটা আসলেই এক পাহাড়ের চুড়া। কিন্তু অনেক বড় একটি পাহাড়ের অনেকটা বিসৃত এই চুড়া তাই অনেকটা ভ্যালীর মত লাগছে।

আর যে বাড়ি বা ঘরে বসবো আমরা হালকা কিছু নাস্তা আর চা খেতে সেটাতো যে স্বর্গ থেকে তুলে এনে এই পাহাড়ের চুড়ায় বসিয়ে রেখেছে সয়ং বিধাতা যেন! এতটাই নান্দনিক আর অপূর্ব সাঁজে সেজে অভিবাদন জানালো আমাদের অভিযাত্রী দলকে। কত রকমের আর রঙের ফুল যে ফুটে ছিল সেই বারিটির পুরো বেলকনি জুড়ে... আর ছোট্ট বাঁশের বেড়া দেয়া উঠোন তো যেন এক টুকরো সবুজ, স্বচ্ছ আর ঝকঝকে বিছানা। যেখানে পা রাখতেও শঙ্কা হয়, পাছে অভিমান করে ওর নিষ্পাপ শরীরে রেখেছি আমাদের ময়লা পা! এতটাই মিহি আর মায়ামাখা ছিল টংলুর সেই সবুজ চাদর বেছানো মুগ্ধ উঠোন।

আমি পুরোপুরি প্রেমে পড়ে গেছি টংলুর। ভালোবেসে ফেলেছি টংলুকে। ওর চারপাশের সবুজ পাহাড়ের মায়াবী চাহুনিকে। কাছে-দূরে আরও আরও সবুজের চাদর গায়ে বসে থাকা উঁচু-নিচু পাহাড়কে, কখনো মেঘ ছুঁয়ে ভিজিয়ে দিয়ে যাওয়া মিহি আদরকে, আবার কখনো এক মুঠো রোদের আন্তরিক উষ্ণতাকে, রঙিন নাম না জানা পাখির গানকে, উড়েবেড়ানো স্বাধীন বর্ণিল প্রজাপতিকে, শত রঙের ফুলে ফুলে সেজে থাকা পাথরের সেই বেলকোনিকে। আমি মন্ত্র মুগ্ধের মত চেয়ে ছিলাম আর যেন নিজের করে নিয়েছিলাম পুরো ট্রেকের সবচেয়ে ভালোলাগার টংলুকে...।

আসলেই গভীর প্রেমেই পড়েছি টংলুর।

স্বপ্নের টুমলিং...... (পরের গল্প)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: বর্ণনা আর ছবিতে আমিও যে গভীর প্রেমে পড়েছি টংলুর ------ আন্তরিক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৬

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, পারলে সময় নিয়ে ঘুরে আসুন।

২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:০৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ওয়াও বলে উঠলাম নিজের অজান্তেই।


দারুন ভ্রমণ আরও দারুন বর্ণনা :)

মুগ্ধতায় ভার্চুয়াল ভ্রমন করিয়ে আনায় ধন্যবাদ :)

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৩

সজল জাহিদ বলেছেন: হুম তাই? অনেক ধন্যবাদ। পুরো ভ্রমণ করতে চাইলে দেখতে থাকুন (পড়তে) মোট ১৬ টি গল্প।
আপনাদের ভালো লাগলে সেটাই লেখাটার প্রাপ্তি।

৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৭

অন্তু নীল বলেছেন: হুম, লোভ ধরিয়ে দিলেন।

পরিকল্পনায় রাখলাম। কোনো একদিন অবশ্যই যাব।

দারুণ লেখার জন্য +++

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৪

সজল জাহিদ বলেছেন: তবেই না লেখা সার্থক। নিশ্চয়ই যাবেন সময় করে, আরও ১১ টি গল্প আসবে। অনেক ধন্যবাদ।

৪| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২২

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
অপরুপ দৃশ্য !!

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৫

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ অনেক অনেক।

৫| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১১

আহমেদ জী এস বলেছেন: সজল জাহিদ ,




গভীর প্রেমে পড়ার মতোই স্বপ্নের সান্দাকুফুর আদিগন্ত বেছানো মাটি ও আকাশ ।

ভালো লাগলো ।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১৬

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ অনেক অনেক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.