নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মন খারাপের তিন দিন...! (স্বপ্নের সান্দাকুফু-০৯)

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১৪


একটু অবাক হচ্ছেন তাইনা? যারা ধারাবাহিকভাবে এই অভিযানের গল্প পড়ছেন। এই কদিন কিছু আনন্দের গল্প পড়ার পরে হুট করে কিভাবে মন খারাপ হতে পারে, তাও একই সাথে গত তিন দিনেরই!

আসলে হয়েছে কি, আপনি যখন অনেক দিন-মাস-বছরের সাধনা আর অপেক্ষার পরে কোন কাঙ্ক্ষিত কিছু পেতে যাচ্ছেন জানেন। আর সেই পাওয়াটাও আপনার খুব কাছাকাছিই আছে। যেটা আপনি আগামী তিন বা চারদিনের মধ্যেই পেয়ে যাবেন জানেন। সেভাবেই তার কাছে যেতে শুরু করলেন।

আর আপনি এটাও জানতেন যে যা পেতে আপনি যাচ্ছেন, সেটা এই চারদিন-ই দেখতে পাবেন, কখনো কাছে, কখনো দূরে। এক-এক সময়, এক-এক ভাবে আর এক-এক কোন থেকে। কিন্তু প্রথমদিন আপনি সেটা পেলেন না। ভুলে গিয়েছিলেন বা আশায় ছিলেন, আগামীকাল পাবেন।

দ্বিতীয় দিনও আপনি সেটা পেলেন না, অথচ আপনি জানেন যে আশেপাশেই আছে সে আপনার। কিন্তু ধরা দিচ্ছেনা। তবুও আপনি মন খারাপ করবেননা, কারণ আশায় থাকবেন, আগামীকাল দেখা যাবেই তো! ওর একদম কাছাকাছি গেলে। ওর হাত ছোঁয়া দুরত্তে। অথচ এই দু-দিনেও দেখা পাননি তার, যেটা দেখা যাবার কথাছিল, পথের বহু যায়গা থেকে, বহুবার।

আর তাই যখন তৃতীয় দিন, তার একদম কাছে গিয়েও তাকে দেখতে পাচ্ছেন না, তাকে বুঝতে পারছেননা। তখন কি মন খারাপ না হয়ে পারে? পারেনা বোধয়, আর তাই গত তিন দিনের তাকে দেখার বা দেখতে পাবার আকুলতায় যে আনন্দে ভেসেছিলাম, যে সীমাহীন কষ্ট সয়েছিলাম, যে নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করেছিলা, যেটা গত তিনদিনে একবারও আপনাকে মন খারাপ করতে দেয়নি, যেটা মন খারাপের অনুভূতি থেকেই দূরে রেখেছিল আপনার মন আর মননকে, সেটাই একই সাথে আপনার মন খারাপের করুন কারণ হয়ে দেখা দিল।

মানেভাঞ্জন থেকে টংলু। টংলুর চুড়ায় বসে বেশ ভালোভাবে উপভোগ করা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা, যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে। প্রথম দিন আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা, তাই দেখা যায়নি কিছুই। মন খারাপ করিনি। টুমলিং থেকেও দেখা যায় বেশ ভালোভাবে। সকালেও দেখাও গিয়েছে বেশ ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে, কিন্তু বিকেল হতেই আকাশের মুখ ভার, মেঘ কালো হয়ে ঘিরে আছে সব। তাই দেখা গেলনা কিছুই। দ্বিতীয় দিন কালাপোখারি। সারাটা পথ সিঙ্গালিলা অরণ্যের রোমাঞ্চে বুঁদ থাকায়, ভুলেছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘার কথা। ভেবেছিলাম কালাপোখারি থেকে দেখা যেতে পারে দুপুরে বা বিকেলে।


ঠিক দুপুরে পৌঁছালাম কালাপোখারি। আর পৌঁছাতেই মেঘের ডাকাডাকি, টিপটিপ বৃষ্টি, কিছুটা ঝড়-বাতাস-বৃষ্টি। ব্যাস বাইরে থাকার আর কোন উপায় রইলোনা। রুমে বসে দুই একটি কথা, মুখে ডাল-মুট, কাজু-পেস্তা আর চকলেট-চা। শেষ দুপুরে, একমাত্র বাঙালি সঙ্গী হারানোর বেদনা (এটি আলাদা গল্প)। বিকেলে একটু হাসলো আকাশ, ছুঁটে গেলাম এক পাহাড়ের চুড়ায়, যদি দেখা দেয় সে? সেই আশাতে। বের হতেই আবার আঁধার কালো, সেই সাথে ঝুম বৃষ্টি। ফিরে আসা সেই বিছানায়, একাকিত্ত হাতছানি দেয়।

সন্ধা গেল, একটু হেটে, কিছুটা পাহাড় আর লেকের সাথে কথা বলে, ছবি তুলে, পাহাড়ের আড়ালে আকাশের দিকে তাকিয়ে, তাকে খুঁজে ফিরে, বারে-বারে। আশা রেখে আগামীকালের। রাতভর ঘুমে-জাগরণে, বারে-বারে জেগে উঠে জানালার দিকে তাকিয়ে, ভোরের অপেক্ষায়। কিন্তু চারিদিক কুয়াসা চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে, যেন কারো সেই চাদর সরাতে বারণ। এটা প্রকৃতির চাদর, প্রকৃতি সরাবে ওর ইচ্ছে মতন।
এখানে কারো হাত নেই কোন, না আকাশের, না পাহাড়ের, না কোন ঝড়ের বা বৃষ্টির, নেই হাত এমনকি রোদেরও। কুয়াসার ইচ্ছে, যখন খুশি, তখন সরে যাবে সে।

তাই আবারো, লেপের তলায়, ঘুমের দেশে। সকাল হল মন খারাপের গল্প শুনে বা গল্প শুনে মন খারাপ। একদম ভোরে নাকি সূর্য উঠেছিল, আকাশ হেসেছিল আর বরফ চুড়াগুলো সেজেছিল, নেচেছিল খুব! ইস দেখা হলনা। ঘিরে ধরলো বেদনা-ব্যাথা আর পেয়েও হারানোর যন্ত্রণা। তবুও আশায় থাকা, সামনে পরে আছে পুরো দিন। দেখা তো যাবেই একবার না একবার। একটু বা বেশী, কাছে বা দূরে, স্পষ্ট বা অস্পষ্ট! দুপুরে অথবা বিকেলে, অন্তত সন্ধ্যায়। পুরোটা পথ চলেছই সেই আশায়।


এভাবেই স্বপ্নে-কষ্টে-কল্পনায়-কামনায় আর যন্ত্রণায় পৌঁছে গেলাম সেই কাঙ্ক্ষিত চুড়ায়। এই সেই স্বপ্নের, চার বছরের লালিত স্বপ্নের চুড়া, কতশত কল্পনার রঙিন জালবোনা চুড়া, হাজারো বাঁধা উপেক্ষা করে জয় করা চুড়া, এই সেই সান্দাকুফু! একেবারে বাস্তবে, আমি এখানে, এই চুড়ায়! হাতে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা, মুখে প্রশান্তির হাসি, অনেকটা উচ্ছ্বাসে, কিছুটা ভেসে যাওয়া। আর অপেক্ষা এবার তাকে দেখার, যার জন্য এতোকিছু সয়ে, এতো পথে বেঁয়ে, এতো স্বপ্ন দেখে এখানে ছুঁটে আসা।

কিন্তু এই মেঘ সরে, এই মেঘ আসে। এই আকাশ হাসে, তো এই আকাশ কাঁদে। এই বাতাস থেমে যায়, তো এই বাতাস ছুঁটে আসে। এভাবে মেঘ-কুয়াসা-বাতাস আর বৃষ্টির সাথে চলছে নিয়মিত রোদের লুকোচুরি খেলা। সকাল-দুপুর-বিকেল বেলা। সবই হচ্ছে শুধু চুড়াগুলো দেখা যাচ্ছেনা। সেগুলো রয়েছে মেঘের আড়ালে, কুয়াসায় ঢেকে, আর মাঝে মাঝের বৃষ্টিতে ভিজে।

তার শুধু রোদ চাই, চাই মেঘমুক্ত নীল আকাশ, চাই দুই এক টুকরো সাদা মেঘের ভেলা। তবেই সে দেখা দেবে, পণ করেছে। কিন্তু আশায়-আশায় বিকেল গড়াতে গড়াতেও তার মান না ভাঙাতে, মন খারাপ হতে হতে, এক সময় হতাশায় ভেঙে পড়া প্রায়! না পেয়ে তার দেখা, একবারও এতটুকু!

তাই ফেলে আসা তিনদিন-ই যেন হয়েগিয়েছিল মন খারাপময়, নিরানন্দ আর হতাশার! মন খারাপের তিনদিন...!

আশা-নিরাশার বরফ চুড়া! (পরের গল্প)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.