নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ট্রেকার্সদের বউয়েরা... (স্বপ্নের সান্দাকুফু-১৪)

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৭


ট্রেকার/ট্রেকার্স বর্তমানে বাংলাদেশের ভ্রমণ জগতে একটি অতন্ত পরিচিত আর জনপ্রিয় নাম বা বিশেষণ বলা যায়। কারণ ভ্রমণ জগতে ট্রেকার্স মানেই একটু অন্য রকম কিছু। একটু আলাদা ধরনের মানুষ। হোক সে পুরুষ বা মহিলা। তাদের কদর ভ্রমণ সমাজে একটু বিশেষ বৈকি। অন্তত আমার স্বল্প অভিজ্ঞতা আর ভোতা অনুভূতিতে তেমনই মনে হয়।

আমি বাবা ট্রেকার নই। আদৌ নই আর হতেও চাইনা। আমি সাধারণ আর সাধারণ হয়েই থাকতে চাই। এটাই ভালোবাসি। আমি নিজেকে সস্তা ভ্রমণকারী হিসেবে ভাবি। খুবি সস্তা, কারণ আমার মত সস্তায় না খেয়ে ভ্রমণ করতে আর কজন পারে আমার জানা নাই। এই সস্তা ভ্রমণটা আমি খুব-খুব উপভোগ করি।

তো সেদিন, এই স্বপ্নের সান্দাকুফু ট্রেক শেষ করে ফেরার পথে কয়েকজন সত্যিকারের ট্রেকার্সদের সাথে দেখা হয়েগিয়েছিল খুবই ভাগ্যক্রমে। আর কিছু সময় বা এক রাতের জন্য দুর্লভ ট্রেকার্স উপাধি পেয়ে মনে-মনে কিছু গোপন সুখ বোধ হয়েছিল, উপভোগ করেছিলাম মনে-মনে, সঙ্গোপনে!

যার একটা ব্যাকপ্যাকই নেই সে কিভাবে ট্রেকার হতে পারে আমি ভেবে পাইনা। সে যাই হোক সেই একরাতের ট্রেকার উপাধি পাবার গোপন সুখ উবে গিয়েছিল সকাল হতে হতেই! প্রত্যেক স্বনামে ধন্য ও দেশব্যাপী সুপরিচিত ট্রেকার্সদের সন্ধারাত থেকে শুরু করে শেষ রাত আর এর পরের সকাল-সকাল বৌদের মোবাইলে অনবরত ঝাড়ি আর জেরার মুখে পড়া দেখে!


তো শুনি সেই গল্পটা, কি বলেন?

ট্রেকার আর তাদের বৌ, খুবি সাংঘরসিক একটা সম্পর্ক! খুবই অসহনীয়, অসহ্য আর অস্বাভাবিক দুটি প্রানের, একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত মিলমিশ! দুইজন পুরোপুরি দুই মেরুর বাসিন্দা। দুজনের চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারনা আর স্বপ্ন-কল্পনা একেবারেই আলাদা খুব স্বাভাবিক ভাবেই। কি রকম একটু দেখি তবে?

১) একজন ট্রেকার যেখানে নতুন কোন পাহাড়ে যাবার স্বপ্ন দেখে, একজন বৌ তখন তার সংসারটা আর একটু গুছিয়ে নেবার স্বপ্ন দেখে।

২) একজন ট্রেকার যখন একটা ভালো ট্রেকিং ইকুইপমেন্ট কেনার ভাবনা ভাবে, তখন তার বৌ সংসারে একটা ননসটীক প্ন্যান কেনার কথা ভাবে।

৩) একজন ট্রেকার যখন নতুন কোন বরফ চুড়া জয়ের স্বপ্ন ভাসে, তার বৌ তখন হয়তো সংসারে নতুন কোন আসবাব কেনার স্বপ্নে ভাসে।

৪) আর বাসা থেকে কোথাও যাবার আগে যে কত রকমের খোলামেলা ঘুষের লেনদেন করতে হয়, সেই খবর কেই-বা যানে বা বলে!

শুধু মনে মনে বুক চাপড়ায় কত টাকা ক্যাশ গেল? কত টাকার কসমেটিকস আর কত টাকার কাপড়-চোপড় কেনা হল? সেই টাকা দিয়ে আর কয়টা পাহাড়ে ট্রেক করা যেত সেই ভাবনা ভেবে...!

এমন আরও ভুরি-ভুরি উদাহারন দেয়া যায়। যদিও রাব্বি ভাই, দেবু দা দের মতন কিংবদন্তী তুল্য আর শোনার চামচ মুখে নিয়ে ট্রেকার্স হওয়ার ঘটনা একেবারেই আলাদা বা উদাহারনের বাইরে। তবে সেই সব উদাহারন না দিয়ে মূল গল্পে ফিরে আসি।


ভারতের ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশনটা আজকাল বেশ নির্ঝঞ্ঝাট ভাবেই শেষ হয়ে যায়, কোন এক ভাগ্যক্রমে। কিন্তু বাংলাদেশ অংশে এলেই শুরুহয় বিড়ম্বনা। এবারও তাই হল। আর সেই বিড়ম্বনার ভিড়েই দেখা পেলাম ফেসবুকের তারকা ট্রেকার্সদের কয়েকজনের, তারাও সান্দাকুফু ট্রেক করে দেশে ফিরছেন। তাদের দেখেতো আমি খুশিতে ডগমগ।

আরে এদেরকে তো শুধু বছরের পর বছর ফেসবুকেই দেখে এসেছি! আর তাদের বিভিন্ন পোস্টে লাইক দিয়ে কত ভালোই না লেগেছে নিজের কাছে। আহা কি ভালোই না লেগেছে, মনে মনে যখন ভেবেছি... আমার লাইক দেয়া নিশ্চয়ই নোটিশ করেছেন তারা, আর তারপর নিশ্চয়ই কোন সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখতেন যদি!

একজনকে তো দেখে আনন্দে জড়িয়েই ধরলাম নিজেকে সংযত করতে না পেরে, চোখের সামনে একজন তারকাকে এতো-এতো কাছ থেকে দেখতে পাবার সৌভাগ্য বলে কথা!
আরে ভাই আপনি অমুক না?

হ্যাঁ ভাই চিনলেন কিভাবে?

আরে কিজে বলেন ভাই, আপনাকে না চিনলে যে ফেসবুক ব্যাবহার করার কোন মানেই নাই।

কিভাবে?

"আরে এইটা কি বললেন ভাই, যার কোন কিছু ফেসবুকে পোস্ট করার সাথে সাথেই লাইকের ঘরে হাজার সংখ্যা দেখা যায়, আর কমেন্ট তো পরেই শেষ করা যায়না, তাকে না চিনলে কিভাবে হবে? আমার তো ফেসবুক ব্যাবহার করার কোন অধিকারই নাই তাহলে।

এরপর তার আর একজন ট্রেক সঙ্গী আমাকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন ভাই, আপনার বাসায় একটু খোঁজ খবর নেন? যিনি আমার কিছুটা পূর্ব পরিচিত, যার সাথে ট্রেক এ যাবার আগে কিছু কথাবার্তা হয়েছিল।


আমি অবাক বিস্ময়ে তাহার দিকে তাকাইয়া আছি দেখিয়া, আর একজন বলিলেন ভাই, আপনার কোন খোঁজ না পাইয়া আপনার বৌ অমুককে ফোন করিয়া যে কোন ভাবে আপনার সাথে যোগাযোগের জন্য বলিয়াছেন!

আমার মাথায় আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে প্রায়! এদের কারো সাথেই আমার তেমন কোন আলাপ বা বিশেষ কোন বন্ধুত্ত নাই, তাদের সাথে আমার বৌয়ের ফোনালাপ কিভাবে হইলো ভাবিয়া কোন কুল কিনারা করিতে পারিলামনা, তাই ভাবনার অথৈ সাগরে ভাসিতে নয় হাবুডুবু খাইতে লাগিলাম!

আমার এমন শোচনীয় আর হাবুডুবু অবস্থা দেখিয়া তাদের আর একজন সঙ্গী জানাইলেন, যে ভাই আপনার যে ভ্রমণ সঙ্গী আপনার সাথে ট্রেক শুরু করেছিলেন, যার নাম্বার এবং বাসার নাম্বার আপনারা দুজন বিনিময় করেছিলেন, তাহার বৌয়ের সাথে আপনার বৌ কথা বলিয়া জানিয়াছেন যে আপনার সঙ্গী অর্ধ পথে শেষ করিয়া বাড়ির পথ ধরিয়াছেন ভালোবাসার টানে, আর আপনি কিনা ভালোবাসা নয়, ট্রেক কেই তীর্থ মানিয়া একা একা পথ চলিতেছেন!

তাহা শুনিয়া আর আপনাকে কোন নেটওয়ার্কে না পাইয়া আপনার বৌ প্রায় মূর্ছা যাইতেছেন! আপনার ট্রেকিং সঙ্গীর সাথে আমাদের দেখা হইয়াছিল, তিনি আমাদেরকে বলিলেন যে আপনার সাথে দেখা হইলে যেন, আপনার বাসায় যোগাযোগ করিতে বলি!

ইহা শুনিয়া আমি তব্দা খাইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, ভাই আমার ট্রেক সঙ্গীর তো আরও দুই দিন আগেই তাহার ভালোবাসার কাছে ফিরিয়া যাইবার কথা ছিল! তো আপনাদের সাথে তাহার কোথায় আর কিভাবে দেখা আর কথা হইলো?"

কি বলেন ভাই, সেতো আজকেই শিলিগুড়ি ছিল! আমাদের সাথেই রওনা হইয়াছে। এইসব বেহিসেবি হিসেব শুনিয়া আমার মাথা টাল খাইয়া গেল! আর মনে মনে ভাবিলাম, আহা আপনারা কত শান্তিতে আছেন। বাসা থেকে কোন প্যারা খাননা, কেউ দেয়না, আহা কি সুখের জীবন আপনাদের।

আসলে যেটা ঘটেছিল (বাসায় এসে জেনেছি) আমাদের দুই জনের পরিবারের লোক জনের নাম্বার শেয়ার করা হয়েছিল, বিশেষ দরকারে যোগাযোগের জন্য, আর সেই আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ এই বিভ্রান্তির সুযোগ করে দিয়েছিল, যেটা আর একটা বিশাল গল্প! অন্যদিন নাহয় বলবো?

কিন্তু না, আমার এই ধারনা সত্য থেকে মিথ্যে হতে খুব বেশী সময় নিলনা। কারণ সকল ট্রেকারদের পারিবারিক প্যারা প্রায় একই রকম। যেটা ধীরে-ধীরে রাত পেরিয়ে সকাল হতে হতে শুনতে, বুঝতে আর উপলব্ধি করতে পারছিলাম। কারণ বাসে ওঠার পর পরই একজনের বাসা থেকে ফোন এলো, যার কথার উত্তরে বিশ্লেষণ করে বোঝা যাচ্ছিল যে পুরো ঝাড়ির উপরে আছে!


এপাশের উত্তর গুলো এমন ছিল......

আরে না বাবা, মোবাইলে চার্জ নাই তো!

আরে হ্যাঁ দুইটা মোবাইলে চার্জ শেষ, তাই দুই সিম-ই বন্ধ।

ওখানে কারেন্ট না থাকলে কি করে চার্জ দেব?

পাওয়ার ব্যাংকে আর কতক্ষণ চলে বল?

একজন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, তিনি বিবাহিত না হওয়াতে তার মা-বাবা অন্যদের কাছে খোঁজ নিচ্ছিলেন বারে বারে।

সকালের দিকে আর একজনের বৌয়ের ঝাড়ি শুরু হল, বোঝাগেল এপারের উত্তর শুনে!

আরে না, না আমি তো ভোর চারটায় বলিনি, সাতটায় বলেছি।

তুমি ভুল শুনলে আমি কি করতে পারি?

নাহ আমি কেন চারটায় বলবো, তিনটাতেই যেখানে ফুড ভিলেজে ছিলাম!

তুমি শতভাগ ভুল শুনেছ! আমি চারটায় বলিনি, আমি সাতটায় বলেছি...!! এখন রাখো।

একজন এখনো বাকি আছে দেখে তাহাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই আপনার কোন প্যারা নাই বাসা থেকে?

আরে না ভাই, আমি একটা এসএমএস দিয়েই সব জানিয়ে দেই আর অযথা প্যারা দেয়না।

এই কথা বলে তিনি মোবাইলের ফেসবুকে চোখ রাখতেই চমকে উঠে বললেন...

ওরে বাবা, আমার বৌ দেখি কখন মেসেজ পাঠাইছে, আমি দেখিনাই, আমার খবরই আছে, ভাই দাঁড়ান গল্প পরে করবো আগে মেসেজের রিপ্লাই দিয়া নেই...!!

আর একজন তো যাবার আগেই বাসা আর অফিস ছাড়া আর যাবেনা বলে ঘোষণা টোষনা দিয়ে অস্থির!

তাহার মেসেজ দেরীতে দেবার কারণের ভ্যাবাচ্যাকা মুখ আর তাড়না দেখিয়া, আমি মুচকি হাসিয়া নিজের জন্য নিজে কিছু সান্ত্বনা খুঁজিয়ে লইলাম, যে না প্যাড়া বা ঝাড়ি, ট্রেকিং-পাহাড় বা ভ্রমণ নিয়ে শুধু আমি একাই খাইনা, সবাই প্রায় একই নৌকার মাঝি!

বৌয়ের কাছে প্রত্যেকেই খায় ট্রেকিং নিয়ে খাবি......!!

হায়রে ট্রেকার্স, হায়রে তার বৌয়েরা......

কেউ রাখেনা কারো খবর,
মনের ভিতর খচর-মচর...!!
কারো পাহাড় আর কারো সংসার।

একটি ইচ্ছাকৃত গুরুচণ্ডালী লেখা!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.