নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয় শীত, রাবিঃ আর কালাই রুটি......!

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৯


এই গল্পটা জিভে টসটসে জল আনার! তাই সাবধান! আগে মন আর জীভকে শান্ত করুন, তারপর গল্প পড়ুন!

রাজশাহীতে যারা থকেন, তাদের তো আর বলে বা লিখে বোঝাবার কিছু নাই, যে রাজশাহীর শীত, কেমন শীত। এছাড়া যারা কোননা কোন শীতে রাজশাহী গিয়েছেন বা থেকেছেন তারাও কম-বেশী উপভোগ করেছেন, শরীর কামড়ে ধরা শীতে আর সবকিছু ভেদ করে হাড়ে কাঁপন ধরানো দুঃসহ সেই শীত।

আর এই শীতের প্রায় মরণ কামড় আরও বেশী ছিল, যারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে তারা তো সেটা আরও বেশী করে টের পেয়েছে। এমনিতেই রাবি এক অরণ্যে ভরপুর বিশ্ববিদ্যালয়, তারপর অরণ্যের শীত যেত আরও গভীর আর দুঃসহ হয়ে ওঠে। চারদিকে গাছপালায় আচ্ছাদিত থাকার কারণে হল গুলোতে সূর্যের তাপ তেমন একটা পাওয়া যেতনা, যেটার প্রভাব পড়তো শেষ বিকেল থেকে সন্ধা হয়ে রাতে তো প্রায় সাইবেরিয়ার অবস্থা হত সবার।


তো সেই শীতের মধ্যে হলের বা মেসে থাকা ছেলেদের বিশেষকরে একটু উষ্ণতা আর আরাম পাবার অন্যতম উপায় ছিল স্টেশন বাজারের গরম-গরম, মোটা-মোটা কিন্তু নরম-নরম কালাই রুটি! সাথে দুর্দান্ত স্বাদের বেগুন ভর্তা আর কাঁচা ঝালের ভর্তা। তবে সেই পাওয়া-খাওয়া আর বসে বসে রসিয়ে রসিয়ে গল্পের ঝলে সেসব অমৃত উপভোগ এতো সহজ ছিলোনা আদৌ।

কারণ স্টেশন বাজারে গিয়ে না পাওয়া যেত বেঞ্চিতে বসার যায়গা, না পাওয়া যেত কালাইরুটি চাহিদা মত, আর সেই সুস্বাদু বেগুন-কাঁচা মরিচের ভর্তা, সেতো ছিল আরও দুর্লভ ব্যাপার। তাই আমরা অনেক সময় নিয়ে যেতাম বন্ধুরা মিলে। আর দূরে দাড়িয়ে যারা বেঞ্চিতে বসে সেসব উপভোগ করতাম, নিজের সাথে তাদের উদ্ধার করতাম, আর অপেক্ষা সেতো ছিল সীমাহীন, সেই হাড় কামড়ের শীতের রাত গুলোতে।

সেই সময়ে রাতে যারা মেছে থাকতো তারা সেই ভর সন্ধ্যায় খালার (বুয়া) হাতের অমৃতে তৃপ্ত হতে না পেরে ছুটে আসতো এদিকে, আর যারা হলে থাকতো তারা সেই সন্ধার ভাত রাতে খেতে গিয়ে দেখত চাল হয়ে গেছে, আর ডাল? ওহ সেতো ছিল কোন বরফ গলা জলের নোনতা স্বাদ!

উপরে কালো হয়ে যাওয়া এক বা আধটা পেঁয়াজ ভাঁজা, ডালের কোন কিছু খুঁজতে হলে কারেন্ট জালের মত করে কিছু দরকার হত, অথবা নিজেদের নামতে হত ডালের গামলায় ডুবুরি হয়ে! আর তাই সেই সব বিস্বাদ রাতকে একটু উষ্ণতায় রাঙাতে সবাই এসে জুটতাম স্টেশন বাজারের খালা-মামাদের কালাইরুটির দোকানের আসেপাশে।


সবাই মিলে বেঞ্চিতে যায়গা না পাওয়া পর্যন্ত রসিয়ে রসিয়ে দেখতাম কিভাবে কালাইরুটি তৈরি হচ্ছে আর সেই সাথে মুখে লেগে থাকা সেই ঝালের ভর্তা। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল দোকানের ভর্তা বানানোর প্রক্রিয়াটা। যেটা আমি খুব উপভোগ করতাম।

তরতাজা, কালো কালো বিশাল সাইজের বেগুন রাখা হত জলন্ত উনুনের পাশে, সেগুলো পুড়তো ধীরে ধীরে, ঘুরিয়ে দেয়া হত একপাশ পুড়ে গেলে, ঠিকঠাক পুড়ে গেলে উপরের লাল-কালো চামড়াটা ছাই রঙা হয়ে যেত শুকিয়ে। তারপর ধীরে, খুব ধীরে অনেক আদর মাখা স্পর্শে ওর গাঁয়ের চামড়া তুলে ফেলা হত, ভিতরে একদম সেদ্ধ হয়ে নরম তুলতুলে বোটার সাথে ঝুলে থাকা ধোঁয়া ওঠা বেগুন, উহ কিজে অদ্ভুত একটা গন্ধ নাকে এসে লাগতো, সুখে চোখ দুটো বুজে আসতো আবেশেই। তারপর মাসের মাটির গামলায় সেটাকে রাখা হত পিষে আরও মিহি করার জন্য।

তার উপর দেয়া হত কাঁচা/পোড়া শুকনো মরিচ-ধনে পাতা-অনেক অনেক পেঁয়াজ কুঁচি আর খাটি সরিষার তেল। এরপর সেই সবকে একত্রে একটা কাঠের হাতল দিয়ে ঘোঁটা হত গাঁয়ের জোর দিয়ে, সেই সব উপাদানের যে ঘ্রাণটা নাকে এসে লাগতো, সে যেন কোন খাবারের ঘ্রাণ ছিলোনা, সে তখন মাদক! নেশায় মাতাল তখন চারপাশ। কখন দেবে কালাইরুটি আর সেই বেগুনের অমৃত ভর্তা? অপেক্ষা আর অপেক্ষা...!


কিন্তু না তখনই পাওয়া যেতনা সেই অমৃত, আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হত আরও বিশেষ কিছুর জন্য! কি সেটা? বলছি...

কচকচে তাজা কাঁচা মরিচ, যার গায়ে তখনও গাছ থেকে ঝরে পরা শিশির লেগে আছে, হাত দিলেই লাজে কপোল বেঁয়ে পড়বে, ঘন সবুজের উপরে দুই একটি কালো ছোপ যুক্ত ভীষণ টক জলপাইয়ের স্তূপ, যার মাংস আলাদা করে রাখা হয়েছে, পাশেই সদ্য ধুয়ে রাখা হালকা সবুজ ধনে পাতার অপেক্ষা, ওদের মিলমিশ হবে খুব দ্রুত।

সেই কাঁচা মরিচ, জলপাই আর ধনে পাতার মিশ্রণে তৈরি হত আর এক পাগলকরা চাটনি। যার ঘ্রাণ আর আকর্ষণ এতোই ছিল যে, বেঞ্চি ফাঁকা না থাকেও মনের অজান্তেই সবাই চলে যেতাম খালার চুলার পাশে, যেন চাটনি আর বেগুন ভর্তার গন্ধটা দূরে সরে না যায়, যেন ওই মাদকের আকর্ষণ নাকে লেগেই থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত চেখে দেখার ভাগ্য নাহয়।


উহ আর অপেক্ষা অসম্ভব। জিভে জল তো সেই বেগুন ভর্তা বানানোর সময় থেকেই চলে এসেছে, আর একটু হলে গড়িয়েই পড়বে প্রায়। কেউ-কেউ তো মাদকের নেশায় মাতাল হয়ে মেজাজ হারিয়ে বলেই বসতো, ওই খালা যা হইছে দেন, একটাই দেন, সবাই মিলেই ভাগ করে শুরু করি, আর ভর্তা দেন বেশী-বেশী সাথে চাটনি। আচ্ছা চাটনির সাথে একটু কাঁচা পেঁয়াজ আর সরিষার তেল দেন তো! খালাও তার দোকানকে এই উৎপাতের হাত থেকে রেহাই দিতে একটি কালাইরুটি আর ভর্তা, চাটনি সাথে পেঁয়াজ আর সরিষার তেল দিয়ে ঠাণ্ডা করতেন।


আর এরপর সেই এক কালাইরুটির উপরেই ঝাঁপিয়ে পড়তো কয়েকজন মিলে, কাড়াকাড়ি অবস্থা, আর কে কয় টুকরো নিল সেই বেহিসেবি হিসেব মেলানো, কারণ যখন সবাই যার যার আলাদা রুটি পাবে তখন যেন আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে, সেজন্য! সেই সাথে চলতো ঝালের তোড়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে পরা উহ-আহ!

আর চোখ দিয়ে অনবরত জল, চরম ঝাল, অনেক কাঁচা পেঁয়াজ আর খাটি সরিষার তেলের ঝাঁজের সমন্বিত মিশ্রণের প্রভাব। তবুও চলতো সেই নিদারুণ ঝালের দারুণ উপভোগ, যে যতক্ষণ পর্যন্ত পারতো। পেট-মন আর প্রানের তৃপ্তি হলে সবাই মিলে উঠে পড়তো বিল দিয়ে। সাথে শরীরে চলে এসেছে উষ্ণতা।


এরপর সেই অরণ্যের পথ ধরে, নিকষ কালো অন্ধকারে কয়েকটি গলা মেলাতো গানের সুর, হেটে যেত বহুদূর। রাতকে দিনের আলোয় আলোকিত করে, ওদের আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ভরা উদ্দ্যমতা দিয়ে। আবার কবে আসবে এই ঝাল আর ঝাঁজের অমৃত উপভোগে সেই আলোচনায় মগ্ন হয়ে, বিলীন হত গভীর রাতের অন্ধকারে।

আবারো তেমনই একটি রাত, রাবি, শীত, অন্ধকার, কালাইরুটি, বেগুন ভর্তা, আর কাঁচাঝাল-জলপাই-ধনেপাতার মাদকতার অপেক্ষায়......।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৩

বিজন রয় বলেছেন: তেমনই একটি রাত, রাবি, শীত, অন্ধকার, কালাইরুটি, বেগুন ভর্তা, আর কাঁচাঝাল-জলপাই-ধনেপাতার মাদকতার অপেক্ষায়.

জিভে জল এলো!!

দারুন আয়োজন।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৯

সজল জাহিদ বলেছেন: Ha ha ha, thanks a lot.।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪২

পুলহ বলেছেন: বহুদিন বাদে আপনার লেখা পড়লাম। বিষয়টা খুব সাধারণ, কিন্তু তার সাথে জড়িয়ে থাকা স্মৃতিরা, আর তার অনুভব কি গভীর !
ভর্তা আর চাটনি বানানোর প্রক্রিয়া সত্যি লোভনীয়।
আচ্ছা, রুটিটা কি কালাইরুটি নাকি কলাইয়ের রুটি- কলাইরুটি? এখনো কি তা পাওয়া যায়?
শুভকামনা জানবেন জাহিদ ভাই।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪১

সজল জাহিদ বলেছেন: Thanks a lot, yes very simle matter but deep feelings, this food is not availabe here probably.।

৩| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আমি রাজশাহী শহরের মানুষ এবং একসময় রা বির ছাত্র ছিলাম। আপনার পোস্টের প্রায় সব তথ্যই আমার অভিজ্ঞতালব্ধ।


ধন্যবাদ ভাই সজল জাহিদ।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪২

সজল জাহিদ বলেছেন: Thank you very much brother

৪| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৪

আলগা কপাল বলেছেন: আহ্, কি অভিজ্ঞতা। মেসের ডালের কথা আর বলবেন না। জীবনটা তামা তামা হয়ে গেলো। জীভে জল আনার জন্য আইন্নের নামে মালমা করা হইবেক। যখন তখন খাবারের কথা বলবেন না, কষ্ট লাগে।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪০

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা ধন্যবাদ। মামলা করেদিন।

৫| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১৯

অগ্নি সারথি বলেছেন: উফ! কি রগরগে বর্ননা। জ্বিভে জল এসে গেল যে। মুন্নুজান হলের সামনে কালাই রুটি খাবার সৌভাগ্য একবার আমার হয়েছিল। স্বাদ ভূলে গিয়েছি এখন।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪০

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা হা ধন্যবাদ। মামলা করেদিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.