নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কারো অপেক্ষায়...!

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩৩

সদ্য অনার্স পাশ করে ছেলেটি মফস্বল থেকে ঢাকায় এসেছে। চোখে নানা রকম রঙিন স্বপ্ন, কিছু বর্ণিল কল্পনা, ভাবনার নরম-কোমল মেঘ। সারাজীবন মফঃস্বলের নির্জন কোনে পরে থাকাতে কোন রঙ দেখা হয়নি, কখনো তেমন স্বপ্ন বোনা হয়নি, তাই এবার সে রঙে রঙিন হতে চায় একটু, জীবনকে কিছুটা বর্ণিল করতে চায়।

মনে মনে ভাবে... একদিন একজন ভালোবাসার মানুষ হবে, খুব সুন্দরী হতে হবে তেমন হয়, তবে একটু মিষ্টি যেন হয় দেখতে। চোখে একটু কাজল দিলে, কপালে কালো একটা টিপ পড়লে আর টানটান করে চুল আঁচড়ালে যেন চোখ ফেরাতে মন না চায়, ঠিক তেমন। তবে একবার দেখেই সুন্দরী মনে হবে, তেমন সুন্দরী সে চায়না কখনো! অমন বেশী সুন্দরী হলে অন্যের নজর লাগবে, আর ওকেও কতটা পাত্তা দেবে সেই ভাবনায়।

আজকাল ঢাকায় থাকে মেসে, চাকুরী খোঁজে পত্রিকায়, মাঝে মাঝে দুই একটি সাক্ষাৎকার দিতে বাসে চেপে কখনো গুলশান, কখনো বনানী, কখনো মহাখালী আর কখনো মতিঝিল বা কাকরাইল যায় সে। এই যাওয়া-আসার পথে যখনই সংসদ ভবন এলাকা দিয়ে বাস ছুটে যায়, খুব মন খারাপ হয় তার।

দেখে কত ছেলে-মেয়েরা একে অন্যের হাতে হাত রেখে হেটে যায়, কাঁধে মাথা রেখে দুঃখ ভোলে, পাশাপাশি বসে গল্প করে, আরও কতশত খুনসুটি। ইস তার এমন কেউ নেই, যাকে নিয়ে এভাবে সময় কাটাতে পারে, সুখ-দুঃখের গল্প করতে পারে, পাশাপাশি বসে থাকতে পারে। মনে মনে ভাবে একদিন একদিন ঠিক ওদের মত করেই সেও এখানে আসবে আর এই রকম করেই বিকেল-সন্ধা উপভোগ করে মেসে গিয়ে সুখ নিদ্রা দেবে।

এভাবে সময় কেটে যেতে লাগলো, কিন্তু তার ভাগ্যের শিকে আর ছিঁড়ছেনা কিছুতেই। না চাকুরী ক্ষেত্রে না ভালোবাসায়। এরই মাঝে বাড়ি থেকে মাস চলার জন্য যে খরচটা আসতো সেটাও কমতে লাগলো ধীরে ধীরে। যে কারণে নিজের আকাশে বোনা রঙিন স্বপ্নগুলো ফিকে হতে লাগলো ধীরে ধীরে। এক সময় ভাবতে লাগলো, স্বপ্ন থাক স্বপ্নের যায়গায়, এই ঢাকা শহরের জৌলুষ ওর জন্য নয়। ও মফস্বলের ছেলে মফসলেই নাহয় ফিরে যাবে। সেখানে গিয়েই নাহয় কিছু একটা করবে ছোট-খাট বা মাঝারি যেটা জুটে যায়। অন্তত মফঃস্বলের স্কুল বা কলেজ তো আছেই কিছু না কিছু করে জীবন চালিয়ে নেবার জন্য।

মোটামুটি মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে সে, মফস্বলে ফিরে যাবে। আর দুই-তিনটা সাক্ষাৎকার বাকি আছে তাই আরও কিছু অপেক্ষা। মন আজকাল আর আগের মত ফুরফুরে নেই, মনে আর আগের মত সেই রঙ নেই, মনটা মরে গেছে প্রায়, স্বপ্নগুলো রঙ হারিয়ে, আশা গুলো ভেঙে গিয়ে, কল্পনাগুলো ধূসর হয়ে...। আজকাল আর বাসে যেতে যেতে সংসদ ভবনের সবুজ চত্বরের দিকে তাকায়না, আজকাল আর ছেলে-মেয়েদের খুনসুটি দেখেনা, এখন আর সন্ধা রাতে কাবাবের সাথে পুরী দিয়ে পেট পুজো করতে ইচ্ছা হয়না।

সেদিন সকালে কোন রকমে ফরমাল পোশাক পরে বাস স্ট্যান্ডে এসে বাসে ওঠার লাইনে দাঁড়ালো সে। অন্যান্য সময় সে এদিকে ওদিকে তাকায়, এটা সেটা কিছু একটা খোঁজে, একে-ওকে একটু-আধটু দেখে, কিন্তু আজ আর সেই ইচ্ছা হলনা তার। মনটা একদম ভেঙে গেছে, আজকের সাক্ষাৎকার দিয়ে, এই চাকুরীটা না হলে সোজা নিজের বাড়ি ফিরে গিয়ে কিছু একটা শুরু করবে, সেই ভাবনা ভেবে রেখেছে। এভাবে মিথ্যে স্বপ্ন বোনা আর নয়। বাস্তবেই কিছু করতে হবে, তারপর নতুন স্বপ্ন দেখতে হবে তার। তাই দাড়িয়ে ছিল মাথা নিচু করেই।

কিন্তু একটা মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগতে না চাইতেও মাথা তুলতেই হল, আর মাথা তুলতেই যেন চোখ ঝাপসা হয়ে গেল তার। আরে কি দেখছে সে? ঠিক যেমনটি সে কল্পনায় সাজিয়েছে কোন অদেখা কাউকে, যে সাঁজে সাজিয়েছে তাকে, যে ভাবে দেখতে চেয়েছে তাকে, ঠিক ঠিক সেভাবে দাড়িয়ে আছে পাশের অন্য বাসের লাইনে, বাসে ওঠার জন্য।

নীল জামার উপরে জর্জেটের ধপধপে সাদা ওড়না, পাট করে আঁচড়ানো চুল, চোখে চিকন করে দেয়া কাজল, কপালের মাঝখানে একটা ছোট কালো টিপ, কানে দুটো ছোট্ট দুল আর খোঁপায় দারুণ একটি ব্যান্ড, সবকিছু মিলে দারুণ একটা মাধুর্যতা ছুঁয়ে গেল ছেলেটিকে, নিমিষেই। মেয়েটি বাসে উঠে চলে গেল, আর ছেলেটি তাকিয়েই রইলো, সাথে রইলো মেয়েটির মাধুর্যতার ছোঁয়া আর রেখে যাওয়া মিষ্টি গন্ধ।

ছেলেটির বাসের ও সিরিয়াল এসে গেল, সেও উঠে গেল বাসে, বাস ছেড়ে দিল। কিন্তু লাইনে দাঁড়ানো সেই কিছুক্ষণের মুগ্ধতা তাকে আঁকড়েই থাকলো। সকালের গুমোট মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল মুহূর্তেই। মনের মধ্যে বেশ আত্ন-বিশ্বাসের একটা অনুভূতিও সে অনুভব করছে বেশ। চলে এলো কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। ঢুকে গেল যে অফিসে তার আজ সাক্ষাৎকার সেই অফিসে।

প্রায় দুই ঘণ্টা পরে ছেলেটি বের হল একদম ফুরফুরে মেজাজে, চোখে-মুখে উচ্ছ্বাসের অভিব্যাক্তি নিয়ে। ছেলেটির চাকুরী হয়ে গেছে! এতদিন কতশত চেষ্টা করার পর আজ সে একটা উপায় খুঁজে পেল এই শহরে থেকে যাওয়ার। আর কোন সে দিন, যে দিন সে তার মনের মাধুরী মেশানো কোন মানবীকে দেখতে পেল, সকাল হতেই! অথচ সব কিছু বাদ দিয়ে সে চলে যাবার প্রস্তুতি নিয়েছিল। আর আজকেই সে চাকুরী পেল। কি অদ্ভুত ভাগ্য তার জন্য বয়ে নিয়ে এলো মেয়েটি। ছেলেটির আর মফস্বলে ফিরে যাওয়া হলোনা।

দারুণ একটা সুখ সুখ অনুভূতি নিয়ে ফিরে এলো সে তার আবাসের কাছে, আর ফিরে আসার আগে একটু নেমে পরশ নিয়ে এলো সংসদ ভবনের সবুজ চত্বরের, সেখানকার ছেলে-মেয়েদের, সেখানকার অপার্থিব আনন্দের বাতাস থেকে কিছু গায়ে মেখে নিয়ে এলো। একদিন সেও এখানে এভাবে আসবে আর দুঃখকে উড়িয়ে দিয়ে সুখ খুঁজে নেবে কারো কাছ থেকে, সেই প্রত্যাশায়।

সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে হল কাবাব-পুরী আর কোকের উৎসব। নতুন চাকুরী পাবার আনন্দে উদযাপনের জন্য। রাতে তার ঘুম হলনা একটুও। সারারাত সেই মিষ্টি মেয়েটি ভেসেছে দুই চোখের পাতায়-পাতায়, সারা রুমে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল তার রেখে যাওয়া গন্ধ, সারা অনুভূতি জুড়ে ছিল সেই ভাগ্যবতীর অনুভূতি!

আর তাই পরদিন সকালে সে প্রথম অফিসে যাবার জন্য বেশ আগে আগেই প্রস্তুতি নিয়ে চলে গেল বাস স্ট্যান্ডে, মেয়েটিকে একবার দেখবে বলে। ধন্যবাদ নাহয় থাক আপাতত, যদি সব সময়ই এই যায়গা থেকেই যায়, তাহলে না হয় পরে এক সময় দেয়া যাবে সেটা। আজ শুধু দেখবে আর দূর থেকেই কৃতজ্ঞতা জানাবে, ওর জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনা সেই ভাগ্যবতীকে।

বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়ালো সবার আগে। মেয়েটি যে লাইনে দাঁড়ানো ছিল সেই লাইন এখনো শুরুই হয়নি। ছেলেটির বাস আসে চলে যায়, কিন্তু সে আর যায়না! কারণ মেয়েটির দেখা এখনো মেলেনি আর ছেলেটিরও অফিসে যাবার সময় হয়নি। এভাবে প্রায় ৩০ মিনিট কেটে যাবার পরে মেয়েটি এলো ঠিক আগের দিনের মত করেই, শুধু জামাটা পরিবর্তন ঘটেছে, নীলের যায়গায় আজ সে খয়েরি রঙের একটা জামা পরেছে। বাকি সব সাঁজ ঠিক আগের মতই মৃদু, হালকা আর মিষ্টি......

এরপর প্রতি সকালে ছেলেটি অফিসে যাবার সময় একটু আগেই বাস স্ট্যান্ডে এসে দাড়িয়ে থাকে,

কারো অপেক্ষায়......

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৭

কালীদাস বলেছেন: আহ। শান্তি :)

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৫

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যাবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.