নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মিনির আজ অনেক আনন্দের দিন। কারণ ওদের রাজহাঁসটা পরপর দুই দিন দুইটি ডিম দিয়েছে। গতকাল থেকেই মিনি অনেক আনন্দে আছে রাজহাঁস ডিম দিয়েছিল বলে। অনেক দিন থেকেই মিনি ডিম খায়না। ওদের একটি ছোট্ট দোকান আছে বেড়ি বাঁধের উপরে। যেখানে অল্প-স্বল্প চাল, ডাল, তেল, লবণ, চা, বিস্কিট, চকলেট আর চিপসের পাশাপাশি কিছু তরকারী আর ডিমও থাকে।
কিন্তু সেই ডিম ওদের ঘরে খাবার জন্য নয়। ওগুলো বিক্রি করে ডিম প্রতি ৫০ পয়সা লাভের জন্য রাখা হয়েছে। তাও সরবোচ্চ ৩৬ টি ডিম রাখে। এতো বেশী ডিম এই অজো পাড়াগাঁয়ে কেউ কেনেনা। দিনে দুটি বা চারটি ডিম বিক্রি হলেই মিনির বাবা খুশি। আর যদি কখনো চারটির বেশী ডিম বিক্রি হয় তো আর দুটি পয়সা বেশী লাভের খুশি মনে ধরেনা।
মিনি বারে বারে মায়ের কাছে বায়না করে একটা ডিম খাবে বলে। মায়ের এক কথা যেদিন রাজহাঁস ডিম দেবে সেদিন ওকে ডিম খেতে দেবে। এই রাজহাঁস মিনির নানা বাড়ি থেকে এনেছে। সেদিন থেকে মিনি অপেক্ষায় আছে কবে রাজহাঁস ডিম দেবে আর কবে সে সেই ডিম খেতে পারবে। একদম যে ডিম খেতে পায়না তা নয়, বাসায় কখনো কখনো একটি ডিম ভাঁজা বা পিঁয়াজ দিয়ে রান্না হয়, তবে সেই একটি ডিম-ই তিন জনের জন্য।
মিনি আজো একা একটা ডিম খেতে পারেনি। খুব ইচ্ছা হয় একা একটা ডিম খাবে একদিন। কিন্তু সেই একদিন আসছেনা কিছুতেই। তাই যেদিন ওদের বেড়িবাঁধের ছাপরা ঘরে নানা বাড়ি থেকে এই রাজহাঁসটা পেয়েছে সেদিন মিনির মা মিনিকে কথা দিয়েছে, যেদিন এই রাজহাঁস ডিম দেবে সেদিন মিনিকে একটা আস্ত ডিম খেতে দেবে।
মিনিদের ছোট পরিবার, খুব ছোট। ছোট যমুনার তীরে বেড়ি বাঁধের পারে ওদের ছাপড়া ঘর। এক পাশে ভরা মৌসুমে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী নদী, সেখানে মিনির বাবার একটা নৌকা বাঁধা আছে ঘাটে। বাড়িতে একটি ছাগল আছে, আছে কয়েকটি মুরগী, আর আছে এক খণ্ড ধানক্ষেত। যেখানে ওদের বছরের ধান আর ধান থেকে চাল পাওয়া যায়। ঘরের পাশের এক চিলতে উঠোনে কিছু শাক-সব্জি, কাঁচা মরিচ, আর এক আধটা ফলমূলও হয়। ছোট্ট দোকানটা ওদের নিয়মিত আয়ের একমাত্র সংস্থান। তাই আজও একটি আস্ত ডিম খাবার পূর্ণতা পায়নি মিনি। একদিন একটা পুরো ডিম খাওয়াই মিনির সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।
তাই রাজহাঁস ডিম দেয়াতে মিনির খুশি যেন আর ধরেনা। কিন্তু সেখানে বাঁধ সাধলো মিনির মা। আর একদিন ধৈর্য ধরতে বলল মিনিকে। একটা ডিম তো দিয়েছে, আর একবার ডিম দেয়া শুরু করলে প্রতিদিন ডিম দেবে, তাই আজকে না তুই কালকে ডিম খাস পুরো একটা! কারণ আর একটা ডিম দিলে, তুই একটা খাবি, আর বাকি একটা ডিম দিয়ে আবার বাচ্চা হবে, পরে হাঁস বাড়বে আর কিছুদিন পরে ডিমও বাড়বে, তখন মিনি বেশী বেশী ডিম খেতে পারবে। সেই আশ্বাস দিয়ে সেদিনের মত মিনির মা মিনিকে শান্ত রাখে। আর মিনি পরের দিনের স্বপ্ন দেখে। কাল যদি রাজহাঁস আর একটা ডিম দেয় তো পরদিন সে পুরো একটা ডিম খেতে পারবে। খুশিতে মিনির চোখে ঘুম আসেনা।
পরদিন সকালে মিনি ঘুম থেকে উঠেই রাজহাঁসের ঘরের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে লাগলো। রাজহাঁসটিকে পর্যবেক্ষণে রাখছে সব সময়ে। ঠিক দুপুরের পরে রাজহাঁসটি আর একটি ডিম দিল। সেটি হাতে নিয়ে মিনির উপচে পরা আনন্দ আর বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে যেন বাঁধনহারা। খুশি যতটা রাজহাঁসের ডিম পাড়াতে তার চেয়ে বেশী আজই প্রথম মিনি একটি পুরো ডিম খেতে পারবে সেই আনন্দে।
এদিকে মিনির মাও দারুণ খুশি, তার এতো আদরের রাজহাঁস ডিম দেয়া শুরু করেচে। তার মানে নিয়মিত ডিম দিলে বেশী করে বাচ্চা হবে, মিনির মায়ের রাজহাঁসের খামার হবে, সেই খামারের হাঁস আর ডিম বিক্রি করে মিনির মা ওদের ছাপড়া ঘরে বাঁশের বেড়া দেবে, বারান্দায় একটু মাটি ফেলবে। ওদের আর একটু ভালো থাকা হবে, শীতের বাতাস ঘরে ঢুকতে পারবেনা। মিনির আর মিনির বাবার কষ্ট হবেনা, আর তাই মিনির মায়ের একটু আরাম হবে।
মিনির বাবাও খুশি, যদি ঘরের ফাঁকা যায়গা গুলো বাঁশের বেড়া দিয়ে ঢাকা যায় তবে এই শীতের মাঝে কয়েকদিন পরপর তাকে আর অসুস্থ হয়ে বিছানায় পরে থাকতে হবেনা। রোজ সকালে সে নদীতে মাছ ধরে আনতে পারবে, দুপুর পর্যন্ত ক্ষেতে কাজ করতে পারবে আর দুপুরের পরে রাত পর্যন্ত দোকান খুলে রেখে আয় বাড়াতে পারবে।
সেদিন দুপুরে মিনি। মিনির মা আর বাবা সবাই মিলে নিজেদের জন্য দুটি ডিমের রান্না করেছিল। একটি ডিম মিনির একার জন্য আর একটি ডিম মা-বাবার জন্য। শীতের দুপুরে ডিমের তরকারী, শাক আর জলপাইয়ের চাঁটনি দিয়ে পেট পুরে ভাত খেয়ে খুমিয়ে ছিল শেষ বিকেল পর্যন্ত। আর বিকেলে উঠে মিনি পাড়া বেড়াতে বের হল ওর চোখে-মুখে আর সমস্ত অভিব্যাক্তিতে এই প্রথম একটি ডিম খেতে পারার তৃপ্তি আর স্বপ্ন পূরণের আনন্দ।
কি দারুণ সুখী ওরা, বাড়ি নেই, টাকা নেই, ব্যাংকের লেনদেন নেই, ফ্ল্যাট-গাড়ি-বাড়ি আর চিকেন-পিৎজার ঝলমলে সেলফি নেই। লোক দেখানো বড়াই নেই, আত্ন অহংকার নেই, আরও কতকিছুই নেই ওদের তবুও ওদের যা আছে তা আমাদের নেই।
ওদের সত্যিকারের সুখ আছে, একটা ডিম খাবার তৃপ্তি আছে, রাজহাঁসের মত রাজকীয় সম্পদ আছে, ঝুপড়ি ঘর নিশ্চিন্তে ঘুমনোর সাধ্য আছে, ছোট্ট একটি দোকান আছে, একখণ্ড জমি আছে। সবচেয়ে বড় যেটা ওদের অনেক কিছু না থেকেও যা আছে আর আমাদের অনেক অনেক অনেক কিছু থেকেও যা নেই, তাহল...
ওদের অল্প সুখের গল্প আছে, আমাদের নেই।
কিছুই চাইনা তাই, শুধু মিনিদের মত একটা.....
অল্প সুখের গল্প চাই...
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১৩
সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২০
আহা রুবন বলেছেন: আপনার গল্প বেশ সুন্দর! সত্যিকারের জীবনের ছোঁয়া আছে। তবে একটি কথা বলতেই হয়-- কখনভঙ্গি প্রতিবেদন ধর্মী হয়ে গিয়েছে। লিখতে থাকুন, সামনে আরও ভাল হবে।
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৪
সজল জাহিদ বলেছেন: এমন পরামর্শই প্রয়োজন। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৭
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: কি দারুণ সুখী ওরা, বাড়ি নেই, টাকা নেই, ব্যাংকের লেনদেন নেই, ফ্ল্যাট-গাড়ি-বাড়ি আর চিকেন-পিৎজার ঝলমলে সেলফি নেই। লোক দেখানো বড়াই নেই, আত্ন অহংকার নেই, আরও কতকিছুই নেই ওদের তবুও ওদের যা আছে তা আমাদের নেই।
সঠিক উপলব্ধি। চমৎকার গল্পের জন্য ধন্যবাদ ভাই সজল জাহিদ।
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১০
সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
৪| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৪
কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: ওদের তেমন কিছু নেই তারপরও ওরা সুখী, অল্প আকাঙ্ক্ষায়, অল্প প্রাপ্তিতে । ওদের একটা সুখের নীড় আছে, যা সবার থাকে না । কারণ সবাই সুখের নীড় চায় না, অর্থের নীড় চায় ।
ভাল লাগলো গল্পটা ।
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৯
সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
৫| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৬
সাহসী সন্তান বলেছেন: সাধারণ গল্প গুলো এভাবেই নিপূণ হাতের ছোঁয়া পেলে সত্যিই অসাধারণ হয়ে ওঠে! গল্পের মধ্যে যেন গ্রাম বাংলার একটা অতি পুরানো পরিচিত রুপ দেখতে পেলাম! খুব ভাল লাগলো!
শুভ কামনা জাহিদ ভাই!
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৭
সজল জাহিদ বলেছেন: নিপুণ হাত!!! ভাই এটা কি বললেন? যাইহোক গল্প ভালো লাগায় ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ।
৬| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১৮
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: অনেক ভাল লাগল । এমন সব বিষয় নিয়ে ব্লগে খুব কম লেখায় দেখি। সবাই তো বর্তমান ইস্যু নিয়ে লিখতেই ব্যস্ত।
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৯
সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ
৭| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৮
কানিজ ফাতেমা বলেছেন: ছবি থেকে কি লেখার উৎসাহ পেলেন? নাকি পরে সংযোজন ।
ছবিগুলো লেখাটিকে প্রাণ দিয়েছে ।
শুভ কামনা রইল ।
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৩
সজল জাহিদ বলেছেন: বেড়াতে গিয়ে এই ছবি দেখে গল্পের প্লট মাথায় এসেছে, আর চরিত্র গুলো কিছুটা পরিচিত একটি পরিবার থেকে নেয়া? আসলে ছবি তুলে পরে দেখেই মূল গল্পটা মাথায় এসেছে। দারুণ উপলব্ধি আপনার। অনেক ধন্যবাদ।
৮| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২২
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: কিছুই চাইনা তাই, শুধু মিনিদের মত একটা.....
অল্প সুখের গল্প চাই...
+++++++++++++
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৩
সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৯| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৩
শাহরিয়ার কবীর বলেছেন:
ভালো লাগলো।
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫০
সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ।
১০| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৮
অবনি মণি বলেছেন: আমিও কিছুই চাইনা তাই, শুধু মিনিদের মত একটা.....
অল্প সুখের গল্প চাই..
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৮
সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ।
১১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১২
হাসান মাহবুব বলেছেন: সুন্দর একটি লেখা।
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৯
সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ।
১২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:২১
সুমন কর বলেছেন: গল্প ভালো হয়েছে। তবে,
বাড়িতে একটি ছাগল আছে, আছে কয়েকটি মুরগী, আর আছে এক খণ্ড ধানক্ষেত। যেখানে ওদের বছরের ধান আর ধান থেকে চাল পাওয়া যায়। ঘরের পাশের এক চিলতে উঠোনে কিছু শাক-সব্জি, কাঁচা মরিচ, আর এক আধটা ফলমূলও হয়। --- আমার মতে, এ অংশটুকু গল্পের সাথে যায় না। তাহলে অবস্থা এতো খারাপ হবার নয়।
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩১
সজল জাহিদ বলেছেন: হতে পারে, কিন্তু ওরা তো না খেয়ে থাকেনা, ঘরের অবস্থাটা একটু খারাপ, যেটা ওই দিন চালানো সামান্য আয় দিয়ে ঠিক করা সম্ভবনা। আর একটা ডিম ওদের কাছে বিলাসিতার, তাই সেটা হয়ে ওঠেনা। ধন্যবাদ আপনার বিশ্লেষণ মূলক অভিমতের জন্য।
১৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৫
সারাফাত রাজ বলেছেন: মর্মস্পর্শী ---
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০৩
সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ
১৪| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১৭
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ভােলা লেগেছে। ধন্যবাদ নিন।
২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:২৪
সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:০৯
সত্যের ছায়া (সংস্করণ) বলেছেন: পোষ্টে +++++