নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাজারের সেকাল-একাল।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫০


মনে আছে, খুব স্পষ্ট ভাবেই মনে আছে, আমাদের ছোট বেলায় ঠিক যে সময়টা বাবা-চাচা বা মামাদের বাম হাতের কেনো আগুল ধরে হাটার সময়, আমরা ঠিক হাটতে পারতামনা। ওনাদের সাথে একরকম দৌড়াতে হত, অথচ তারা হাঁটতেন খুব স্বাভাবিক ভাবে। খুব মন খারাপ হত কেন ওনাদের সাথে হেটে পারতামনা সেটা ভেবে।

যে কারণে আমাদের ওনাদের সাথে পা মেলাতে দৌড়াতে হত। যে কারণে আমাদেরকে নিয়ে কেউ বাজারে যেতে চাইতোনা। গ্রাম বা মফস্বলে সেই সময়ে, আজ থেকে প্রায় ২০/২৫ বছর আগে বড় কারো সাথে বাজারে যাওয়াটা একটা স্বপ্নের মত ছিল। অনেক কাকুতি-মিনতি করতাম বড়রা কেউ বাজারে যাবার আগে।

কিন্তু বড়রা ঠিক নিতে চাইতোনা। তাদের যুক্তি ছিল তুই তো হাটতে পারবিনা। আমাদের ভরপুর আত্ন-বিশ্বাস ছিল পারবো। আসলে তাদের পা অনেক বড় আর লম্বা, যেখানে আমাদের পা ছিল নিতান্তই ছোট। তাই যেটা বড়দের কাছে স্বাভাবিক হাটা ছিল, সেটাই ছিল আমাদের কাছে দৌড়ের চেয়েও বেশী। তাই অনেক ঘ্যানঘ্যান করে যদি কখনো বাজারে যাবার অনুমোদন পেতাম, সেই খুশি আর রাখার যায়গা পেতামনা।



সেটা ছিল অন্যতম আনন্দের একটা ঘটনা। এঁকে-ওকে, খেপাতাম কতকিছু বলে, বিশেষ করে যে বাজারে যাবার অনুমতি পেয়েছে সে তার থেকে ছোট ও যারা অনুমতি পায়নি তাদের কাছে অনেক হিংসা আর ঈর্ষার কারণ হতাম, যেটা ছিল খুবই মজার আর উপভোগ্য।

আর বাজারে যাবার অনুমতি পাবার পরেই যে ব্যাপ্যার গুলো মাথায় খেলা করতো সেগুলো এমন ছিল, আলু-পটল কেনার সময় নিজ হাতে পালায় তুলে দিতে চাইতাম, বড়দের সাথে পেঁয়াজের সাইজ দেখে পালায় উঠাতাম, টমেটো-গাজর কেনার সময় নিজেদের সুবিধা মত ছোট ছোট সাইজের দুই চারটি পালায় তুলে দিতাম, যেন নিজের মত করে খেলা বা খাওয়া যায়।

মাছ কেনার সময় জ্যান্ত মাছের লাফঝাফের দৃশ্য আর পানি ছিটে আসাটা ছিল অনেক রোমাঞ্চকর। পানির মধ্যে থেকে মাছের লাফের সাথে কপট ভঁয়ে আমরাও লাফ দিতাম। দারুণ উত্তেজনাকর ছিল সেই মুহূর্ত। এরপর যদি যাওয়া হত ভীষণ সৌভাগ্যক্রমে মাংসের বাজারে, তখন থেকেই মাথার মধ্যে ঘুরতো, মাংস রান্নার পুরো সময়টা চুলোর পাশেই বসে থাকবো! এইসব রোমাঞ্চকর সৃতি গুলো দারুণ আলোড়ন তুলতো সেই সময়ে।

আর বাজার করে ফেরার পরে, সেইসব কাঁটা-বাছা-ধোঁয়া-কাঠের চুলায় ফুঁ দিয়ে আগুন জ্বালানো, রান্না শেষে পরম আদরে পাটি বা মাদুর বিছিয়ে মাটির মাঝে বসে বাড়ির সবাই মিলে সেগুলো উপভোগের যে কি প্রশান্তি ছিল, কি যে সুখ আর ছিল বোঝাবার নয় লিখে বা বলে। এই সবার সাথে খাওয়া মাঝে আর এক রকম আনন্দের ঝগড়া ছিল, কারো মাছের মাথাটা বড় হল, কারো মাছটা ভাঁজা বেশী হল, কারো থালা থেকে মাছের ডিম চুরি করে খাওয়া, সেসব নিয়ে ঝগড়া-কলহর মাঝে যে কি অসীম আনন্দ ছিল, সে শুধু তারাই জানে, যারা এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে আর এখন সেইসব দিনের অভাব বোধ করছে।

আর এখন?


আমরা বাজারে যাই একদম তৈরি করা সব্জি কিনতে পারি, যা ধুয়ে, সাইজ মত কেটে, কিছু মশলা বা প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে সুন্দর করে রাখা হয়েছে। শুধু ট্রলিতে তোল, ক্রেডিট কার্ডে ঘসা দাও, গাড়ি বা রিক্সা করে বাসায় ফিরে গরম তেলে কষ্ট করে ছেড়ে দিয়ে, একটু নাড়াচাড়া করলেই হয়ে গেল! আহ! কোন কষ্ট নেই।

গ্রামের রাস্তায় পায়ে হেটে ধুলো উড়িয়ে বাজারে যাবার হ্যাপা নেই, বাজারে গিয়ে বেঁছে বেঁছে সবজি আর তরকারী কেনার ঝামেলা নেই, মাছ-মাংসের বাজারে গিয়ে মাছের পানি ছিটে আসা আর মাংসের হাড্ডি ছুটে আসার গা ঘিনঘিনে অসহ্যতা নেই! বাজার করে বড় ব্যাগে ভরে ঘেমে-নেয়ে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার অযথা কষ্ট নেই! খুব আরাম আয়েশের ব্যাপার এসব আজকাল। কোন ক্লান্তি নেই, ঝামেলা নেই, অসহ্যতা নেই।

সবটুকু সময়ই ডিজিটাল ভাবে ডিজিটাল সুখ উপভোগের জন্য পরে আছে বা থাকে।
তবে হ্যাঁ অনেক কিছুর সাথে আরও যেসব নেই বা হারিয়েছি, তা হল আজকালকার বাজারে বাবার ঘামে ভেজা শরীরের আদর মাখা গন্ধ নেই, ছোটদের নিয়ে বিড়ম্বনা নেই, কাটাকুটির সময়ে, নরম-কোমল তুলতুলে হাতের আঙুলে প্রিয়জনের কপট অভিমান আর ভালোবাসা নিদর্শন মাখা রাগ নেই, নেই কাঠের চুলায় ফুঁ-দিয়ে আগুন জ্বালাতে গিয়ে বোনের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ার স্নেহ, নেই রান্নার সময় মাংস কষাতে গিয়ে আঙুল পুড়িয়ে ফেলা মায়ের সত্যিকারের মমতা! কাঠের চুলোর পাশে বসে রান্না করা দেখা আর মাছ-মাংস রান্না করার ঘ্রাণ নেবার সুখ বা তৃপ্তি নেই, নেই ছোট ভাই-বোনের থালা থেকে মাছের ডিম চুরি করে খাবার অসম্ভব আনন্দ।

থাকবে কি করে?

যেখানে বাজার করার শুরুতেই নেই সেই কষ্ট আর আবেগ সেখানে শেষে রান্না, খাওয়ার সময় কিভাবে আমরা খুঁজে পাবো সেই আদর-মমতা-স্নেহ আর ভালোবাসা?

সব যে এখন ডিজিটাল, বাজার করা থেকে শুরু করে, আদর-স্নেহ-মমতা, শ্রদ্ধা, প্রেম-ভালোলাগা আর ভালোবাসাও। আর বাজার? সেও আজকাল ডিজিটাল, বাসায় বসেই সব পাওয়া যায়, একটি ফোন বা ফেসবুকের অর্ডারে...!

এই আমাদের বাজারের সেকাল-একাল......!!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০১

আহলান বলেছেন: আসলেই কি পুরোটাই এমন? :(

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২০

সজল জাহিদ বলেছেন: যেটুকু চোখে পড়েছে...

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০৩

ঢাকাবাসী বলেছেন: সময়ের সাথে সাথে সব পাল্টায়, তাই না? আজ থেকে ১০০ বছর আগে যা ছিল তা আমরা দেখিনি শুনেছি সেগুরোও আরো অদ্ভুত কিন্তু আন্তরিক ছিল নির্ভেজাল ছিল। এখন ৯৯% ভেজাল, দুর্ণীতিতে ভরা। মানুষ, বাজার, তরকারী, মাছ, অষুধ সব ভেজাল!

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৯

সজল জাহিদ বলেছেন: জি ঠিক বলেছেন, ধন্যবাদ।

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:১৮

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ গ্রাম্য বাজারের দৃশ্য কাব্য কথায় তুলে ধরার জন্য।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৯

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ । ভাল লাগল পোস্টের কথামালা । সুন্দর বিবরন । তবে যাই বলেন, ১ নং ছবিটার তরিতরকারী আনেক বেশী তাজা ও খেতে স্বুসাধু যদিও যক্কি ঝামেলা অনেক বেশী ও যদিও মাঝে মধ্যে দুই চারিটা পচা পাওয়া যায় তবে একটু সচেতন হলে একদম তরতাজা মানে জমি ও গাছ হতে এই মাত্র তুলে আনা মনে হয় যা এখনকার ডিজিটালাইজড ভেজিটেবল মার্কেটে পাওয়া যায়না ।
যাহোক, আধুনিকায়নটা সব সময়ই ভাল ।

শুভেচ্ছা রইল ।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৫

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.