নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৫ জানুয়ারী, খুঁজে পাবার দিন!

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৪১

ছেলেটি সদ্য কলেজ পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে, বেশ জোরে সোরে। পড়া-খাওয়া-কোচিং-পড়া-খবর দেখা আর ঘুম এই ছিল তার কাজ। কলেজের পরীক্ষা শেষ হবার পর থেকে। রেজাল্ট হল। বেশ ভালো ভাবেই পরীক্ষা পাশ করলো। আর রেজাল্ট এর পর থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণাসহ ফরম বিতরণ শুরু হল। সবার সাথে ছেলেটিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম তোলার জন্য জীবনে প্রথম কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে পা রাখলো।

সেদিন এক অদ্ভুত শিহরণ ছুঁয়ে গিয়েছিল তাকে, পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্ত সত্তা জুড়ে। কি যেন এক আকর্ষণে ছেলেটি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল মতিহারের সবুজ গালিচার সেই মায়াবী মোহে। নিজের অজান্তেই একটা ভালোবাসা জন্মে ছিল সেই সময়ের নাম না জানা প্যারিস রোডের প্রতি। যখন কাজলা গেটে বাস থেকে নেমে, হেটে হেটে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ফরম বিতরণের লাইনে, ব্যাংকের সামনে।

ফরম তোলার জন্য বেশ বড়সড় দুটি লাইন। একটি ছেলেদের আর একটি মেয়েদের। তবে ছেলেদের লাইনেও দুই একটি মেয়ে দাড়িয়েছিল। ছেলেটি ছেলেদের লাইনেই দাড়িয়ে ছিল, আর ওর সামনে দাড়িয়ে ছিল আর একটি মেয়ে, সামনে দাড়িয়ে ছিল আরও অন্তত ৩০/৩৫ জন। সুতরাং বেশ কিছুটা সময় লাগবে ফরম তোলার একদম সামনে যেতে। বেশ রোদ পড়েছিল সেই লাইনের উপরে। রাজশাহীর ভীষণ শীতেও বেশ গরম লাগছিল।

সেই রোদ আর গরম থেকে নিজেকে রক্ষা করতেই কিনা ছেলেটির সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটি বেরিয়ে একদম সামনে চলে গেল লাইন ভেঙে, এমনকি ব্যাংকের ভিতরেই ঢুকে গেল! আর একটু পরে হাতে ভর্তি ফরম নিয়ে বেশ উচ্ছল হয়ে বেরিয়ে এলো ব্যাংক এর ভিতর থেকে। যা দেখে শান্ত ও সুবোধ ছেলেটির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মেজাজ হারিয়ে ফেলে, মেয়েটি ছেলেটির সামনে দিয়ে চলে যাবার সময় বলেই বসলো,

এমন অনিয়ম কেন করলেন? আমরা সবাই তো লাইনে দাড়িয়ে আছি, তার মাঝ থেকে আপনি কেন একা একা গিয়ে ফরম নিয়ে এলেন?
ছেলেটির পাশে মেয়েদের লাইনে আর একজন দাড়িয়ে ছিল যে ছেলেটির পূর্ব পরিচিত, সে জানালো যে ওর বাবা এই ব্যাংকের কর্মকর্তা তাই ও ভিতরে ঢুকে ফরম নিয়ে আসতে পেরেছে। সাথে ছেলেটির পরিচিত সেই মেয়েটির জন্যও ফরম নিয়ে এসেছে।

এই শুনে ছেলেটির আরও মেজাজ খারাপ হওয়াতে বলেই বসলো, তবে আমার ফরমও নাহয় তুলে দিতেন?

ঠিক আছে টাকা দিন, আপনার ফরম তুলে দেই? মেয়েটির উত্তর।

ছেলেটি টাকা দিল, মেয়েটি আবারো ব্যাংক এর ভিতরে গিয়ে ছেলেটির জন্য ফরম তুলে এনে দিল। ছেলেটি তার সময় বেঁচে যাওয়াতে বেশ খুসি স্বাভাবিক ভাবেই। মেয়েটি ছেলেটিকে আর ছেলেটির সাথে থাকা পরিচিতাকে বিদায় জানিয়ে প্যারিস রোড ধরে হেটে হেটে কাজলার দিকে চলে যেতে থাকলো।

হঠাৎ ছেলেটির চোখ চলে গেল, বিশাল বিশাল কড়ই, কৃষ্ণচূড়া, রেইনট্রি আর দেবদারুর সবুজে ছাওয়া সোজা ঝকঝকে প্যারিস রোডের উপরে। ফাঁকা রাস্তা, দুই একটি রিক্সার টুংটাং শব্দ করে ধীর লয়ে চলে যাওয়া, আর সেই মেয়েটির হেটে চলার দিকে।
কেমন যেন একটা অন্যরকম ভালোলাগা ছুঁয়ে গেল ছেলেটিকে। তাই মনে মনে বলল...

যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারি আর যদি ভর্তি হও তুমিও, তবে তোমাকে আমার চাই!!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হল। ছেলেটি আর মেয়েটি যেহেতু একই সাথে ফরম তুলেছিল, তাই ওদের ফরম এর সিরিয়াল নাম্বারে মিল ছিল, কাছাকাছি সিরিয়াল নাম্বার। যে কারনে যে যখনই ফরম জমা দিয়ে থাকুকনা কেন। ভর্তি পরীক্ষার রোল একই সাথে পড়েছিল বেশ কয়েকটি পরীক্ষায়। কারন ওরা দুজনেই মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল।

তাই বেশ কয়েকটি পরীক্ষার সময় ওদের দেখা হয়েছিল। হয়েছিল কিছু কথা আর ইচ্ছা-অনিচ্ছার স্বাভাবিক বিনিময়, অন্য কিছু নয়। এমনকি ছেলেটি যে সেই ফরম তোলার দিন মনে মনে বলেছিল, তোমাকে আমার চাই? সেটা মাথাতেই আসেনি বা ছিলোনা। কারন ভর্তি পরীক্ষা খুব ভালো ভাবে দেয়া, কোন একটা বিভাগে ভর্তির জন্য সুযোগ পাওয়া, ভর্তি হয়ে জীবনটাকে একটা শক্ত খুঁটির সাথে বাঁধাটাই তখন একমাত্র ধ্যান বা সাধনা। ওসব তুচ্ছ বিষয় তাই সকল কিছুর বাইরে তখন।

ভর্তি পরীক্ষার শেষ দিন। শেষ দিনের শেষ পরীক্ষায় ওদের সিট বসেছিল একবেঞ্চ আগে-পরে। একে অন্যকে কিছুটা সহযোগিতা করেছিল ওরা। শেষ পরীক্ষা বলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিছুটা কম ছিল, আর মেয়েটির ওই বিষয়ে পড়ার কোন আগ্রহ ছিলোনা বলে। যেটা মেয়েটি নিজেই স্বীকার করেছে পরীক্ষার মাঝেই কথায় কথায়। আর তাছাড়া এর আগের বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় ওরা বেশ ভালো করেছে, তাই তেমন কোন চাপও ছিলোনা। পরীক্ষা শেষ করে ওরা বিদায় নিয়ে চলে গেল যার যার বাসার পথে। শুধু কথা হয়েছিল যদি ভর্তি হয় কেউ বা দুজনেই তবে দেখা হবে, সেই ভদ্রতা করে।

প্রায় একমাস পরে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বের হতে থাকলো এক এক করে। ছেলেটি তার গ্রামে গিয়ে থাকাতে সেই খবর তেমন আর রাখা হয়নি। বেশ কিছুদিন কেটে যাবার পরে হুট করে একদিন পত্রিকায় চোখ পরাতে দেখতে পেল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে এবং ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এই খবর পড়ে তো ছেলেটির মাথায় বাজ পরার উপক্রম স্বাভাবিক ভাবেই। কোন মতে পড়িমরি করে ছুটলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহী পৌছাতে পৌছাতে বিকেল হয়ে গেল। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সন্ধ্যা। ততক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম সেদিনকার মত শেষ। তবে গেট খোলা ছিল সব ভবনেরই। ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দেখার জন্য।

মমতাজউদ্দিন কলা ভবনে ঢুকে সমাজ বিজ্ঞানের ফলাফল দেখে খুব খুশি, ছেলেটি ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে! সেকি আনন্দ, কিন্তু সেই আনন্দ পরোক্ষনেই বিষাদে রূপ নিল যখন ভালো করে নোটিশ পড়লো। ভর্তি শেষ হয়ে গেছে আরও দুদিন আগেই!

এক দৌড়ে সমাজকর্ম বিভাগে গেল নিঃশ্বাস বন্ধ করে। সেখানে গিয়ে চোখের নোটিশ বোর্ড দেখে চোখের জল টপটপ করে পরতে শুরু করলো অজান্তেই! কারন সমাজকর্মেও ছেলেটি ভালো ফলাফল করে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে, কিন্তু ভর্তির তারিখ শেষ গেছে আগেই! যেন নিজেকে নিজেই হারিয়ে ফেলছে নিজের কাছ থেকে। এতো দিনের, এতো সাধনার, এতো পরিশ্রমের ফলাফল এভাবে চোখের সামনে চোখের পানিতে ধুয়ে যেতে দেখে!

এরপর আবার দৌড়ে গেল শহিদুল্লা কলা ভবনে, সেখানে সরকার ও রাজনীতি বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছিল, সেখানেও একই অবস্থা! এরপর একে-একে নৃবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ আর আইনের ফলাফল দেখতে গেল পাগলের মত ছুটে। একটাতে হয়নি, আর একটার সেই একই ভর্তি শেষ! আইনের পরীক্ষাই ভালো হয়নি, তাই ওটার আশাই নেই। হয়ও নি।

রইলো বাকি লোক প্রশাসন। ছেলেটির দারুন দুরবস্থা আর চোখ থেকে অনবরত ঝরে পড়া পানি দেখে এক বড় ভাই জানতে চাইলো, কি হয়েছে? ছেলেটি সেই বড় ভাইকে সব খুলে বলল। সব শুনে সেও মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। যেখানে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হবার সুযোগই পায়না, সেখানে ছেলেটি এতগুলো বিষয়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েও শুধু গ্রামে থাকার কারনে খবর জানতে না পেরে ভর্তি হতে পারবেনা সেটা কিভাবে হয়?

ছেলেটিকে নিয়ে সেই বড় ভাই গেল লোক প্রশাসন বিভাগে। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চারদিক অন্ধকার প্রায়। তেমন কোন আলো নেই, বিভাগের অফিসের সামান্য বাল্ব ছাড়া। সেই আলোতেই কোন মতে নোটিশ বোর্ড দেখলো দুইজন মিলে। আর যেটা ওদের অন্ধকারকে অনেকটাই আলোকিত করেছিল। কারন ছেলেটি লোক প্রশাসনেও ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে! আর এই বিভাগের ভর্তি প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি, ঢের সময় আছে। সাক্ষাৎকার নেবে তারপর।

ঠিক এই সময়ে ওই বিভাগের একজন সিনিয়র শিক্ষক কোন কাজ শেষ করে, বের হচ্ছিলেন অফিস রুম থেকে। তিনি ওদেরকে দেখে জানতে চাইলেন এই সন্ধায় এখানে কি চাই?

ছেলেটির সাথে থাকা বড় ভাই সেই শিক্ষককে সব খুলে বলাতে, সেই শিক্ষক ভর্তি পরীক্ষায় নির্বাচিত ছেলেটিকে পরদিন সকালেই আসতে বললেন। কিছুটা খুশি, কিছুটা উদ্বেগ আর গভীর এক মানসিক অস্থিরতা নিয়ে ছেলেটি ফিরে গেল।

রাতভর ঘুমোতে পারেনি, যদি নির্বাচিত না করে ভর্তির জন্য! সেই শঙ্কায়। যদি আর কোন উপায় নাহয়, তবে কি হবে? যদিও সেই বড় ভাই ছেলেটিকে আশ্বস্ত করেছে যে কোন চিন্তা না করতে, উনি বড়দের সাথে কথা বলে একটা না একটা উপায় বের করে ওকে ভর্তির ব্যাবস্থা করে দেবে। ও অনেক বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করেছে, শুধু যোগাযোগের অভাবে ভর্তি মিছ করেছে, এটা ওর পক্ষে যাবে এবং সবাই সেটা বিবেচনা করবে।

তবুও ঘুম আসেনি সারারাত, ঘুমোতে পারেনি, সেই চেষ্টাও করেনি খুব একটা। পরিদন সকালে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ছেলেটি ছুটলো বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে। যখন পৌছালো তখন সবে মাত্র অফিস রুম খুলেছে। ছেলেটিকে দেখে অফিস সহকারী যথেষ্ট বিরক্ত। এতো সকালে এই উৎপাতের পাল্লায় পরে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই।

অবশেষে দুই ঘণ্টার অপেক্ষার পরে। বিভাগের শিক্ষকরা এলেন একে-একে। তাদের নিয়ে বসে সাক্ষাৎকারের নির্ধারিত তারিখের আগেই সেই ছেলেটির সাক্ষাৎকার নিলেন। সেখানেও বেশ ভালো আর সন্তোষজনক ফলাফল করে, সেদিনই ভর্তি হবার অনুমোদন পেল! কোন দ্বিধা না করে ভর্তি হয়ে গেল লোক প্রশাসন বিভাগে। এই বিভাগে ভর্তি হবার একটা সুপ্ত বাসনাও ছিল ভর্তি পরীক্ষার সময় থেকে। আর সেটাই হল, ভাগ্যে লেখা ছিল বলে। কিছু দন্ধ-সংঘাত আর অনিশ্চয়তার পরে। আর জেনে গেল ক্লাস শুরু হবে ৯ই জানুয়ারী।

ডগমগ হয়ে বাসায় ফিরে গেল ছেলেটি। এখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী! কি দারুন এক স্বপ্ন পুরনের সাগরে ভাসছে সে, অনেক অজানা অশ্রু বিসর্জনর পরে।

০৯ই জানুয়ারী প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হল। নতুন সব বন্ধুদের সাথে পরিচয়ের পরে ছোট ছোট কয়েকটা গ্রুপ হয়ে গেল মুহূর্তেই। যাকে যার মনে ধরেছে বা কথা বলে ভালো লেগেছে। ছেলেরা আলাদা আর মেয়েরা আলাদা প্রায়। দুই একটি গ্রুপে ছেলে-মেয়ের মিশ্রণও ঘটেছে।

সেই ছেলেটিও একটি গ্রুপ পেয়েছে, যেখানে সেই ছেলেটির সাথে আর মাত্র একজন যার সাথে হলের কাজ করার সময় আগে দেখা হয়েছিল। তারা দুজনে বেশ গ্রুপ করে আলাদা হয়ে বিভিন্ন গল্প করতে লাগলো। নানা রকম গল্পের মাঝে ছেলেটির নতুন বন্ধু ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করলো কোন মেয়ে বান্ধবী আছে কিনা? বা তেমন কারো সাথে পরিচয়?

ঠিক তখনই ছেলেটির মনে পরে গেল, ভর্তি ফরম তোলা থেকে শুরু করে শেষ পরীক্ষা দেবার সময়কার সেই মেয়েটির কথা। এবং সেই মেয়েটি অন্য আর এক ভবনের অন্য কোন এক বিভাগে ভর্তি হয়েছে জানা ছিল আগেই, সেটা তার নতুন বন্ধুকে জানালো। ব্যাস নতুন বন্ধুর উৎসাহে সেই ছেলেটি আর তার বন্ধু দুইজন মিলে নেমে পড়লো সেই মেয়েটিকে খুঁজে বের করতে।

সেদিন প্রথম ক্লাস শেষ হবার পর থেকেই ওরা মাঠে নেমে পড়লো, একসাথে ভর্তি পরীক্ষা দেবার সেই মেয়েটিকে খুঁজে বের করতে। মেয়েটি যে বিভাগে ভর্তি হয়েছিল সেই বিভাগে গিয়ে দুই বন্ধু মিলে তন্ন-তন্ন করে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে তার দেখা আর পাওয়া যায়না। বেশ অনেকক্ষণ খুঁজে না পেয়ে ওরা ফিরে গেল ওদের বিভাগে। আর কাল ওদের ক্লাসের ফাঁকে আবার খুঁজতে যাবে বলে ঠিক করল।

পরদিন আবার গেল দুই বন্ধু মিলে সেই মেয়েটিকে খুঁজতে। এদিন আরও সময় নিয়ে খুঁজলো কিন্তু সেদিনও খুঁজে পেলনা। এতো এতো ছাত্র-ছাত্রী যে কাউকেই ঠিক মত না চিনলে বা কোন জায়গায় ক্লাস হয় সেটা ঠিক ভাবে না জানলে খুঁজে বের করা খুবই কঠিন শুধু নয়, অনেকটা অসম্ভব। ওরা সেদিনও ফিরে এলো, পরদিন আবার খুঁজতে যাবে ঠিক করে।

পরদিন আবারো খুঁজে বেড়াল সেই বিভাগের ক্লাস থেকে ক্লাসে। কিন্তু না কোন ভাবেই খুঁজে পেলনা ওরা দুই বন্ধু সেই মেয়েটিকে। খুব হতাশ হয়ে ফিরে এলো। আর খুঁজতে যাবেনা বলে মনে মনে ঠিক করলো। এরপর এলো শুক্রবার। পরের শনিবারেও ওরা খুঁজে পেলনা সেই মেয়েটিকে। এবং আর যাবেনা বলেই ঠিক করে রাখল। এমনি এমনি দেখা হলে হল, আর না হলে এভাবে খুঁজে বের করতে পারবেনা কিছুতেই। সেই ঠিক করে ওরা ফিরে এলো ওদের বিভাগে।

পরদিন ১৫ই জানুয়ারী ছেলেটি আর কিছুতেই যাবেনা অথচ ওর বন্ধু অনেকটা জোর করেই নিয়ে গিয়েছিল শেষ বারের মত খুঁজে পেতে। আজ খুঁজে না পেলে আর কিছুতেই খুঁজতে যাবেনা পরে কখনোই। সেই কথাতে রাজী হয়েই শেষ বারের মত খুঁজতে গেল মেয়েটিকে।
তন্নতন্ন করে খুঁজেও যখন পেলনা।

হতাশ হয়ে দুই বন্ধু নেমে আসছিল সেই ভবনের সিঁড়ি দিয়ে। যখন নতুন আর একটা ক্লাস শুরু হবার জন্য প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা উপরে উঠছিল সেই সিঁড়ি দিয়েই। কেউ কেউ উপরে উঠছিল ভিড় ঠেলে, আর ওরা দুই বন্ধু নিচে নামছিল সেই একই ভিড় এড়িয়ে। আর সেই ভিড়ের মাঝেই ছেলেটি আর সেই মেয়েটি একজন আর একজনকে দেখে হেসে ফেলল।

আরে তোমাকেই তো খুঁজে ফিরছি সেই ক্লাস শুরুর দিন থেকে......

তাই?

হ্যাঁ, ভেবেছিলাম আজ খুঁজে না পেলে আর খুঁজবোনা।

আচ্ছা, আমিও খুজছিলাম তোমাকে মনে মনে।

সত্যি?

হুম।

তবে চল আজ আর ক্লাস করার দরকার নেই। ঘুরে বেড়াই কি বল?

হুম চল, তাই হোক।

সেই প্রথম ওরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরে বেড়াতে শুরু করলো...

আর এরপর?

সেগুলো নাহয় থাক। অন্য কোন দিন, ভিন্ন কোন প্রসঙ্গে,

নতুন কোন গল্পে জানা যাবে...?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.