নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"শৃঙ্খল যেখানে আবদ্ধ, মুক্তি সেখানে অসম্ভব\"

সাকিবুল ইসলাম সাজ্জাদ

ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই আমার ছাড়পত্র নিয়ে আমার আগমন

সাকিবুল ইসলাম সাজ্জাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি মধ্যপ্রাচ্যের দিন ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০০

মধ্যপ্রাচ্য জায়গাটা খুবই ভয়ঙ্কর একটা জায়গা। ৬০ এর দশকের শুরুর থেকে এই ২০১০ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য তো আরও ভয়ঙ্কর জায়গা ছিল। এই অঞ্চলটা এতটাই সেনসিটিভ যে আপনি দাবার একটা চাল ভুল করলে খেলায় জিতে যেতে পারেন কিন্তু এই অঞ্চলের একটা চাল এদিক সেদিক হলে পুরো অঞ্চলে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে। ঠিক এইরকম একটা ভুল চালের জন্য ইসরায়েল, ফিলিস্তিনের হামাস আর জর্ডান কে একসাথে মাশুল দিতে হয়েছে।
১৯৯২ সালে জর্ডান আর ইসরায়েলর মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী নিজ নিজ অঞ্চলে কোন সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম শক্তহাতে দমন হবে। ইসরাইলের মতে এই সন্ত্রাসী সংগঠন হচ্ছে হামাস। এই চুক্তির কারণে জর্ডানকে আরব বিশ্বের রোষানলে পড়তে হয়। কারণ এতে হামাসের জর্ডান দপ্তরে কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া অনেকটা হুমকির মুখে পড়ে। কিন্তু জর্ডানের নীরব সম্মতির কারণে হামাস তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম জর্ডানে অব্যাহত রাখে। এইদিকে ইসরাইল জর্ডানে কর্মরত হামাসের চিফ পলিটিকাল ব্যুরো খালিদ মিশালের উপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। তৎকালীন মসাদের প্রধান ডন ইয়াতম ১৯৯৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জর্ডান এমবাসিতে দুই জন কানাডিয়ান মসাদ এজেন্ট পাঠান। উদ্দেশ্য খালেদ মিশালকে মেরে ফেলা। কিন্তু এমনভাবে মারতে হবে যাতে খালেদ মিশাল বুঝতে না পারে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। সোজা কথায় মৃত্যু যাতে স্বাভাবিক মনে হয়। আসলে মিশালের কানের মধ্যে একটা বিষ স্প্রে করা হবে ফলে তার শ্বাসকষ্টে ৪৮ ঘণ্টা পর মৃত্যু হবে। মসাদ এত ভয়ঙ্কর গোয়েন্দা সংস্থা যে ওদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া খুবই কষ্ট।
এদিকে খালিদ মিশাল প্রতিদিনের মত তার ড্রাইভারকে নিয়ে অফিসে আসার জন্য তৈরি হলেন। কিন্তু ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ মিশাল তার তিন সন্তানকে নিয়ে রওনা হলেন। তিনি অফিসে যাওয়ার পর তার ড্রাইভার মিশালের তিন সন্তানকে নিয়ে নাপিতের কাছে যাবেন তাদের চুল কাটাতে। জর্ডান হামাস দপ্তরে পৌঁছে মিশাল দেখলেন দুই আগন্তুক পায়চারি করছে। ব্যাপারটা তার কাছে সন্দেহজনক মনে হল। সে ড্রাইভারকে তার অস্বস্তির কথা জানাল। ড্রাইভার অভয় দেয়ার পর সে গাড়ি থেকে নামল। নামার সাথে আগন্তুক দুজন তার দিকে এগিয়ে আসল, এবং তার কানের কাছে একটা শব্দ হল। তার ড্রাইভার আগন্তুক দুইজনকে বাধা দিতেই তারা দৌড় দিল। ড্রাইভার তাদের পিছন পিছন দৌড়াতে দেখলেন তারা সবুজ একটা গাড়িতে করে চলে যাচ্ছে। এদিকে ড্রাইভারের গাড়ি অনেক পিছনে থাকায় সে গাড়ির নাম্বার টুকে নিল। আর এইদিকে মিশাল যখন নিশ্চিত হলেন তার গায়ে গুলি লাগে নি। সে সাথে সাথে হামাসের একটা জরুরি মিটিং কল করল। সেখানে সে বলল তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে এবং ইসরাইলের মসাদের এজেন্ট এর জন্য দায়ী। সিদ্ধান্ত নেয়া হল জর্ডানের গণমাধ্যমে সেইটা প্রচার করা হবে। জর্ডানের গণমাধ্যমে প্রচার করার সাথে সাথে জর্ডান সরকার সরকার ইসরাইলের এই ঘটনা অস্বীকার করা শুরু করল। গণমাধ্যমগুলোকে বলা হল মিথ্যা খবর প্রচার না করতে।
এইদিকে মিশালের আরেক ড্রাইভার খবর পেয়ে সাথে সাথে সেই সবুজ গাড়ি ফলো করা শুরু করল। মসাদের এজেন্ট দুইজন জানত না যে তাদের আরেকজন ফলো করছে। কিছুক্ষণ পর তারা গাড়ি থেকে নেমে গেলে ড্রাইভার তাদের পিছন পিছন দৌড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের ধরে ফেলে। অনেক দস্তাদস্তির পর তাদের সে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসে। এইদিকে মিটিঙে মিশালের শ্বাসকষ্ট হওয়া শুরু করলে ব্যাপারটা সম্পর্কে নিশিত হওয়া যায় যে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে এবং সেইটা বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে। জর্ডান এইবার ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বের সাথে দেখে। জর্ডানের রাজা হাসান খুবই ক্ষিপ্ত হন এবং ঘোষণা দেন যদি মিশাল মারা যায় তাহলে ইসরাইলের সাথে জর্ডান শান্তি চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে। ইসারিলের প্রধানমন্ত্রী বেজামিন নেতানিয়াহু এই ব্যাপারে কিছুই জানতেন না । তিনি মসাদের প্রধান ডন ইয়াতমকে সাথে সাথে জর্ডানের রাজার কাছে পাঠালেন ব্যাপারটা মীমাংসা করার জন্য। ব্যাপারটা এতদূর গরাছে যে বিল ক্লিনটনকেও এখানে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।ইসরাইলের ক্ষতিপূরণ হিসেবে জর্ডান ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিশালকে যেই বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে তার অ্যান্টিডট সরবরাহ করতে বলল, ইসরাইলে দীর্ঘদিন যাবত কারাবরঙ্কারি হামাস নেতা শেখ ইয়াসিনকে মুক্তি দিতে বলল।ইস্রাইল বাধ্য হয়ে তাকে মুক্তি দিল। আর প্রায় ২০ ঘণ্টা পর খালিদ মিশালকে পুরোপুরি আরোগ্য করা সম্ভব হয়।
শুধুমাত্র এই একটা ব্যর্থ অভিযানের কারণে মসাদের প্রধান ডন ইয়াতম পদত্যাগ করেন, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার পরিকল্পনা মন্ত্রী আরিএল শ্যারনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। মসাদ কিন্তু মোটেও এই ব্যাপারটা মোটেও ভুলে নি। খুব সন্দেহজনকভাবে ২০০৪ সালে ইয়াসির আরাফাত, ২০০৭ সালে মিশরের বিখ্যাত ডাবল এজেন্ট আশরাফ মারয়ান নিহত হন। আর এইদিকে জর্ডান আরব বিশ্বে বেশ প্রভাবশালী দেশে পরিণত হয় কিছু সময়ের জন্য।
পুরো ঘটনা নিয়ে পল ম্যাগ্নাও কিল খালিদ নামে একটা বই লিখেছেন। বইটার পিডিএফ পাওয়া যায়। আমার আরও দুইটা এইরকম লিখা লিখার ইচ্ছে আছে। একটা ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিক ১১ জন ইসরাইলে নিহত হওয়ার জন্য দায়ী ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের প্রধান আল হাসান সালামির ১৯৬৭, ১৯৭৩ সালের আরব ইসরাইলের যুদ্ধে উনার ভূমিকা নিয়ে, আরেকটা মিশরের রাষ্ট্রপ্রধান নাসের হুসাইনের মেয়ে জামাতা আশরাফ মারয়ানের ইসরাইল এবং মিশরের দুই দেশের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৭

ডার্ক ম্যান বলেছেন: মধ্যপ্রাচ্য কেয়ামত পর্যন্ত অস্থিতিশীল থাকবে ।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫১

সাকিবুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেছেন: কি বলেন! বাংলার মুসলমানদের আশাভরসার জায়গা এই মধ্যপ্রাচ্য এইখানে ঝামেলা হলে তো সমস্যা। মুসলিম উম্মাহ বলে তো একটা ব্যাপার আছে তো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.