নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুধু দেশের জন্য

জীবন অতি সংক্ষিপ্ত

গ. ম. ছাকলাইন

আমি একজন সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ

গ. ম. ছাকলাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুইসাইড ফরেস্ট Aokigahara: যেখানে সবাই যায় আত্মহত্যা করতে

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৫২

পৃথিবীতে কত যে রহস্যময় জায়গা আছে। পৃথিবীর এমন একটা জায়গা যেখানে রয়েছে নানা রহস্য। যে রহস্যময়তার সন্ধান আমরা মাঝে মাঝে উদ্ধার করতে পারি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রহস্যের কোন কুল কিনারা খুঁজে পাওয়া যায় না।



আর এমন কিছু রহস্যময় স্থান আছে যেগুলোর কথা জানলে ও শুনলে আমরা অবাক হই এবং এমন কিছু স্থান আছে যেগুলোর কথা শুনলে শুধু অবাকই হইনা সেগুলোর প্রতি আমাদের জানার আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে।

তেমনি একটি অদ্ভুত জায়গা যেটি জাপান শহরের মাউন্ট ফুজি পাহাড়ের উত্তর পাদদেশে অবস্থিত। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশের এই জায়গাটি সুদীর্ঘ ও বিশাল বিশাল সবুজ গাছগাছালি দ্বারা নিভৃত। এই জায়গাটির নেপথ্যের কথা জানলে অবাক হতে হয় যে এখানে মানুষ আসে শুধুমাত্র আত্ম-হত্যা করার জন্য। যদিওবা কিছু কিছু ব্যক্তি এখানে আসেন তদন্তমুলক কাজ করতে তবে বেশির ভাগের উদ্দেশ্য আত্মহত্যা।

এই রহস্যময় জঙ্গলটির নাম “Aokigahara”। এটি পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় স্থান, যার কারন আজ পর্যন্ত জানতে পারেননি পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীরা। আওকিগাহারা একটি বন যেটি মাউন্ট ফুজির পাদদেশে এবং টোকিও শহর থেকে ১০০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে এটি “জুকাই” নামে পরিচিত। স্থানীয়দের ভাষায় জুকাই শব্দের অর্থ “গাছের সাগর”। এই বনটিতে থাকা গাছের উচ্চতা ও ঘনত্ব অনেক বেশি। এটি ভ্রমণকারীদের জনপ্রিয় মাউন্ট ফুজি পাহাড়ের দুই গুহা “বরফ গুহা ও বায়ু গুহার” নিকটেই অবস্থিত।

আওকিগাহারা সুইসাইড ফরেস্ট নামেও পরিচিত যার আয়তন ৩৫ বর্গ কিলোমিটার। এই সুবিস্তৃত বনটি কঠিন পাথর ও বরফ গুহা দ্বারা সমৃদ্ধ। এই সুবিশাল বনটির গাছগুলোর ঘনত্ব এত বেশি যে, এর মধ্যে একবার ঢুঁকলে নিশ্চিত পথ হারিয়ে ফেলবে। জানা যায় যে অনেক আগ্রহী দর্শনার্থী এর মধ্যে প্রবেশ করেছিলেন এবং তাদের পথ নির্দেশনা ঠিক রাখতে তারা প্লাস্টিক টেপ ব্যবহার করেছিলেন কিন্তু তাদেরও কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের মতে এই বনের মধ্যে কেউ একবার প্রবেশ করলে তার এমন মায়ার সৃষ্টি হয় যে সে আর ফিরে আসতে পারে না। এক সময় সে তার অতীত কাহিনী পর্যালোচনা শুরু করে এবং নিষ্ঠুরভাবে নিজেকে নিজেই শেষ করে দেয়। এমনকি জাপানিরা এই জায়গাটিকে অভিশপ্ত ভাবে তাই অনেকেই এই জায়গায় আসার সাহস করে না। যার কারনেই আজও এই জায়গাটি রহস্যময় থেকে গেছে।

এমনকি আপনি যদি ভুতের গল্পের প্রতি আকৃষ্ট নাও থাকেন তারপরও এই স্থানটির একটি বিশেষ অনুভুতি আছে। Seicho Matsumoto একজন বিখ্যাত জাপানি লেখক তার ১৯৬০ সালে প্রকাশিত “KuroiJukai”উপন্যাসে লিখেন একজন যুবক প্রেমিক এখানে আত্ম-হত্যা করেন।

এছাড়াও CNN-এররিপোর্ট থেকে জানা যায়, তারু নামের ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ছিলেন যিনি লোহা তৈরির কারখানায় কাজ করতেন যাকে একসময় তার কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সে প্রচণ্ড হতাশা, গ্লানি আর তার পরিবারের দায়ভার চালাতে পারবে না এই ভেবে সে চলে যায় সুইসাইড খ্যাঁত ফরেস্ট আওকিগাহারাতে। তার চিরকুট হতে পাওয়া তথ্য মতে সে বলেছিল, “আমি অদৃশ্যভাবে এখানে থাকতে চাই, আমি আমার পরিচয় হারিয়ে ফেলেছি তাই আমি এখানে”।

এই বনটি দিন দিন আত্মহত্যার জন্য একটি জনপ্রিয় জায়গা হয়ে উঠছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখানে প্রতিবছর গড়ে ১০০টিরও বেশি মৃতদেহ পাওয়া যায়। ২০০৩ সালে মোট ১০৫টি মৃতদেহ পাওয়া যায় যা ২০০২ সালের রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়। ১৯৯৮ সালে ৭৩টি, ১৯৯৯ সালে ৬৮টি, ২০০০ সালে ৫৯টি, ২০০১ সালে ৫৯টি ও ২০০২ সালে ৭৮টি মৃতদেহ পাওয়া যায়।

সর্বশেষ সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ২০১০ সালে মোট ২৪৭টি মৃতদেহ পাওয়া যায়, যা সর্বকালের রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়। স্থানীয় সরকার কঠোর ভাবে এই আত্মহত্যার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। স্থানীয় সরকার পুলিশ, সেবাকর্মী ও অবস্থানরত সাংবাদিকদের মাধ্যমে আত্মহত্যা করতে আসা লোকদের সাহায্য ও তাদের আত্মহত্যা না করতে উদ্ভুত্ত করে যাচ্ছে।

জাপানে আত্মহত্যার হার ইতিমধ্যে বিশ্বে সর্বোচ্চ যার একটি বড় কারন দেশটির চলমান অর্থনৈতিক মন্দা। দেশটিতে জানুয়ারি ২০০৯ সালে রেকর্ড পরিমান ২৬৪৫টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে যা জানুয়ারি ২০০৮ সালে ছিল ২৩০৫টি। এক বছরে আত্মহত্যার হার ১৫% বেড়ে যায়। জাপান সরকার বলেছেন যে, দেশে আত্মহত্যার পরিমান এমন ভাবে বেড়ে যাচ্ছে যা ২০১৬ সালে ২০% পর্যন্ত বাড়তে পারে।

দেশটি স্কুলে এবং কর্মস্থলে আত্মঘাতী সচেতনতা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু কর্মকর্তারা ভয় পাচ্ছেন যে এতে করে উপশুল্ক বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি হবে বেকারত্ব ও দেউলিয়ার।

Toyoki Yoshida একজন আত্মহত্যা ও ক্রেডিট পরামর্শদাতা তিনি বলেন যে, “বেকারত্বই আত্মহত্যার মূল কারন”।

সমাজ ও সরকারের উচিত অতিবিলম্বে আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রতিবিধান স্থাপন করা। সরকারের উচিত আরও বেশি করে কর্মস্থল তৈরি করা ও যারা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত তাদের মানসিক প্রশান্তির সুব্যবস্থা করা। অবশ্যই আশংকাজনক একটি বিষয় “Aokigahara”।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে সমাজ ও সরকারের পাশা পাশি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে ধর্ম। কারন কোন ধর্মেই আত্মহত্যা বৈধ নয়। আমি একজন ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসাবে বলতে পারি, মুসলমানদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা অত্যন্ত কম, কারন ইসলাম ধর্মে আত্মহত্যাকে সম্পূর্নভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উদাহরন হিসাবে যদি বাংলাদেশের কথা বলি, একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসাবে এই দেশে এত গরীব, অভাব, দূর্নীতি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম থাকার পরও মানুষ ধর্মীয় কারনে অনেক ধর্য্যশীল। বাংলাদেশে আত্মহত্যা একেবারেই নেই তা বলব না এখানেও কিছু আত্মহত্যা হয়, তার কিছু হয় মানষিক রোগের কারনে বাকিটা হয় ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারনে। এই জন্য ইসলাম সম্পর্কে আমাদের অনেক বেশী সচেতন হওয়া দরকার। ইসলাম চর্চা করা দরকার। তবেই ঐসব অশান্তি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:১৭

সুমন কর বলেছেন: চমৎকার শেয়ার। অনেক কিছু জানতে পারলাম।

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৫১

গ. ম. ছাকলাইন বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.