নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত মানুষ , মুক্ত সমাজ, মুক্ত পৃথিবী; মুক্তিই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ।

সালমান মাহফুজ

সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা সেই কৈশোর থেকেই । মাঝে মাঝে লিখতেও চেষ্টা করি । যেই সাহিত্য আমাকে ধরেছে, সেই সিলেবাস আমাকে দূরে সরিয়ে দিছে । সুতরাং একাডেমিক কন্ডিশন চরম বাজে । প্রচণ্ড অলস এবং অসামাজিক । নিজের কাজের প্রতি চরম বিশ্বাসহীনতা । মাঝে মাঝে সবকিছুকেই অনর্থক ফাও ফাও মনে হয় । এমনকি বেঁচে থাকাটাও । তবুও বেঁচে আছি । কেন ? জানি না । শুধু জানি, কিছু একটা করতে হবে । কী সেটা ? তাও জানি না । মানবজন্মটাকে এভাবে বৃথা চলতে দেয়া যায় না, এই ভেবেই বোধোহয় আরেকটু বাঁচবার লোভ হয় ।

সালমান মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৌ (গল্প)

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৫৯

আজ একটু দেরিতেই অফিস থেকে বের হল মৌ । বেলা প্রায় শেষ । ঘড়িতে ঘন্টার কাটা ৬টা ছুঁই ছুঁই । নীলক্ষেতে এসে রিক্সা থামল । এখন রাস্তার ওপারে গিয়ে বাস ধরতে হবে । এই সময়ে বাসা ওঠা তো রীতিমত সংগ্রাম । আধঘন্টা একঘন্টা চেষ্টা করেও অনেক সময় উঠা যায় না । কী যে বিরক্তকর সেই মূহুর্তটা !



রাস্তা পারাপারে কোন ঝুঁকি নেয় না মৌ । প্রতিদিনের মত আজও সে ওভারব্রিজে পা রাখল । পাঁচটা সিঁড়ি পার হতেই একটা চেনা মুখ তার চোখে পড়ল । অতি চেনা মুখ । নীচের দিকে নেমে আসছে । আরে এটা তো রাহুল ! থমকে দাঁড়াল মৌ । তার চোখে মুখে বিপুল উচ্ছ্বাস । কত দিন পরে রাহুলের সঙ্গে দেখা ! রাহুল আর তার ব্যবধান এই মূহুর্তে মাত্র এক সিঁড়ি । মৌ বলে উঠল— ‘আরে তুমি এইখানে রাহুল !’



রাহুলের চোখে মুখেও ভীষণ বিষ্ময়; সেইসঙ্গে হাসি । দুজন দুজনের মুখে পলকহীন তাকিয়ে আছে । কারও মুখে কোন শব্দ নেই । রাহুল কিছু একটা বলতে গিয়ে আবার থেমে গেল । মলিন হয়ে উঠল রাহুলের মুখ । মৌয়ের মুখে এখনো হাসি লেগে আছে । ‘তুমি কেমন আছ রাহুল ?’ মৌ জিজ্ঞেস করে ।



রাহুল একদম নিঃশ্চুপ । মৌয়ের সুহাস্য মুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় রাহুল । একদম অচেনা মানুষের মত আর একটি বাক্যও উচ্চারণ না করে নীচে নেমে যেতে থাকল সে । মৌয়ের মুখে লেগে থাকা হাসি হঠাৎ মুছে গেল । ‘ যেও না রাহুল । প্লিজ দাঁড়াও । প্লিজ দাঁড়াও । আমি জানি আমার জন্য তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছ । আমার উপর তোমার রাজ্যের অভিমান । তারপরও একটু দাঁড়াও রাহুল । প্লিজ ।’ মৌ রাহুলের পিছু নিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলতে থাকল ।



রাহুল থমকে দাঁড়াল । পিছন ফিরে দেখল, নিরীহ দৃষ্টিতে তার দিকে মৌ তাকিয়ে রয়েছে । চোখে অশ্রু টলমল করছে । রাহুল বিশ্বাস করতে পারছে না, এই সেই মৌ । ছয় বছর আগে এমনি এক ক্লান্ত সন্ধ্যাবেলায় যাকে সে শেষবারের মত দেখেছিল । তারপর আর কোনদিন তাকে একটুও দেখতে ইচ্ছে হয় নি । সেদিন মৌ কত কঠিন স্বরে বলছিল— ‘ আমার সঙ্গে এটাই তোমার শেষ দেখা । এতদিন তোমার সঙ্গে আমার যা ছিল, যত তাড়াতাড়ি পারো ভুলে যেও ।’ আজো স্পষ্ট মনে আছে রাহুলের । আহা ! কত কান্নাই না সেদিন রাহুল করেছিল । কত অবুঝ ছিল সে !

আজকের মৌকে দেখে রাহুলের বুকের ভিতরটা কেমন টনটন করে উঠল । মনে হল, যে প্রেমকে সে এতদিন মৃত বলে ভেবেছে, সে যেন আবার প্রাণ ফিরে পেল । কিন্তু সেদিন মৌ এমন আচরণ করল কেন ? সে কেন এভাবে তাকে ছিটকে দিল ? সে কি তাকে বিয়ে করতে বলে ভুল করেছে ? না না, ভুল হবে কেন, সে তো ভালোবেসে বলেই বলেছে । অথচ মৌ তাকে এমনভাবে প্রত্যাখ্যান করল, যেন ভালোবাসার সঙ্গে বিয়ের অহিনুকুল সম্বন্ধ । না না, মৌ তাকে সত্যিকারের ভালোবাসে নি । আর সে জন্যই সে এমনটা করতে পেরেছে ।



‘কী হল রাহুল ! তুমি কি কিছুই বলবে না ? প্লিজ রাহুল আমি হাত জোড় করে বলছি ! চুপ করে থেকো না । অন্তত একটা কিছু বল ।’

রাহুল মুখ খুলল না । একেবারি শব্দহীন দাঁড়িয়ে রইল । মৌ বুঝতে পারল, এতক্ষণ ধরে তার আকুতি মিনতি পুরোটাই বিফলে গেল । রাহুলের জমাট অভিমান একটুও গলে নি । দূরে সরে এসে রাহুলের প্রতি সেদিন কি মৌ সত্যিই বড় অবিচার করেছে ? না না, সে অবিচার করে নি । সে যা করেছে তা তো রাহুলের ভালোর জন্যই । সেদিন যদি মৌ তাকে দূরে ঠেলে না দিত, হয়ত রাহুলের গোটা জীবনটাই অভিশাপে পরিণত হত । কিন্তু রাহুল তা বুঝে নি, বুঝবেও না । কারণ, ভালোবাসা মানুষকে চিরদিনের জন্যই অবুঝ করে রাখে । যতই এখন অভিমানে মুখ বুঝে থাকুক, মৌ তাতে একটুও হতাশ নয় । মৌ এখনো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, রাহুল তাকেই ভালোবাসে— শুধু তাকেই । মুখে কিছু না বললেও, রাহুলের অশান্ত অবুঝ অভিমানী চোখ দুটি তো এ কথাই বলছে ।

‘ ওকে রাহুল, তোমাকে আর বিরক্তি করব না । আমি চললাম । তবে একটা কথা শুনে রেখো, তুমি যে ধারণা পোষণ করে আমার সঙ্গে এখনো অভিমান করে আছো, সেটাই একমাত্র সত্য নয় । তার উপরে আরো একটা সত্য আছে । সেটাকে যেদিন তুমি খুঁজে পাবে, সেদিন তোমাকে এই আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে । আমি তোমার জন্য দুয়ার মেলে বসে রইলাম ।’ এই বলে মৌ রাহুলের হাতে একটা কার্ড সঁপে দিয়ে ওভারব্রিজ দিয়ে দ্রুত রাস্তার ওপারে ছুটে চলল ।



রাহুল পলকহীন সেদিকে চেয়ে থাকল । সন্ধ্যার নৈসর্গিক আলো ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে আসছে । সেই সাথে দোকানে , ফুটপাথে, রাস্তায় মোটর গাড়ির বৈদ্যুতিক বাতির কৃত্রিম আলো সমস্ত শহরকে ভরিয়ে তুলতে থাকল । মৌকে এখন আর দেখা যাচ্ছে না । অগণিত মানুষের ভিড়ে সে মিশে গেছে । রাহুল মৌয়ের দেয়া সেই কার্ডের দিকে দৃষ্টি নত করল । মৌয়ের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর সব এখানে দেওয়া আছে । কার্ডটা সযত্নে পকেটে ঢুকিয়ে রাহুল ব্যস্ত ফুটপাথ দিয়ে হাঁটা ধরল । আর খুঁজতে থাকল সত্যের উপরে আরেক সত্যকে ।









মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:০৮

বষন্তের কাক বলেছেন: ভাল লাগলো

২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:১১

সালমান মাহফুজ বলেছেন: মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ । @বসন্তের কাক

৩| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:৪২

তুষার কাব্য বলেছেন: ভালো হয়েছে...

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৫

সালমান মাহফুজ বলেছেন: ধন্যবাদ তুষার ।

৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৬

লিরিকস বলেছেন: ১ম পোস্টে হাজির :)

০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২২

সালমান মাহফুজ বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানবেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.