নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত মানুষ , মুক্ত সমাজ, মুক্ত পৃথিবী; মুক্তিই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ।

সালমান মাহফুজ

সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা সেই কৈশোর থেকেই । মাঝে মাঝে লিখতেও চেষ্টা করি । যেই সাহিত্য আমাকে ধরেছে, সেই সিলেবাস আমাকে দূরে সরিয়ে দিছে । সুতরাং একাডেমিক কন্ডিশন চরম বাজে । প্রচণ্ড অলস এবং অসামাজিক । নিজের কাজের প্রতি চরম বিশ্বাসহীনতা । মাঝে মাঝে সবকিছুকেই অনর্থক ফাও ফাও মনে হয় । এমনকি বেঁচে থাকাটাও । তবুও বেঁচে আছি । কেন ? জানি না । শুধু জানি, কিছু একটা করতে হবে । কী সেটা ? তাও জানি না । মানবজন্মটাকে এভাবে বৃথা চলতে দেয়া যায় না, এই ভেবেই বোধোহয় আরেকটু বাঁচবার লোভ হয় ।

সালমান মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : উনি আমার বয়ফ্রেন্ড

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৩৭

ক্লাসরুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেয়েটি সিঙাড়া খাচ্ছিল । আমরা পাঁচজন মেয়েটির ক্ষাণিকটা দূরেই । মেয়েটি দেখতে বেশ সুন্দরীই বলা চলে । চুলগুলো ভীষণ সুন্দর ! খোলা চুল । মৃদু হাওয়ায় চুলগুলো দুলছে । তবে আমার কাছে মেয়েটিকে ভীষণ দেমাগী মনে হচ্ছে । আমরা পাঁচ-পাঁচটা ইয়াং ছেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি সুন্দরী মেয়ে; অথচ আমাদের কারো দিকেই মেয়েটির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই । অন্যদিকে ফিরে আপন মনে সিঙাড়া চিবাচ্ছে । উফ্‌, অপমান, স্রেফ অপমান !
আমি, অভি, সুদীপ, সৈকত— আমরা সবাই এক এক করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম । কেবল আদিত্যটা এখনো তাকিয়ে আছে । অপলক মেয়টির দিকে তাকিয়ে আছে । এই তাকিয়ে থাকার রহস্য আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি ।
‘চল্‌ সালমান, চল্‌ সুদীপ , চল্‌ তোরা সব । এইখানে দাঁড়ায়া দাঁড়ায়া এই ঢঙ্গিলার ঢং দেখার চেয়ে মুরাদ চত্বরে গিয়া বিড়ি টানি । সেটাই আরামদায়ক । চল্‌, চল্‌ ।’ অভি আমাদেরকে তাড়া দেয় ।
‘চল্‌ , চল্‌ ।’ আমি সায় দিই ।
‘না, না— আর একটু , একটু... প্লিজ ।’ আদিত্য আমাদেরকে আটকে রাখতে চাইছে ।
‘আরে মাম্মা, এইভাবে অনাহারী অর্ধহারী কাউয়্যার মত তাকায় থাইক্যা প্রেম হয় না । ওটার জন্য বুকের ফাটা লাগে, বুঝলা, বুকের ফাটা ।’ সুদীপ আদিত্যকে খোঁচা দেয় ।
‘ কী কইতে চাস্‌ তুই ! আমার বুকের ফাটা নাই ? এক্ষন, এই মূহূর্তে মেয়েটারে আমি প্রফোজ করুম । বাজি ?’
‘ওকে বাজি ।’
‘কত ?’
‘কত ফত না । আমি এক বসায় পাঁচ স্টিক গাঞ্জা টানুম একলা ।’
‘ আচ্ছা, গাঞ্জার টাকা দিবে কে ?’ অভি মাঝখান থেকে বলে ।
‘আমার পকেটের টাকা দিয়াই কিনুম ।’ সুদীপ বুক ফুলিয়ে বলে ।
‘ওকে, ওকে । দেখা যাইব কেমন পারেন আপনে ।’ আদিত্য প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে । মনে হয়, বাজিতে জিতেই গেছে ।
‘ তোরা আসলে কী শুরু করছোস্‌ ! আর কোনো ধান্দা-ফান্দা খুঁজে পাস্‌ না ? একজনে প্রফোজ করবে, আর একজন বিনিময়ে একাই পাঁচ স্টিক গাঁজা টানবে । ফালতু যত্তসব !’ সৈকত বিরক্ত ।
‘আচ্ছা, আচ্ছা— সবই বুঝলাম । মেয়েটি যদি আদিত্যের প্রফোজে রাজি না হয়, তখন কী হইব ?’ অভি একটা পয়েন্টের দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ।
‘আরে প্রফোজ করা পর্যন্তই কথা । রাজি বেরাজির কথা আসল ক্যান !’ আমি মতামত দিয়ে সুদীপের দিকে দৃষ্টি ফিরাই ।
‘না, না— তা আমি মানমু না । রাজি না হলে তো আদিত্য হাইরাই গেছে । বালের হিসাব নিয়া আছো তুমি ।’ সুদীপ ক্ষেপে উঠে ।
‘ওকে ফাইন । রাজি না হলে তোমার গাঞ্জা টানা লাগব না ।’ আদিত্য সুদীপের আপত্তি মেনে নেয় ।

মেয়েটির সিঙাড়া চিবানো শেষ । সিঙাড়ার খালি প্লেট হাতে নিয়ে ক্যান্টিনের দিকে হাঁটা ধরল ।
‘এই শুনো ।’ আদিত্য মেয়েটিকে ডাক দেয় ।
মেয়েটি এদিক ওদিক তাকিয়ে আমাদের দিকে দৃষ্টি ফেরায় । এক -পা দু-পা করে এগিয়ে আসছে মেয়েটি । ভীষণ ঘামাচ্ছে আদিত্য । হাত-পা দুটোও একটু একটু কাঁপছে ।
‘এক্সকিউজ মি, আমাকে ডেকেছেন ?’ মেয়েটি হাসি মুখেই জিজ্ঞেস করে ।
‘হ্যাঁ । তোমাকেই । তোমাকে বলব বলে অনেক কথাই বুকে জমে আছে, অনেক কথা...’ আদিত্য ঠিক মঞ্চনাটকের অভিনেতার মত রোমান্টিক সুরে টেনে টেনে বলে ।
‘মানে ? চিনি না, জানি না— এর আগে ক্যাম্পাসে কোনোদিন আপনাকে দেখেছি বলেও মনে হয় না; আর আপনার বুকের ভিতর নাকি আমাকে বলবেন বলে কথার বন্যা বইছে ! তো বলেন শুনি, আপনার অনেক কথা ।’ মেয়েটির হাবভাব একটু বেগতিক । তবে আমি এখনো আশান্বিত । আদিত্যেরই জয় হবে ।
আর কিছু না বলে আদিত্য হুট করে মেয়েটির হাত ধরে ফেলে ।
‘স্টুপিড কোথাকার !’ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মেয়েটি সোজা আদিত্যের গালে একটা চড় কষিয়ে দেয় ।
‘লম্পট, এত্ত সাহস ! কাকে টাচ করেছিস জানিস ?’ মেয়েটির চোখ-মুখ থেকে যেন আগুনের ফুলকি ঝরে পড়ছে ।
‘চিনিস উনারে ? উনি আমার বয়ফ্রেন্ড । জানতে পারলে তোর এই হাত ... শুয়ার !’ ভবনের মেইনগেটের দেয়ালে একটা পোস্টারের দিকে মেয়েটি আঙুল তোলে ।
পোস্টারে একটা বিরাট মানবমূর্তি । শ্যামল দত্ত । ওয়ান অফ দি মোস্ট পাওয়ারফুল পলিটিক্যাল লিডার এই ক্যাম্পাসে । সর্বনাশ ! এ কোথায় হাত দিল আদিত্য । আমরা সবাই আতঙ্কিত ।
আদিত্য মাথা নীচু করে আছে । আমরা সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে জর্জরিত আদিত্যের আপমানের দৃশ্যটা প্রত্যক্ষ করছি ।
‘নেক্সট টাইম এমন বাজে ডিস্টার্ব করলে...’ কথাটা শেষ না করেই মেয়টি হন হন করে হেঁটে চলে যায় ।

পরাজিত আদিত্য এখনো মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে । টুপ টুপ করে চোখ থেকে অশ্রুফোঁটা ঝরছে । আমাদের অন্য কারো চোখে অশ্রু না থাকলেও ভিতরটায় একটা জমাট কান্না অনুভূত হচ্ছে । বাজিতে বিজয়ী সুদীপের মুখেও বিন্দুমাত্র হাসির চিহ্ন নেই । সেও ভয়ানক বিমর্ষ ।
মুখ তুলে আমাদের দিকে তাকায় আদিত্য । আমি মানুষের এমন বিধ্বস্ত মুখ এর আগে কোনোদিনও দেখে নি । অশ্রু মুছে একটু হাসে আদিত্য । এই হাসির আড়ালে আমি ভয়ানক একটা কষ্টের দাবনল দেখতে পাচ্ছি । হয়ত আরো বহুকাল আদিত্যকে এই দাবনলে পুড়তে হবে ।

এই ঘটনার পরে আমি শ্যামল দত্তকে বহুবার দেখেছি ক্যাম্পাসে। মেয়টিকেও দেখেছি । তবে কখনো শ্যামল দত্তের সাথে মেয়েটিকে দেখতে পাই নি ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.