নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত মানুষ , মুক্ত সমাজ, মুক্ত পৃথিবী; মুক্তিই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ।

সালমান মাহফুজ

সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা সেই কৈশোর থেকেই । মাঝে মাঝে লিখতেও চেষ্টা করি । যেই সাহিত্য আমাকে ধরেছে, সেই সিলেবাস আমাকে দূরে সরিয়ে দিছে । সুতরাং একাডেমিক কন্ডিশন চরম বাজে । প্রচণ্ড অলস এবং অসামাজিক । নিজের কাজের প্রতি চরম বিশ্বাসহীনতা । মাঝে মাঝে সবকিছুকেই অনর্থক ফাও ফাও মনে হয় । এমনকি বেঁচে থাকাটাও । তবুও বেঁচে আছি । কেন ? জানি না । শুধু জানি, কিছু একটা করতে হবে । কী সেটা ? তাও জানি না । মানবজন্মটাকে এভাবে বৃথা চলতে দেয়া যায় না, এই ভেবেই বোধোহয় আরেকটু বাঁচবার লোভ হয় ।

সালমান মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : পাশের বেডের মেয়েটা

১৫ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৫০



।। এক ।।
“প্লিজ জান, রাগ করে না । সত্যি বলছি । সত্যি বলছি আমার বড় বোন ফোন দিছিল, কসম খেয়ে বলছি । প্লিজ জান, সোনা আমার... আরে বাবা, খুব একটা ইমপোর্টেন্ট মেটার কথা হচ্ছিল, তাই এত্ত লং টাইম বিজি ছিলাম । আমার বোনের বাবুটার না অনেক অসুখ, ওর ব্যাপারে কথা বলতে বলতে... প্লিজ জান রাগ করে না, বি কুল, বি কুল । লক্ষ্মীটি আমার... কী গো, বিশ্বাস কর না আমাকে ? তুমি আমাকে সন্দেহ করছ ? যাও কথা বলা লাগবে না, আর কক্ষনো ফোন দিবা না, নো নেভার ... কী হল ! যাও যাও, আর দরদ দেখানো লাগবে না । আমাকে কেউ বুঝতে চায় না... বারণ কোরো না, আমাকে কাঁদতে দাও, কাঁদতে দাও, উঁহো, উঁহো, হোঁ, হোঁ...”
প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে এমন ফালতু প্যাঁচাল শুনতে শুনতে আমার মেজাজ এতটাই বিগড়ে গেছে যে, মন চাইছে মেয়েটার কান থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে আচড়ে ভেঙে ফেলি !
রাত্রি এখন দুইটা ছুঁই ছুঁই । তবুও ওনার প্রেমলীলা শেষ হচ্ছে না । মেয়েটা আমার পাশের বেডেই শুয়ে । শুয়ে শুয়েই চালাচ্ছেন । একদম অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাকে সব শুনতে হচ্ছে । আমি নিরুপায় নীরব শ্রোতা ।
একজনের পর একজন । সিরিয়ালই শেষ হচ্ছে না । উফ্‌, আমি ঘুমাব কখন ! কাল নাকি সকাল সাড়ে আটটাতেই ক্লাস স্টার্ট ।
এক-দুদিন নয় । গত তিনমাস ধরেই প্রতি মধ্যরাতে আমাকে এই টর্চার সহ্য করতে হচ্ছে । সারাটা দিন নর্মাল ক্লাস, প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস, ল্যাবরেটরি, সিনিয়র স্টুডেন্টদের সাথে সিটিং— হাং তাং শেষ করে হলে ফিরতে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে । এরপর তো শুরু হয় হোমওয়ার্কের প্রেসার । দু’দিন পর পরই থাকে টিউটরিয়াল এগজাম । প্রাত্যহিক এই কঠিন প্যারার মধ্যে যদি রাত্রির ঘুমটাও ঠিকমত না হয়, তো এটা কেমন জীবন ! কোনো মানে হয় এই বালের জীবনের ?
উনার আর চিন্তা কী ! রেজাল্ট খারাপ হলে কী কচু আসে যায়? বাবা-মামা-খালু সবারই নাকি মোটা অংকের ব্যাংক-ব্যালেন্স আছে । চার-পাঁচটা মোটাসোটা লালটু মার্কা চেহারার বয়ফ্রেন্ড তো আছেই । আহা, কী মহাফূর্তিতেই না কাটছে জীবন ।
আর আমার ? সেই এস এস সি কমপ্লিট করতেই বাবা-মা উঠে পড়ে লেগেছেন শাদি ঘটিয়ে দিতে । বড় মামা বুঝিয়ে টুঝিয়ে ভার্সিটি পর্যন্ত টেনে এনেছেন । সুতরাং মাঝরাতের এই মহাফূর্তিবাজদের জীবনের সাথে এক করে দেখলে আমার যায় না । আমার রাস্তা অনেক কঠিন ।
নাহ্‌ , কাল সকালে উঠেই এটার একটা ফয়সালা করতে হবে । বয়ফ্রেন্ডদের সাথে প্রেম করছে ঠিকাছে; তাই বলে আশপাশে তাকাবে না ? অন্যের রাতের ঘুম হারাম করে ? উফ্‌ আনবিয়ারেবল ডিস্টার্ব ! পাইছেটা কী বেটি ! নাহ্‌, এভাবে চলতে দেয়া যায় না । সকালটা হোক ।

।। দুই ।।
‘মাঈশা, টুথপেস্টটা কইরে ? কই যে লুকিয়ে রাখিস ! এটা কি খাওনের জিনিস নাকি বাপু, এত্ত লুকালুকির দরকারটা কী !’ লিমার চেঁচামেচিতে আমার ঘুম ভাঙে । হাতঘড়িতে তাকাতেই মেজাজ পুরাই হট ! সবেমাত্র ভোর ৬ টা । ঘুমিয়েছে রাত সাড়ে ৩টায় ।
‘ তোর প্রবলেমটা কী বলতো লিমা ? এত্ত টর্চার শুরু করছোস ক্যান আমার উপর ? রাতভর মোবাইলফোনের ফিসফিসানি টর্চার; ভোর না হতেই এখন টুথপেস্ট নিয়ে চেঁচামেচি টর্চার !’
‘ মানে কী ? তুই এভাবে কেন কথা বলছিস ? মনটা একদম ভালো নেই জানিস ! কাল রাতে রিফাতের সাথেও ঝগড়া হয়েছে, অমিতের সাথেও; আর কাব্যটা তো ফোনই রিসিভ করল না !’
‘ মানে সোজা । ইদানিং আপনার এইসব প্যাঁচাল একদম সহ্য হচ্ছে না । আপনার সঙ্গে বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়ছে !’
‘এটা বলতি পারলি তুই দোস্ত !’
‘হ্যাঁ পারলাম । কারণ তোর প্রেম-সংক্রান্ত, বয়ফ্রেন্ড-সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়া স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য এই ক্যাম্পাসে আমি আসি নাই ।’
‘ওকে । বুঝছি, বুঝছি । তোরও ম্যানেজ হয়ে যাবে দোস্ত । এত্ত চেতোস ক্যান । ঠাণ্ডা মাথায় বুঝিয়ে বললেই তো হয় । রাকিবের ব্যাপারে সিউরিটি দিতে পারছি না, মাহাথির তো আয়েশার সাথে অলরেডি রিলেশনে রানিং আছে, তবুও ট্রাই করা যেতে পারে । তবে জামিল ভাই কিন্তু এক পায়ে খাঁড়া তোর জন্য । তুই ওকে বললেই সব ফাইনাল । খালি হরদম চলবে, কী বলিস ?’
লিমার কথা শুনে আমি জবাবটা দিব কী, সেটাই বুঝবার পারছি না । আমি পুরাই থ ! ওরে আমি বলছি কী, আর ও আমারে শুনাচ্ছে কী !
‘শুন্‌ ! আমার ওইসব হরদম চলাচলির কোনো দরকার নাই । তোরে দেইখ্যা হরদম কী চালাব, সোজা ব্রেক-ফেইল করে সুইসাইড খাইতে মন চায় ।’ আমার মেজাজের টেম্পারেচার বেড়েই চলছে ।
‘ও... তুই বুঝছোস্‌ আমি বুঝি খুব আনহ্যাপি । মোটেও না । আরে, একটু আধটু রাগ-অভিমান না থাকলে কি প্রেম জমে ? রিফাত হয়ত কাল একটু বেশি পান করেছে, তাই এমন করলো । অমিতের কথা কইয়্যা লাভ নাই, সন্দেহ-প্রবণতাটা ওর একটা রোগ । সন্ধ্যায় দেখবি ঠিকই ফোন দিয়া বলবে— লিমা, সোনাপাখি আমার, আর কক্ষনো তোমাকে বকব না, প্রমিস্‌ । জানু, চলো হাজী রেস্টুরেন্টে । আর কাব্য ? আল্লাই জানে কেন যে কাল কল রিসিভ করে নি । বোধহয় তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়েছে রাতে ।’ গর্বের সঙ্গেই লিমা বলে । মুখে বিমর্ষতার তিল পরিমান চিহ্নমাত্র এখন নেই ।
‘হুম, ভালোই... আরো তো মনে হয় দু’জন আছে ।’
‘আরে ধূর ! মিল্টন পুরাই ফাউল । সবকিছু সস্তায় পেতে চায় । এত্ত সোজা ! রফিকও ইদানিং একই ক্যাটাগরিতে যোগ দিছে । ফাউল দুটাই । দুটাকেই ক্যানসেল করে দেওয়ার প্রসেস চলছে ।’
‘হুম, ভালোই... চালায়া যা । তবে আমার দিকেও একটু তাকাইস । সারাটা দিন ব্যাপক পরিশ্রম করতে হয় তো, শরীর ব্যাপক ক্লান্ত থাকে । তার উপর যদি রাতে ঘুমটা না যেতে পারি, মেজাজ কি আর ঠিক থাকে বল ?’ লিমাকে নরম সুরে কথাগুলো বলে আমি বেড থেকে উঠে বাথরুমের দিকে হাঁটা ধরি ।

।। তিন ।।
এই ক্যাম্পাসে এই চার দেয়ালের রুমে এমন রাত কখনো আসবে, আমি স্বপ্নেও কল্পনা করে নি । কোথাও কোনো শব্দ নেই, কারো ফিসফিসানি নেই, চারদিক নিস্তব্ধতার অতলে ডুবে আছে । ক্লান্ত শরীরে এই রাতে এতক্ষণে গভীর ঘুমের তলদেশে আমার হারিয়ে যাবার কথা ছিল । কিন্তু আমি জেগে আছি । হয়ত সারারাতেই জেগে থাকতে হবে । এই রাতে সত্যিই আমার অনেক আনন্দিত হবার কথা ছিল । কিন্তু আমি কাঁদছি । কাঁদছি লিমার জন্য । হ্যাঁ, সেই লিমার জন্যই আমার চোখে জল, বেদনার জল । যে লিমার ডিস্টার্বে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিরাতে আমার মস্তিষ্কে আক্রোশের বারুদ জ্বলত, সেই লিমার জন্যই আমি এখন কাঁদছি ! রাত জেগে লিমা তার বয়ফ্রেন্ডদের সাথে মোবাইলফোনে করা সব রাগ-অভিমান, আদুরে সুরের ন্যাকামো, মিথ্যাচার আমার কানে এখনো বাজছে । কিন্তু এখন আর আমি সেসবে ডিস্টার্ব ফিল করা তো দূরের কথা, বরং সেসবকে স্মৃতিতে চিরতরে আঁকড়ে ধরতে চাই । কেননা লিমা ফিরবে না, এখানে আর কোনোদিনও লিমা ফিরবে না !
কেন লিমা চলে গেল ? এত আনন্দ, এত রোমঞ্চ, এত উপভোগ যার জীবনে, সে কীভাবে নিজেই নিজের জীবন থেকে এভাবে পালিয়ে যেতে পারল ? না, এটা আমি বিশ্বাস করি না । ওরা যাই বলুক, আমি জানি কেউ জীবন থেকে স্বেচ্ছায় পালাতে পারে না । লিমাকে ওরাই হত্যা করেছে । হ্যাঁ ,ওরাই ।
আজ দিনের আলো নিভতে নিভতেই ৫ টা নর-হায়েনা লিমাকে টানতে টানতে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা ওই গর্তটায় নিয়ে গেছে । কিচ্ছু বাকী রাখে নি, চিরে চিরে সব খেয়ে ফেলেছে ! আহা ! এ কেমন অদ্ভুত খেলা, কালকে যারা প্রেমিক ছিল আজকেই তারা নর-হায়েনা !
লিমার অশরীরী আত্মার কিছুটা গন্ধ এখনো এই চারদেয়ালের রুমে অস্তিত্বশীল; তাতে আমি স্বার্থ , প্রেম, লালসা তিনটেই খুঁজে পাচ্ছি ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.