নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত মানুষ , মুক্ত সমাজ, মুক্ত পৃথিবী; মুক্তিই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ।

সালমান মাহফুজ

সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা সেই কৈশোর থেকেই । মাঝে মাঝে লিখতেও চেষ্টা করি । যেই সাহিত্য আমাকে ধরেছে, সেই সিলেবাস আমাকে দূরে সরিয়ে দিছে । সুতরাং একাডেমিক কন্ডিশন চরম বাজে । প্রচণ্ড অলস এবং অসামাজিক । নিজের কাজের প্রতি চরম বিশ্বাসহীনতা । মাঝে মাঝে সবকিছুকেই অনর্থক ফাও ফাও মনে হয় । এমনকি বেঁচে থাকাটাও । তবুও বেঁচে আছি । কেন ? জানি না । শুধু জানি, কিছু একটা করতে হবে । কী সেটা ? তাও জানি না । মানবজন্মটাকে এভাবে বৃথা চলতে দেয়া যায় না, এই ভেবেই বোধোহয় আরেকটু বাঁচবার লোভ হয় ।

সালমান মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : তিনজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা এবং একা আমি

২১ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:২৯



এইতো, ওরা এসে পড়েছে । তিন জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা । জিসান এসেছে মিথিলাকে সাথে নিয়ে । জয়ন্ত এসেছে প্রমিকে নিয়ে । সুমন দীপ্তিকে নিয়ে । আর আমি? আমি একা । আমি কাউকে নিয়ে আসে নি বললে ভুল হবে । আমার সাথে কেউ আসে নি । বলেছিলাম একজনকে । যমুনা । যমুনা আসে নি আমার সাথে । কেনই বা আসবে ? আসিফকে ওর টাইম দিতে হয় । হ্যাঁ— যমুনা আসিফের প্রেমিকা, আমার নয় । আমার কোনো প্রেমিকা নেই ।
জিসান ধরে আছে মিথিলার হাত । জয়ন্ত প্রমির হাত । সুমন দীপ্তির । আর আমার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট ।
‘ওহ্‌, সরি দোস্ত, এক্সট্রেমলি সরি । লেট হয়ে গেল খুব !’ ওদের মাঝ থেকে জিসান বিনয়ী স্বরে আমাকে বলে । আমার মুখে কোনো শব্দ নেই । আমি হাসছি । নিঃশব্দে । আধঘণ্টা যাবৎ ওদের অপেক্ষায় আমি বসে আছি । একাকী । গোটা চারেক সিগারেট এরই মধ্যে ফুকে ফুকে নিঃশেষ করে ফেলেছি ।

আজ আমাদের বেড়াতে যাবার প্ল্যান ছিল । নদীপারে । একটা ছোট্ট গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ওই নদী । গ্রামটির নাম আমার জানা নেই, নদীটির নামও না । শুধু নদীটির গল্প শুনেছি । খুব অদ্ভুত নাকি তার তরঙ্গধ্বনি ! কার কাছ থেকে যেন শুনেছি । আমি যে শেষ কবে নদী দেখেছি, মনে পড়ে না ! আজ আবার কতদিন পর নদী দেখতে পাব, ভিতরে ভিতরে প্রবল উচ্ছ্বাস ! আমি যেন এখনই শুনতে পাচ্ছি, অচেনা ছোট্ট গ্রামটির মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া নাম না-জানা নদীটার তরঙ্গধ্বনি ।
বিকেল ৫টায় যাবার কথা । এখন সাড়ে ৫টা । ‘আরে দূর ! এ তেমন দেরী নয় । চল্‌ , চল্‌ । এখন রওনা দিলে সন্ধ্যার আগে আগেই পৌঁছতে পারব ।’ জয়ন্ত সবাইকে তাগাদা দেয় ।
‘দুনিয়ার সব কাজেই তোমার এই তাড়াহুড়ো! উফ্‌, খুব অসহ্য লাগছে ! ট্রান্সপোর্টে বসে একটু চা-টা খেয়ে নিই । তারপর ধীরে-সুস্থে রওনা দিব । তোরা কী বলিস ?’ মিথিলা ও দীপ্তির দিকে চোখ তোলে প্রমি । ওরা তিনজনই আজ খুব সাজুগুজু করেছে । শাড়ি পরেছে । মিথিলা নীল, দীপ্তি লাল, প্রমি কমলা । সবাই কপালে টিপ পরেছে । লাল টিপ । অবিশ্বাস্য সুন্দর লাগছে ওদের । যেন তিন স্বর্গীয় অপ্সরা এইমাত্র মর্ত্যে নেমে এল । নদীপারে গেলে ওদের আরো সুন্দর দেখাবে নিশ্চয়ই । কাকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখাবে ? মিথিলাকে ? প্রমিকে ? নাকি দীপ্তিকে ? নাহ্‌, তিনজনই আমার কাছে সমান সুন্দর । কারণ, ওরা কেউই আমার প্রেমিকা নয় ।
‘তয়লে আর নদী দেখা লাগবে না । নদীপারে বসে বসে ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখতে হবে । এই তোরা চল্‌, আর এক সেকেন্ডও না ।’ মিথিলা কিংবা দীপ্তির উত্তরের অপেক্ষা না করে চেঁছিয়ে উঠে জয়ন্ত ।
‘ও বুঝছি, বুঝছি... আমারে নিবা না, এইতো । ওকে ফাইন । দেখা লাগবে না তোমার ওই বালের নদী !’
‘ওকে দেখো না । এই তোরা চল্‌ ।’ এতক্ষণ ধরে রাখা প্রমির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় জয়ন্ত । প্রমিও আর বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে হন হন করে হাঁটা ধরে । জয়ন্ত ছাড়া আমরা সবাই ক্ষিপ্ত ললনাটির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি ।
‘আচ্ছা, তোরা শুরু করছোস্‌টা কী ? গেলে প্রমিকে নিয়েই যাব, না গেলে কেউ না । জয়ন্ত তুই প্রমিকে থামা ।’ সুমন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ।
‘বাহ্‌ ! প্রমি জয়ন্তের গার্লফ্রেন্ড । থামাবে কি থামাবে না সেটা জয়ন্ত বুঝবে; তোমার এত দরদ উথলে পড়ছে ক্যান শুনি ।’ কালফণীর মত ফোঁসে উঠে দীপ্তি । চোখ দুটি অগ্নিবর্ণ !
‘কী মিন করতে চাচ্ছো তুমি ? ইদানিং তোমার...’ কথাটা শেষ করে না সুমন ।
‘থামলা কেন ? ইদানিং আমার কী ? সত্যি বললেই সবার গা জ্বলে ! প্রমি যে তোমার সাবেক গার্লফ্রে...’ দীপ্তিও শেষ করতে পারে না । তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে সুমন দীপ্তির হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয় । নিঃশব্দে হাঁটা ধরে । সেই পথে । যে পথ দিয়ে প্রমি একটু আগে চলে গেল । সুমনের সাথে জয়ন্তও হাঁটা ধরে । একই পথে ।
দীপ্তিও বাকী থাকে না । আমাদের বাকী তিনজনের দিকে এক পলক দৃষ্টি ফেলে সেও চলে যায় ।

‘সালমান, কী বুঝলি দোস্ত ?’ অভিমানী প্রেমিক-প্রেমিকাদের চলে যাবার দৃশ্য অদৃশ্য হওয়ার পরে আমার দিকে চোখ ফিরায় জিসান ।
‘লীলা মাম্মা, জগতের সবচেয়ে মধুর আবার কখনো কখনো সবচেয়ে সর্বনাশী লীলা । এই লীলার নাম পিরীতি !’ আরেকটা সিগারেট জ্বালিয়ে আমি জিসান আর মিথিলা জুটির দিকে তাকিয়ে ঈষৎ হাসলাম । নাহ্‌, ওদের হাতের বাঁধন এখনো ছুটে নি ।
‘তবে কি আমাদের আজকের প্ল্যানটা ভেস্তে গেল ?’ মিথিলার কণ্ঠে হতাশা ।
‘না, না— ভেস্তে যাবে কেন, আমরা তো এখনো আছি । আমরা যাব ।’ আমি জোর দিয়ে বলি ।
‘কীভাবে ? জায়গাটা তুই চিনিস ? আমি কিন্তু চিনি না, মিথিলাও না । অবশ্য জয়ন্তটা চিনত । অযথা ফালতু একটা বিষয় নিয়া ওদের মধ্যে কী জঘন্য ঝগড়া হয়ে গেল !’ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে জিসান ।
‘বাচ্ছা পোলাপাইনের মত কথা বলিস ক্যান ? জায়গাটা যদি এই পৃথিবী নামক গ্রহের মানচিত্রের বাইরে না হয়, তবে অবশ্যই চিনব । আর ওই বলদগুলার মধ্যে একটু আগে যেটা ঘটে গেল, সেটা নিয়ে আর এক মিনিটও টাইম নষ্ট না করে চল্‌ যাত্রা শুরু করা যাক ।’ আমি ওদের তাগাদা দিই, আর এমন একটা ভাব ধরি যেন গোটা দুনিয়ায় আমার চেনা ।
‘কোথায় ? জয়ন্তরে একটা কল দিয়া ঠিকানাটা কালেক্ট করেন দাদা, আন্দাজে কোথায় গিয়ে উঠব ?’ আমার উপর আস্থা রাখতে পারছে না মিথিলা ।
‘ওকে, দিচ্ছি, দিচ্ছি । জিসান এটা নে, অল্প একটু আছে । দু-তিনটা টান দিয়া নিজেকে একটু চাঙ্গা করে নে ।’ আমি জিসানের দিকে টুকরো জ্বলন্ত সিগারেটটা বাড়িয়ে দিলাম ।
‘ মানে কী জিসান ! এই বিচ্ছিরি জিনিস তুমি খাও ! ঠোঁটের রঙ দেখে আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম । কিন্তু তুমি অস্বীকার করেছিলে । ছি জিসান !’ মিথিলার এই কথা শুনে জিসানের চেয়ে আমিই অপমানিত হলাম বেশি । কেননা সিগারেটটা এখনো আমার হাতে । আমি অবশ্য এসব অপমান গায়ে মাখি না । মিথিলা আমার কে ? ও জিসানের প্রেমিকা । জিসান মাখলে মাখুক ।
জিসান গার্লফ্রেন্ডের কাছ থেকে সিগারেটের ব্যাপারটা আড়াল করে চলে, আমি সত্যিই জানতাম না ।
‘ আমি আসলে দুঃখিত ! জিসান ইদানিং সিগারেট ছেড়ে দিছে, আমি জানি না । তুমি ওকে ভুল বোঝো না । ও আসলেই খায় না এখন ।’ আমি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মিথিলার ক্রুদ্ধ সেন্টিমেন্ট কিছুটা শান্ত করার চেষ্টা করলাম ।
‘অফ যা সালমান । সিগারেটটা এদিকে দে ।’ মিথিলার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে, সেই হাতে আমার কাছ থেকে সিগারেট কেড়ে নেয় জিসান । তারপর কয়েকটা সুখটান !
‘ এই ঠোঁটে এই মুহূর্তে লেগে আছে নিকোটিন পোড়া দুর্গন্ধ ! তুমি কি পারবে এই ঠোঁটে এক্ষুনি প্রকাশ্যে চুমু খেতে ? যদি পারো, তবে বুঝব ভালোবাসা সত্যি ।’ জিসান মিথিলার ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে যায় ।
‘খবরদার, খবরদার ! বদমাশ ! লম্পট !’ জিসানের গালে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দেয় মিথিলা । জিসানও চুপ মেরে সয়ে যাওয়ার পাবলিক নয় । ওটার চেয়েও তিনগুন জোরে পাল্টা চড় মারে মিথিলার গালে । চড়ের তীব্রতায় মিথিলা বেচারি মাটিতেই বসে পড়ে ! না, জিসান মাটি থেকে মিথিলাকে টেনে তোলে না । বরং আমার থেকে আরেকটা সিগারেট নিয়ে টানতে টানতে চলে যায় ।
প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যকার এমন তীব্র পেশিশক্তির লড়াই আমি এর আগে দেখে নি । যাই হোক, অবশেষে এখন আমি একাই ওই নদীপারের যাত্রী । যাত্রা তবে শুরু করা যাক ।

ফেসবুক লিংক

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:০২

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: সম্পর্কের মধ্যকার টানাপোড়ন আর অস্থিরতা প্রকাশ করেছেন খুব সম্ভবত। গল্পের শুরুর দিকে একটা টান ছিল। তবে মাঝ পথে এসে পাঠক হিসেবে কিছুটা আগ্রহ হারিয়েছি। লাস্টে এসে গল্পটার মধ্যে এক ধরনের ছেলে মানুষী একাকীত্ব খুঁজে পেয়েছি। যাইহোক, এটা নিতান্তই পাঠক হিসেবে আমার মতামত। আশা করি সামনে আপনার কাছ থেকে আরো ভালো গল্প পাবো।

২২ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৮

সালমান মাহফুজ বলেছেন: মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ ।

২| ২১ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:২৫

সোজা কথা বলেছেন: ভালোই লাগলো। ঝগড়াটা খুব বেশি বেশি ছিল, প্রথমদিকের ঝগড়াগুলো বেশ অগোছালো ছিল মনে হচ্ছে।
যাইহোক, ভালই লেগেছে।

২২ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৯

সালমান মাহফুজ বলেছেন: মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.