নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত মানুষ , মুক্ত সমাজ, মুক্ত পৃথিবী; মুক্তিই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ।

সালমান মাহফুজ

সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা সেই কৈশোর থেকেই । মাঝে মাঝে লিখতেও চেষ্টা করি । যেই সাহিত্য আমাকে ধরেছে, সেই সিলেবাস আমাকে দূরে সরিয়ে দিছে । সুতরাং একাডেমিক কন্ডিশন চরম বাজে । প্রচণ্ড অলস এবং অসামাজিক । নিজের কাজের প্রতি চরম বিশ্বাসহীনতা । মাঝে মাঝে সবকিছুকেই অনর্থক ফাও ফাও মনে হয় । এমনকি বেঁচে থাকাটাও । তবুও বেঁচে আছি । কেন ? জানি না । শুধু জানি, কিছু একটা করতে হবে । কী সেটা ? তাও জানি না । মানবজন্মটাকে এভাবে বৃথা চলতে দেয়া যায় না, এই ভেবেই বোধোহয় আরেকটু বাঁচবার লোভ হয় ।

সালমান মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাহিত্যপাঠ : হুমায়ূন আহমেদের \'নন্দিত নরকে\'

২৬ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৯



বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি অভ্যুদয়ের পরবর্তী সময়ে রচিত বাংলা কথাসাহিত্যের প্রসঙ্গ আসলে সর্বাগ্রে যে নামটি উচ্চারিত হয় তিনি হুমায়ূন আহমেদ । জীবনে যে লোকটির সাহিত্যের কোনোরূপ সংস্পর্শই আসার কথাই ছিল না তাকেও গল্প-উপন্যাস পড়িয়ে ছাড়ছেন হুমায়ূন । পাঠকমহলে এখনো এই সাহিত্যস্রষ্টার যে জনপ্রিয়তা তা লেখক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর প্রতিটা সত্তার কাছে কাছে যেমন বিস্ময়ের একই সঙ্গে ঈর্ষার কারণ ! কলম হাতে হুমায়ূন আহমেদ যেমন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ও ভালোবাসা পেয়েছেন, তেমনি সাহিত্যের নামে অপসাহিত্য-কুসাহিত্য রচনা, বইয়ের মলাটের সস্তা বিলাসমগ্রী তৈরী, স্রেফ বাজারু- এই অভিযোগগুলিও শুনতে হয়েছে তাকে । হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা যেমন সত্যি, তেমনি তাঁর সাহিত্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোও পুরোপুরি মিথ্যে নয় । হুমায়ূনের যে বিপুল সাহিত্য বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার বেশিরভাগেরই সাহিত্যমূল্য প্রশ্নবিদ্ধ ! তবুও ঢালাওভাবে এই সাহিত্যস্রষ্টাকে বড় লেখকের তালিকা থেকে খারিজ করে দেয়া যে সহজ নয়, তারই উপযুক্ত দৃষ্টান্ত 'নন্দিত নরকে' । হুমায়ূন আহমেদের প্রথম প্রকাশিত এই উপন্যাসটি শুধু পাঠকপ্রিয়তাই পায় নি, সাহিত্যের মান নির্ধারক কোনো যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়ে থাকলে সেখানে মাপামাপি শেষে নির্দ্বিধায় যে কোনো স্তরের পাঠকই এর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব অকপটে স্বীকার করার কথা । প্রখ্যাত সমালোচক ও স্কলার ড. আহমেদ শরীফও হুমায়ূনের এই উপন্যাসটির সঠিক মূল্যায়ন করতে ভুল করেন নি । ভূমিকায় শরীফ স্যারের সরল স্বীকারোক্তি-
"পড়ে আমি অভিভূত হলাম । গল্পে সবিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করেছি একজন সুক্ষ্মদর্শী শিল্পীর, একজন কুশলী স্রষ্টার পাকাহাত ।"
নন্দিত নরকে-- একবাক্যে সহজ সরল ভাষাভঙ্গিমায় রচিত এক সাদামাটা আখ্যান । তবুও যেন জীবনশিল্পীর নির্মাণের কারুকার্যতায় উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে এক অসাধারণ সৃষ্টিকর্ম ।
হুমায়ূনের অধিকাংশ উপন্যাসের ন্যায় এখানেও দেখানো হয়েছে চলমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় ক্রমেই দুমড়ে মুষড়ে পড়া মধ্যবিত্ত মানুষের ঝুলে থাকা বহির্মুখোশ এবং অন্তর্জগতের নানামাত্রিক সংকট । লেখকের কণ্ঠেই আমরা এখানে শুনছি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের জটিল জীবনপ্রবাহের গল্প । রাবেয়া, রুনু, মাস্টার চাচা, মণ্টু- এরা সবাই-ই এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও আমাদের চারপাশে ঘুরাফেরা করছে । এই প্রাসঙ্গিকতা আছে বলেই পাঠক আজও কোলের উপর নিয়ে কিংবা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বইখানা পড়ছেন , মুগ্ধ হচ্ছেন, নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন ।
সারা উপন্যাসজুড়ে কথকের উপস্থিতি বিরাজ করলেও মূল চরিত্র কিন্তু তার বড় বোন রাবেয়াই । কথক এখানে মূলত একজন পর্যবেক্ষকের ভূমিকাতেই অবতীর্ণ ও বিকশিত হয়েছেন । রাবেয়া চরিত্রটির দিকে মূল দৃষ্টি নিবদ্ধ করেই পাঠক এই গল্পের রস অনুসন্ধানে সামনে এগিয়ে যান ।

উপন্যাসটি পাঠ করার প্রাথমিক দিক আমরা লক্ষ করি, একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের টানপোড়নের সহজাত চিত্র । যে পরিবারের সমস্ত ভয়, উদ্বিগ্নতার মূলে ঘরের বড় মেয়ে রাবেয়া । রাবেয়া মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ ও হীতাহিত জ্ঞানশূন্য । সোজা অর্থে বললে-- 'পাগলি' । এই পাগলি মেয়েটি সমস্ত পাড়া ঘুরে ঘুরে বেড়ায় এবং সমস্ত দিন তার মনে যত গল্প জমা হয় সব শেয়ার তার ছোট দুই ভাই-বোনের সঙ্গে । কিন্তু তার দুঃশ্চিন্তাতেই যে পরিবারের সবার জীবনটা একদম নীরস নিরানন্দ হয়ে আছে, সেটা বুঝার সামর্থ্য কি আর আছে রাবেয়ার ! রাবেয়ার বয়স যত বাড়ছে মায়ের চোখের নীচে দিনে দিনে তত কালি জমছে, বাবার মাথার ভিতরের দুঃসহ যন্ত্রণাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ! তাই তো বাবা এইরকম কথা উচ্চারণ করতে পারেন-
"বিষ খাইয়ে মেরে ফেলো মেয়েকে ।"
কিন্তু রাবেয়ার একমাত্র ভাইটির কণ্ঠে আশাবাদী সুর । সদ্য পড়াশোনাটা শেষ করে ভাইটি তার জীবনযুদ্ধের সবচে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি ! তবুও সে স্বপ্ন দেখে-
"রাবেয়া যদি কোনোদিন ভালো হয়ে ওঠে তবে তাকে খুব একজন হৃদয়বান ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিব ।"
ওর স্বপ্নটা মাঝে মাঝেই এসে ধরা দেয় । পাত্র আসে রাবেয়াকে দেখতে । রাবেয়া কনে সেজে করে পাত্রের সামনে আসে । সব ঠিক হয় , এমনকি বিয়ের দিন-তারিখ ঠিকের ব্যাপারেও আলাপ উঠে, কিন্তু পরক্ষণেই সব যেন থমকে, স্বপ্নটাও ধরা দিয়েই হাত ফসকে পড়ে যায়; পাড়ার লোক খোঁচ লাগায়- রাবেয়ার মাথা খারাপ !
মাথা খারাপ তো কী হয়েছে ! আরো আট-দশটা মেয়ের মত রাবেয়ারও যৌবন আছে, সেও স্বপ্নে বিভোর হয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে । গায়ে হলুদ, হাতে মেহদি, পায়ে আলতা পরে বউ সেজে বিয়ের সিঁড়িতে বসবে সে ! কিন্তু কোথাও যেন একটা বিষণ্ণ শূন্যতার সুর বেজে উঠে- কে বিয়ে করবে এই পাগলী মেয়েটিকে !

রাবেয়াকে লোকে বিশ্রী বিশ্রী কথা শুনায়, যা জানতে পেরে কিশোরী ছোটবোন রুনুরও হজম করতে কষ্ট হয় ! তবুও ওদের দিন থেমে থাকে না, সময়ের নিয়মে জীবনও একটু একটু করে এগিয়ে চলে; এরই মধ্যে একদিন ওরা সবাই ভয়ে শিউরে উঠে । রাবেয়াকে খুঁজে পাচ্ছে না ! এদিক ওদিক সবাই হন্য হয়ে খোঁজাখুঁজি করে, কিন্তু রাবেয়ার কোনো হদিস নেই ! দিনের আলো নিভে যায় । ঘুটঘুটে অন্ধকার বইয়ে দিয়ে নেমে আসে সন্ধ্যা । হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত রাবেয়া ফিরে আসে, মাস্টার চাচার সঙ্গে ।
মাস্টার চাচা এই উপন্যাসের সবচাইতে রহস্যময় চরিত্র । রাবেয়াদের গৃহশিক্ষক হিসাবেই তিনি পার করে দিচ্ছেন গোটা জীবন । পরিবারটির সঙ্গে তার সম্পর্ক নিবিড় । বাবার বন্ধু হিসাবেই তিনি এ পরিবারে এসে পা দিয়েছেন সেই কাচা বয়সে । বিয়ে-টিয়ের নাম কখনো মুখে তোলেন নি । পরিবারের সবার প্রিয় এবং বিশ্বস্ত এই মাস্টার চাচা । তিনি অনেক পড়েন, আর রাত হলে আকাশে তাকিয়ে থাকেন । আকাশের সব তারাকেই তার চেনা ।

অবশেষে পরিবারের সবার মুখে একদিন নেমে আসে নির্মমতম আঁধার ! রাবেয়া গর্ভবতী ! লজ্জায় অপমানে পরিবারটি তখনই যেন কবরে ঢুকে গেছে ! তবুও ওরা কাউকে কিছু জানতে দেয় না । রাবেয়াকেও ঘরে আটকে রাখে । তীব্র আর্তনাদে গভীর রাতে রাবেয়া জাগিয়ে তোলে সবাইকে । ওর ঘরে প্রবেশ করতেই সবার গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যায় ! রক্ত ! রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে, গর্ভপাতের যন্ত্রণায় মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে রাবেয়া । সেই রাতে রাবেয়াকে বাঁচানোর জন্য সবার আগে যিনি সাইকেলটা নিয়ে ডাক্তার আনতে বেরিয়ে পড়েন, তিনি আর কেউ নন-- মাস্টার চাচা !

কিন্তু না, রাবেয়া বাঁচে না ! ভোরের আলো যখন জানলা দিয়ে ঘরে উঁকি মারে, তখন রাবেয়ার মৃত চোখে কোনো স্পন্দন নেই ! মাস্টার চাচা ডাক্তার নিয়ে আসতেই ঘটে উপন্যাসের সবচাইতে লোমহর্ষক ঘটনা । এক কোপেই মাস্টার চাচাকে খুন করে ফেলে মণ্টু ।
সারা উপন্যাসে মণ্টু নীরব । তবুও শেষ পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের কলমে সে-ই যেন সবচে উজ্জ্বল ও জীবন্ত । মাস্টার চাচার দ্বারা রাবেয়ার এই সর্বনাশের বিষয়টা শুধু মণ্টুই জানত ! আর তারই শোধ সে কড়ায় গণ্ডায় তুলল !

দুই দুইটি রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে আছে শীতল মাটিতে, একজন খুনিকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে; তবুও যেন পাঠকের চোখ এই নিষ্ঠুর বীভৎসতায় বন্ধ হয়ে আসে না । পড়া শেষেও পাঠক বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকেন 'নন্দিত নরকে' শব্দ দুটি খচিত রক্তিম মলাটের দিকে ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:১১

জগতারন বলেছেন:
আমি এ পর্যন্ত বিভিন্ন লেখকের কমপক্ষে ৫০০ খানা উপন্যাস পরেছি, এর মধযে হুমায়ুন আহম্মদের কোন বই নাই। আমি পড়ি নাই কারন তার লিখা আমার ভালোলাগে নাই।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৫৮

শফিক2003 বলেছেন: জগতারন
Bro only 500 is very little to judge humyun ahmed .My suggestion is you never count how many you have read

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.