নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত মানুষ , মুক্ত সমাজ, মুক্ত পৃথিবী; মুক্তিই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ।

সালমান মাহফুজ

সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা সেই কৈশোর থেকেই । মাঝে মাঝে লিখতেও চেষ্টা করি । যেই সাহিত্য আমাকে ধরেছে, সেই সিলেবাস আমাকে দূরে সরিয়ে দিছে । সুতরাং একাডেমিক কন্ডিশন চরম বাজে । প্রচণ্ড অলস এবং অসামাজিক । নিজের কাজের প্রতি চরম বিশ্বাসহীনতা । মাঝে মাঝে সবকিছুকেই অনর্থক ফাও ফাও মনে হয় । এমনকি বেঁচে থাকাটাও । তবুও বেঁচে আছি । কেন ? জানি না । শুধু জানি, কিছু একটা করতে হবে । কী সেটা ? তাও জানি না । মানবজন্মটাকে এভাবে বৃথা চলতে দেয়া যায় না, এই ভেবেই বোধোহয় আরেকটু বাঁচবার লোভ হয় ।

সালমান মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ সেই রাতে

০৭ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:২৩

সেই রাতটা ছিল দুঃস্বপ্নের মত !
মত টত বাদ— স্রেফ দুঃস্বপ্ন ! ভয়ানক দুঃস্বপ্নের সেই রাত । আজো সেই রাতের কথা মনে পড়লে শিউরে উঠি । মুহূর্তেই একে একে দাঁড়িয়ে যায় শরীরের সবগুলো লোম !
কিন্তু আলীকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন । সে কিছুই স্বীকার করবে না । ফিক করে একটা হাসি দিয়ে বলবে, গুজব । বানোয়াট । সমাজে আজ আমার উজ্জ্বল ফেইস নষ্ট করবার চক্রান্ত । ওসব ফালতু কথায় আপনারা কান দিয়েন না পিলিজ । কোথাকার কোন এক বেশ্যা-মাগী- খানকির লগে আমার নাম জড়ায়া নানারকমের উদ্ভট কল্প-কাহিনী বানাচ্ছে ! ওদের খায়া-দায়া আর কোনো কাম নাই ।
সেই রাতের পর, মিনিমাম আট-নয় বছর তো হবেই, হঠাৎ আলীর আবির্ভাব ।
তারপরেই এলাকাজুড়ে শুধু একটাই জিকির । আলী, আলী... আলী এই, আলী সেই... সেইরাতে আলী অমুকের লগে এইটা করছে, এলাকার সবাই মিলা আলীরে...

ওর টয়োটা কোম্পানির গাড়িটা হর্ন মেরে আমার পাশ ঘেষে সাঁই সাঁই করে চলে যায় !
বুঝিয়ে দেয় তফাতটা । আজকের দিনের আলী আর সেই রাতের আলী !
আলী ব্যাপক উন্নতি করেছে । শুনতেছি আসন্ন ইউপি ইলেকশনে চ্যায়ারম্যান পদে নাকি দাঁড়ানোর জোর সম্ভাবনা ।
কিন্তু সমস্ত সম্ভবনার শেকড়ে বার বার কুঠারাঘাত হানছে আট-নয় বছর আগের কালো স্মৃতিটা ! স্মৃতিটাকে— সেই রাতটাকে— সেই ভয়ানক দুঃস্বপ্নের কালো রাতটাকে— আলী স্বীকার তো করছেই না, বরং লোকজনের মাথা থেকে উধাও করে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে ।
আরে বুঝো না মিয়ারা ... হিংসা, হিংসা । আমার উন্নতি যাগো সহ্য হয় না, এগুলা তাগো রটনা । শুধু ঠোঁট দুইটা থাকলেই তো হয় ! ব্যাস, এবার বানাও গপ্পো । পাবলিক সব তো বলদ যে, আপনাগো গাঁজাখুরি গপ্পো হুইনা এক ঢোকে গিলা ফেলব !
জলজ্যান্ত সেই সত্যকে একদম ডাহা অস্বীকার ! কিন্তু এজন্য আমি আলীকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছি না । কিংবা সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে এসব স্বীকার করাতে বাধ্যও করছি না ।
বরং আলীর জীবনের সঙ্গে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে থাকা সেই নিখাদ সত্যটা শেষ পর্যন্ত যদি সে দামাচাপা দিয়েও ফেলে । তাতেও আমার ক্ষোভ নেই !
আলী লম্পট । আলী বাটপার । আলী অকৃতজ্ঞ । আলী মিথ্যাবাদী । আলী আমার বন্ধু । আলীর সেই রাতের আকামে আমারও হাত আছে ।
লোকে বলে এসব কথা । আমি প্রতিবাদ করি না । মেনে নিই । নিঃশব্দে মাথা নেড়ে নেড়ে সত্যগুলিকে হজম করতে আমার মোটেই কষ্ট হয় না । কিন্তু লোকে একটা কথা কখনো বলে না — আলী প্রেমিক ! আমি বলি । জোর দিয়ে বলি । লোকে নাক সিটকায়, গলা দিয়ে খ্যাঁক খ্যাঁক কাঁশে ।
আলীর প্রেমিক মনের পরিচয়টা আমি পেয়েছি সেই রাতে । ওই যে— ভয়ানক দুঃস্বপ্নের সেই রাত ।

ঘন অন্ধকারে থই থই করছে চারপাশ । তাকালে চোখ যে সাথে আছে— টের পাওয়া যায় না । জ্যোৎস্না-ট্যোৎস্না দূরে থাক— এক ফোটা আলোর চিহ্নও পর্যন্ত কোথাও নেই । এমনকি, শোঁ শোঁ হালকা হাওয়ার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দও কানে লাগছে না ।
এমন আলোহীন শব্দহীন মাঝরাতে ছাদের রেলিং ধরে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আগামি মাসের রুম-ভাড়ার হিসাব কষছিলাম ।
দুই রুম। থাকি চারজন । একরুমে রুমি আর রাসেল । অন্য রুমে আমি আর আলী । রুমি আর রাসেল আমাদেরই ক্লাসমেট । আমরা সবাই অনার্স ফাইনাল দিয়ে চাকরির জন্য পাঁচ-সাতটা গাইড মুখস্ত করার মহান দায়িত্ব পালনে উঠেপড়ে লেগেছি ।
কিন্তু এর বাইরে শুধু আমার উপর আরেকটা বাড়তি দায়িত্ব— রুম-ভাড়ার টাকাগুলো ম্যানেজ করে বাড়িওয়ালার হাতে মাস শেষে তুলে দেয়া ।
হঠাৎ হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দের সঙ্গে একটা গোলামালের আওয়াজও শুনতে পাই । এদিক ওদিক থেকে আলোর ঝলক ধেয়ে আসছে— আমাদের বাসার দিকে । অনেকগুলো চেনা অচেনা কণ্ঠস্বরের চিৎকার— বেড়েই চলেছে । ছাদ থেকে ঝট করে নীচে নেমে আসতেই—
‘ধর্‌ শালীরে ! লাইত্থাইয়া বাইর কর্‌ ! রশি আন্‌ ! ধরছি আইজ ! খানকিটারে বাইন্ধা রাখ্‌ সারা রাইত !’
বিশ তিরিশজন লোক জড়ো হয়ে আছে একজনকে ঘিরে । যেন কতগুলো ক্ষুধার্ত জন্তু একটা বড়সড় শিকার কোত্থেকে ধরে নিয়ে এসে টানা-হেঁচড়া শুরু করেছে ! তার উপর ছড়-থাপ্পড়-লাথি-ঘুষি তো অবিরাম বর্ষিত হচ্ছেই ।
একেই কি বলে গণধোলাই ?
কিন্তু ওরা কাকে ধরে এমন গণধোলাই দিচ্ছে ?
তমা ?

হ্যাঁ, তমাই । আমাদের সঙ্গে একই ফ্লোরে থাকে । একটা চারবছরের বাচ্ছা নিয়ে গত মাসেই উঠল ।
দু’জন দুদিক থেকে তমার চুল মুঠিতে ধরে আছে ! একজন হাত ধরে টানা হিঁচড়া করছে । দু-তিনজন উত্তম-মধ্যম কশাচ্ছে । আর বাকীসব মজা লুটছে ।
‘এই থাম তোরা ! এইবার তোরা থাম ! মাগীটারে এই মুহূর্তে এলাকাছাড়া করা ফরয হয়ে গেছে ! এই পবিত্র এলাকায় এইসব নোংরামির ঠাঁই নাই । এইসব আবর্জনা সাফ করনের লাইগা আমাগো সবাইরেই আগাই আইতে অইব !’
বেশ জোরালো স্বরে কথাগুলো বলে আতিক এদিক ওদিক তাকায় । বুঝলাম, এই শিকার ধরার মূল নায়ক আতিক । আমাদের বাড়িওয়ালার ভাগিনা আতিক ।
বিষয়টা পুরোপুরি বুঝে নিতে আমার কষ্ট হয় না ।
সঙ্গে সঙ্গে আমার আলীর কথা স্মরণে আসে ।
কিন্তু আলী কোথায় ?
দৌঁড়ে রুমের দিকে গেলাম । রুমে তালা ঝুলছে !
পাশের রুমে রুমি আর রাসেলকে নক দিলাম ।
নেই । ওখানে আলী নেই ।
বাথরুম চেক করলাম । সেখানেও আলী নেই ।
আলী কি পালিয়েছে ? নাকি বাইরে ঝোপঝাড়ে কোথাও লুকিয়ে নাটক দেখছে !
খুঁজাখুঁজি শেষে আবার ভিড়ে ঢুকলাম । দর্শক এরই মধ্যে দ্বিগুন বেড়ে গেছে !
এবার তমার চুল আতিকের হাতের মুঠোয় । আতিক এক হাতে তমার চুলের গোছা ধরে, অন্যহাতের তর্জনী উঁচিয়ে উৎসুক জনতার উদ্দেশ্যে বলে, ‘ এইখানে এলাকার কচিকাচা-জোয়ান-বুড়া-ময়-মুরুব্বি সবাই আছেন, আপনারাই কন এই বেশ্যা মাগীটারে কী করোন উচিত !’
‘ধোর্‌রা, ধোর্‌রা... গণধর্ষণ চালা... মুখে চুন-কালি মাখাইয়া রশি দিয়ে গাছের লগে সারা রাইত বাইন্ধা রাখ্‌...নিয়া চল্‌, চ্যায়ারম্যানের দরবারে নিয়া চল্‌...’ জনতার মাঝ থেকে যতগুলো প্রতিক্রিয়া উচ্চারিত হচ্ছে— শেষেরটা বাদে আর সবগুলোই লোমহর্ষক ! হৃৎপিণ্ডে থরথর কাঁপুনি ধরিয়ে দেবার মত ।

কিন্তু এই মুহূর্তে তমাকে বাঁচাতে পারে শুধু একজন— আলী । কিন্তু আলীকে যে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না !
আমি ভালো করেই জানি, আতিকের ক্ষোভ যতটা না তমার উপরে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি আলীর উপরে । আলী এসে ধরা দিলেই আতিক তমাকে ছেড়ে দিবে ।
যে কেলাঙ্কারির দায়ে তমার আজ এই করুণ দুর্দশা, সেই কেলাঙ্কারির সূত্রপাত বহু আগেই । তমা যেদিন চার বছরের বাচ্চাটাকে হাতে করে এই বাসায় প্রথম আসে, সেদিনই আলীর দৃষ্টি পড়ে তমার উপর !
দুবাইপ্রবাসী বরের যুবতি বধূ তমা । বেশ মোটাসোটা হলেও দেখতে এক্কেবারি মন্দ না । উচ্চতা ভালো, লম্বা চুলগুলো পৃষ্ঠ পার হয়ে নিতম্বেরও নীচে এসে পড়ে, গায়ের রঙটা শ্যামল, শ্যামল হলেও উজ্জ্বল, পুরুষদৃষ্টি পড়লে সহজে সরে আসার মত না, দৃষ্টি দিয়ে আলীও সরে আসতে পারে নি, শ্যামল রঙের আকর্ষণে হোক, কিংবা নিষিদ্ধের প্রতি আকর্ষণে হোক— আলী আটকা পড়ে গেল !
কিছুদিন যেতে না যেতেই আলী বুঝতে পারে সে একা নয়, এরই মধ্যে আরো একজন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে তার— বাড়িওয়ালার ভাগিনা আতিক ।
আলী এবং আতীক— দুজনেই সমান চেষ্টা চালাচ্ছিল ! দুজনরই তমার রুমে নিয়মিত যাতায়াত, তবে পাশাপাশি রুম হওয়াতে অ্যাডভেন্টেজটা আলীই বেশি পেত ! এ নিয়েই বাঁধে দ্বন্দ্ব ।
আতিক এসে ইদানিং আলীর নামে আপত্তিকর সব কথা শুনিয়ে আমাদেরকে খুব দ্রুত বাসা ছাড়ার তাগিদ দিতে থাকে । কিন্তু আলী অনড় । ওর সঙ্গে একদিন টান তিনঘণ্টা তর্কাতর্কি হল ! শেষে আলী বুক টান করে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিল— ‘বন্ধু হয়ে বন্ধুর জন্য এইটুকু স্যাক্রিফাইস করতে পারবি না ! তোরা জানিস্‌ কী ! আসল সত্যটা কি জানিস ? তমাকে গত কয়েকদিন ধরেই কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে আতিক । কিন্তু তমা সাইড দিচ্ছে না ! তাই শালার ব্যাটা আতিক্কা কুমতলবটা হাসিল করার জন্য এসব চক্রান্তের জাল পেতেছে ! শেষ তোরাও বুঝলি না আমারে...লাগবে না তোদের, আমি একাই থাকব ! পালা, ওই জোচ্চোর লম্পট আতিক্কার ভয়ে তোরা সব গাট্টিগোট্টা বাইন্ধা পালা । আমি একাই...’
এরপর আর কখনো আমি আলীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো আলাপে যাই নি ।
বরং আলীর ভালোবাসার সাহসিকতা এবং দৃঢ়তা আমাকে সেদিন মুগ্ধ করেছিল !
কিন্তু আজ... কোথায় সেই নির্ভীক প্রেমিক ? তার ভালোবাসার মানুষটার উপর একপাল নেকড়ের থাবা !
ভালোবাসার দৃঢ়তায় বুক টান করে দাঁড়ানোর বদলে আজ মেরুদণ্ডহীনের মত এভাবে আপনা জান নিয়ে পালিয়ে গেলি আলী ? ছিঃ আলী, ধিক্‌ তোকে, ধিক্‌ !
না, আলী পালায় নি । জনতার ভিড় ঠেলে আলী আসছে ! যেন কুরুক্ষেত্রে ধ্রুপদীর বস্ত্রহরণের প্রতিশোধ তুলতে পঞ্চনায়ক হয়ে একাই এগিয়ে আসছে আলী !
‘ছাড়্‌’— বলে আতিকের ঠিক নাক বরাবর সজোরে একটা ঘুষি বসিয়ে দেয় আলী । নাক ফেটে রক্ত ছিটকে পড়ে !
জনতা হতবাক ! কিন্তু পরমুহূর্তেই হই হই করে শুরু হয় গণধোলাই, তুমুল গণধোলাই !
ওদের দুজনকে জনতার আক্রোশ থেকে বাঁচাতে গিয়ে আমিও বেশ ভালো ধোলাই খেয়েছিলাম সেই রাতে । তমা প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেছিল ! আর আলীর সমস্ত শরীরে পাশবিক সব আঘাতের চিহ্ন !
কিন্তু তবুও আলী থমকে দাঁড়ায় নি— একহাতে তমা, অন্যহাতে চার বছরের বাচ্ছাটা—থই থই অন্ধকারে সাঁতারাতে সাঁতরাতে আলী এগিয়ে গেল । সূর্যোদয়ের আগেই তাদেরকে অনেক দূরে চলে যেতে হবে !
সমস্ত কোলাহলকে উধাও করে দিয়ে ওরা যখন অন্ধকারের সঙ্গে পুরোপুরি মিশে গেল, তখন আমি বুক ভরে বাতাস টেনে একটা নিঃশ্বাস ফেললাম, প্রশান্তির নিঃশ্বাস।

©️ সালমান মাহফুজ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৫০

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: বাজে প্লট...দুঃখিত

০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৫৪

সালমান মাহফুজ বলেছেন: দুঃখিত বলার কিছু নেই । আপনার যা মনে হয়েছে তা নির্দ্বিধায় বলতে পারেন । পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.