নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত মানুষ , মুক্ত সমাজ, মুক্ত পৃথিবী; মুক্তিই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ।

সালমান মাহফুজ

সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা সেই কৈশোর থেকেই । মাঝে মাঝে লিখতেও চেষ্টা করি । যেই সাহিত্য আমাকে ধরেছে, সেই সিলেবাস আমাকে দূরে সরিয়ে দিছে । সুতরাং একাডেমিক কন্ডিশন চরম বাজে । প্রচণ্ড অলস এবং অসামাজিক । নিজের কাজের প্রতি চরম বিশ্বাসহীনতা । মাঝে মাঝে সবকিছুকেই অনর্থক ফাও ফাও মনে হয় । এমনকি বেঁচে থাকাটাও । তবুও বেঁচে আছি । কেন ? জানি না । শুধু জানি, কিছু একটা করতে হবে । কী সেটা ? তাও জানি না । মানবজন্মটাকে এভাবে বৃথা চলতে দেয়া যায় না, এই ভেবেই বোধোহয় আরেকটু বাঁচবার লোভ হয় ।

সালমান মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

উচ্ছেদ

০২ রা মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:৫১

(১)
দুনিয়ার যেখানেই রাত পোহাক, ঘুমের ঘোরে দু'চোখ বুজে আসলে রশিদ ভাবতে চায় এটা তাঁর গাঁয়ের চৌচালা টিনের বাড়ি ।
কান পেতে সে ভাবতে চায়—  বিপুল অন্ধকারে আচ্ছন্ন কোনো এক অচেনা রহস্যময় রাজ্য থেকে ভেসে আসছে ঝিঁ ঝিঁ পোকার কলরব । আর সেই কলরব শুনতে শুনতে সে তলিয়ে যাচ্ছে তার চেয়েও অচেনা রহস্যময় গভীর ঘুমের তলদেশে । যেখানে ঝিঁ ঝিঁ পোকার সমস্ত কলরব উধাও করিয়ে দিয়ে ঝনঝনিয়ে বৃষ্টি নামে । তার চৌচালা ঘরের টিনের চালে অমন ঝন ঝন বৃষ্টির কলতানে মনটাকে কি আর বেধে রাখা যায় ! মন উড়ে চলে । জীবনের ক্লান্তি অবসাদ সবকিছুকে ঝেড়ে ফেলে হাওয়ার তরঙ্গে উড়তে উড়তে মনটা যখন ঝিমিয়ে পড়ে, তখন তাকে কোনো মোহময়ী স্বপ্নের অতলে ডুবিয়ে দেয়াই উত্তম !

কিন্তু রশিদ ডুবে যাওয়ার বদলে কেবল ভাসছে । হাত পা ছেড়ে দিয়ে চিৎ হয়ে আবরণহীন পানির তরঙ্গে । ভাসছে রশিদ । পানির তরঙ্গ তাকে যেদিকে টানছে সেদিকেই ভেসে যাচ্ছে । ভাসতে ভাসতে কোথায় গিয়ে থামবে সে ? জানে না রশিদ । শুধু জানে এই ভেসে যাওয়াটা অনেক আরামের ।
না, কোনো কূল পেতে চায় না রশিদ, কেবল ভাসতে চায় । অনন্তকাল যদি এভাবে ভেসে ভেসে কাটিয়ে দিতে পারত— মন্দ হত না ! আকাশের দিকে তাকায় রশিদ । টুকরো টুকরো মেঘগুলিও তাকে অনুসরণ করছে । অনন্তের বুকে ওরাও ভেসে বেড়াচ্ছে নিয়ন্ত্রণহীন নিরুদ্দেশ । দেখে বড় ভাল লাগছে তার । কিন্তু এ ভালো লাগা বেশিক্ষণ টিকল না ।
পিঠের নীচটা কেমন শক্ত শক্ত ঠেকছে । গরম হয়ে উঠছে । পাশ-টাশ না ফিরে এবার গোটা শরীরেটাকে উল্টে উপুড় হয় রশিদ । কিন্তু একী ! পানির তরঙ্গ কোথায় ? এ যে নিউমার্কেটের ফুটপাথ ! ফুটপাথে নিজের স্টলের পাশে ছোট্ট খালি জায়গাটায় শুয়ে আছে রশিদ । আর ভ্যানের উপর গ্যাঞ্জি-প্যান্ট বোঝাই করা বস্তা নিয়ে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার দোদুল্যমানতায় দাঁড়িয়ে আছে তার ছোট্ট স্টলটা ।
এমন আকাশ থেকে পড়া পরিস্থিতি বিশ্বাস করতে চায় না রশিদ । ফের চিৎ হয় । চোখ বোজে । পিঠের তলটা অনুভব করতে চায় । পরিস্থিতির কোনো বদল ঘটে না । সেই একই দশা !  ধুলায় মোড়ানো ফুটপাথ । চোখ মেলে রশিদ । আকাশের দিকে দৃষ্টি ফেলে ফের । আকাশজুড়ে কোথায় সেই ভাসমান মেঘের সারি ? মেঘ-টেঘের ছিঁটেফোঁটাও নেই ! আকাশে সূর্যের একক রাজত্ব—যেন সূর্যদেব পৃথিবীর দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে গ্যালানে গ্যালানে উষ্ণতা ঢালছে নিউমার্কেটের ফুটপাথে ! হঠাৎ একটা দুপেয়ে জীবের ছায়া এসে ঢেকে দেয় সূর্যকে ! ছায়াটা ধীরে ধীরে স্পষ্টতর হতে থাকে। হতে হতে মানুষের আকার নেয় ! সত্যিই কি মানুষ ? ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে রশিদ । ঠিকঠাক বুঝে ওঠার আগেই, একটা ডান্ডা এসে ঘা বসিয়ে দেয় রশিদের ডান উরুতে— ‘ওঠ্‌ শালা ! ওঠ্‌ ! রাত বারোটার মধ্যে সব ক্লিয়ার করে দেয়ার কথা ; এখনো পড়ে আছিস্‌ কীসের ধান্ধায় । শালা ব্যাবসা করবি তো দোকান ভাড়া নিয়া কর্‌ ! পাবলিকের পথঘাটে বইসা বইসা ফ্রিতে মাল কামাচ্ছিস, না ? এখনো উঠলি না ! গবারমেন্টের আইনের উপর চোখরাঙানি ? শুয়োরের বাচ্চা শালা, ওঠ্‌ শালা ।’ বাম উরুতে আরেকটা ঘা পড়বার আগেই এক লাফে উঠে পড়ে রশিদ । মালের বস্তাটা ভ্যানের উপর শুইয়ে দিয়ে দড়ি দিয়ে কষিয়ে বাঁধ মারে  । হ্যান্ডেলটা বাঁকিয়ে ভ্যানের মুখ রাস্তার দিকে ঘুরাতেই, পুলিশী ডান্ডার আরেকটা ঘা ! না, রশিদের গায়ে নয়, ভ্যানগাড়িটার পশ্চাৎদেশে । এবার থমকে দাঁড়িয়ে পিছনের দিকে তাকায় রশিদ, মুখে কিছু না বললেও পুলিশের চোখে চোখ রেখে ছুঁড়ে দেয় কিছুটা ক্ষোভের আগুন । মরার উপর খাড়ার ঘা সহজে মেনে নেয়া গেলেও চলন্ত রিজিকের উপর এমন আকাস্মিক আঘাত মেনে নেয়া কষ্টকর !
অবশ্য রিজিক আর চলছে কই ? কম তো নয়, চারটা বছর । এই ঢাকা শহরের ধুলাময় ফুটপাথে চার-চারটা বছর হকারি করেছে রশিদ ! চুরি তো করে নাই, কারো গলায় চুরি-চাপাতিও ধরে নাই কিংবা গভীর রাতে স্যুট-টাই পরে এ-গলিতে ও-গলিতে ভদ্রলোক সেজে মাগীর দালালি করতেও তো যায় নাই সে । ব্যাবসা করেছে । ধান্ধা যদি করে থাকে— কড়া রোদে জ্বলে পুড়ে গলা হেঁকে হেঁকে ডেইলি দশ-বিশ-পঞ্চাশটা গ্যাঞ্জি-প্যান্ট বেচে পেটের ধান্ধা করেছে সে ! গবারমেন্ট ? আইন ? ওসব গবারমেন্ট-টবারমেন্ট, আইন-কানুনের কোনো লোমটাও বোঝে না সে । সে বোঝে বেচে থাকতে হলে ঘাম ঝরাতে হয়, সময়ে অসময়ে দু-চারটা কিল-ঘুষি খাইতে হয় । কিন্তু দিনের আলো ফুটতেই এভাবে ডান্ডা মেরে একেবারে উচ্ছেদ ! কারণ খুঁজে পায় না রশিদ । সুতরাং কপালের উপরই দোষ চাপায় । কপালও দোষ মেনে নিয়ে ঝরঝরিয়ে ঘাম ঝরায় ।
বাম মুঠোয় হ্যান্ডেল, ডান মুঠোয় লোহার ফ্রেমটা আঁকড়ে ধরে ভ্যানগাড়িটা টানছে রশিদ । ভ্যানটা টেনে টেনে কোথায় যাচ্ছে সে, কোনদিকে ? সামনে নাকি পিছনে, ডাইনে নাকি বাঁয়ে ? জানে না রশিদ । শুধু জানে, উচ্ছেদ হয়ে গেলে চলে যেতে হয় । যেদিকে দুচোখ যায় ।

(২)
যা নিয়ে এসেছিল, মোটামুটি তা-ই নিয়ে চলে যাচ্ছে রশিদ । বাড়তির খাতায় শুধু একটা পুলিশী ডান্ডার ঘা আর শরীরের ভাঁজে ভাঁজে ঘামের সাথে আটকে থাকা শহুরে ধুলারাশি । না, আর ফিরবে না রশিদ । কোথাও মালগুলা বেচে দিবে । তারপর গাঁয়ের দিকেই ঘুরিয়ে দেবে তার জীবনের চাকা ।
গাঁয়ে বিরাট বিলের পাশে তার বাড়ি । চৌচালা টিনের বাড়ি । অবশ্য বাড়িটা বাবাই বানাইছিলেন । আজ বাবা নেই । ঠিক সাত বছর আগে— নিউমার্কেটের ফুটপাথে পা ফেলার বছর তিনেক আগে— হাঁপানির টানে কাঁপতে কাঁপতে, গোঙরাতে গোঙরাতে, বাবা একরাতে নিশ্চল নিস্তেজ হয়ে গেলেন । ওপারে চলে গেলেন ! এপারে রেখে গেলেন তাকে আর মাকে । সাথে এই চৌচালা বাড়িটা ।
রশিদ ছিল বাবার একমাত্র সন্তান । বাবা বেঁচে থাকতে বুকের তলে তার অন্যরকম হিম্মত ছিল ।  ক্ষেতেখামারে কখনো বদলা খেটে, কখনোবা এর ওর জমি বর্গা নিয়ে চাষবাস করে সংসার চালাত বাপ-ব্যাটা । মা ঘরে রাঁধতেন । মেহনত করে এসে দু-দু চার থালা ভাত হজম করে ফেলত ব্যাপ-ব্যাটায় মিলে । ভালোই কেটে যেত । কিন্তু ওই যে... কপাল ! মন্দ কপাল ! মন্দ কপালের ফাঁদে পা দিয়েই তো নিজের গোড়ালি শক্ত হওয়ার আগে রশিদকে বিয়ে করতে হল । যৌতুক নিল ৫০,০০০ । আর তা দিয়েই তো নিউমার্কেটের ফুটপাথে এই ভ্যানের উপর গ্যাঞ্জি-শার্টের স্টল !
উচ্ছেদ হয়ে গেল ! উরুতে ডান্ডার বাড়ি কষিয়ে ওকে উঠিয়ে দেয়া হল ! চলে যাচ্ছে রশিদ । গাঁয়ের সেই বিরাট বিলের পাশে তার ছোট্ট চৌচালা বাড়িটায় ।
শহুরে ধুলাবালির সমুদ্রে ভাসার চেয়ে গাঁয়ের ক্ষেতখামারে কাদাজলে ডুবে মরা ঢের ভালো ।

(৩)
যে শরীর একবার শহরের ধুলার স্বাদ পেয়ে যায়, সে শরীরে গাঁয়ের কাদা কি আর সয় !
সইল না রশিদের ।
যেটুকু সম্বল সে শহর থেকে এনেছিল, তা দিয়ে হাটে একটা দোকান দেয়ার কথা ভাবে রশিদ । চা-সিগারেটের দোকান । কিন্তু যেই হারে এখানে বাকি-বক্কা চলে, মাস দু'য়েকের মধ্যে ফুটে যাওয়ার প্রবল আশংকা । তাছাড়া শহর থেকে যে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে সে গাঁয়ে পা রেখেছে, দ্বিতীয়বার দোকান করে খাওয়ার চিন্তা মনে আনা পাপ ! সুতরাং সম্বলটুকু ভেঙে ভেঙে মা-বৌকে নিয়ে ঘরে বসেই কাটতে থাকে তার দিন ।
কিন্তু কয়দিন আর চলে এইটুকু দিয়ে ! বছর ঘুরতেই টান পড়ে সেখানে ! অভাবের ছায়া ঘন হয়ে ওঠে । মা তসবিহ হাতে উপরওয়ালাকে ডাকে । আর কেঁদে কেঁদে তার মৃত স্বামীর স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায় । বৌয়ের চোখেমুখে একটা প্রবল ক্ষোভের প্রতিমূর্তি ঘুরে বেড়ায় সর্বক্ষণ । অবশেষে একদিন সে ক্ষোভ বেরিয়ে আসে গর গর করে— 'নবাবের মত ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাঙ তুলে আর ক'দিন , অ্যাঁ ! দুনিয়ার বেবাক মানুষ ক্যামনে আয়-ইনকাম করে উপ্রে উটছে, দ্যাখো গিয়া, ঘরের চিপায় হান্দায়া বসে বসে ভাত গিলতে লজ্জা করে না...  নিজেগে তো মুরোদ নাই, আমার বাপের ট্যাকা, অ্যাঁ, আমার বাপের ঘাম ঝরানো ট্যাকাগুলা দিয়া ঢাকা গিয়া চ্যাটের বালটা ছিড়ছ ! পুলিশের খেদানি খায়া ভাইগা আইসা সেই যে ঘরে হান্দাইলা ! কি জানি কি আকাম কোরছ !' রশিদ জবাব দেয় না । চুপ করে সব হজম করে ।
কিন্তু কথাগুলো যে রশিদের মনে কোনো আঁচড়ই কাটে না, এমন নয় । আঁচড় কাটে, জ্বালা ধরিয়ে দেয়, উত্তেজিত হয়ে পাল্টা জবাব দেয়ার ইচ্ছাও জাগে, কিন্তু ঠোঁট দুটো তার আড়ষ্ট হয়ে যায় । আনত দুচোখের কোণে হানা দেয় অক্ষমতার গর্ভ থেকে উঠে আসা ট্র্যাজিক কালবৈশাখী !
আরো কিছু তিক্ত কথা শুনিয়ে বউ তার বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার ধমক দেখাতে থাকে ! কেনই বা দেখাবে না ? অল্প ভাতে, অল্প কাপড়ে সে না-হয় কষ্টশিষ্টে চালিয়ে নিতে পারবে; কিন্তু সে যে  শরীরের ভিতরে আরেকটা শরীর টের পাচ্ছে ! অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের চিন্তা তাকে যে ভিতরে ভিতরে কী পীড়ন দিচ্ছে, তা যদি একবার বুঝত ঐ ব্যাটা !

(৪)
অত বুঝে টুঝে আর কাজ নেই !
মোহময়ী স্বপ্নের ভেতর জেগে ওঠা পানির তরঙ্গ , নিউমার্কেটের ধুলাময় ফুটপাথ, বিরাট বিলের পাশে চৌচালা টিনের বাড়ি- সবকিছু থেকে উচ্ছেদ হয়ে টিপটিপ বৃষ্টিতে ভেজা এক সকালে রশিদ জায়গামতো চলে গেছে !
বাগানে আমগাছের ডালে রশিদের ঝুলন্ত অবয়বটা দেখে প্রথমেই তার গর্ভবতী বউ চিৎকার করে উঠে ! তারপর মা । তারপর বাকী সবাই ।
সে ঝুলছে, মাটির দিকে মস্তক নত করে জিহবাটা দুই আঙুল বের করিয়ে জীবনের অবসাদে জর্জরিত রশিদ ঝুলছে ।
তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে বিপুল সংখ্যক জনতা । সবাই হা হয়ে দেখছে, কিন্তু কেউ একবিন্দুও স্পর্শ করছে না । ফাঁসে ঝুলন্ত লাশ ধরতে গিয়ে কি জানি আবার ফেঁসে-টেসে যায় কিনা ! পুলিশ আসুক, দেখুক, তারপর সবাই মিলে তারে ধরাধরি করেই তো কবরে শোয়াবে!

©️ সালমান মাহফুজ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মার্চ, ২০২৩ রাত ১০:৫৭

শেরজা তপন বলেছেন: কঠিন নির্মম সত্য- অনেকের জীবনে। রশিদের মত মানুষের জন্য কষ্ট পেলাম!
ভাল লিখেছেন।

পুরনো ব্লগার আপনি- কষ্ট করে নিয়মিত/অনিয়মিত ব্লগিং করুন ও অন্যের লেখা পড়ে মন্তব্য করুন। শেষ ২০১৭ সালে হাসান কালবৈশাখীর পোষ্টে একতা মন্তব্য করেছিলেন শেষবার!!!!

২| ০৩ রা মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: রশিদের জন্য মায়া লাগছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.