নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উল্টো পথিক

সয়ূজ

আমি কী তাই যা আমি হতে চেয়েছি? আমি কী তাই যা আমি হতে পেরেছি?

সয়ূজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

লিচু আখ্যান

০৩ রা মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:১৪

ঘটনাটা একবছরের কিছু বেশি সময় আগের। এমনিতেই আমি চিরটাকাল ভিড় এড়িয়ে চলেছি। যেখানেই লোকসমাগম আমি তার থেকে দশ হাত দূরে। নিউমার্কেট এলাকায় কোন কাজে যেতে হলেও আমি মঙ্গলবারে যাই যাতে মনুষ্য জটলায় পড়তে না হয়। কাল কি যে হলো কলাবাগান ওভারব্রিজের নিচে ছোটখাটো এক জটলা দেখে থমকে দাঁড়ালাম। দাঁড়ালাম ছোটখাটো এক বাচ্চার কান্না দেখে।

বাচ্চাটির বয়স আনুমানিক ৪বছর। এর বেশি নয়। পরনে একটা সাদা স্যান্ডোগেঞ্জি, জিন্সের ফুলপ্যান্ট আর পায়ে গোলাপি স্যান্ডেল। হয়তো এই স্যান্ডেলই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

আমাদের দিনাজপুরে জেলরোড নামে এক রাস্তার ধারে বেশ কিছু অস্থায়ী দোকান আছে(সম্প্রতি দোকানগুলো স্থায়ী রূপ পেয়েছে)। সেগুলোতে মূলত কমদামি কাপড় এবং স্যান্ডেল বিকিকিনি হয়। সেই দোকানগুলোতে ঝুলিয়ে রাখা বাহারি রং এর প্লাস্টিকের স্যান্ডেলগুলোর আমি গুণমুগ্ধ দর্শক।

একবার ঈদের আগে সেই দোকানগুলোতে দেখেছিলাম গ্রাম থেকে ঈদের সদাই করতে আসা এক দিনমজুর আর তার স্ত্রী তাদের ৪/৫ বছর বয়সী সন্তানকে গোলাপি রং এর স্যান্ডেল কিনে দেয়ার পর সেই শিশুটি সামনের দিকে তাকাতেই ভুলে গিয়েছিল। সে শুধু স্যান্ডেলের দিকে তাকিয়েই হাঁটছে।

হয়তো সেই গোলাপি স্যান্ডেলের টানেই এগিয়ে গেলাম। বাচ্চাটি হাউমাউ করে কাঁদছে আর লোকজনের প্রশ্নের জবাবে একটি কথাই বলছে-‌’মোর বাপ কুণ্ঠে গেইল্?’

আঞ্চলিকতার টানেই হোক আর কান্না দেখেই হোক ভিড় ঠেলে বাচ্চাটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-‘ তোর বাপোক খুঁজেছি?’

বাচ্চাটি মাথা উঠিয়ে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো, তারপর যেন তার কথার অর্গল খুলে দিল।
কান্না থামিয়ে একনিঃশ্বাসে বলতে লাগলো- ‘মোক রাখি আব্বা জুশ কিনিবা গেইল্। মুই আব্বাক খুঁজিবা হাঁটি হাঁটি এইঠেনা আইনু। আব্বাক আর পাছো নাই। মুই বাড়িত যাম্ ক্যাং করি?’

– তোর বাপ তোক কুন্ঠেনা রাখি গেইছোলো?
– ওই ওইত্তি।
আঙ্গুল আর চোখের দৃষ্টির ভিন্নগমনেই বুঝলাম এ পথ হারিয়ে ছেলেছে। বাপের খোঁজে ভুল পথে এসে কাঁদছে আর বাপ বেচারা বোধহয় যেখানে একে রেখে এসেছে সেখানে কাঁদছে।

উৎসাহী জনতা পিনপতন নিস্তব্ধতায় আমাদের বাতচিত শুনছিল। দিনাজপুরের ভাষা এমন অবোধগম্য কঠিন কিছু নয়। কাজেই সকলেই মোটামুটি বুঝে গেছে ঘটনা কী?

জটলার মাঝে এক ট্রাফিক পুলিশও ছিলেন। ঘাড়ে ঝোলানো ব্যাগ দেখে বুঝলাম ইনি ডিউটি শেষে ঘরে ফিরছেন। চেহারায় একটা আলস্য ভাব থাকলেও তার উৎসাহে কমতি দেখলামনা। তিনিই প্রস্তাব দিলেন সামনে এগিয়ে কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে বাচ্চাটির বাবার খোঁজ করার জন্য।

আমার হাত ধরে সেই পিচ্চি আর পাশে ট্রাফিক পুলিশ। পেছনে কমসে কম ২০ জনের মিছিল নিয়ে আমরা এক বাপের সন্ধানে হাঁটা শুরু করলাম। পুলিশ ভাই জানালেন প্রায় ১৫ মিনিট ধরে অনেকে চেষ্টা করলেও বাচ্চাটি নাকি কারও কোন প্রশ্নের উত্তরই দেয়নি। ভাষার টানেই হয়তো সে আমায় স্বজন বলে মেনে নিয়েছে।

বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে হলোনা। তার আগেই দেখলাম আরেক জটলার মধ্যমণি হয়ে এক বছর ত্রিশের যুবক হাউমাউ করে কাঁদছে আর বলছে- ‘মোর বেটি কুণ্ঠে গেইল?’

বাপ মেয়ের মিলনের চাইতেও আমার কাছে উপভোগ্য হলো সমবেত জনতার তালি আর উল্লাসধ্বনি। এদের মাঝে কযেকজন লোককে দেখলাম আনন্দের আতিশয্যে নিজেদের মাঝে কোলাকুলি করছে।

মেলা ভাঙলে বাপের মুখে যা শুনলাম তা মোটামুটি এরকম- মেয়েকে নিয়ে লোকটি দিনাজপুর থেকে এসেছে তার সাহেবের বাসায় লিচু পৌঁছে দিতে। সকালে গাবতলিতে নেমেই আমার বাসে উঠে নেমেছে কলাবাগান। এরই মাঝে মেয়ের বায়না সে নাকি পেরাণের (প্রাণ) লিচি জুশ খাবে। সাথে লিচুর ঝুড়ি। তাই মেয়েকে লিচু তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিয়ে বাপ গেছে লিচি আনতে। ফলাফল লিচি হাতে ফিরে এসে লিচুর দেখা মিললেও মেয়ে উধাও।

মেয়ে ততক্ষণে প্রাণ ভরে পেরাণের লিচি জুশ খাচ্ছে। বাপ মেয়ে দুজনের চোখের পানি তখনও শুকায়নি কিন্তু মুখে স্বস্তির হাসি।

বিদায় নেবার আগে মেয়েটিকে লিচুর ঝুড়ি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- ‘তুই লিচি খাবা চাহাছিঁ যে, এই লিচু খাইন্না?’

ঠোঁটটা ঈষৎ বেঁকিয়ে তার উত্তর- ‘মু্ই ইলা না খাও। হামার ওইত্তি ইলা অটাল পড়ি আছে।’

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:৪১

বিজন রয় বলেছেন: সামনে লিচুর দিন।

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৩

বিপরীত বাক বলেছেন: ভালই ফ্যাদলা পাড়লো দেখছি। খালি ক্যামা কাইজ্জা করে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.