নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উল্টো পথিক

সয়ূজ

আমি কী তাই যা আমি হতে চেয়েছি? আমি কী তাই যা আমি হতে পেরেছি?

সয়ূজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাষ্ট্রের মাথায় অদৃশ্য চামচ

২৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:৫৬

এক ছেলের খুব জ্ঞান আহরণের শখ। যেখানেই জ্ঞান পায় লুটে-পুটে খায়। জ্ঞানের খোঁজে সে যাত্রা করলো এক রাজার দরবারে।রাজা শুধালেন, কি চাও তুমি?
- জ্ঞান চাই মহারাজ।
- হুমম, আমার প্রাসাদের আনাচে কানাচে জ্ঞান ছড়ানো আছে। যাও পুরো প্রাসাদ ঘুরে আসো। তবে হ্যাঁ, তোমার মুখে পানি ভর্তি একটা চামচ দেয়া হবে। প্রাসাদ ভ্রমণ শেষে তোমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এবং চামচ দুটাই পরীক্ষা করে দেখা হবে। চামচের পানির পরিমাণ যদি বিন্দুমাত্র নড়ন-চড়ন হয় তবে কল্লা যাবে। রাজি?
অনেক ভেবে চিন্তে ছেলেটি হ্যাঁ বলে। জ্ঞান বলে কথা।
প্রাসাদ ভ্রমণে বের হয়ে ছেলেটির চক্ষু ছানাবড়া। প্রাসাদের দেয়ালে দেয়ালে ফ্রেসকো, নানা চিত্রকর্ম যাতে জ্ঞানী-গুণীর বাণী, ইতিহাস প্রভৃতি নানা বিষয় চিত্রিত।
মাথায় ছেলেটির মাথা বাঁচানোর চিন্তা। চামচের পানির চক্করে জ্ঞান তার কানের পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে।
প্রাসাদের দীর্ঘ পরিভ্রমণ শেষে সে আবার দরবারে ফিরে এলো। কেল্লাফতের হাসি দিয়ে বললো, মহারাজ দেখুন আপনার পানি আই মিন চামচের পানির পরিমাণে কোন গরমিল হয়নি। মিলিয়ে দেখুন।
রাজার লোকজন চামচ পরীক্ষা করে দেখলো সব ঠিকঠাক।
রাজা বললেন, বটে। এবার তবে জ্ঞানের পরীক্ষা হোক। কি দেখলে তুমি?
ছেলেটি মাথা চুলকায়। মাথায় কোন উত্তর আসেনা।
রাজা অবাক হয়ে বলেন, অমুক দেয়ালের তমুক জিনিসটা দেখোনি?
রাজার একেকটা প্রশ্নে ছেলেটার শরীরের একেক অঙ্গে চুলকানি শুরু হয়। রাজা যেন প্রশ্ন নয় তার শরীরে বিছুটি পাতা ঘষে দিচ্ছেন। কোন উত্তরই সে দিতে পারেনা। শুধু শরীর চুলকায়।
জ্ঞানের পরীক্ষায় ছেলেটি ডাহা ফেল। রাজা বললেন, কি হে, কি হলো তোমার কিছুই তো বলতে পারলেনা।
কাচুমাচু করে ছেলেটি বলে, মহারাজ চামচের পানির দিকে নজর রাখতে গিয়েই এই দশা। আমায় যদি আরেকটিবার প্রাসাদ ভ্রমণের অনুমতি দেন?
- তথাস্তু। তবে এবারও চামচ আর পানি থাকবে। ভয় নেই। এবার কল্লা যাবার বিধান থাকছেনা। যাও...
ছেলেটি চলে গেল। দীর্ঘসময় পরে ফিরে এসে প্রথমে পানির পরীক্ষা দিতে হলো তাকে। চামচ আছে কিন্তু তাতে পানির ‘প’টাও নেই। কিন্তু জ্ঞানের পরীক্ষায় এবারে সে জিপিএ-ফাইভ। রাজার প্রশ্নে ফড়ফড় করে উত্তর আসছে মুখ থেকে।
রাজা বললেন, সবই তো হলো। মোর‌্যাল অফ দ্য স্টোরিটা তুমিই বলো শুনি।
ছেলেটি বিজ্ঞের মত হেসে বলে, মহারাজ, মুখে চামচ থাকা ভালো। তবে চামচের পানি নিয়ে সর্বদা মাথা ঘামানো ভালোনা। ইহা জ্ঞান আহরণের পক্ষে অতিশয় ক্ষতিকারক।
রাজা একগাল হেসে বললেন, যা ব্যাটা। তোর জ্ঞান আহরণের দরজা আজ পুরোপুরি খুলে গেল। বিশ্বজোড়া ছাত্র হয়ে জ্ঞান আহরণে লেগে যা।
মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেককেই অদৃশ্য চামচ মুখে নিয়ে জন্মাতে হয়। সোনা, রূপা কিংবা পিতলের সেই চামচে একসময় তুলে দেয়া হয় পানি। চামচ মুখে পানির পরিমাণ মাপতে মাপতে আমাদের হাঁটতে হয়, চারপাশ দেখতে হয়, জ্ঞান আহরণ করতে হয়। কারও চামচ একসময় মুখ ছেড়ে সরাসরি একদম মগজে আশ্রয় নেয়। পানি সহ।
আমাদের রাষ্ট্রের মাথায় সেঁটে বসা অদৃশ্য চামচের পানির স্থায়ীকরণে আসুন আমরা রাষ্ট্রকে অভিনন্দন জানাই।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩

কালীদাস বলেছেন:

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.