নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উল্টো পথিক

সয়ূজ

আমি কী তাই যা আমি হতে চেয়েছি? আমি কী তাই যা আমি হতে পেরেছি?

সয়ূজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে জীবন আলুপুরিময়

১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৩০

এটা যে সময়ের কথা তখন ঢাকা শহরে ১২ টাকায় একবেলা ভরপেট খাওয়া যেত। মেন্যুটা এরকম- ভাত : ১ম প্লেট ৩টাকা, পরবর্তী প্রতি প্লেট ২টাকা, আলু দিয়ে ডিমের তরকারি ৭টাকা। সাথে ডাল, পেঁয়াজ আর মরিচ ফ্রি। হোটেলের ওয়েটার মামাকে একটু ভজাতে পারলে শসার সালাদও জুটে যেত। তার জন্য প্রয়োজন ছিল ২টাকা বকশিশ।
ক্ষেত্র এবং জায়গাবিশেষে মেন্যু কিংবা দামে কিছুটা হেরফের হতো।
নিকুঞ্জ-২ এ ছিল আমাদের আবাস। আমাদের মানে আমি, মুন আর শাকিল। সপ্তাহান্তে আর ছুটির দিনগুলোতে সাথে এসে জুটতো শাকির আর রিফাত।
তেমনই একটা হপ্তা। কোন এক বড়সড় ছুটির ফাঁদে রাজধানী। আমাদের প্রত্যেকেরই সামনে পরীক্ষা তাই ঢাকা ছেড়ে `নো নড়ন-চড়ন'। অবিশ্যি আমাদের এলাকাটিতে সবসময়ই ছুটির আমেজ। ফাঁকা ফাঁকা চেহারা। নিকুঞ্জ-২ তখন ঢাকার মাঝে অন্য কােন মফস্বল শহর। গুটি কতক বাড়ি, খালি প্লট, উঠতি বাড়ির কঙ্কাল, ডোবা।
বেশিরভাগ বাড়ির বাইরের অংশে পলেস্তারা নেই। বাড়িগুলো যেন ডেভলোপার কোম্পানিগুলোকে মুখ ভেংচিয়ে বলছে `মোর কাঁচা ঘর খাসা'।
আর সবচাইতে মজার বিষয় এলাকার বাসিন্দাদের সাথে হাই-হ্যালো না থাকলে প্রত্যেকের মুখমণ্ডল প্রত্যেকের চেনা। বিশ্বাস হচ্ছেনা? চিত্রনায়িকা পূর্ণিমাকে আমাদের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি হয়তো বলে বসবেন- `আরে, নিকুঞ্জে থাকার সময় এই ছোকড়াগুলোইেতা জানালা দিয়ে উঁকি দিতো, বেচারা রা'।
খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ডের উল্টোদিকে গজিয়ে উঠছে `ঢাকা রিজেন্সি', হোটেল লা-ম্যারিডিয়ান তখন লাপাত্তা। মানে নাম গন্ধ কোনটাই নেই। রাজউক ট্রেড সেন্টার চালু হবো হবো করছে। জিপি কল সেন্টার, স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন সব তখনও পরিকল্পনায়। বড় ভবন বলতে লোটাস-কামাল টাওয়ার। সেখানে আবার সব বাণিজ্যিক অফিস। খাবারের দোকান টোকান নেই।
থাকলেও আমাদের খুব এটা ক্ষতি-বৃদ্ধি হোতনা। বিকেলবেলায় আমাদের নাশতা বলতে একটাকার আলুপুরি সাথে ফ্রি আলুর ঝোল। মাঝে মাঝে ওয়েটার মামার কল্যাণে মাংসের ঝোল জুটতো। এর বেশি অপশন সেখানকার হাতেগোনা দু-তিনটে হোটেলে ছিলনা। অবশ্য আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায় এটাই মহার্ঘ্য।
ব্যাক টু সেই ছুটির দিন। বন্ধুরা এসেছে। বিকেলের নাশতায় স্বাদবদল চাই। হঠাৎ মনে পড়লো এয়ারপোর্টের ঠিক উল্টোদিকে রেলস্টেশন লাগোয়া `মনোলভা রেস্তোরা'র কথা। প্রস্তাবটা খুব সম্ভবত আমারই ছিল। সায় দিল সকলেই।
আমরা হাঁটা শুরু করলাম। বাসে নিকুঞ্জ-২ থেকে এয়ারপোর্ট সর্বোচ্চ ২ মিনিটের মামলা। অথচ আমরা হাঁটছি তো হাঁটছিই। রাস্তা শেষ হবার নাম নেই। কাউলা, উত্তরখান, দক্ষিণখান তখন বিরাণ ভূমি। সব পেরিয়ে যখন এয়ারপোর্ট থুক্কু এয়ারপোর্টের উল্টোদিকে `মনোলভা রেস্তোরা'য় পৌছালাম তখন বিকেল সন্ধ্যা আর পেটের রাজ্যের খিদা।
মনোলোভা খাঁ খাঁ করছে। চেয়ার-টেবিল আর মেন্যুকার্ড ছাড়া মাত্র একজন ওয়েটার, একজন ম্যানেজার আর আমরা ৫জন খরিদ্দার। হোটেল ডেকােরেশনের মত বােধহয় বাকিদেরও নিয়োগ দেবার প্রক্রিয়া চলছে।
`কি খাবেন?' ওয়েটারের এ প্রশ্নে শাকিলের মুখ দিয়ে অদ্ভুত গোঁ গোঁ আওয়াজ বেরুচ্ছে। শাকিরের দিকে তাকিয়ে দেখি তার চোয়াল ঝুলে গেছে। ওদের হাত থেকে মেন্যুকার্ড নিতেই সব ফকফকা না মানে সব ঝাপসা।
মেন্যুময় শুধু কাবাব আর কাবাব। যার মাঝে অনেকগুলাের নাম বাপের জন্মেও শুনিনি। মুন কােনমতে ঢোক গিলে বললো, `মামা, আলুপরি, কিমাপুরি নাই।
আলুপুরি খাওয়া আমাদের পেটে কাবাব সইবেনা বুঝে নিয়ে ওয়েটার উত্তর না দিয়েই বিড়বিড় করে গালি দিতে দিতে উল্টোপথে হাঁটা ধরেছে। আমরাও পা চালিয়ে রাস্তায়।
সকলের পকেট মিলালে আমাদের কাছে সাকুল্যে ছিল ২০০টাকা। আর মনোলভার সর্বনিম্ন কাবাবের দাম ১৮০টাকা।
কারো মুখে কথা নেই। হাঁটবার মত জোরও পায়ে নেই। বাসে উঠে বসতেই চোখ পড়লো আবার সেই রেস্তোরার সাইনবোর্ডে। `মনোলভা কাবাব অ্যান্ড রেস্তোরা'। কোন কারণে কাবাব অংশটুকু আমার চোখ এড়িয়ে যাওয়াতেই এই বিপত্তি। অন্যদের এই আবিষ্কার দেখাতেই দেখি পেটের খিদে ক্ষোভ হয়ে তাদের চোখ দিয়ে বেরুচ্ছে।
হয়তো ফিরে গিয়ে আবার সেই আলুপুরির ফাঁদে...


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭

রানার ব্লগ বলেছেন: ফাঁদ টা খারাপ না । আমারো প্রিয় আলিপুরি। ইয়াম !!!!

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২৬

সায়ান তানভি বলেছেন: স্মৃতিচারণা বেশ উপভোগ্য হয়েছে।

৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২৯

সায়ান তানভি বলেছেন: ২০০৯ এ খিলক্ষেতে ছিলাম কয়েকমাস।নামধামতো সব ভুলে গেছি। বিকালে হাটতে যেতাম কনকর্ড লেক সিটি পেড়িয়ে, শুধু ধু ধু বিল ছিল, তখনই দেখতাম সব বালু ভরাট হচ্ছে।

৪| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:০৪

মুক্তকণ্ঠ বলেছেন: আই লাভ আলুপুড়ি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.