নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শনিবার দিনটা মতিঝিল পাড়াটা কেমন যেনো থমথমে....ব্যস্তদিনের সেই ব্যস্ত রূপটা যেনো নেই...নির্দিষ্ট একটা ঠিকানা খুঁজতে রিকশা করে ঘন্টা দুয়েক ঘুরলাম আমরা.....মানে আমি আর আমার খুব কাছের এক ফ্রেন্ড...এরই মধ্যে আমি গুগল ম্যাপের মতো মতিঝিল পাড়ার ম্যাপটা চোখের ক্যামেরায় বন্দী করে নিচ্ছি...বাব্বা এত্তো এত্তো ব্যাংক আর অফিস.....শাপলা চত্বর/ বক চত্বর...বেশ কিছু খাবারের দোকানও চোখে পড়লো...একটু একটু করে মতিঝিল বিশেষজ্ঞ হতে লাগলাম কারণ প্রায় দেখা যায় কোন না কোন কাজে এই এলাকায় আসার প্রয়োজন পড়েই....
বেচারা রিকশাওয়ালা দুপুর রোদে ঘুরতে ঘুরতেই ক্লান্ত....রিকশাটা বদলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা...শাপলা চত্বরের এক কর্নারে থামালাম রিকশাটা...কারো কাছেই ভাংতি নেই, বড় নোট...রিকশাওয়ালারও একই অবস্থা....বললাম “ প্রায় দেড়টা বাজে এখনো অন্তত তিনশ’টা টাকা কামাতে পারেননি”? রিকশাওয়ালার উত্তর “ শনিবার ভাড়া বেশি মারা যায় না আফা”....
ব্যাগ হাতড়ে মরছি ভাংতির জোগাড়ে...ঠিক এমন সময় এক ভিক্ষুক মহিলা হাত বাড়িয়ে ভিক্ষা চাইলো....” কিসু দেইন অাফা”...আমি তখন ...বললাম “ দেখছেন না ভাংতি নাই, রিকশা ভাড়াই তো দিতে পারছি না”.... ইসসস কি যে অবস্থা, আশে পাশে কোনো দোকানও দেখছি না যে টাকাটা ভাঙাবো আমরা???
আবারো কি যেন বিড়বিড় করে বলতে লাগলো ভিক্ষুক মহিলাটা...এবার কিছুটা রাগই হলো ওর ওপর...চোখ তুলে তাকাতেই দেখি মুখটা হাসি হাসি, লাজুক ভঙ্গিতে কি যেন একটা বলছে....বললাম ”কি বলেন????” এবার ওর নীচু স্বরটা দুজনেই শুনতে পেলাম “ আফা, আমার কাসে পাঁচশ’ টাকার ভাংতি আসে”....দুজনের চক্ষু চড়কগাছ...আর রিকশা্ওয়ালা তো প্রচণ্ড ঝাকুনী খেলো, ওর চেহারা দেখে মনে হলো বেচারা বেশ অপমান বোধ করছে....
কাপড়ের একটা ছোট থলে থেকে ভাজ করা বেশ কতগুলো টাকার ভাংতি বের করে দিলো মহিলাটা...বেশিরভাগ ভাজ পড়া নোট....গুনতে যেয়ে আমরা দেখি ১০ টাকা কম...আমার ফ্রেন্ডটা বললো “দশ টাকা তো কম আছে চাচী”...মুচকি হেসে আবারো লাজুক ভঙ্গির স্বর “ ভাংতি দিসি না, ১০ টাকা আমারে দিবাইন”.....বাপসসসসস কি ব্যবসা...অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম “চাচী কাল থেকে আপনার মতো একটা শাড়ী কিনে আমিও নেমে পড়বো আপনার সঙ্গে...ভালোই ব্যবসা”...রিকশাওয়ালাও রাগত স্বরে মেলালো কন্ঠ “ সারাদিনে কত কষ্ট কইরা আমাদের টাকা কামাইতে হয়, ৫শ’ টাকা কামানো আমাদের অনেক কষ্ট”.....নিজেও ভাবছি, এরই মধ্যে আমার পকেট থেকে ৫শ’ টাকা আউট আর ভিক্ষুকের থলেতে ইন.... কত সহজ ইন/অাউট...
রিকশা থেকে নেমে আরেকটা রিকশার জন্য হাঁটছি...হাঁটছি... আর ভাবছি...... কত সুখীই না এসব মানুষ....কত সহজ জীবন ও জীবিকা...ঘিরে থাকা আমাদের শত সমস্যার কিছুই নেই ওদের...নেই মেন্টাল স্ট্রেস অথবা বুক ভরা কষ্ট... সাধারণ জীবনের মতো সাধারণ দুঃখ কষ্টগুলোই শুধু ঘিরে থাকে ওদের , এর বেশী আর কি???....সুখী জীবনের সংজ্ঞা এখন হয়তো এটাই.......
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: জীবনকে যে যেভাবে দেখছে, পারছে উপভোগ করছে!!