নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রংধনু প্রকৃতি

শাবা

হাসতে হাসতে বেদনা ভোলা চাই.... আমি হেঁটে বেড়াই সীমাবদ্ধ পৃথিবী ফুরিয়ে যায়। সত্যের ভূবনে সবই সত্য শুধু মিথ্যা আমার অস্তিত্ব। * শামীমুল বারী নামে আমার অন্য একটি ব্লগ রয়েছে।

শাবা › বিস্তারিত পোস্টঃ

২য় পর্ব- বাংলা বানান : আসুন এক ছাতার নিচে

২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৭

বলুন তো চীন হবে নাকি চিন হবে।



বানান বিশারদদের একদল সাথে সাথেই বলবেন, চিন হবে। কারণ এটা বিদেশি শব্দ।



কিন্তু অপর একদল বলবেন, নাহ, চীন হবে। কারণ এটা তৎসম শব্দ, অন্য বিদেশী শব্দ নয়। সংস্কৃতে চীনাংশুক বলা হয়েছে বলে এর বানানও হবে চীন।



বিতর্কের ধরনটা কত বিচিত্র। এ প্রসঙ্গে সবচেয়ে সুন্দর মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের অরুণ সেন, তিনি বলেছেন, যে-শব্দকে কোনো অভিধানে তৎসম বলা হয়েছে, সেই শব্দকেই হয়তো অন্য অভিধানে তদ্ভব বা এমন কী কখনো বিদেশী বলে গণ্য করা হয়েছে। (বানানের অভিধান : বাংলা বানান ও বিকল্প বর্জন একটি প্রস্তাব- অরুণ সেন। প্রতিক্ষণ, ডিসেম্বর, ১৯৯৩, পৃঃ-৫২)।



এ বিতর্ক কিন্তু তৎসম শব্দের কুলীনতা মানার পরও হচ্ছে। অর্থাৎ উভয়পক্ষই অন্য কোন শব্দের জন্য নয়, শুধুমাত্র তৎসম শব্দের জন্য দীর্ঘস্বর ও ণ-ত্ব, ষ-ত্ব বিধান মেনে নেওয়ার পরও এ বিতর্ক করছে।



এছাড়া বানানেরে ক্ষেত্রে আরো বিতর্ক রয়েছে। উপরোক্ত সমস্যার কারণে একদল চাচ্ছেন বাংলা বানানকে সরলীকরণ করে দীর্ঘ স্বর একেবার তুলে দিতে। অপর একদল চাচ্ছেন আরো কিছু দীর্ঘ স্বর চি‎হ্ন যোগ করে যৌগিক স্বর চি‎হ্ন লোপ করতে। আবার একদল চাচ্ছেন অন্য বিদেশি শব্দের জন্য প্রয়োজন মত দীর্ঘস্বর রাখতে। কেউ কেউ বলেছেন, বাংলা বানান হতে হবে উচ্চারণ অনুযায়ী।



আবার কিছু বর্ণের ব্যাপারেও কারো কারো আপত্তি রয়েছে। তারা বলছেন, সেগুলো তুলে দিতে হবে। এমন কি একবার বাংলা বর্ণমালা পরিবর্তনেরও কথা উঠে।



পণ্ডিতদের মাঝে এত বিতর্ক থাকলে অপণ্ডিত মহলে বিভ্রান্তি ও সংশয় সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। ফলে তরুণ সমাজে বাংলাভীতি সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্বায়নের যুগে তাই বাংলার চেয়ে অন্য ভাষা তাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলা ভাষা হয়তো এক সময় হারিয়ে যেতে পারে।



তবে সুখের ব্যাপার হলো, বেশ কিছু বিষয়ের ইতোমধ্যেই মীমাংসা হয়ে গেছে। আর বর্তমানে মতদ্বৈততা খুব সামান্য ক্ষেত্রেই রয়েছে। সুতরাং বিতর্ক সৃষ্টিকারী পক্ষগুলো নিজেদের পাণ্ডিত্য জাহিরের ইচ্ছা পরিত্যাগ করে উদার মনোভাব নিয়ে যৌক্তিক ছাড় দিয়ে এক ছাতার নিচে আসতে হবে। কিছু ব্যতিক্রম ধারা বজায় রেখে সবাই যদি ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেন তাহলে আমরা একটি শক্তিশালি ভাষানীতি ও বানানরীতি পেয়ে যাবো।



কিভাবে শব্দের বানান তৈরি হয় :

মানুষ প্রথমে কথা বলে। এক দল বা গোষ্ঠী এক ভাষায় কথা বলে। এক সময় সে ভাষা ছড়িয়ে যায়। তারপর দেখা যায়, বিভিন্ন অঞ্চলভেদে সে ভাষায় কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। প্রতি ১২ মাইল পর পর সে ভাষায় কিছু না কিছু পরিবর্তন আসছে। পরিবর্তন আসে শব্দে কিংবা উচ্চারণে। এভাবে ভাষায় অনেক পরিবর্তন ও ভাঙচুর হয়। তারপর আসে ভাষার লেখ্যরূপ। কোন এক অঞ্চলের উচ্চারণকে ভিত্তি ধরে ভাষাকে লিপিবদ্ধ করা হয়। কবি সাহিত্যিকদের সাহিত্য চর্চায় সে ভাষার লিখিতরূপ ছড়িয়ে পড়ে।



শব্দের উচ্চারণ পরিবর্তনশীল এবং অঞ্চলভেদে বিভিন্ন রকম। এক অঞ্চলের উচ্চারণকে মানদণ্ড ধরে বানানের প্রমিতরূপ দান করলে সেটা যদি সার্বজনীন হয়, তার উপর ভিত্তি করে ভাষা দাঁড়িয়ে যায়। তারপর উচ্চারণ বার বার পরিবর্তন হলেও বানান কিন্তু পরিবর্তন হয় না। উচ্চারণ পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক। সময় পরিক্রমায় উচ্চারণের পরিবর্তন বার বার হবেই। যদি উচ্চারণ অনুযায়ী বানান বার বার পরিবর্তন হয় তাহলে ভাষা ও সাহিত্য যে কালের সংযোজনী তা হারিয়ে যাবে। ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রে কী দেখি? গত একশত বছরে ইংরেজির উচ্চারণ প্রায় তিনটি ধারায় বিভক্ত হয়েছে, কিন্তু বানান অপরিবর্তন থেকেছে সবসময়। একবার ইংরেজি অভিধানে পরীক্ষামূলকভাবে Head শব্দটির বানান ইচ্ছে করে লেখা হল Hed - পরে তা নিয়ে তুমুল বিতণ্ডা, শেষ পর্যন্ত Head বানান লিখে তবে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। সেখানে বানান কত সুস্পষ্ট, সবার কাছে কত পরিষ্কার! আর বাংলায় তার উল্টো অবস্থা।



মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের রাষ্ট্রভাষা আরবি। আরবির অসংখ্য আঞ্চলিক উচ্চারণ থাকলেও বানান কিন্তু একই রয়েছে। মিশর বাংলাদেশ থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে আছে। সাহিত্য-বিজ্ঞান-চিকিৎসা-শান্তিতে তাদের নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু তাদের আরবি উচ্চারণ অন্য আরবির চেয়ে ভিন্ন হওয়ার পরও বানানে কোন পরিবর্তন আনে নি ওরা।



আমরা বাংলায় এখন যে ভাষা ব্যবহার করি তার অনেক শব্দেরই উচ্চারণ ভিন্ন। প্রমিত বাংলা উচ্চারণের পথিকৃৎ অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস (১৯৪৫-১৯৯৮) প্রণীত 'বাংলা একাডেমী বাঙলা উচ্চারণ অভিধান' দেখলে লক্ষ্য করবেন, লেখ্যরূপ ও উচ্চারণে কত প্রভেদ রয়েছে। অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস বলেন, মানুষের মুখের ভাষা হচ্ছে জীবন্ত ও বহমান। আজকের মুখের ভাষার সঙ্গে শতবর্ষ পরের ভাষার কিছু পার্থক্য ঘটে যেতে পারে। (অধ্যাপক নরেন বিশ্বাসের উচ্চারণ বিষয়ক বক্তৃতা)



বাংলা বানানের ক্রমবিকাশ ও বানান-বিতর্ক

বাংলা ভাষার বানান দীর্ঘ পরিক্রমায় বর্তমান রূপ লাভ করে। আঠারো শতক পর্যন্ত বাংলা বানানে রীতিমতো নৈরাজ্য চলছিল। তখন বাংলা বানান স্বাধীন স্বেচ্ছাচারী-লেখক বা লিপিকরের উচ্চারণ অনুসারেই লিখিত হতো। তাই তখন একই শব্দের বিভিন্ন বানান দেখা যেত। যদিও বর্তমানে একদল বানান বিশারদ উচ্চারণ অনুযায়ী বানান লেখাকেই সমর্থন দিচ্ছেন। তারা সেভাবে বানানকে ঢেলে সাজাতে চাচ্ছেন। পশ্চিম বঙ্গে এ দলটি বেশি সক্রিয়।



ঐতিহ্যগতভাবে পালির সাথে বেশি মিল থাকলেও মধ্যযুগে, বিশেষত শ্রী চৈতন্যের (১৪৮৬-১৫৩৪ খ্রি.) সময় থেকে বাংলার ওপর সংস্কৃত ভাষার প্রভাব বাড়ছিল।



দীর্ঘকাল যাবৎ বাংলা বানান সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুশাসন অনুযায়ী চলে আসছিল। উনিশ শতকের গোড়ায় বাংলা গদ্যরীতিতে তদ্ভব, দেশী ও বিদেশী শব্দের ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখন থেকে ক্রমান্বয়ে অ-তৎসম শব্দের বানানে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে আরম্ভ করে।



বর্তমান শতাব্দীর বিশের দশকে বিশ্বভারতী চলতি ভাষার বানানের একটি নিয়ম স্থির করে। বানানের এই নিয়ম নির্ধারণ করে দেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং তা দেখে দিয়েছিলেন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। অধ্যাপক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের উদ্যোগে ও রবীন্দ্রনাথের অনুমোদনক্রমে বিশ্বভারতী কর্তৃক প্রকাশিত রবীন্দ্ররচনাবলি ঐ বানানরীতি অনুসরণে মুদ্রিত হতে থাকে। এই নিয়মাবলি ‘প্রবাসী’ পত্রিকার ১৩৩২ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ (নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৯২৬) সংখ্যায় ছাপা হয়।



এর পর ১৯৩৫ সালে রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে কয়েকজন মনীষীকে নিয়ে ‘কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বানান সংস্কার সমিতি’ গঠিত হয়। ৮ মে ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বানানের নিয়ম প্রকাশ করে এবং তার পরিমার্জিত তৃতীয় সংস্করণ বের করে ১৯৩৭-এর মে মাসে।



লক্ষ্য করবার মতো বিষয় হলো এই যে, বিশ্বভারতী বা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রচারিত বাংলা বানানের নিয়মকানুন দেশের বিদ্বৎসমাজের প্রশ্নাতীত সমর্থন যেমন পায় নি, তেমনি সৃজনশীল সাহিত্যিকবর্গও তা সর্বাংশে মান্য করেন নি; ফলে বানানের বিশৃঙ্খলা রয়েই গেল।



দেশ বিভাগের পর ১৯৪৯ সালে তদানীন্তন পূর্ববঙ্গ সরকার মৌলানা মোহম্মদ আকরম খাঁ-র নেতৃত্বে East Bengal Language Committee গঠন করে। এই কমিটি গঠনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বাংলা ভাষাকে ‘পাকিস্তানের মানুষের প্রতিভা ও কৃষ্টির সংঙ্গে সংগতিপুর্ণ করা এবং সে–লক্ষ্যে বর্ণমালা সংস্কার, বানান-সংস্কার, লিপি-সংস্কার, (আরবি বা রোমান হরফে বাংলা লেখা) ইত্যাদি প্রসঙ্গ বিবেচনা করা। পরবর্তী পর্যায়ে অবশ্য পূর্ববঙ্গ সরকার এই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ সমীচীন মনে করে নি। রিপোর্টটি প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন প্রবর্তিত হবার পর।



১৯৬৩ সালে পুনরায় বাংলা একাডেমির তদানীন্তন পরিচালক সৈয়দ আলী আহসানের নেতৃত্বে বানান-সংস্কারের জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির সদস্যের মধ্যে ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, ড. মুহম্মদ এনামুল হক, কাজী মোতাহার হোসেন, অধ্য ইব্রাহিম খাঁ, মুহম্মদ ফেরদৌস খান, মুনীর চৌধুরী এবং আবুল কাসেম। এই কমিটি বাংলা বর্ণমালা থেকে ঙ, ঃ, ঈ এবং ী-কার বাদ দেবার সুপারিশ করে। ২৮ মার্চ ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র ব্যক্তিগত আগ্রহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পর্ষদ বাংলা ভাষা, ব্যাকরণ ও বর্ণমালা সংস্করণের ও সরলায়নের জন্য আরো একঠি কমিটি গঠন করে। অন্যান্যদের মধ্যে ড. মুহম্মদ এনামুল হক, অধক্ষ্য ইব্রাহিম খাঁ, কাজী দীন মুহাম্মদ আব্দুল হাই, মুনীর চৌধুরী এবং আবুল কাশেম এই কমিটির সদস্য ছিলেন। গঠনের ১১ মাস পরে এই কমিটি শিক্ষা পর্ষদের বিবেচনার জন্য একটি সুপারিশ পেশ করে। যতদূর জানা যায় এই কমিটি বাংলা বর্ণমালা থেকে ঈ ঊ ঐ ঔ ঙ ঞ ণ ষ এবং ঈ-কার, ঊ-কার, ঐ-কার এবং ঔ-কার ইত্যাদি বর্জন, যুক্তবর্ণের উচ্ছেদ, ব-ফলা ও য-ফলার পরিবর্তে বর্ণদ্বিত্ব গ্রহণ, জ-য এবং স-শ ব্যবহারের জন্য নতুন নিয়ম উদ্ভাবন, এ-কার এবং ই-কারকে ব্যঞ্জনের ডান পাশে বসানোসহ কয়েকটি প্রস্তাব ঐ সুপারিশের অন্তর্ভুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুপারিশটি গ্রহণ করলেও কখনো এই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করে নি। উক্ত কমিটির সদস্যদের মধ্যে একমাত্র ড. মুহম্মদ এনামুল হক ছিলেন বাংলা ভাষা ও বানান সংস্কার প্রস্তাবের ঘোর বিরোধী এবং পূর্বাপর স্বমতনিষ্ঠ। তিনি কোনো সংস্কার প্রস্তাবে সই করেন নি। পরবর্তী পর্যায়ে মুহম্মদ এনামুল হক, মুহম্মদ আব্দুল হাই এবং মুনীর চৌধুরী ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮ তারিখে স্বারিত একটি যুক্ত বিবৃতিতে সংস্কার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এই মর্মে মত প্রকাশ করেন: ‘... আমরা মনে করি যে, বাংলা লিপি ও বানান সরলায়ন ও সংস্কারের কোনো আশু প্রয়োজন নাই। এইরূপ কাজে হাত দিলে নিশ্চিতরূপে ভ্রান্তি বিভ্রান্তিতে পরিণত হইবে এবং পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙলা ভাষার দ্রুত উন্নয়ন বিশেষভাবে ব্যাহত হইবে।’ বলা বাহুল্য যে পূর্ববঙ্গের কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই সংস্কার প্রস্তাবের প্রবল বিরোধিতা করেন।



১৯৮০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বাংলা বানানের নিয়ম সমিতি’ বাংলা বর্ণমালা থেকে ঙ, ঞ, ণ, ঈ-কার এবং য-ফলা বাদ দেবার প্রস্তাব করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বাংলা বনানের নিয়ম সমিতি’র এই প্রয়াস সফল হয় নি।



পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রতিষ্ঠানলগ্ন থেকেই লিপি সংস্কার, বানান সংস্কার, উচ্চারণ ও পরিভাষা কোষ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও মতবিনিময়ের সূত্রপাত করে। ১৯৮৫ সালে অনুষ্ঠিত সেমিনারের উপর ভিত্তি করে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি ‘বাংলা বানান সংস্কার : একটি ভিত্তিপত্র’ প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়ে তাঁদের মতামত সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়।



বানানের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন কোনো সর্বজনগ্রাহ্য নিয়ম চালু করা সম্ভব হয় নি। বাংলা একাডেমি ১৯৯২ সালে এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। কমিটির রিপোর্ট জরিপের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানো হয়। প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে ১৯৯২ সালে বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রকাশ করে, যা ১৯৯৮-এ পরিমার্জিত হয়ে ২০০০-এ পুনরায় সংশোধিত হয়। ১৯৯৪ সালে ‌‌'বাংলা একাডেমী বাংলা অভিধান'-এর প্রথম প্রকাশনা বের হয়।



১৯৯১ সালে আনন্দ পাবলিশার্স নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সম্পাদনায় ‘বাংলা কী লিখবেন কেন লিখবেন’ নামে আনন্দবাজার পত্রিকার নিজস্ব ব্যবহার-বিধি প্রকাশ করে। ২০০৬ সালে প্রথম আলো ‘বানান ও লেখ্যরীতি’ নামে তাদের পত্রিকার জন্য নিজস্ব ভাষারীতি প্রণয়ন করে। এ ছাড়াও উভয় বঙ্গে ভাষা বা বানান সংস্কারের কয়েকটি ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেওয়া হয়। এঁদের মধ্যে আবুল হাসানাৎ, আবুল কাসেম, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুহম্মদ ফেরদাউস খান, জগন্নাথ চক্রবর্তী প্রমুখের প্রয়াস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।



বাংলা বানান সংস্কারের কালপঞ্জি --



১৯২৫-- চল্‌তি ভাষার বানান, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় [প্রবাসী, অগ্রহায়ণ ১৩৩২, নভেম্বর ১৯২৫ প্রকাশিত৤ নীতি নির্ধারক ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, দেখে দেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, অনুমোদন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]

১৯৩৬-৩৭-- বাংলা বানানের নিয়ম, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় [৮মে ১৯৩৬, ১ম সংস্করণ; ২অক্টোবর ১৯৩৬, ২য় সংস্করণ; ২০মে ১৯৩৭, ৩য় সংস্করণ]

১৯৪৯-- পূর্ববঙ্গ সরকারি ভাষা কমিটি [সভাপতি, ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ]

শুরু ৯ মার্চ ১৯৪৯, এবং শেষ ৭ ডিসেম্বর ১৯৫০৤

১৯৭৯-- বাংলা বানানের নিয়ম, (আবার)৤ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় [সভাপতি অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়]

১৯৯২-- বাংলা একাডেমী, ঢাকা

১৯৯৭-- বাংলা বানানবিধি, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি [জানুয়ারি, ১৯৯৭]



অন্যান্য---

১৮৫৫-- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর [বর্ণপরিচয়] বর্ণমালার ব্যাপক সংস্কার (১লা বৈশাখ, সংবৎ ১৯১২; ১৩ এপ্রিল, ১৮৫৫)৤ এটি অবশ্য ঊনবিংশ শতকের৤

১৯৭৮-- বাংলা বানান সংস্কার, জগন্নাথ চক্রবর্তী [দেশ, ১১মার্চ ১৯৭৮]

১৯৮১-- প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তক(কিশলয়) [মার্চ, ১৯৮১] অন্তস্থ-ব(ৱ) বর্জন৤

১৯৮৯-- বাংলা নতুন-বানান৤ আমার প্রস্তাবিত বাংলা বানান সংস্কার৤

১৯৯১-- আনন্দবাজার পত্রিকা(বাংলা কী লিখবেন, কেন লিখবেন)৤

২০০৬- প্রথম আলো পত্রিকা ‘বানান ও লেখ্যরীতি’



এসকল প্রয়াস-ধারার বছরক্রম--

১৮৫৫, ১৯২৫, ১৯৩৬-৩৭, ১৯৪৯, ১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৮১, ১৯৮৯, ১৯৯১, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০০, ২০০৬



বাংলা বানান নিয়ে অসংখ্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা, বিতর্ক হয়েছে। এখন আর নয়। সবাইকে এক ছাতার নিচে আসতে হবে। আমরা বাংলা বানানের সার্বজনীন প্রমিত রূপ দিতে পারলে আর বানান পরিবর্তন নিয়ে মাথা ঘামানো লাগবে না। তখনই বাংলা ভাষা একটি চিরন্তন রূপ লাভ করবে।



প্রথম পর্ব - আমরা বাংলা বানান কতটুকু শুদ্ধ করে লেখি? View this link



তথ্যসূত্র :


১. বাংলা একাডেমী বাংলা বানান-অভিধান

(সফট কপির জন্য ব্লগার সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই-এর নিকট বিশেষ কৃতজ্ঞ)

২. বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান

৩. যায়যায়দিন, ২৫ডিসেম্বর, ২০১৩

৪. kanthashilon.blogspot.com

মন্তব্য ৪২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৪২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৯

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: বাহ! জোওওওওওওশ।+।

২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৬

শাবা বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫০

তথ্য অধিকার বলেছেন: ভাল, চালিয়ে যান--

২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৩

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, সাথে থাকুন ...।

৩| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:০২

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: কাজের পোস্ট।

চালিয়ে যান।

পোস্টে ++++++++++ এবং শুভকামনা রইল।

২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:১৬

শাবা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো অনেক পর্ব হবে, আশা করি সাথে থাকবেন।

৪| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:২২

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: এই মাসের অন্যতম সেরা পোষ্ট! খুবই চমৎকার প্রাঞ্জল ভাষার আপনি শুদ্ধ বানানের নানা বিষয় তুলে ধরেছেন। আমার মত যারা বাংলা বানানে বেশ দূর্বল তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন। পোষ্ট প্রিয়তে নিলাম। :)

এত চমৎকার একটা পোষ্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।

২১ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫২

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ, সুন্দর মন্তব্য ও প্রিয়তে নেয়ার জন্য।

বাংলাকে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় করতে আমাদের সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।

পূর্বের পোস্ট কি পড়েছেন? View this link

আগামী পোস্টগুলোতেও সাথে থাকবেন আশা করি।

৫| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৮

জনসাধারণের মধ্যে একটি মলিন পট্টবস্ত্র বলেছেন: সুন্দর একটি পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।

২১ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৪

শাবা বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

৬| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৩

মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো পোস্ট ।

২১ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৫

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই।

৭| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৭

নিশাত তাসনিম বলেছেন: মীমাংসা , শক্তিশালী , তৈরি, গোষ্ঠী , সার্বজনীন, রচনাবলী, নিয়মাবলী , দীর্ঘদিন, এগুলো ী -কার হবে না ি - কার হবে?

যাবত বানান হবে নাকি হবে ?

আমার ই ঈ কার খুব সমস্যা হয় । তাই জানতে চাইলাম।

২১ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:০৫

শাবা বলেছেন: তৈরি শব্দটি ১৯৯২ সালের প্রমিত বানানরীতি অনুযায়ী দু' রকমের (তৈরি/তৈরী) ছিল। তৈরি ক্রিয়া হিসেবে এবং তৈরী বিশেষণ হিসেবে ব্যবহার হয়। যেমন, আমি কাজ করতে তৈরি আছি (ক্রিয়া), বাংলাদেশ তৈরী পোশাকে বিশ্ব বিখ্যাত (বিশেষণ)। কিন্তু পরবর্তীতে তৈরীর চল উঠে যায়। ফলে এখন সব ক্ষেত্রেই তৈরি হবে।

মীমাংসা, শক্তিশালী, তৈরি, গোষ্ঠী, সার্বজনীন, রচনাবলী, নিয়মাবলী , দীর্ঘদিন, যাবৎ- এ শব্দগুলোর বানান ঠিক আছে, এ রকমই হবে। এখানে টাইপিং মিসটেকের কারণে কিছু ভুল হয়েছিল, ঠিক করে দেয়া হয়েছে।

গভীর অধ্যয়নের জন্য ধন্যবাদ ।

৮| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: দারুণ পোস্ট।

২১ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:০৭

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ প্রোফেসর সাহেব।

৯| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৫

পথহারা নাবিক বলেছেন: বাংলা অথবা ইংরেজী দুইটা ব্যাকরণে আমি কাঁচা!!

২১ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:১২

শাবা বলেছেন: এটা আমাদের জাতীয় সমস্যা যে, আমরা অনেক উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার পরও মাতৃভাষা সুন্দর করে বলতে পারলেও সঠিক বানানে লেখতে পারি না। আমি আগেও বলেছি এটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাদান পদ্ধতির বিরাট দূর্বলতা।

আমার বিশ্বাস আমরা সচেতন হলে খুব দ্রুতই এসব দূর্বলতা দূর করতে পারবো।

পূর্বের পোস্ট পড়ার অনুোধ রইলো।

শুভেচ্ছা জানবেন।

১০| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৯

পোয়েট ট্রি বলেছেন: যোগারূঢ় শব্দ না হলে, কোনও দুটি শব্দ হুবহু একই বর্ণসমষ্টির অভিন্ন বানানে হবে না;

পাঞ্জাবি- পাঞ্জাবের অধিবাসী
পাঞ্জাবি- পরিধেয় বিশেষ

ঠিক আছে; কিন্তু

কাজটা কর (করো: এরূপ অনুজ্ঞা বাচকতা বুঝাতে, শুদ্ধ নয়)
এইসব পন্যের জন্য কর দিতে হবে
[কর/কর.... সাংঘর্ষিক হচ্ছে]

দেশ চীন কিন্তু চীন হবে
চিন/ চিন সাংঘর্ষিকতা তৈরি হবে, নচেৎ

২১ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৪৪

শাবা বলেছেন: অভিন্ন বানানের একই শব্দ, অথচ ভিন্ন অর্থ এবং একই উচ্চারণের দু' বানানের ভিন্ন অর্থের শব্দ নিয়ে আমার একটি পর্ব থাকবে, সেখানে এ আলোচনাটা আসবে। ততদিন আমাদের সাথে থাকবেন আশা করি।

দেশ চীন চীনই হবে, তবে একদল লোক এটাকে চিন বানাতে চাচ্ছে।

সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

১১| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:২৯

বোধহীন স্বপ্ন বলেছেন: ইংরেজি শব্দের বানান ভুল করলে আমরা তুল-কালাম মাঝে মাঝে। অথচ নিজের ভাষার বানানের দিকে খেয়াল করি না, একমত হতে পারি না--- কি অদ্ভূত!!

২১ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৪৮

শাবা বলেছেন: হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। আপনার সচেতনতায় আমি মুগ্ধ। এ কথাটাই আমি আমার ১ম পর্বে বলেছিলাম, একটু পড়ে নিবেন।
ধন্যবাদ।

১২| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৪১

বাকপ্রবাস বলেছেন: ধরে রাখার মতো, মনে রাখার মতো, কোনটাই শেষমেষ হয়ে উঠেনা, বানান এরও আর আগা মাথা ঠিক থাকেনা, ধন্যবাদ না দিল কার্পণ্য করা হবে, অনেক অনেক ধন্যবাদ

২১ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:০২

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ বাকপ্রবাস।
শুভেচ্ছা জানবেন।

১৩| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৪৬

কয়েস সামী বলেছেন: জানতে পারলাম অনেক কিছু। বুঝলাম, বানান সম্পর্কিত ব্যাপারে মাঝে মাঝে আপনাকে জ্বালাতে হবে। (এখানে জ্বালাতে বাণানটা ঠিক আছে তো?)

২১ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯

শাবা বলেছেন: হ্যাঁ ভাই, আপনি আগুন জ্বালাতে পারেন, সবার অন্তরে অন্তরে। যাতে করে সবাই বাংলা ভাষা টিকিয়ে রাখার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।

জ্বালাতে বানান ঠিক আছে, তবে বাণানটাই ঠিক নেই। :D

১৪| ২১ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৬

ভারসাম্য বলেছেন: লেখা খুবই ভাল হচ্ছে। বাংলা শব্দের বানান এর ইতিহাস হিসেবে চমৎকার ভাবে এগুচ্ছে লেখা, তবে একদম আদিপর্বের অনেককিছু ( বাংলা লিপি, চর্যাপদ, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে ব্যবহৃত বানান ইত্যাদি) আরেকটু বিস্তারিত আশা করছি, যা হয়তো পরের পর্বগুলোতে ধারাবাহিক ভাবে আসতে পারে।

আধুনিক পর্বেও ক্রিশ্চান মিশনারীদের বাংলা ভাষায় অবদান এবং তাদের ব্যাবহৃত বানান রীতি, তৎপরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিম ও অন্যান্য সাহিত্যিক গনের কিছু কিছু অবদান ও বানানরীতির উদাহরণ নিয়ে আসা যেতে পারে।

বাংলা বানান সংস্কার ও প্রমিতীকরণ এর বিভিন্ন অধ্যায় এর বর্ণনার ধারাবাহিকতা অবশ্য ভাল ভাবেই হয়েছে মনে হল, তবে শুরুর দিকের একটি সালের উল্লেখে একটু টাইপিং মিসটেইক হয়েছে সম্ভবতঃ। "দেশ বিভাগের পর ১৯৮৯ সালে তদানীন্তন পূর্ববঙ্গ সরকার মৌলানা মোহম্মদ আকরম খাঁ-র নেতৃত্বে" .. এই অংশে।

কিছু কিছু জায়গায় লেখকের নিজস্ব মত প্রচ্ছন্ন রেখে, শুধু শুধুইতিহাসের বর্ণনাই যথেষ্ট হত মনে হয়। "ব-ফলা ও য-ফলার পরিবর্তে বর্ণদ্বিত্ব গ্রহণ, জ-য এবং স-শ ব্যবহারের জন্য নতুন নিয়ম উদ্ভাবন, এ-কার এবং ই-কারকে ব্যঞ্জনের ডান পাশে বসানোসহ কয়েকটি উদ্ভট প্রস্তাব ঐ সুপারিশের অন্তর্ভুক্ত।" ... এই অংশে 'উদ্ভট' না বললেও হত হয়তো। এই পর্যায়ে আমার নিজস্ব মতও একটু ব্যাক্ত করি। 'র-ফলা/য-ফলায়' বর্ণদ্বিত্বের প্রস্তাব সমর্থন করি না, কিন্তু 'এ-কার/ই-কার' ব্যাঞ্জনবর্ণের ডানে বসানো জোড়ালো ভাবে সমর্থন করি। বাংলা বর্ণমালাকে ইউনিকোড ভূক্তির ক্ষেত্রে এই, 'ই-কার/এ-কার/ও-কার' খুব সমস্যা করছিল, সত্যি বলতে এদের জন্যই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখনো অবশ্য ব্যাকগ্রাউন্ডে এই 'কার' সমূহ ব্যাঞ্জনবর্ণের ডানেই বসছে, যা পরে প্রোগ্রাম এর সাহায্যে আমাদের অভ্যস্ত বানানে প্রদর্শিত হচ্ছে মাত্র। যাই হোক, যুক্তি হিসেবে এটি মোটেও উদ্ভট নয়, বরং একমাত্র যৌক্তিক উপায়। তবে যুক্তিহীন হলেও, অভ্যস্ততার একটি ব্যাপার আছে। সেদিক দিয়ে আমি অবশ্য 'ই-কার/এ-কার' কে ব্যাঞ্জনের ডানে কিন্তু ফ্লিপ করে দিয়ে এবং 'ও-কার' ক্ষেত্রে নতুন একটা 'কার' চিহ্ন প্রচলনের পক্ষপাতী যা ফ্লিপ করা এ-কারের মধ্যে দুই প্যাঁচ দিয়ে 'ও' বর্ণের কাছাকাছি একটা রূপ নেবে। প্রথমে শুনতে একটু উদ্ভট মনে হলেও আসলে পড়ার অভ্যস্ততার সাথে এটি তেমন একটা সমস্যা করতো না। কারণ, ব্যাঞ্জনবর্ণের ডানে আমরা 'ঈ-কার/ য-ফলা/ 'ও-বর্ণ' দিয়ে বানান করা শব্দ পড়তে অভ্যস্ত।

যাই হোক, এখন খুব দ্রুত পড়ে গিয়েছি এই লেখা এবং খুব ভাল লেগেছে। আমার অভিমত যেন এই লেখার গতি ও ধারাবাহিকতায় কোন ছেদ না ঘটায় এই আশা করছি। পরে এসে ভাল করে পড়ার ও জানার ইচ্ছাপোষণ করছি। পোষ্ট অবশ্যই প্রিয়তে। ++++

শুভকামনা। :)

২১ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৫

শাবা বলেছেন: এখন মনে হয়, ১৯৮৯ সলের মত উদ্ভট কিছু খুঁজে পাবেন না। :D :D

আমি কিন্তু এখনো মূল আলোচনায় যাই নি, ভূমিকা বা প্রাককথনে আছি বলতে পারেন। আমি বানান সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রসঙ্গ আনতে চাচ্ছি প্রথমে, যাতে করে 'বানান' বিষয়ে পাঠকদের গভীরতা তৈরি হয়। বিধি আলোচনা এখনই নয়। শুধু বানানরীতি বা বিধি আলোচনা করলে বিধিগুলো কঠিন ঠেকবে, মনে রাখতে পারবে না- ভুলে যাবে, গুলিয়ে ফেলবে সব কিছু। এভাবে আমারও কিন্তু শেখা হচ্ছে, আবার ঝালাই করে নিতে পারছি। বানান প্রসঙ্গে বিভিন্ন কারণ জানা থাকলে- কোন বানান কী কারণে হয়েছে পাঠকদের বোধগম্য হবে এবং সব সময় মনে থাকবে। আমি এভাবেই আলোচনাটা এগিয়ে নিতে চাচ্ছি।

বাংলালিপি ও বিকাশ, ভাষার উৎপত্তি, শব্দভাণ্ডার ইত্যাদি নিয়ে বিভিন্ন পর্ব থাকবে, সেখানে এসব আলোচনা পাবেন ইনশা-আল্লাহ।

এ পর্বে 'বানান নিয়ে যেসব বিতর্ক আছে' তার পরিপূর্ণ আলোচনায় যেতে চেয়েছিলাম। সেখানে আপনার প্রছন্দের প্রসঙ্গটিও আসার কথা ছিল। কিন্তু ধৈর্য্যচুত্যির কারণে তা আর হয়ে উঠে নি। আশা করি সামনের পর্বে এ আলোচনা থাকবে।

আপনার অভিমত আমি সব সময় উপভোগ করি। আপনার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যের অপেক্ষায়-

১৫| ২১ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৩৮

আমিনুর রহমান বলেছেন:




আপনার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সাথে থাকার ইচ্ছা পোষন করছি।

অসাধারণ পোষ্ট। পোষ্টে + ও প্রিয়তে।

২১ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৪৮

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ আমিনুর রহমান।

বানানের সাথেই থাকুন অনেকদিন।

১৬| ২২ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:১২

কাকভেজা বলেছেন: + ta diye rakhi PC the boshe montobbo likhbo. Thank.

২৩ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:১২

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ, আপনার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যের অপেক্ষায়__

১৭| ২২ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:০৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার দুটো পোস্টের সূত্র উল্লেখ করার জন্য।


যে-কোনো পরিবর্তনই শুরুতে বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকে, তা যত ভালো বা যুগান্তকারীই হোক না কেন। বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় যখন প্রায় ‘গণহারে’ হ্রস্ব ই/উ-কারের ব্যবহার শুরু হলো, তখন ‘সচেতন’ মানুষ ‘এই যে বাংলা বানান গোল্লায় গেলো’ বলে আহাজারি শুরু করেছিলেন। কালের বিবর্তনে দেখুন, সেই হা-হুতাশ কিন্তু এখন আর দেখা যায় না। সুনির্দিষ্ট কোনো বানান-নীতি না থাকার দরুণ পাঠ্যপুস্তকের বানান-জ্ঞানই এক কালে আমাদের জ্ঞানের উৎস ছিল। আজ কিন্তু অবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে, এবং আমার মতে প্রকৃত বানান শেখার আগ্রহও মানুষের মধ্যে আগের চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। ৯০-এর আগে বাংলাদেশে অভিধানের সংখ্যাই ছিল মাত্র হাতেগোনা কয়েকটা, তার মধ্যে ভারতের অভিধানে ছিল আমাদের ‘আস্থা’ সবচেয়ে বেশি (!)।

এজন্য আমার মনে হয়, বাংলা বানানের অবস্থা আরো খারাপ হওয়া, কিংবা বাংলা ভাষা আগামী ২৫-৩০ বছরের মধ্যেই হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসাই অধিক যুক্তিসঙ্গত। আরও ২৫ বছর পরে বানান-নীতি আরো সুসংহত ও গতিশীত হবে, ভাষাও আরো মার্জিত ও পরিশোধিত হবে। আমরা ব্লগে যা দেখি মাঝে মাঝে, সেটাই আসল চিত্র নয়। অনেকে ঠিকমতো পিসিতে লিখতে পারেন না বলেও এরকমটা হয়ে থাকে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা থেকেই দেখতে পাচ্ছি, ৫ বছর আগে ব্লগে বানানের যে দুর্দশা ছিল, এখন অবস্থা তার চেয়ে অনেক উন্নত। ব্লগারদের বানান-সচেতনতাই এই উন্নতির কারণ।

সিরিজ ভালো লাগছে। চলুক।

২৩ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৩১

শাবা বলেছেন: দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।

আপনি ঠিক বলেছেন, বানানের ব্যাপারে এখন অনেক সচেতনতা বেড়েছে। তবে বিশ্বায়নের কারণে বাংলা ব্যবহার কমে যাচ্ছে এটা একটা আশঙ্কার কথা। বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম আর ইংলিশ ভার্সনে পড়ার হিড়িক পড়ে গেছে। তাই নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলার ব্যাপারে উদাসিনতা তৈরি হচ্ছে। আমার সন্তানরাও ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, তবে আমি তাদেরকে খুব ভালভাবে বাংলা শিখাচ্ছি। কিন্তু কয়জন অভিভাবক এ ব্যাপারে সচেতন?

এটা ঠিক যে ২৫-৩০ বছর পর বাংলা হারিয়ে যাবে না। এটা বাংলাদেশের জন্য ঠিক, তবে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ঠিক নয়। মনে হচ্ছে সেখানে সত্যি সত্যি বাংলা হারিয়ে যাবে। তাই ও দেশের বাঙালী বুদ্ধিজীবি, সাহিত্যিকরা এখনই এ ব্যাপারে কান্না শুরু করে দিয়েছেন।

বাংলা বানান নিয়ে অনেক বিতর্ক চলছে। এ বিতর্কের লাগাম ধরতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে এ নিয়ে নতুন নতুন বিতর্ক দেখছি। আমাদের দেশ ভিন্ন হতে পারে কিন্তু ভাষা এক। তাই ভাষা-সংহতির জন্য তাদেরকেও আমাদের পাশে রাখতে হবে।

শুভকামনায়-

১৮| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:০১

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: প্রিয়তে রাখলাম...জানাটা জরুরী :)
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:০৮

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ মাঘের নীল আকাশ।

আগামী পোস্টগুলোতেও সাথে থাকবেন আশা করি।

১৯| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:২২

আদম_ বলেছেন: সরলীকরণের পক্ষে নই আমি। তাতে ভাষার অলংকার চুরি হলেও হতে পারে।

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৪০

শাবা বলেছেন: বানান নিয়ে অনেক ধরনের গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। সরলীকরণ তেমনই একটা ব্যাপার।
আমি এ বিষয়ে পরবর্তী পর্বে আলোচনা রাখবো, আশা করি।
ধন্যবাদ।

২০| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৭

ঈপ্সিতা চৌধুরী বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট ! অনেক কিছু জানার আছে এখান থেকে !

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৩৬

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ ঈপ্সিতা চৌধুরী।

২১| ৩১ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:৫৯

জাহিদুল০০৬ বলেছেন: কিছুটা শিখলাম

৩১ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:১৩

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ জাহিদুল০০৬।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.