নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য সবসময় সত্য,আমি সত্যেরই সারথী।লেখালেখির অভ্যাস পুরানো,ফেলতে পারি না;সময় অসময়ে জেগে ওঠে।ব্লগ কিংবা ফেবুতে আমি একজনই..\"শাহেদ শাহরিয়ার\'\',জয়\' নামটা বন্ধুদের দেয়া।ওটা\'ও তাই রেখেই দিয়েছি।লিখছি,যতকাল পারা যায় লিখব;ব্যস এতটুকুই!

শাহেদ শাহরিয়ার জয়

আমি শাহেদ শাহরিয়ার,একটু আবেগি আর খানিকটা যৌক্তিক।

শাহেদ শাহরিয়ার জয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘‘ পুতুল জীবন ’’

১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৩৬




‘সাগর পাড়ের মানুষের মন সাগরের মতো,প্রেমে পড়তেই পারে!’,সেন্টমার্টিন বিচের কিটকট চেয়ারে বসে শফির রসোক্তি সিহাবের সাথে।শফি প্রেমিক পুরুষ,সিহাবও কম যায় না;দীর্ঘ তিনবছর দু’জন রেশমার পিছনে পাগলের মতো ছুটেছে।দু’বন্ধু একসাথে একনারীর প্রেমে পড়ার কাহিনী বিরল কিছু নয়,বিরল হলো-তাদের কমিটমেন্ট: ‘যার সাথে রেশমা রাজি থাকে তার সাথেই সম্পর্ক হবে,অন্যজন জোর করবে না’।শেষপর্যন্ত সিহাবের কাছে মনদান করে রেশমা।তাতে শফি কিংবা সিহাবের সম্পর্ক ফাটল ধরেনি বরং বেড়েছে।সিহাব যেখানে শফি সেখানে,সপ্তাহের অনেকটা দিন শফি সিহাবের সাথেই থাকে।ওর সাথেই দীর্ঘদিন টেকনাফ বন্দরে ব্যবসা করছে সিহাব।রেশমাকে নিয়ে আজকাল খুব একটা বের হওয়া হয় না সিহাবের।সপ্তাহান্তে দু’একবার সাগরপাড়ে বিকেলের রোদ গায়ে মাখার সুযোগ পায়,তাতেও আবার শফিকে ডাকাটা রেশমার ভালো লাগে না।তবুও সিহাবের বন্ধুত্বের কথা ভেবে সিহাবকে সেটা বলতে দ্বিধা হয় রেশমার। মেয়েদের দিকে ওর তাকানোর ভঙ্গিটা ভাল ঠেকে না রেশমার কাছে।তাই শফি সাথে থাকলে রেশমা সাগরের পানিতে ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও নামে না।শফির একটা মেয়ে আছে,ফুটফুটে মেয়ে।দু’একবার তাকে নিয়ে সিহাবের বাসায় এসেছিল,কিন্তু বৌ নিয়ে কোথাও যায় না সে।সিহাব তাই ওকে নিয়ে ঠাট্টা করে,সাগরের পানিতে নামা পর্যটক কিংবা স্থানীয় বিপরীত লিঙ্গের দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখলে সিহাব ওর বৌয়ের কথা তোলে-‘ভাবীরে নিয়ে আসলেই পারতি,পরের বৌয়ের দিকে তাকানোর কি আছে!?’-
সুন্দরের প্রতি দরবেশও দুর্বল’ বলে শফি হেসে উড়িয়ে দেয়।

সিহাব কিছুটা লাজুক,রোমান্টি কাপলরা যখন গৌধুলী লগ্নে হাত ধরে সাগর আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে,সিহাব তখন হয় শফির সাথে নয়তো রেশমার সাথে কিটকটে বসে অলস সময় পার করে।তাছাড়া শফিকে রেখে রেশমার হাত ধরে হাটাটাও তার কাছে কেমন যেন বোধ হয়।সিহাবের ব্যবসার হাত-খঁড়ি শফির মাধ্যমেই শুরু,ওর দুঃখের দিনে শফির হাতই সিহাবের দুঃখ মোচনে এগিয়ে এসেছিল,তাই নাহয় শফিকে একা রেখে রেশমার হাত ধরে হাটার সাধটা বিসর্জনই দিল সিহাব।রেশমাও আজকাল তাই খুব একটা অভিযোগ করে না,সেও বুঝতে শিখেছে সিহাবের মনের ভাষা।এই ছোট শহরে থাকতে গিয়ে বুঝেছে,মানুষ কত নিচ হয়,কত রুপের হয়,কত ছদ্মবেশী হয়।সিহাবের ভিতর তার কোনটাই নেই,সে অন্যপুরুষ।তার ভিতর,মাদকাসক্তি,ক্রোধ,ঘৃণা,লাম্পট্য পরকীয়া কিংবা খারাপ কোন ভাবনা আজ পর্যন্ত পায়নি রেশমা শুধু ভালোবাসা ছাড়া। সিহাবের কাছের ও একমাত্র বন্ধু সম্পর্কে ভাবতে বসলেই রেশমার দম বন্ধ হয়ে আসে,মনে ভয় আসে।শুধু শফিই নয়,তাদের আশ-পাশ একটু চোখ বুলালেই হরহামেশা চোখে পড়ে এসব।ইউনিয়ন গুলোতে বিচার বলতে বেশির ভাগই নারী সংক্রান্ত বিষয়: ক’ এর মেয়ের সাথে খ’ এর ছেলে খারাপ আচরণ করেছে,গ’ এর বৌয়ের সাথে ঘ’ এর জামাই কু-কথা বলেছে,কিংবা চ’এর বৌ জনৈক ছ’এর সাথে রাত কাটাতে গিয়ে ধরা পড়েছে। কিংবা মাঝরাতে বাড়ি ফিরে বৌকে খুব করে মেরে হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে।
শফির বিষয়টা রেশমা নিজেই জানে,একদিনতো একটা মহিলা নিয়ে তাদের বাসায়ও উঠেছিল শফি।রেশমা জেনেছে ওটা তার বৌ নয়,তবুও বারণ করতে পারেনি সে,তাছাড়া প্রায়ই একগাদা অপরিচিত ব্যক্তি নিয়ে তাদের বাসায় আসে শফি রাতে আড্ডা দেয়,নেশা করে,ইয়াবা এখানে গ্যাসট্রিক এর ঔষুধের মতই,সেটা ধোয়া ওরা গিলে আর নিঘুর্ম রাতে হাতে জুয়ার তাস নিয়ে কাটিয়ে দেয়, চোখ লাল করে বের হয় ভোর রাতে।সিহাবের সেটাতে নেশা নেয়,তবুও রেশমা মাথায় হাত ছুঁইয়ে শপথ করায় সিহাবকে। আর নিজের ভিতর থাকা ভয়ে সে সিহাবকে জড়িয়ে ধরে নিজেই কেঁদে পেলে মাঝে মাঝে। সিহাবের বাবা-মা নেই,বাবা মাছ ধরতে বোটে গভীর সমুদ্রে গিয়ে আর ফেরেনি,এরপর অভাব আর অসুখের সাথে যুদ্ধে তার মাও হেরে যায়।খালার কাছে মানুষ।তিনিও গত হয়েছেন বছর দু’য়েক হয়। এখন ওর আপন বলতে রেশমা আর শফি।শফিকে সে আপনই ভাবে,বর্ডার টপকে ওর মাধ্যমে প্রথম ব্যবসার হাতে-খঁড়ি ওর।প্রথম প্রথম অনেক ভয় হতো,পুলিশ,বিজিবি এসব নিয়ে।ধরেও নিয়ে গেছে তাকে দু’একবার শফির সাথে অনেক বড় বড় অফিসারের সাথে লিংক।শফিই তাকে ছাড়িয়ে এনেছে।এখন অবশ্য সিহাবকে আইন আদালতের ভয় পোহাতে হয় না। শফির সাথে সে নিজেকে নিরাপদই ভাবে।সিহাব যখন বাড়ির বাইরে থাকে কিংবা বর্ডারে যেতে হয় দু’একদিনের জন্য শফি তখন সিহাবের বাড়িতেই থাকে,ওর কাজের মেয়েকে বাজার-সাজার করে দেয় সিহাবের বাড়ির জন্য। রেশমা কিছুটা বিব্রত থাকে ঠিকই কিন্তু শফি তার বিষয়ে কিছুটা অন্যরকম,অন্য মেয়েদের দিকে যেভাবে তার তাকানোর ভঙ্গি সেটা রেশমার ক্ষেত্রে হয় না,কিংবা খারাপ কোন আচরণও সে দেখেনি।
রেশমার তাই সাহস হয়নি সিহাবকে ওর সাথে মিশতে বারণ করার,দীর্ঘ সময়ের বন্ধুর সাথে তার কারণে ফাটল ধরুক সে চায় না।চায় না সিহাব ওর মতো হোক।রেশমা জানে,সিহাব কখনো শফির মতো হবে না।সে বিশ্বাস তার আছে। আর বিপদে শফি সিহাবের জন্য ছাতার মতোই,সে ছাতা তার মাথা থেকে সড়ে যাক সেটা গুণাক্ষরেও ভাবতে পারে না রেশমা।এতকিছুতো শুধু সিহাবের সাথে ভালোবেসে বাঁচার জন্যই!
কারণ সে নিজেই সিহাবের জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিল,রেশমার বাবা কখনো সিহাবের সাথে তার বিয়ে দিতেন না।কারণটা রেশমা জানতো না,তার বাবাই তাকে জানিয়েছেন,সিহাবের ব্যবসার ধরণটা ভাল না,বেআইনি কাজ করে,বর্ডার টপকায়।যখন তখন হাজতে যেতে হবে,কিংবা বর্ডারে মারাও পড়তে পারে।রেশমা অতকিছু দেখেনি,দেখেছে সিহাব কতটা দিন ওর পিছু পিছু রোদ-বৃষ্টি অগ্রাহ্য করে তার ভালোবাসা পাবার জন্য ছুটেছে।কত অপমান সয়েছে,তবুও সময়ের স্রোতে হারায়নি। অনেকেই তাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়ে রীতিমতো নিঁখোজ হয়েছে,ভয়ে পালিয়ে গেছে,কিংবা সাড়া না পেয়ে অন্যএকজনের পিছু নিয়েছে।সিহাব তার কিছুই করেনি।না সে ভয় পেয়েছে,না সে হারিয়ে গেছে,রেশমার বড় ভাইয়ের হাতে মার খেয়েও সে পিছু হটেনি,শফিও তাকে চাইতো,কিন্তু অন্য আট-দশের জনের মতো তার ধৈর্য্যে চিড় ধরেছে অল্প দিনেই, সে সিহাবের মতো হতে পারেনি,তাই রেশমাকে দেখিয়ে দেবার জন্য অন্যএকজনকে বিয়ে করে। আর সিহাব; সে আকাশ কিংবা সাগরের মতোই: যতদ্দুর চোখ যায়,ততদূর তাকেই দেখা যায়।রেশমার মনে হয়েছে,মেয়েদের তো এমন একটা ছেলেই জীবনে চাই-যে কোন অবস্থায় তাকে ছেড়ে যাবে না,ভালোবাসবে;কারণে অকারণে ভালোবাসবে।
দশম শ্রেনিতে থাকা অবস্থায় তাদের প্রেমের শুরু,ডিজিটাল যুগেও রেশমা আর সিহাব চিরকুট চালাচালি করেছে তিনটে বছর।ইন্টার ফাইনাল দেবার আগ মুহূর্তে তার বিয়ের তড়িঘড়ি দেখেই শফির পরামর্শে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা।আজ প্রায় দেড়টা বছর রেশমার পরিবারের কারো সাথে ওর যোগাযোগ নেই বল্লে চলে। একই শহরে,তবুও অনেক দূরে। সিহাব ওকে স্বান্তনা দেয়; একদিন অভিমানের বরফ গলবে,যখন ওদের কোলে বাবু আসবে। নানা-নানুরা নাতি-নাতনীর প্রতি অনেক দুর্বল।সে দিনটার কথা ভেবে রেশমা কিছু দিন আগেও ডাক্তার দেখিয়েছে,একগাদা ট্যাবলেট গিলছে স্বপ্নে ভিবোর হয়ে।ডাক্তার বলেছে মাস ছয়েক ট্রিটমেন্ট করাতে,সিহাব না করলেও রেশমার অভিমানী মুখের দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ বলেছে।
ইতিমধ্যে ছয়মাস পেরিয়ে সাত মাস দশদিন গত হয়েছে,রেশমার আকঁ কাটা ক্যালেন্ডারের হিসেবে,তাই মন খারাপের দিনে তাকে নিয়ে ঘুরতে আসলো সিহাব।শফি সাথেই। আগেই ফোন করে বলেছে আর্জেন্ট কথা আছে। নাহয় আজকে শফিকে ছাড়াই রেশমার সাথে একা সময় দেবার কথা তার। রেশমা উদাসী মনে সিহাব আর শফির পাশেই কিটকটে বসে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মায়াভরা মুখটাতে অসহায়ত্ব দেখলে কোথায় যেনো লাগে সিহাবের, শফির পাশ থেকে আনমনে উঠেই সে রেশমার হাত ধরলো,হাত ধরে টেনে তুললো সে।রেশমাও কিছুটা হতবাক আবেগে বাকরুদ্ধ হয়ে উঠে দাঁড়ালো।

‘ চলো,হাটি’,মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো রেশমা।শফির দিকে তাকিয়ে বসতে ইশারা দিল সিহাব।রেশমার হাত যতটা না কোমল তারচেয়ে বেশি উষ্ণ! এভাবে ধরে আগে কখনো একসাথে সমুদ্রে হাটা হয়নি। তাই রেশমার ভালোবাসা ভরা উষ্ণতাও সিহাব পায়নি।‘এই,তোমার কি গায়ে জ¦র?!’-‘হুমম,ভালোবাসার জ¦র! -বোকা!!’

দু’জনেই প্রাণখুলে হাসে অনেকক্ষণ।কোরাল পাথরের উপর উঠে দু’জন বসে পরে,সূর্যটা ডুবু-ডুবু অবস্থায় লাল আভা ছড়াচ্ছে গোটা সমুদ্র জুড়ে।এমন একটা দৃশ্য দু’জন পাশাপাশি হাত ধরে দেখার স্বপ্ন রেশমার অনেক দিনের,সে জানতো সেটা কোন একটা দিন পূরণ হবে,কারণ তার মনের ভাষা সিহাব পড়তে পারে। মিনিট দশেক সিহাবের কাঁধে মাথা রেখে,রেশমার মুখে এতটুকু বেরিয়েছে-‘অনেক ভালোবাসি তোমায়,প্লিজ আর বর্ডারে যেও না,আমার ভয় করে।আমার তোমাকে ছাড়া কিছুই চাই না।প্লিজ,প্লিজ...।’’ সিহাব জানে,রেশমার একটু বেশি আবেগ,সে আরেকটু বলতে গিয়ে হয়তো কেঁদেই দিবে।রেশমার মুখটা সামনে নিয়ে ওর কথায় সায় দেবার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে সিহাব,আর রেশমা মুচকি হেসে আবারও কাঁধে মাথা রেখে ডুবে যাওয়া সূর্যের লাল চোপ দেখে।সেন্টমার্টিন দ্বীপে তখনো আলো,সিহাবের মোবাইলে রিং-টোনটা বেজে ওঠে,মোবাইল স্ক্রিনে শফির নাম্বার,১০০ গজ দুর থেকেই। সিহাব রিসিভ করে,রেশমা দিকে তাকিয়ে একটু বসতে বলে সে শফির কাছে যায়।মিনিট পাঁচেক পর ফিরে আসে।রেশমা বুঝতে পারে,

‘আবারও যেতে হবে,নাহ?’-সিহাব ওর দু’গালে হাত রেখে ছোট বা”চার মতো বলে
-‘কথা দিলাম,বর্ডার আর যাব না,শফিকেও বলছি।তবে কিছু মাল আছে সেগুলা একটু সেইফ করতে যেতে হবে, সবটাকা ইনভেস্ট করা হয়ে গেছে ওটাতে,এই কাজটাই শুধু।’ -‘কয়দিনের জন্য?’-‘বড় চালান,দশ লাখ পিচ! দশ-পনের দিন লাগবে।’ -‘আমার কিš‘ ভয় করছে,দেশের অব¯’া ভাল না’।-‘দূর পাগলী! কিছু হবে না,শফি আছে না?!’ -‘ হু...’।

দিন পনের পর,হঠাৎ গভীর রাতেই সিহাব বের হয়ে যায়,বাড়ির কাজের মেয়েকে ডেকে দরজার হুক দিতে বলে।সে জানে রেশমা জেগে থাকলে তার বাইরে যেতে কষ্ট হবে।কাজের মেয়ের হাতে একটা চিরকুট দিয়ে বলে,রেশমা জাগলে ওটা যেনো তাকে দেয়।বাড়ির বাইরে গাড়ির শব্দ হয়,সিহাব তড়িগড়ি করে বের হয়ে যায়।কাজের মেয়ের ঘুমের চোখে আতংক,ভয়ে সে রেশমাকে ডেকে তুলে।রেশমা চোখ খুলে সিহাবকে দেখতে পায়না,কিছু বলার আগেই কাজের মেয়ে কাঁপা-কাঁপা হাতে সিহাবের রেখে যাওয়া চিরকুট রেশমার দিকে বাড়িয়ে দেয়।রেশমাকে বলতে হয় না,ওটার ভাঁজটা রেশমার অনেকদিনের পরিচিত,দেখেই বুঝে,ওটা সিহাবের চিরকুট।কিন্তু এই প্রথম ওর চিরকুট খুলতে আনন্দের শিহরণের পরিবর্তে ভয় হচ্ছে।রেশমার কাঁপা হাতে চিরকুট খুলে--গোটগোট করে লেখা

‘‘তুমি ঘুমালে আরো সুন্দর হয়ে যাও,ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না,ঘুম ভাঙ্গাতেও না।কিন্তু শফির বিপদ,সে পালিয়ে আছে,তাই মালগুলো নিরাপদ করার জন্য আমাকে যেতেই হলো।নিরাপত্তার কারণে মোবাইলটা বন্ধ থাকবে,আমিই যোগাযোগ করব। ইনশাআল্লাহ,দোয়া করো,ফিরে আসবো।রাগ করো না,আর হ্যাঁ: অনেক ভালোবাসি তোমায়!’’

রেশমা ধপাস্ করে খাটে বসে পড়ে।হাতের কাছে মোবাইলটা নিয়ে সিহাবের নাম্বারে কল দিয়ে আরো স্তব্দ হয়ে যায় সে-‘ওর মোবাইল অফ’! কাজের মেয়ের কচি মাথায় আসে না কি করতে হবে।সে নিজেও খাটের এককোণে বসে পড়ে।সে রাতের পর প্রতিটা রাত রেশমার জন্য নির্ঘুম দীর্ঘরাত।বাইরে র‌্যাবের গাড়ির সাইরেন তার কলিজাটা এপোড়-্ওপোঁড় করে দেয়।গত পাঁচদিনে প্রায় দশের অধিক মানুষকে ক্রসফায়ার দেয়া হয়েছে এই ছোট্ট শহরে। চারদিকে শুধু নিঃস্তব্ধ হাহাকার আর সন্ধ্যার পরপরই কারফিউ সাইরেন! রেশমার রুমে ৪৯ ইঞ্চি এলইডিতে কখনোই খবর দেখা হয়নি,ওর কাছে খবর মানে ছিল: সিহাবের সাথে ভালো থাকা,সারা পৃথিবীর জুট ঝামেলা তাই সে সিহাবকেও দেখতে দিত না।কিন্তু গত কয়েকদিনে রেশমা একটা খবরও মিস করেনি,একটা শিরোনামও ওর চোখ ফাকি দিতে পারেনি। যদি হঠাৎ সিহাবের নাম আসে! এরও দিনদশেক পর,অমানিশার কোন একরাতে দুরের বাজতে থাকা সাইরেন হঠাৎই সিহাবের বাড়ির সামনে এসে থেমে যায়।দরজায় বাড়ির গেইটে কড়া নাড়ার শব্দে কাজের মেয়ে ভয়ে সামনে এগোয় না।রেশমাই ভয়াতুর দৃষ্টি নিয়ে দরজায় গিয়ে পরিচয় জেনে খুলে দেয়।কালো পোশাকের কিছু মানুষ ভারী অস্ত্রহাতে হুড়-হুড় করে ঘরে ডুকে পরে। মিনিট বিশেক তন্ন-তন্ন করে কি যেনো খুঁজে। কিন্তু কিছুই না পেয়ে বোধয় ওরা হতাশ আর রেগে যায়।

বাইরে রেশমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ধমকের শুরু জানতে চায় ‘‘- জিনিস আর কই রাখছে!?’’,রেশমা ধরা গলায় বলে,সে কিছুই জানে না। আবারও ধমক দেয় কালো পোশাকধারী
-‘চুপ! চোত...!’ -‘‘ভাবচোস,ধরতে পারমু না,নাহ?’’ এবার কে বাঁচাইবো? আমরা জানি সে মহেশখালী গেছে,সাথে এক লাখ পিচ ইয়াবা নিয়ে! ধরাতো পড়বোই,লাশও পাবি না!’

রেশমা আর কিছু বলতে পারে না,ওদের সামনে মাটিতে বসে পড়ে।কাজের মেয়েটা দৌঁড়ে এসে ওকে ধরে কেঁদে দেয়। বের হবার আগের তাদের একজনকে বলতে শোনা যায় ‘‘এই শফিরে ফোন লাগা! ক,ওর ডার্লিংরে রাইখা গেছি।’’
‘শফি!?’রেশমার কণ্ঠ বোবা হয়ে আসে,ঠোঁট অসাড় হয়ে যায়,অবশেষে সবটুকু শক্তি দিয়ে রেশমা চিৎকার মেরে বলে ‘সিহাব কিছু করে নাই,আমার সিহাব কিছু করে নাই...সব কাজ শফির...।
ততক্ষণে গাড়ির গতি বেড়ে সাইরেনের ডেসিবলের মাত্রা অনেকটাই কমে গেছে...।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: একটি মুমূর্ষু সম্পর্ক আই,সি,ইউ তে আছে..........!

১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৪১

শাহেদ শাহরিয়ার জয় বলেছেন: ধন্যবাদ,রাজীব নুর ভাই।সম্পর্কগুলো ভাল থাকুক।আপনিও ভাল থাকবেন সবসময়।

২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:২৫

নীল আকাশ বলেছেন: লেখাটা দুই বার এসেছে। এডিট করে ঠিক করে দিন।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৪১

শাহেদ শাহরিয়ার জয় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।ভাল থাকবেন সবসময়।

৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:৪৩

তারেক ফাহিম বলেছেন: আগা গোড়া একবার দেখলাম।

পরে দেখি কিছু বলা যায় কিনা।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৪২

শাহেদ শাহরিয়ার জয় বলেছেন: কিছুই বলার ছিল না!
অত ভাল লিখি না ভাই,তবে চেষ্ঠারত আছি। একদিন অবশ্যই কিছু বলার মতোই লিখব ইনশাল্লাহ।
ভাল থাকবেন সবসময়।

৪| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:২৩

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: ভালো লাগল।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৩

শাহেদ শাহরিয়ার জয় বলেছেন: মামারা মায়েই চোখ দিয়ে দেখে,তাই খারাপকেও ভাল লাগে।ধন্যবাদ হাসু মামা।অনেক ভাল থাকবেন।

৫| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৬

বিজন রয় বলেছেন: মানুষের মন বড় অস্থির, এই লেখাটা পড়ে তা আর একবার বুঝলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.