নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে \"আমার কবিতা নামে\" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

সাখাওয়াত হোসেন বাবন

আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।

সাখাওয়াত হোসেন বাবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সত্যি ভৌতিক ( ২য় কিস্তি )

১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:৫০


লোকটা আমাকে এমনভাবে ধরে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল যে মনে হলো আমার দু'হাত কাধের কাছ থেকে ছিড়ে যাবে। ব্যথায় চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছে করলো ।হঠাৎ করেই নিজের উপর, মেয়েটার উপর এই লোকটার উপর পুরো পরিস্হিতির প্রচন্ড রাগ উঠে গেল । খুব জোড়ে একটা ঝাড়া দিয়ে লোকটার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে, বললাম, ছাড়ুন , ছাড়ুন । পাগল ভেবেছেন নাকি ? বললাম না, মেয়েটাকে বাঁচাবার জন্য আমি এখানে এসেছি । আমি পাগল কিংবা মাতাল নই যে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পরতে যাবো । প্লাটফর্মে দাড়িয়ে এদিকটায় তাকিয়ে দেখি মেয়েটা রেল লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে । দেখে মনে হলো, ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পরতে যাচ্ছে । তাই দৌড়ে এসে ধাক্কা দিয়ে মেয়েটিকে সরিয়ে দিতেই মেয়েটা ওই দিকটায় ছিটকে পরে ।
ধাক্কা দেওয়ার পর মেয়েটা যেখানে গিয়ে পরেছিলো সেখানটা দেখাবার জন্য আমি আবার ঘুরে পেছনে তাকালাম। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলাম,
আমাদের কাছ থেকে হাত দশেক দূরে আবচ্ছা আলো অন্ধকারে মেয়েটা এলোমেলো পা ফেলে ট্রেন লাইন ধরে হেটে যাচ্ছে ।
আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম, ওই যে, ওই যে দেখেছেন ? দেখেছেন ? বলছিলাম না ...........
বলেই মেয়েটির দিকে দৌড় গেলাম । আমাকে দৌড়াতে দেখে লোকটাও দৌড় দিলো । কিন্তু সে আমার পেছন পেছন দৌড়ে না এসে ষ্টেশনের দিকে দৌড় লাগালো । বুঝলাম না লোকটা এমনটা কেন করলো । এতো কিছু ভাবার সময় নাই । এক দৌড়ে মেয়েটার কাছে পৌঁছে পেছন থেকে তাকে ধরে ফেললাম ।
মনে মনে ইচ্ছে হচ্ছিল কষে একটা থাপ্পড় মারি । টান দিয়ে আমার দিকে ফিরিয়ে বললাম, পাগল নাকি আপনি ? এতো রাতে এখানে মরতে এসেছেন কেন ? আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার পর হুট করে কোথায় হাওয়া হলে গেলেন ? হুম ...!
মেয়েটি এমনভাবে আমার দিকে তাকালো যে দেখে মনে হলো সে আমার কোন কথাই সে বুঝতে পারছে না। এভাবে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর আমার উপর দেখে নজর সরিয়ে চারপাশটায় একবার নজর বুলিয়ে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো । আমি দু কদম এগিয়ে মেয়েটির কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে বললাম, আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন না ? হ্যালো .. বলুন, বলুন এখানে এতো বাতে কেন এসেছেন ?
কেন ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পরতে চেয়েছিলেন ? কেন? কেন? কেন ? আমাকে চিৎকার করতে দেখেও মেয়েটি কিছু বলল না । কিছুক্ষন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে হুট করে মাটিতে বসে পড়লো । কি করবো বুঝতে পারলাম না ।
পেছন ফিরে স্টেশনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ম্লান আলোয় জনমানবহীন রেল স্টেশনটা খা খা করছে । হঠাত করেই কেন যেন মনে হলো এখান থেকে দ্রুত সরে যেতে হবে । তা না হলে থাকলে বিপদ আরও বাড়বে । ভয়ানক কিছু একটা অপেক্ষা করছে । আমি মেয়েটাকে টেনে দাঁড় করে বললাম, চলুন এখান থেকে । এক মুহূর্তের জন্যও আর এখানে নয় । ঠিক সে সময় নাকে ভোটকা পচা একটা গন্ধ এসে লাগলো । মনে হল আশেপাশে কিছু একটা মরে পরে আছে । খুব কাছেই দু' তিনটে কুকুর ঘুর ঘুর করছে । ক্যামন যেন একটা ভয় ঝেকে ধরলো ।

একমুর্হুত ও সময় নষ্ট না করে এক প্রকার জোড় করেই মেয়েটিকে নিয়ে এসে ষ্টেশনে এসে দাঁড়ালাম । স্টেশনে পৌছে পেছন ফিরে রেল লাইনটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, একটা নয় দু'টো নয় অনেক অনেকগুলো কুকুর রেল লাইনের উপর পায়চারি করে বেড়াচ্ছে । দু'একটা তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে । অন্ধকারে সেগুলোর চোখ গুলো জ্বল জ্বল করে জ্বলছে ।

টিকিট কাউন্টারের ভেতরে কাউকে দেখতে পেয়ে ডাকতে লাগলাম, মামা আপনি কি ভেতরে আছেন । মামা .....মা....মা.... কোথায় আপনি ?
কেউ উত্তর দিলো না । মেয়েটা আমার পাশে ঠায় দাড়িয়ে আছে । চুলগুলো পিঠ, কাঁধ, মুখের উপর এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । ওড়নাটা বুকের একপাশে ঝুলছে । দেখে ভুতে পাওয়া অপ্রকৃতগ্রস্ত রহস্যময়ী বলে মনে হচ্ছে ।

পুরুষ কম্পার্টমেন্টের বেঞ্চিতে মেয়েটিকে বসিয়ে দিয়ে আমি ষ্টেশনের প্রবেশ মুখে এসে দাঁড়ালাম । ঠিক তখনই টিকিট কাউন্টারের লোকটাকে দৌড়ে আসতে দেখলাম। সাথে পুলিশসহ আরো কয়েকজন রয়েছে । এতোক্ষনে বুঝতে পারলাম, মেয়েটাকে দেখতে পেয়ে লোকজন ডেকে আনার জন্যই লোকটা ওভাবে চলে গিয়েছিলো । সবাইকে দেখে আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম ।

লোকটা আমার কাছে এসেই বলল, মামা আপনি ঠিক আছেন তো ? মেয়েটা কোথায় ? আমি কিছু বলার আগেই লোকটা মেয়েটাকে বেন্চিতে বসে থাকতে দেখে তার দিকে ছুটে গেল । অন্যরা সবাই তাকে অনুসরণ করে ছুটল । মুর্হুতে সবাই মেয়েটাকে ঘিরে ধরল । ব্যাপারটা দেখে কেন যেন আমার ভাল লাগলো না । আমি বাম হাতের কুনই ডলতে ডলতে এগিয়ে গিয়ে ইচ্ছে করেই মেয়েটার পাশে বসে পরলাম । উদ্দেশ্যে যে কোন পরিস্থিতিতে মেয়েটাকে রক্ষা করা ।
একজন এএসআই দু'জন কনেষ্টবল মিলে একের পর এক প্রশ্ন বাণে মেয়েটিকে জর্জরিত করে ফেলছে । মেয়েটি আমতা আমতা করে সে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছে । ভয়ার্ত চোখে সবার দিকে তাকাচ্ছে । কোন প্রশ্নের উত্তর ই দিতে পারছে না ।
মেয়েটির কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে অবশেষে এএসআই আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, কঠিন কেস মনে হচ্ছে । থানায় নিয়ে যেতে হবে ।
এই ধরনের কেস খুব ডেঞ্জারাস হয় । ভাল করে খোজ খবর করে দেখতে হবে আসল ঘটনা কি ?
আমি বললাম, বেশ ভাল । খোজ খবর করেন । দেখেন আসলেই কেসটা কি ?
আপনাকেও থানায় যেতে হবে ।
আমাকে! আমাকে কেন ? আমি অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলাম ।
এএসআই কিছু বলার আগেই, একজন কনেস্টবল লাঠি উঠিয়ে মারার ভঙ্গি করে বলল, ওই ব্যাটা এতো প্রশ্ন করিস ক্যান ? স্যার যখন কইছে থানায় যেতে তখন থানায় যাবি । মাইয়া মানুষ নিয়া রাইত বিরাইতে ফষ্টি নষ্টি করবি আর থানায় যাবি না ? চল চল থানায় চল । লোকটা হুট করে আমার সাটের কলার ধরে টেনে দাড় করিয়ে ফেললো । পুলিশের হঠাৎ এমন আগ্রাসী আড়চনে আমি একেবারে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম ।
বাধা দিয়ে গিয়ে মনে হলো এখন বাধা দিয়ে কোন লাভ হবে না । তাতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে । থানা, পুলিশ আমার কাছে নতুন কিছু নয় । এদের সাথে তর্কে যাওয়ার চেয়ে থানাতেই বরং নিরাপত্তা বেশি । তাই সোজা হয়ে দাড়িয়ে, এএসআই লোকটার দিকে তাকিয়ে একেবারে বাধ্য ছেলের মতো বললাম, চলেন কোন থানায় যেতে হবে,যাই ।
অন্য কনস্টবলটা মেয়েটাকে হাত ধরে টান দিয়ে বলল, চলেন ম্যাডাম চলেন, শশুর বাড়ি চলেন । জামাই আদর করবো আপনাকে । লোকটার কথায় আর চোখ মুখের নোংরা ভঙ্গিতে এএসআইসহ অন্য সবাই হেসে উঠলো ।

কথায় আছে, বাঘে ধরলে এক ঘা, পুলিশে ধরলে ১৮ ঘা । স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করতে যাওয়া কাউকে বাঁচান যেন মস্ত বড় এক অপরাধ । সে রকম এক মস্ত অপরাধীর মতো আমাদের থানায় নিয়ে আসা হল ।
পুলিশ এবং সাংবাদিকদের মধ্যে একটা অলিখিত চুক্তি আছে । সেটা উভয় পক্ষই মেনে চলে । বনের বাঘের মতো পারতপক্ষে কেউ কারো এলাকায় ঢুকতে চায় না । উভয়েই নিদিষ্ট একটা দূরত্ব বজায় রাখে । ঘড়িতে রাত পৌনে তিনটা বাজে । কোথায় বিছানায় শুয়ে আরাম করে ঘুমানোর কথা আর কোথায় থানা পুলিশ করতে হচ্ছে । নিজের উপর আবারো রাগ হতে লাগলো । কেন যে হুট হাট ঝামেলা মধ্যে জড়াতে যাই? বুঝি না ।

মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে । থানার আমাদের ভাগ্যটা ভালই ছিল বলা যায় । ওসি সাহেব থানাতেই ছিলেন । তবুও ত্রিশ মিনিট বসে থাকার পর এএসআই খুরশিদ আমাদের সবাইকে নিয়ে বীরের বেশে ওসির সাহেবের রুমে ঢুকল। যেনো এই মাত্র সে, ওসামা বিন লাদেন'কে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে ।
থানায় আসার পর থেকে দু'জন লেডি কনস্টবল মেয়েটিকে দু'পাশ থেকে ধরে আছে । ওসি সাহেবের রুমে ঢুকতেই তিনি আমাকে চিনে ফেললেন । চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে জড়িয়ে ধরে চেয়ারে বসালেন । মেয়েটিও আমার পাশের চেয়ারে বসলো । এই ওসি'র সাথে আমার একটু আধটু জানা শোনা আছে । দু'একটা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে টুকটাক কথাবার্তাও যেন হয়েছিলো । প্রথমে তিনি থানার একজনকে দিয়ে আমাদের হাত, পা ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ বেধে দিলেন । তারপর চা দিতে বলে দিতে বলে খুব মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনলেন ।

ওসি সাহেবের সাথে আমার সখ্যতা দেখে এএসআই, কনেস্টবলের চেহারা থেকে রক্ত সরে গেছে । চোখ মুখ কালো করে দাড়িয়ে আছে ।
সব কিছু শোনার পর ওসি সাহেব তাদের এক হাত নিলেন । তবুও কেন যেন মনে হলো, এ সবই লোক দেখানো । অবশেষে সবাইকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলে বললেন, তৈরি থাকো সাসপেন্ড অর্ডার পেয়ে যাবা । যতোসব গরু ছাগল নিয়ে কারবার আমার । বুঝেলেন, এদের কারণেই আজ পুলিশ বাহিনীর আজ এই অবস্থা । জনগণের বন্ধু না হয়ে এরা পুলিশকে জনগণের শক্রতে পরিণত করে ফেলেছে । তাই কেউ আর এখন পুলিশকে বিশ্বাস করে না।

আমার সাথে খারাপ আচরণের জন্য তিনি আন্তরিক ভাবে দু:খ প্রকাশ করলেন । তবে ওনাকে তেমনটা দু:খিত মনে হল না ।
আমিও আর ব্যাপারটা নিয়ে আর আগে বাড়াতে চাচ্ছি না । যতো দ্রুত সম্ভব এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে চাইচ্ছি । ঘড়িতে পৌনে তখন চারটা বাজে । প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছ । মাথা ঠিক মতো কাজ করছে না । ওসি সাহেবকে বললাম, বদরুল ভাই আমি তাহলে এবার উঠি । সারা ঘুমাতে পারলাম না । ভোরে অফিস করতে হবে । আপনাকেও বিরক্ত করলাম । ওসি সাহেব আমার পাশে বসে থাকা মেয়েটির দিকে একবার তাকিয়ে তারপর বললেন, এক মিনিট ভাই, একটু বাহিরে আসেন । আমি ওসি সাহেবের পেছন পেছন ওনার রুম থেকে বের হয়ে থানার বারান্দায় এসে দাড়ালাম । ঠান্ডা একটা হাওয়া এসে শরীরে লাগল । বারান্দায় তখন সেই এএসআই কনেস্টবলসহ দাড়িয়ে আছে । দেখে মনে হলো ব্যাচারা বেশ বিপদে পরে গেছে। শিকারী নিজেই শিকার হয়ে গেলে যা হয় আর কি । আমরা বের হতেই দু'জন মহিলা কনেস্টবল ওসি সাহেবের রুমে ঢুকলো । ওসি সাহেব বারান্দায় দাড়িয়ে থাকা এএসআইয়ের দিকে তাকিয়ে হুন্কার দিয়ে বললেন, এখন এখানে কি করছো ? কাজের সময় মনে থাকে না কি করো? তারপর পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, নিন ভাই সিগারেট খান । আমি মাথা নেড়ে না করাতে উনি নিজে সিগারেট ধরিয়ে তাতে লম্বা একটা টান দিয়ে ধোয়া ছেড়ে আমার মুখের কাছে মুখ এনে বললেন, আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে ভাই ।
আমি বললাম, জ্বি বলুন কি করতে হবে ? ওসি সাহেব আরো একবার ধোয়া ছেড়ে বললেন,আজকের ব্যাপারটা মনে রাখবেন না প্লিজ । এটা একটা অনাকাঙ্খিত একটা ঘটনা ভাই । বুঝতেই পারছেন দেশের অবস্থা ভাল না । সর্বক্ষন দৌড়ের উপর আছি । ওদের দোষ দেওয়া যায় না । যে বেতন পায় তাতে মাস শেষে হিমশিম খেতে খেতে মাথা ঠিক রাখা কঠিন । এখন এসব নিয়ে রিপোর্ট হলে নির্ঘাত আমার প্রমোশনটা আটকে যাবে ভাই ।
আমি হেসে বললাম, আরে না না এটা মনে রাখার মতো কিছু না । আমি ইতিমধ্যে ভুলে গেছি মনে করুন । থানায় আসার পর আপনার কাছ থেকে যে ধরনের সহযোগীতা পেয়েছি সেটাই যথেষ্ঠ ।

এমন সময় মহিলা কনস্টেবল দু'জন ওসি সাহেবের রুম থেকে বের হয়ে দরজায় এসে দাড়ালো । তাদের দেখে মনে হলো তারা কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। ওসি সাহেব এগিয়ে যেতেই তারা নিচু স্বরে কিছু একটা বলল । ঠিক আছে তোমরা ভেতরে থাকো ।

তারপর আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, আপনাকে একটু কষ্ট দেব ভাই ।
আমি বললাম, বলুন ...
মেয়েটিকে আপনার সাথে নিয়ে যেতে হবে । ওনাকে থানায় রাখাটা ঠিক হবে না । মেয়েটি নিজের নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছে না বা বলছে না ।

ওসি সাহেবের কথা শুনে আমি বিস্মিত না হয়ে পারলাম না । নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত রাখার চেষ্টা করে বললাম, আমি কোথায় নিয়ে যাবো ? আমি তো ওনাকে চিনিই না। না, না ভাই আপনার এ অনুরোধ আমি রাখতে পারবো না ।
দেখুন, যেহেতু আমি থানার কোন রেকর্ড রাখছি না । তাই মেয়েটি এখানে রাখলে ঝামেলা হতে পারে । তাছাড়া কোন অপরাধ ছাড়া তো ওনাকে কাষ্টডিতেও নিতে পারি না ।
সেটা আপনার প্রবলেম ভাই । আমি ওনাকে নিয়ে যেতে পারবো না । প্রয়োজনে আপনি জিডি লিখুন । আমি রাজি আছি সাইন করতে ।

সেটা লিখলেও তো ওনাকে কোন অপরাধ ছাড়া আটকে রাখতে পারি না । দেখুন ভাই আমার এখানে লোকবল এক্কেবারে কম । তার উপর একটা মাত্র কাষ্টাডি । তাতে বন্ধিরা গাদাগাদি করে আছে । আলাদা ভাবে লোক মেয়েকে রাখার জায়গা নেই ।
তাহলে কোন সেইভ হোমে পাঠিয়ে দিন ।
সেটাও চিন্তা করেছি । কিন্তু তার জন্য বিরাট হাঙ্গামা করতে হবে । আদালতের হুকুম নিতে হবে । কি দরকার এতো ঝামেলা করার ? তার চেয়ে ভাই আপনি ওনাকে আপনার সাথে নিয়ে যান । এর মধ্যে আমি খোজ খবর করছি আত্মীয় স্বজনদের খুজে বের করার । বড় জোড় ম্যাটার অফ টু ডেজ..
না,না ভাই আপনি বুঝতে পারছেন না । আমি ব্যাচেলর মানুষ । একা থাকি । আমার পক্ষে ওনাকে বাসায় নিয়ে রাখা সম্ভব নয় ।
দেখুন, আপনি যে ব্যাচেলর মানুষ সেটা আমি জানি ।আপনি উত্তরার কত নম্বরে সেক্টরে, কত নম্বর বাসায় থাকেন সেটাও জানি । মানে জেনে গেছি ।
আপনি একজন রেসপনসিভল মানুষ বলেই ওনাকে আপনার জিম্মায় দিচ্ছি । মেয়েটাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে ভাল পরিবারের মেয়ে । তার উপরে এই অবস্থা । বুঝতেই চেষ্টা করুণ, এখানে থাকার পর কোন ঝামেলা হয়ে গেলে এক্কেবারে ফেসে যাবো ভাই । আপনারা সহায়তা না করলে আর কে করবে বলুন তো ।
কিন্তু আপনি আমার সমস্যাটা বুঝতে পারছেন না ....
আমি সব বুঝতে পারছি । জাস্ট দু'টো দিন । আমি গাড়ী দিয়ে দিচ্ছি । আপনাদেরকে পৌছে দিবে ।
বাড়িওয়ালে ঝামেলা করবে ভাই । এভাবে একটা মেয়েকে বাসায় নিয়ে যাওয়া যায় না ।
সেটা আমি দেখবো । এ্যই কামাল তোমরা স্যারের সাথে যাও । বাসায় পৌছে বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলে আসবে । আমি উত্তরা থানায় কথা বলে রাখছি ।
পাশে দাড়িয়ে থাকা এএসআই স্যালুট করে বললো, জ্বি স্যার আমি এক্ষুন্নি যাচ্ছি । কথাটা বলেই সে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেল ।
আমার আর কি বলার আছে বুঝতে পারলাম না । কি যন্ত্রনা ! রাগে দু:খে মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে । জলজেন্ত একটা মেয়েকে কি করে বাসায় নিয়ে যাই? সবাই কি বলবে ? তিথি'র কথা মনে হতেই শরীর ঘাম দিয়ে দিচ্ছে । না । আমি আর ভাবতে পারছি না ।

ওসি সাহেব বারান্দার একপাশে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলেন । মেয়েটিকে গাড়িতে বসিয়ে এএসআই কামাল আমার সামনে এসে বলল, স্যার চলুন ।
আমি বিদায় নেওয়ার জন্য ওসি সাহেবের সামনে যেতেই তিনি আমার পিট চাপড়ে বললেন, ভাই দু'টো দিন মাত্র। একটু ম্যানেজ করুণ । কথা দিচ্ছি আমি নিজে ওনার ফ্যামেলি খুজে বের করে আপনার কাছ থেকে নিয়ে এসে পৌছে দেবো ।

কথা আর না বাড়িয়ে হাত মিলিয়ে গাড়ীতে উঠে বসলাম । পুলিশের নীল রং এর জীপ গাড়িটা আগেই স্টার্ট দেওয়া ছিল । আমি ড্রাইভারের পাশের সিটে উঠে বসবেই সেটা চলতে শুরু করল । তখনো বুঝতে পারিনি কি ভয়ানক এক পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছি আমি ।

চলবে .............
সত্যি ভৌতিক - ( প্রথম কিস্তি )

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম!

দেখা যাক দ্বিতীয় কিস্তিতে ভূতের দেখা পাই কিনা ;)
এ পর্বে হালকা আভাস দিলেন বটে, ভয় ধরানো নয় ---

+++

১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৮

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: তারাহুরো করে ভূতের দেখা পেয়ে গেলে হয়তো ভয় ই পাবেন না , তাই ধীরে ধীরে নিয়ে যাবো ভূতের কাছে ;)

২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: দেখি সামনে কি ভয়ানক অবস্থা অপেক্ষা করছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.