নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে \"আমার কবিতা নামে\" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

সাখাওয়াত হোসেন বাবন

আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।

সাখাওয়াত হোসেন বাবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাদুলি - সাখাওয়াত বাবনে\'র রহস্য গল্প - ১ম পর্ব

২০ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:০৯



রেশমা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর চিপ একাউন্টেন্ট রমীজ সাহেব তাবিজ, কবচ, মাদুলিতে একেবারে বিশ্বাস করেন না । কাউকে ঝাড়ফুঁক করা হচ্ছে শুনলে ঘেন্নায় তার শরীর রি রি করে উঠে । আশপাশ থেকে দূরদূর করে তাড়িয়ে দেন । তাবিজ কবজ,ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস করার কারণে ছোট বোন ঝর্ণা'র সাথে সম্পর্ক ছেদ করেছেন বহুবছর।

বিংশ শতাব্দীর এই উৎকর্ষের দিনে মানুষ কি করে এখনো তাবিজ, কবজ, মাদুলিতে বিশ্বাস রাখে সেটা কিছুতেই ওনার বুঝে আসে না । সব যে ভণ্ডামি সেটা তো চোখ বন্ধ করে পাগলেও বলে দিতে পারে । বুঝে না বুঝে মানুষের অতিরিক্ত ধর্ম প্রীতিই এর জন্য দায়ী সেটা তিনি সুযোগ পেলে চাউর করতে ভুল করেন না ।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস । সেই রমীজ সাহবকেই কিনা আজ কালো কাপড়ে মোড়ানো লাল, কালো নীল সুতায় প্যাঁচানো আধলা টাইপের একটা মাদুলি টেবিলের উপর রেখে তার সামনে বসে থাকতে হচ্ছে । মাদুলিটা যোগার করে এনেছে অফিসের পিয়ন মোতালেব। মোতালেবের আবার তাবিজ কবজে খুব বিশ্বাস । মাদুলিটা যার কাছে থেকে এনেছে পুরাণ ঢাকায় তার খুব নামডাক । লোকজন তার কথায় উঠে, তার কথায় বসে । চল্লিশটা জ্বিনাকি নাকি তার সরাসরি মুরিদ । জ্বিন চালান দিয়ে যে কোন সমস্যা চব্বিশ ঘণ্টায় মধ্যে সমাধান করে দেবার গ্যারান্টি একমাত্র সেই দেয় ।

পরিস্থিতি ভয়াবহ না হলে , রমীজ সাহেব কিছুতেই এমনটা করতেন না । কথায় আছে , বিপদে পড়লে বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খায় । রমিজ সাহেবেরও এখন সেই একই অবস্থা । গতকাল ব্যাংক থেকে সাড়ে তেইশ লাখ টাকা তুলে এনে অফিসের সিন্দু'কে রেখেছিলেন। সিন্দুক থাকে রমিজ সাহেবের রুমে। তার বসার টেবিলের পাশে । সারাদিন অফিস করে সন্ধ্যায় সিন্দুক তালা বন্ধ করে। নিজে দাড়িয়ে থেকে রুমের দরজায় তালা দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে চাবি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ।

কিন্তু আজ সকালে অফিসে এসে হাত, মুখ ধুয়ে খবরের কাগজে চোখ বুলাতে বুলাতে কি মনে করে সিন্দুক খুলে দেখেন ভেতরে টাকার ব্যাগটা নেই । মুহূর্তের মধ্যে যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো । সুড়ুৎ করে মাথাটা ঘুরে গেলো । মনে হলো যেন দুনিয়াটা উল্টে গেছে । নিজের হৃদপিন্ডের স্পন্দন নিজেই শুনতে পাচ্ছিলেন । লাফ দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে সিন্দুকের তাকগুলো ওলটপালট করে তন্নতন্ন খুজেও টাকার ব্যাগটা পেলেন না । সিন্দুক খোজা শেষ হলে নিজের বসার টেবিলের ড্রয়ারগুলোতে খুঁজলেন । তারপর ফাইল পত্র রাখার তাকগুলো খুজলেন । কিন্তু না , কোথাও নেই টাকার ব্যাগ। বুঝতে আর বাকি রইলো না কেউ হাপিশ করে দিয়েছে । কিন্তু কার এতো বড় সাহস হবে ? শত ভেবেও কোন কূল কিনারা পেলেন না ।

ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে মাছের মতো হা করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলেন । হাত,পা থরথর করে কাঁপছে। নার্ভাস ব্রেক ডাউন হচ্ছে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ঘামে ভিজে শাট শরীরের সাথে লেপটে গেছে। বুঝতে পারছেন না, এই মুহূর্তে কি করবেন,কি করা উচিত। এতো বছর চাকরী জীবনে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন তিনি কোনদিন হননি ।

দৃশ্যটা রমিজ সাহেবের জন্য চা নিয়ে আসা অফিস পিয়ন মোতালেব এর চোখ এড়ালো না । সে হাতের কাপটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে খোলা সিন্দুকের এলোমেলো তাকগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে তারপর রমিজ সাহেবের দিকে মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “কি হয়েছে স্যার, শরীর খারাপ লাগছে?

মোতালেবের এই দুটো ব্যাক্যের মধ্যে এমন নাটকীয়তা ছিল যে, পাশের রুম থেকেও তার গলা শুনা গেলো । রমীজ সাহেব কোন রকম নিজেকে ঠিক করে নিয়ে মোতালেবের দিকে তাকিয়ে বললেন,জহিরকে ডাকো তো একবার । জুনিয়র একাউন্টেন্ট জহির'কে ডাকার কোন প্রয়োজন ছিলো না । অন্য সবার সাথে সে ততক্ষণে রমীজ সাহেবের দরজার সামনে এসে দাড়িয়েছে। রমীজ সাহেবের কথা শুনে জহির এগিয়ে এসে বলল, কি হয়েছে স্যার?

রমীজ সাহেব সিন্দুকের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, গতকাল যে টাকাটা আনলে সেটা সিন্দুকে নেই ।
জহির চমকে উঠে বলল, বলেন কি স্যার? সঙ্গে সঙ্গে সে ছুটে গেলো সিন্দুকের দিকে । তারপর সিন্দুকের যাবতীয়ফাইল, কাগজপত্র ওলটপালট করে টাকার ব্যাগটা খুজতে লাগলো ।

অফিসের মধ্যে কথা ছড়ায় রকেট গতিতে । এক কান, দু কান হতে হতে খবরটা বড় সাহেবের কান পর্যন্ত পৌছাতে বেশি সময় লাগলো না । এরপর শুরু হলো আর এক যন্ত্রণা । এক এক করে অফিসের সিনিয়র, জুনিয়র সবাই এসে কথা বলে যেতে লাগলো রমীজ সাহেবের সাথে । বেশির ভাগই সান্ত্বনা ও উপদেশমূলক কথাবার্তা । সে সব কথা একান্ত বিপদে না পড়লে কেউ ধৈর্য ধরে শুনবে না ।

বহুদিন পর যেন অফিসের সবাই একটা কিছু নিয়ে গল্প করার সুযোগ পেয়েছে । দু’একজন রসিয়ে রসিয়ে শোনালো তাদের কে,কবে, কোথায় এমন ঘটনার সাক্ষী হয়েছে । মার্কেটিং ম্যানেজার কামাল সাহেব বললেন, " ভাল করে মনে করে দেখুন , ভুল করে বাসায় নিয়ে গিয়েছেন কিনা । ভুলে তো মানুষ কত কিছুই করে ।

রমীজ সাহেব কিছু বলার আগেই তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মোতালেব বলে উঠলো , "না ,গতকাল স্যার অফিস হতে খালি হাতে বের হয়েছেন । আমি নিজ হাতে স্যারের রুম তালা বন্ধ করেছি । আজ সকালে স্যার আসার পরে আমিই তালা খুলে দিয়েছি । গতকাল ব্যাংক থেকে আসার পর স্যার অফিসের বাহিরেরও যান নাই ।

মোতালেবের কথায় রমিজ সাহেবের চোখে পানি চলে এলো । সবাই যখন ইনিয়ে বিনিয়ে দোষটা তার কাঁধে চাপাতে চাইছে , অফিসের সবচেয়ে দরিদ্র ফাই-ফরমাস খাটা মানুষটা তখন তার পাশে দাড়িয়ে তার পক্ষে সাফাই গাইছে ।

মোতালেবের কথা কামাল সাহেবের বিশেষ পছন্দ হলো না । তিনি মুখে বাকিয়ে বললেন, তাহলে তো চুরিটা অফিসের ভেতরের কেউ করেছে । ঈঙ্গিতটা এবার তিনি সরাসরি মোতালেবের দিকে গেলো। তারপর একটু দম নিয়ে মোতালেবের ভাব ভঙ্গি দেখে নিয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বললেন, সেই কবে আইটিকে বলেছিলাম, সবখানে সিসি ক্যামেরা লাগাতে । কিন্তু কে, শুনে কার কথা । এতোগুলো টাকা তো আর সহজ ব্যাপার না যে চুরি হলো আর পকেট থেকে রেখে দিলেই ল্যাঠা চুকে যাবে । দেখুন, বড় সাহেব কি বলেন । ভাল বিপদে পড়েছেন স্যার আপনি। আল্লাকে ডাকেন । তিনি ছাড়া এই বিপদ থেকে আর কেউ আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না ।

বড় সাহেব অফিসে আসার পর রমিজ সাহেব পর পর দু’বার তার রুমের দরজায় দাড়িয়ে ভেতরে উঁকি ঝুঁকি মেরে ফিরে এসেছেন। ভেতরে ঢুকতে পারেন নাই । অফিসে ঢুকার পর থেকে তিনি ফোনে ব্যস্ত হয়ে আছেন। আজ তিনি যেন একটু বেশি রকমেরই ব্যস্ত । যতো দ্রুত সম্ভব ঘটনাটা বড় সাহেবকে জানানো দরকার । আরো কয়েকবার চেষ্টা করে ও কথা বলার সুযোগ না পেয়ে শেষমেশ রমীজ সাহেব ইন্টার কমে বড় সাহেবকে ফোন দিলেন। কিন্তু বারংবার রিং হবার পরেও বড় সাহেব ফোন ধরলেন না দেখে রমীজ সাহেব হতাশ হয়ে ফোন রেখে দিলেন ।

বড় সাহেবের এমন আচরণে চোখে মুখে অন্ধকার দেখা ছাড়া আর কোন উপায় রইলো না। বুঝা যাচ্ছে বড় সাহেব ইচ্ছে করে তাকে এভোয়েট করছেন । এতো বড় একটা ঘটনার পুরো দায়টা তার মাথায় চাপিয়ে দিয়ে অফিসের সবাই যেন সিনেমা দেখতে বসেছে ।

কি করবেন রমীজ সাহেব, কোথা থেকে এনে দিবেন এতোগুলো টাকা । কিছূ ভাবতে পারছেন না । মানুষের জীবন বড় অদ্ভত, কত অল্পতেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় ।

ঘড়ির কাটা টিকটিক করে ১টায় পৌঁছল ।
রমিজ সাহেব আরো কয়েকবার বড় সাহেবের রুমে উঁকিঝুঁকি মেরে আসলেন । কিন্তু কোন লাভ হলো না। একবার দরজা ধাক্কা দিয়ে মাথা বের করে বলেছেন, স্যার আসবো ?
বড় সাহেব কম্পিউটার থেকে মুখে না সরিয়েই বলেছেন এখন না, পরে আসুন । দেখছেন না ব্যস্ত আছি । রমীজ সাহেবের ইচ্ছে হলো , তারপরেও রুমে ঢুকে পুরো ঘটনাটা বড় সাহেবকে খুলে বলেন । কিন্তু তার মধ্যে লালন করা বহুদিনের শিষ্টাচার তাকে বাঁধা দিলো ।

দুপুরে রমিজ সাহেব আজ লাঞ্চ করলেন না । রুমে নিজেকে এক প্রকার বন্দি করে রাখলেন। কিছু অফিসিয়াল কাগজে সাইন করলেন । রুটিং ওর্য়াকগুলো করে যেতে লাগলেন কিন্তু কোন কিছুতেই ঠিক মতো মনোযোগ দিতে পারলেন না । বারবার মনে হতে, লাগলো এতোগুলো টাকা ! এতোগুলো টাকা । হায় খোদা; এতোগুলো টাকা আমি কি করে ফেরত দেবো ? পর মুর্হুতেই আবার ভাবলেন , আমি কেন ফেরত দেবো ? আমি তো আর নেইনি যে ফেরত দেবো। অফিসের দায়িত্ব টাকাটা কে বা কারা নিয়েছে সেটা বের করা ।

কথায় আছে বিপদে নাকি বন্ধু চেনা যায় । আজ রমীজ সাহেব সেটা স্বচক্ষে দেখলেন । দু’দিন আগেও যে মানুষগুলো প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট, বোনাসের জন্য তার হাতে, পায়ে ধরত আজ তারা মুহূর্তে চেহারা পাল্টে ফেলেছে । তাকে রীতিমতো দেখেও না দেখার ভান করছে । কেউ কেউ এমন ভাবে তার দিকে তাকাচ্ছে, যেন তাদের চোখের সামনে দিয়ে রমীজ সাহেব টাকাটা নিয়ে গেছেন ।

দুপুরের পর বড় সাহেব বাহিরে চলে গেলেন । বড় সাহেবকে রমিজ সাহেবের রুমের সামনে দিয়েই বের হতে হয় । অন্যান্য দিনে বড় সাহেব অফিস ত্যাগের আগে রমিজ সাহেবের দরজায় দাঁড়িয়ে দু একটা কথা বলে যান । শট ডিসকাশন সেরে নেন। আজ সে সবের ধারে দিয়েও গেলেন না । অথচ সততা,নিষ্ঠা আর কর্মদক্ষতার জন্য এই বড় সাহেব তাকে কতবার যে ছোট ভাই বলে পিঠ চাপরে দিয়েছেন তার ইয়াত্তা নাই । আজ বড় সাহেবের এই আচরণে রমিজ সাহেবের ভেতরটা ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে গেলো । কিন্তু তিনি সেটা কাউকে বলতে পারলেন না ।

বেলা তিনটার দিকে মোতালেব কোথা থেকে আধুলি টাইপ মাদুলিটা এনে রমিজ সাহেবের টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলল, " চিন্তা করবেন না স্যার , সন্ধ্যার মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। বাবা গ্যারান্টি দিয়েছে । রমীজ সাহেব কিছু বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন ।

মোতালেব টেবিলের উপর মাদুলিটা রেখে তার উপড় একটা গোলাপ ফুল ছিড়ে পাপড়িগুলো ছড়িয়ে দিয়ে দিতে যা বলল তা হচ্ছে, সে রমীজ সাহেবের সমস্যার সমাধানের জন্য গ্যান্ডারিয়ার এক সাধুর কাছ থেকে মাদুলিটা নিয়ে এসেছে । টাকা চুরির পুরো ঘটনা শুনে সাধু বাবা নাকি তাকে বলেছে, চিন্তার কিছু নাই । আজ সন্ধ্যার মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে । তোর স্যারকে চিন্তা করতে না করবি । মাধুলিটা নিয়ে গিয়ে তোর স্যারের টেবিলের উপর রাখবি । এতেই কাজ হয়ে যাবে । চোর অফিসে থাকলে নাকে,মুখে রক্ত উঠে মরবে । কাজ হয়ে গেলে পাঁচশো এক টাকা দিয়ে যাবি । ভুলিস না কিন্তু ।

কিন্তু সাধু বাবার কথা মতো মাদুলিতে কোন কাজ হলো না । সন্ধ্যার পর রমিজ সাহেবকে অর্থ চুরির অপরাধে গ্রেফতার করা হলো ।

এই ছিলো তাবিজ কবজে অবিশ্বাসী রমীজ সাহেবের সাথে ঘটে যাওয়া গল্পের প্রথম ভাগ ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: লিখতে থাকুন। আমরা পড়তে থাকি।

০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:৫১

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ইনশাআল্লাহ লিখে যাবো। হয়তো একদিন বিখ্যাত ও হয়ে যেতে পারি :

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.