নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

শেখ এম উদ্‌দীন

আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।

শেখ এম উদ্‌দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা এবং ব্যাক্তিত্ব ও বন্ধুত্ব এর মধ্যে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ?

৩১ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৮:০৩

আরবি তে একটি প্রবাদ হল,

"বন্ধু হও হযরত আবুবকর (রাঃ) এর মত

নেতা হও হযরত ওমর (রাঃ) এর মত

লজ্জাশীল হও হযরত ওসমান (রাঃ) এর মত

বীর হও হযরত আলি (রাঃ) এর মত

আর জীবন গড় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর আদর্শের মত।"



প্রথম লাইন টি নিয়ে কিছু বলব।

বন্ধুত্ব আজ ফেসবুকের কল্যানে যার ব্যাপ্তি বিশ্বময়। আসলেই কি বর্তমান প্রযুক্তি বন্ধুত্ব বাড়িয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবের পূর্বে আসি বন্ধু আসলে কি এবং কোন গুনাবলি থাকলে একজন মানুষের সাথে অন্য একজন মানুষের সম্পর্ককে বন্ধুত্ব বলা যাবে। অথবা কারো বন্ধু হতে হলে আপনার মধ্যে যে গুন গুলো থাকতে হবে।



আমার অভিজ্ঞতা অনুসারে মানব জাতির ২০-২৫% মানুষ বন্ধুত্ব করার ও কারো বন্ধু হবার যোগ্যতা রাখে। কথাটা তে আঁতকে উঠবেন না এটি অতি নির্মম সত্য কথা। বন্ধুত্ব করতে হলে আপনার মধ্য সরবনিন্ম দুটি গুন থাকা অত্যাবশ্যকীয় আর এগুলো হল-

১. আপনাকে হতে হবে নিঃস্বার্থ বান একজন মানুষ।

২. বন্ধুর জন্য যে কোন ছাড় দিতে আপনাকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রয়জনে বন্ধুর জন্য নিজের মুল্যবান কিছু সাক্রিফাইস করতে যদি আপনার মনে খুব দ্বিধা হয় তবে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনি কারো বন্ধু নয় বা কারো বন্ধু হবার যোগ্যতাও আপনার নাই। আর যে আপনার সত্যিকারের বন্ধু সে কখনোই বন্ধুত্ব প্রমানের জন্য আপনার জীবন চেয়ে বসতে পারে না।



এখন অনেকেই বলবেন এই যে আমি ১০-১৫ জন নিয়ে একত্রে থাকি। প্রত্যেককে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাই, ফেসবুকে লাইক দেই, একসাথে ঘুরতে যাই ইত্যাদি ইত্যাদি করি, তাহলে আমরা কি বন্ধু নয়? আপনি সঠিক এক জন বন্ধু ও আরেকজন বন্ধুর জন্য এগুলই করে তবে আপনার এবং তার মধ্যে ব্যাবধান হল একজন বন্ধু মণ থেক এবং আন্তরিকতার সাথে এই একই কাজ গুলো করে কিন্তু আপনি করেন সামাজিক দায়বদ্ধতা হতে। আপনাদের এই ১০-১৫ জনের সম্পর্কটিকে আমি চলার সাথি বা সাময়িক সঙ্গি বলতে পারি কিন্তু বন্ধুত্ব বলব না। সেই আপনার বন্ধু যে আপনার জন্য জীবন বাজি রাখতেও দ্বিধা করবে না। যে আপনার বিপদে আপনি সাহায্য চাওয়ার পূর্বেই এসে হাজির হবে সাহায্যের ঝুরি নিয়ে।

এ দিক গুলো যদি বিবেচনা করে দেখেন যে এই গুন দুটি আপনার মধ্যে নাই বা আশা সম্ভব ও না তবে কাউকে কখনো নিজের বন্ধু বলবেন না। এতে করে ওই ব্যাক্তিটি ধোঁকা খাওয়ার সম্ভাবনা ১০০%। কারন যাকে আপনি বন্ধু বলেছেন সে হয়ত বন্ধুত্ব করার ২ টি প্রধান গুনসহ সব গুলো গুনের অধিকারী তাই সে মনে করবে আপনিও একই গুনের অধিকারী। কিন্তু বাস্তবতা নিরিখে সে যখনি আপনার কাছ হতে বন্ধুতের হক পাইতে চাইবে তখনি আপনি আপনার স্বভাবসুলভ স্বার্থপর চেহারাটা নিয়ে হাজির হবেন। বন্ধু হওয়া বা কাউকে বন্ধু করার জন্য সত্যই কিছু যোগ্যতা দরকার যা আপনার নাই। তাই নিজের স্বার্থপরতা নিয়ে নিজেই নিজের মত থকুন অন্যকে ধোঁকা দেবার কি দরকার??



এসকল কারনেই আমি ফেসবুকের বন্ধুত্বকে সরবচ্চ চলার সাথি বলতে পছন্দ করি (কিছু বন্ধু ও আছে আমার এই চলার সাথিদের মাঝে)।

বর্ণচোরা না হয়ে বুক ফুলিয়ে বলুন আমার দ্ধারা কারো সাথে বন্ধুত্ব সম্ভব ন।এতে করে কিছু গোবেচারা ধরনের নির্বোধ (আপনার দৃষ্টিতে) কিছু মানুষ আপনার আসিম বুদ্ধিমত্তাকে সমিহ করে নিজের পীঠ বাঁচানোর সুযোগ টুকুন অন্তত পাবে।



তাই আসুন নিজে যা তা প্রকাশ করার মত সৎসাহস টুকুন অন্তত আমরা দেখাই।

লেখক যথার্থই বলেছেন- নির্বাক মিত্রের চেয়ে স্পষ্টভাষী শত্রু থাকা উত্তম



এবার একটা ঐতিহাসিক সত্য ঘটনার আলোকে কিছু কথা বলব-



শেখ হায়দার আলী যিনি মহীশুরের একজন সামান্য সিপাহী থেকে নিজের সততা, বুদ্ধি ও ব্যাক্তিত্বের দ্ধারা প্রধান সেনাপতি পরবর্তীতে মহীশুরের মহারাজ হন। তাঁর অন্য আরেকটি পরিচয় হল তিনি বাংলার নবাব কুলের শিরোমণি বিস্তর বৈষয়িক জ্ঞান এবং প্রজ্ঞাবান নবাব টিপু সুলতানের পিতা। যুদ্ধ বিদ্যা এবং সমরাস্ত্র ডিজাইন ও পরিচালনাতে টিপু সুলতানের জুড়ি ভারতবর্ষে ছিলনা বললেই চলে।যার ফলে ইংরেজরা টিপু সুলতান কে তাঁর পিতা শেখ হায়দার আলীর মতই ভয় পেত ও সমীহ করে চলত। এই শেখ হায়দার আলীর জীবনের ছোট্ট একটা গল্প আজ লিখব বলে বসলাম।



শেখ হায়দার আলীর পিতা ছিলেন সিরা রাজ্যের প্রধান সেনাপতি শেখ ফাতেহ মহাম্মদ। ১৭১৫ সালের বুন্দিকোঁটার যুদ্ধে কেল্লা দখলের কৃতিত্ব সরুপ সিরার নবাব আবেদ আলিসাহ ফাতেহ মহাম্মদ কে উক্ত কেল্লার সংযুক্ত এলাকার সুবেদার নিয়োগ করেন। কিন্তু এতে নবাব পুত্র তাহির খান ক্ষিপ্ত হয়ে ফাতেহ মহাম্মদ কে মেরে ফেলেন। পিতার মৃত্যুর সময় শেখ হায়দার আলীর বয়স ছিল খুবই কম তথাপি পিতার মৃত্যুর বদলা নিতে চাচাত ভাই হায়দার খানের পিস্তল চুরি করে তিনি বাসা থেকে পালিয়ে যান। পালানো অবস্থাতে তাঁর সাথে সমবয়সী বালক রামচন্দ্রন এর পরিচয় হয়। রামচন্দ্রন শেখ হায়দার আলীকে বিদ্রোহী গুষ্ঠির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। যাদের সহযোগিতাই শেখ হায়দার আলীর পরবর্তী উত্থান। শেখ হায়দার আলীর মহীশুরের সেনাপতির সাথে সাথে সিরা রাজ্যের নবাব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন। এদিকে তখন তাঁর বাল্যকালের সেই বন্ধু রামচন্দ্রন কবিতা লিখতে লিখতে নিজের মেয়ে ভাগ্যলক্ষ্মীর যে বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে তার সম্পর্কেও বেখবর। এমনি সংকটময় মুহূর্তে ভাগ্যলক্ষ্মীর মামা তার জন্য একজন সুপাত্রের সন্ধান দেন কিন্তু পাত্র পক্ষের দাবী মিটাতে ১০০০ স্বর্ণ মুদ্রা চেয়ে বসেন। নিষ্কর্ম রামচন্দ্রন কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে তার বাল্যবন্ধু শেখ হায়দার আলীর শরণাপন্ন হবার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু নবাব মহলের সিপাহিরা রামচন্দ্রন কে মহলে প্রবেশ করতে না দিলে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে সে যখন বাড়ি চলে যাচ্ছিল তখন একজন সেনা তাঁকে বলল তুমি জুম্মার নামাযের পরে মসজিদের সামনে থেকো তাতে হয়ত দেখা করার সুযোগ পেতে পার। রামচন্দ্রন মসজিদের সামনে দাড়িয়ে এই ভেবে দ্বিধায় ভুগতেছিলেন যে শেখ হায়দার আলী তাঁকে চিনবে তো? ভাগ্যের নির্মম পরিহাস রামচন্দ্রন এর সুযোগ আসার পূর্বেই শেখ হায়দার আলীর তাঁর ছেলে টিপুকে নিয়ে সামনে অন্যে একজনের সমস্যা শুনতে চলে গেলেন। অনেক দ্বিধা নিয়ে পিছন হতে রামচন্দ্রন ডাকলেন হায়দার, ও হায়দার। এভাবে তিনবার ডাকার পর ব্যাপারটি শেখ হায়দার আলীর কর্ণগোচর হল এবং সে পিছন ফিরে দেখল জীর্ণশীর্ণ এক লোক তাঁকে নাম নিয়ে ডাকছে। এতে শেখ হায়দার আলী বিরক্ত না হয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখল এটা তাঁর বাল্যকালের বন্ধু রামচন্দ্রন। সাথে সাথেই রামচন্দ্রন কে বুকে জড়িয়ে শেখ হায়দার আলী নিজের প্রাসাদে নিয়ে এল। পরের গল্প লিখার প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি। কারন সবাই তা অনুমান করে নিতে পারবেন।

এই শেখ হায়দার আলীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল সে তাঁর নাম দস্তখত করতে জানত তাও উল্টা হা (আরবি হরফ) দিয়ে।



এখন আসল কথা তে আসি, আমাদের মাঝে কিছু মানুষ আছে যারা নিজের বাল্য কালের বন্ধু এমন কি নিজের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বন্ধুদের সাথেও আচরণ পরিবর্তন করে ফেলতে দ্বিধা করে না। এবং এদের দাবী এটা তাদের ব্যাক্তিত্ববোধের পরিচায়ক। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এমন আচরণ কে মূর্খতা বলা চলে ব্যাক্তিত্ব নয়। কারন সকল কীর্তিমানরাই সহজ সরল ও শেখ হায়দার আলীর মত ব্যাক্তিত্ববান ছিলেন। শেখ হায়দার আলী চাইলে রামচন্দ্রন কে আলিঙ্গন না করেও তাঁর প্রয়োজন শুনে অর্থ দিয়ে বিদায় করে দিতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেন নি। কারন তিনি জানতেন তাঁর এই ছোট্ট আলিঙ্গন রামচন্দ্রন এর কাছে রামচন্দ্রনের প্রয়োজনীয় মুদ্রার চেয়ে কয়েক হাজারগুন বেশী দামি।



তাই আসুন ব্যাক্তিত্ববোধের দোহাই দিয়ে নিজের কুটিলতা কে না ঢাকি এবং অশিক্ষিত শেখ হায়দার আলীর মত ব্যাক্তিত্ববান হবার চেষ্টা করি। এর ফলে আল্লাহ্‌ চাহে তো আপনার ঘরেও জন্ম নিতে পারে প্রজ্ঞাবান নবাব টিপু সুলতানের মত সন্তান। কারন আজ আপনি যে ধূর্ততার দ্ধারা আপনার বন্ধু বা নিকটজনকে ধোঁকা দিচ্ছেন কাল আপনার সন্তান ই অন্য যেকোনো উপায়ে সেই ধোঁকার ফল ভোগ করবে।



অতএব সকলের নিকট একটা অনুরধ আসুন নিজে শুধরাই ও অন্যকে শুধরাতে সাহায্য করি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:০৫

মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন ভাই, দৃষ্টিভংগী বদলে দেওয়ার মতো লেখা!

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:৩১

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ মোঃ সাইফুল্লাহ শামিম


২| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০৫

ইলি বিডি বলেছেন: অসাধারন।

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:৩২

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ ইলি বিডি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.