নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

শেখ এম উদ্‌দীন

আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।

শেখ এম উদ্‌দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের গল্প শুনুন।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২২

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দলনের মিছিলে যাবার জন্য প্রস্তুত ঢাকা কলেজের এক ছাত্র। তখনকার মিছিল বর্তমানের মত এত লোভনীয় বা সহজ ছিল না। আর মিছিলের পরে বিরয়ানীর প্যাকেট বা ইয়াবা কিংবা টাকার গোছা পাওয়া যেত না। এমন কি মিছিলে যাওয়ার পূর্বে সকলের নিজের কাছের আত্মীয় যিনি ঢাকা থাকেন তাঁদের নাম ঠিকানা লিখে পকেটে রেখে দিতেন। কারন যেকোনো মুহূর্তে ঘাতকের বুলেট প্রান কেড়ে নিতে পারে এবং মৃত্যুর পরে তাঁর লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হতে পারে। এই আশংকা দূর করার জন্য পকেটে ঠিকানা লিখে রাখা। নাহ আপনি যত সহজে পড়ছেন বা আমি যত সহজে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললাম ব্যাপার গুলো অত সহজ ছিল না। এরপরেও পকেটে চিরকুট নিয়ে ছেলেটি মিছিলে গেল “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই” শ্লোগান দিতে। মিছিলের সামনে থেকে তিনি গ্রেফতার হলেন। পুলিশের ভ্যানে উঠতে না উঠতেই হায়েনাদের বুলেটে ঝরে পড়ল সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত দের লাশ। শহীদ দের লাশ এবং তাঁর মত অনেকের কারাভোগের ফসল হিসেবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেল আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা।

ঢাকা কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করার পরে ছেলেটি ভর্তি হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে পিতার পক্ষে প্রচারণা চালানোর অপরাধে পাকিস্তান সরকারে দায়ের কৃত মিথ্যা মামলার ফাঁদে পরে ঢাবির পড়াশুনা সমাপ্ত করা আর হয়ে উঠল না তাঁর। এর পরে যোগ দিলেন শিক্ষকতা পেশাতে। উদ্দেশ্যে নিজের আদর্শের সৈনিক তৈরি করবেন যারা এই দেশের মানুষকে তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে। একজন আদর্শ শিক্ষকের উদাহরণ টানলে ওনার নাম আসতে বাধ্য। তৎকালীন সময়ে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার পূর্বে নিজেদের হাজার ব্যস্ততা থাকলেও রাতে শিক্ষার্থীরা ঠিকমত পড়াশুনা করে কিনা দেখতে তাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তা অবলোকন করতেন। তিনিও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তিনি তাঁর অনেক ছাত্রকেই এই দেশের জন্য কাজ করা শিখিয়েছিলেন যার মধ্যে অন্যতম হলেন ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান কিংবা ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন তুখোড় ছাত্র নেতা তোফায়েল আহমেদ।

নীতির ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অবিচল একজন মানুষ। মানুষের দুঃখে কষ্টে সর্বদা মানুষের পাশে দাড়াতে পছন্দ করতেন। দেশের জন্য যেকোনো ঝুকি নিতে পিছপা হতেন না। তাই তো ১৯৭১ সালের সেই অগ্নিঝরা ৯ মাস ৯ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। যে জন্য ভোলার আরেক কৃতি সন্তান কাজী আফতাব উদ্দিন আহমেদ এর উদ্যোগে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেন। তিনি নিজ জন্মস্থান ভোলা জেলার বরহানুদ্দিনে একটি মহাবিদ্যালয়, একটি বিদ্যালয়, একটি আলীয়া মাদ্রাসা, এতীমখানা সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিজেদের সম্পত্তি প্রদান সহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আমি আমার ছাত্রদের বলি একজন ভালো শিক্ষক যিনি তাঁর ক্লাস খুব সুন্দর ভাবে পরিচালনা করতে পারেন তিনি যেকোনো দায়িত্ব ও খুব ভালভাবে পরিচালনা করতে পারেন। আমার এই কথার ভিত্তি হল একটি ক্লাসে সর্বদা সমাজের সকল মন মানসিকতার শিক্ষার্থী থাকে সেই সকল শিক্ষার্থীদের যিনি ভালভাবে পরিচালনা করতে জানেন তিনি দেশ ও ভালো ভাবে পরিচালনা করতে পারবেন। আর আমার এই কথার উদাহরণ বা জ্বলন্ত প্রমাণ ছিলেন এই মহান ব্যক্তি। যিনি একসময় উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবেও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়নের সময় তিনি মহান জাতীয় সংসদের একজন সাংসদ ছিলেন।

সমগ্র বাংলাদেশে খুব অল্প সংখ্যক মানুষই রয়েছেন যারা একই সাথে ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযোদ্ধা সেই মুষ্টিমেয় মানুষের একজন আমাদের বরহানুদ্দিনের সন্তান। তিনি শুধু ভাষা বা দেশ দিয়েই তাঁর কর্তব্য সম্পন্ন করেন নি। সাড়া পৃথিবীতে তিনি ছড়িয়ে রেখে গেছেন তাঁর আদর্শ ধারণ কারী শিক্ষার্থীদের। আমার বাবা ঐ ভাগ্যবানদের মধ্যে একজন যিনি উনাদের মত শিক্ষকের ছাত্র হবার গৌরব অর্জনের সাথে সাথে তাঁদের আদর্শ সারাজীবন ধারণ করে রেখেছেন। আমাদের প্রাক্তন সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হাফিজ ইব্রাহীম, বর্তমান সংসদ সদস্য আলী আযম মুকুল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীতে কর্মরত আব্দুল হক সাহেব সহ তাঁর এমন অনেক শিক্ষার্থীরা বর্তমানে দেশে বিদেশে গুরুত্ব পূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।

পরিতাপের বিষয় হল আমাদের নতুন প্রজন্মকে এই সকল জাতীয় বীরদের বীরত্বের গল্পের সাথে কিংবা তাঁদের আদর্শ এবং নীতির সাথে পরিচিত করে দেয়ার কোন উদ্যোগ আজও নেয়া হয় নি। আমি ওনার একজন ছাত্রের সন্তান হিসেবে আমাদের এলাকার সকল পর্যায়ের সম্মানিত ব্যক্তি বর্গ বিশেষ করে ওনার ছাত্রগণের নিকট অনুরোধ করব যেন তাঁরা সকলে মিলে এই মহান বীর এর স্মৃতি সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর আদর্শ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন।

পুনশ্চঃ যারা উপরের লেখা পরেও ওনার নাম মনে করতে পারছেন না তাঁদের জন্য বলছি ওনার নাম ছিল- রেজা এ করিম চৌধুরী বা চুন্নু মিয়া। চুন্নু স্যার হিসেবেই উনি বেশী পরিচিত। ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ তারিখে এই আদর্শ শিক্ষক জন্ম গ্রহন করেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.