নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

শেখ এম উদ্‌দীন

আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।

শেখ এম উদ্‌দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুল্ক মুক্ত প্রাইভেট কার এবং শুল্ক যুক্ত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:০৪

[লেখাটি ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে অনলাইন বাংলা নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত]

একজন মানুষের রাষ্ট্রের কাছে প্রাপ্য মৌলিক চাহিদা গুলো হল-
১. খাদ্য, ২. বস্ত্র, ৩. বাসস্থান, ৪. চিকিৎসা এবং ৫. শিক্ষা। রাষ্ট্র তাঁর নাগরিকদের এই পাঁচটি নুন্যতম মৌলিক চাহিদা পুরনে ব্যর্থ হলে ঐ রাষ্ট্রকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ব্যর্থ রাষ্ট্র বলেন। খাদ্যে আমাদের দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে দাবী করা হলেও অভুক্ত মানুষ যে একেবারে নেই তা বলা যাবে না। বস্ত্র এবং বাসস্থানের অভাব অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন তবে প্রকট নয়। চিকিৎসা সেবার নামে ব্যবসা যে হচ্ছে না তা অস্বীকার করা অসম্ভব। সাধারণত যে মৌলিক চাহিদাগুলো একটি উন্নয়নশীল দেশে ব্যবসার আওতামুক্ত রাখা অতীব জরুরী তার মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষা। যদি এবং কেবল যদি মানসম্পন্ন শিক্ষাকে ব্যাবসার আওতামুক্ত রেখে সর্বস্তরে তা ছড়িয়ে দেয়া যায় তাহলেই একটি দেশ উন্নয়নের স্বর্ণ শিখরে আহরণ করতে পারে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা পিরামিডে এখন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। যা জাপান, ক্যানাডা কিংবা অ্যামেরিকাতে নেই। একটি দেশকে উন্নত করতে হলে এই সময়ের সঠিক ব্যবহার একান্ত অপরিহার্য একটি বিষয়। এই কথা অনস্বীকার্য যে যদি এই জনগোষ্ঠীকে সঠিক ভাবে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ দেয়া না যায় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরেধীরে মুখ থুবড়ে পড়বে। অর্থাৎ মাণসম্মত শিক্ষার সহজলভ্যতা এখন বাংলাদেশের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।


প্রাথমিক হতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত পাশের হারের সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। একই হারে বিশ্ববিদ্যালয় এর সংখ্যা বাড়েনি। বর্তমানে ৩১৫০০ জন শিক্ষার্থী এইচ এস সি পাশের পরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার সুযোগ পায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বর্তমানে এর ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থীর ভারে ন্যুজ হয়ে আছে। যে কারনে নীতি নির্ধারক গণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ গুলোকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করে এর কার্যক্রমে স্বাভাবিকতা আনতে সচেষ্ট রয়েছেন। উচ্চ শিক্ষার এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিটাতেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আবির্ভাব। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সহ ইউ জি সি এর দেয়া তথ্য মতে বাংলাদেশে বর্তমানে ৮৪ টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ব্যানবেইস এই তথ্য অনুসারে ২০১৪ সালে ৪,৫৪,৫৩০ জন শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহ) এবং ৩,৯৯,১৮২ জন শিক্ষার্থী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ অধ্যয়নরত আছে। শতকরা হিসেবে ৪৬.৭৫% শিক্ষার্থী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতিত এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষার বিকল্প কোন ব্যবস্থা কল্পনা করা অলীক কল্পনা ব্যতিত অন্য কিছু নয়।

এই কথা অনস্বীকার্য যে বিশ্বের সকল দেশেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলো এক ধরণের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান কিন্তু বাংলাদেশে এর মধ্যে সিংহভাগই লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। নর্থ সাউথ বা ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অর্থ ব্যয় করে একজন শিক্ষার্থী বি বি এ পড়ছে হয়ত এর অর্ধেক বা তারও কমে অন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একই বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা প্রদান করছে। এই ধরণের অসামঞ্জস্যতার পাশাপাশি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে অনিয়মের অভিযোগও কম নয়। একই সাথে উন্নত দেশের সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মৌলিক বিষয়ের উপর ডিগ্রী দিলেও বাংলাদেশে তা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই সকল অনিয়ম বা বঞ্চনার সমতা বিধানের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এড়াতে পারে কিনা তাও ভেবে দেখা প্রয়োজন। এই অনিয়ম গুলো পুজি করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যে এক ধরনের আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে তা বলাবাহুল্য। এই আয়ের উপর সরকার ট্যাক্স বসাতেই পারে এবং তা যৌক্তিক। কিন্তু সেই ট্যাক্স পরিশোধের জন্য যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় বাড়ার অজুহাতে তা শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় তা হয়ে উঠে অমানবিক। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ধনীর দুলালরা যেমন পরে তেমনি এখানকার সিংহভাগ শিক্ষার্থীই হল অনেক পরিবারের স্বপ্নের একমাত্র সম্বল আলালেরা। যে আলাল সংসারের হাল ধরবে ভেবে অভিভাবক গণ হালের গরু বিক্রয় করে উচ্চ শিক্ষার এই বাড়তি ব্যয় বহন করেন। তাঁদের উপর এমন করের বোঝা চাপানো অযৌক্তিক।

ভাবতে অবাক লাগে যে দেশে জন প্রতিনিধি গণ শুল্ক মুক্ত সুবিধাতে কোটি টাকার গাড়ি ক্রয় করতে পারে সেই দেশেই অসম ব্যয়ের ভার বহন করে চলা এই শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ৭.৫ % কর প্রদান করতে হবে। গাড়ি মৌলিক চাহিদা নয় কিন্তু তাঁর পরেও ক্ষেত্র বিশেষে তা কর মুক্ত অথচ যে মৌলিক চাহিদার সহজ লভ্যতা রাষ্ট্রের সফলতার নির্নায়ক তা কর যুক্ত। এ সকল শিক্ষার্থী যদি এক যোগে ঘোষণা করে যে আমরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব না, কর ও দেব না, আমাদের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থা করুন। তখন কি হবে এ কথা কি আমাদের নীতি নির্ধারক গণ ভেবে দেখেছেন? পারবেন কি এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থা করতে? একে তো অসামঞ্জস্য এবং অস্বচ্ছ শিক্ষা ব্যয় তার উপরে আবার ঐ অসামঞ্জস্য অর্থের উপরে নতুন এক করের বোঝা চাপানো যেন মরার উপর খরার ঘা এর মতই। বিশ্বের অন্যান্য দেশ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এমন উদ্ভট করের সন্ধান পাওয়া যাবে না। উন্নত দেশে সন্তানের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে পিতা-মাতার আয়কর থেকে শুরু করে সকল করে ছাড় দেয়া হয় এই জন্য যে ঐ পিতা মাতাকে তাঁর সন্তানের ভরণপোষণ করতে হয়। এমনকি তাঁদের শিক্ষা বা চিকিৎসা ব্যয় পিতামাতার আয়ের উপর নির্ভর করে। কারো পিতা-মাতা মাসিক এক কোটি টাকা আয় করলে তাঁর সন্তানের ব্যয় ও ঐ আয়ের সমানুপাতে বাড়বে। আবার কেউ সামান্য আয় করলে সামান্য খরচেই ঐ কোটিপতির সন্তানের সমান সুবিধার শিক্ষা কিংবা চিকিৎসা সেবা পাবে। আমরা উন্নত হতে চাই কিন্তু উন্নত দেশের এই সকল নিয়ম গুলো গ্রহণ করতে চাই না।

বাড়তি এই করের বোঝা যেন আমাদের বার বার ফরাসি বিপ্লবের পূর্বের ফ্রান্সের কথাই মনে করিয়ে দেয়। আজ শিক্ষার্থীদের এই বাড়তি করের বোঝা চাপানোর জন্য রাস্তাতে নামতে হয় পুলিসের লাঠীচার্জের মুখোমুখি হতে হয়। অথচ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম একটি চেতনা ছিল সাম্যের বাংলাদেশ গড়ার চেতনা। সেই সাম্যের বাংলাদেশে অসাম্যের প্রতিযোগিতা আজ সর্ব ক্ষেত্রে বিরাজমান। শহীদদের আত্মা আজ অতৃপ্ত এই বৈষম্যের বাংলা দেখে। সেই বৈষম্যের ধারা আরও প্রকট করতেই এই করের ব্যবস্থা করা হল বলেই প্রতীয়মান হয়। দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে মাণ সম্পন্ন উচ্চ শিক্ষার যেমন বিকল্প নেই তেমনি এই উচ্চ শিক্ষার ব্যয় সকল শ্রেণীর মানুষের নিকট সহজ লভ্য হওয়াও বাঞ্ছনীয়। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট দুটি অনুরোধ এর মাধ্যমে লেখার সমাপ্তি করব-
১. উচ্চ শিক্ষার বিকাশের বাঁধা এই কর অনতিবিলম্বে বিলুপ্ত করে শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করুন।
২. সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সম মানের এবং সুষম ব্যয়ের (সর্বনিম্ন) পড়াশুনার পরিবেশ নিশ্চিত করুন। স্বল্প ব্যয়ে উন্নত মানের শিক্ষাই হোক আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার এক দৃপ্ত শপথ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.