নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

শেখ এম উদ্‌দীন

আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।

শেখ এম উদ্‌দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

উচ্চ শিক্ষা এবং একটি দীর্ঘশ্বাস

০৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:১৯

জনাব আলম (ছদ্মনাম) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার পাট চুকিয়ে, জাপান সরকারের মনবশু বৃত্তির অর্থায়নে পি এইচ ডি ডিগ্রীর জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা করেন। জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অর্জন খুব ভালো হওয়াতে ওখানেই শিক্ষকতার প্রস্তাব পান। কিন্তু আলম সাহেবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তাঁকে এই লোভনীয় প্রস্তাবকে পায়ে ঠেলতে এক মুহূর্তও দেরী করতে দেয় নি। তিনি চাচ্ছেন জাপান থেকে গবেষণার তীর্থভূমি যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন, সেখানে ২/৩ বছর পোষ্টডক্টরাল গবেষণা করে নিজের গবেষণার ভিত্তি আরও মজবুত করবেন। পরিশেষে, এই গবেষণা লব্ধ জ্ঞান এবং নেটওয়ার্কিং কে কাজে লাগিয়ে দেশে একটি বিশ্বমানের ল্যাব প্রতিষ্ঠা করবেন। এই স্বপ্ন নিয়েই মার্কিন মূলকে তার আগমন এবং নিজের প্লান অনুযায়ী ২ বছর পরে গাঁটের পয়সা খরচ করে বাংলাদেশে কয়েকটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়েও চাকুরির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিধিবাম, তিনি তো জানতেন না অতিরিক্ত যোগ্যতা বাংলাদেশে এক ধরণের অযোগ্যতা! কারন তার পরিবর্তে ঐ বিশ্ববিদ্যালয় গুলো পি এইচ ডি ছাড়া আবার কারো কারো নামে মাত্র পি এইচ ডি আছে এমন দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিলেন। ভাইভা বোর্ডে কমন এক প্রশ্ন এত ভালো গবেষণার প্রোফাইল নিয়ে তুমি বাংলাদেশে ফেরত আসতে চাচ্ছ কেন? কেউ কেউ তো বলেই ফেললেন কোন সমস্যা আছে হয়ত! অনেকে আবার তার এস এস সি পরীক্ষার রসায়নে লেটার মার্ক না পাওয়া নিয়েও হাসা হাসি শুরু করলেন! আলম সাহেব বিষয় গুলোতে ব্যাথিত কিংবা কনফিউজড হতে লাগলেন। তিনি ভেবে পাচ্ছেন না যে এস এস সি পরীক্ষার রসায়নের ফলাফল কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হবে?

আলম সাহেবের এ দ্বিধা দূর করতে ত্রাতার মত আবির্ভূত হল সহকারি অধ্যাপক সোহেল (ছদ্ম নাম), এখানে বলে রাখা ভাল এই সোহেল সাহেব দুইবার পি এইচ ডি করতে দুইটি দেশে যেয়ে ফেরত আসার পরে এখন নিজ বিভাগেই এক অধ্যাপকের অধীনে পি এইচ ডি কোর্সে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে! সে আলম সাহেব কে বুঝিয়ে বলল যে, আসলে এই সকল প্রশ্নের উদ্দেশ্য একটাই আর তা হল আলম কে বিভ্রান্ত করে তাদের পছন্দের ক্যান্ডিডেটকে নিয়োগ দেয়া! সোহেল সাহেব আরও বলল যদি ডঃ আলম রাজি থাকে তাহলে সোহেল সাহেব নিজের উদ্দেগ্যে আলম সাহেবের জন্য লবিং করে তাঁকে কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার ব্যাবস্থা করে দিবে। আলম সাহেব এ কথার পরে খুব মনকষ্টে ভুগলেন কিছু দিন। তাঁর হিসেবেই ধরছে না যদিও সোহেল বিভাগে পজিশন ধারী কিন্তু সে যে শিক্ষকতার জন্য অযোগ্য তা তো তাঁর উচ্চ শিক্ষার রেকর্ডে প্রমানিত, তাহলে আজ আলম সাহেবকে কেন সেই সোহেলের লবিং ধরে নিজের দেশের সেবা করার একটা সুযোগ ভিক্ষা করতে হবে? এই বিষয়টি তিনি কিছুতেই মানতে পারলেন না।

এক সপ্তাহ ধরে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে তিনি হেরে গেলেন, তিনি হেরে গেলেন তাঁর বিবেকের কাছে, তিনি হেরে গেলেন বাংলাদেশের স্বজনপ্রীতি এবং দুর্জনের পৃষ্ঠপোষকতার নীতির কাছে। তিনি বুঝে গেলেন, শিক্ষাগত কিংবা গবেষণা নয় বাংলাদেশে বড় যোগ্যতা হল অন্য কিছু যা অর্জনে আলম সাহেব ব্যর্থ কিন্তু সোহেল সাহেব এ ক্ষেত্রে বিজয়ী! এই ব্যর্থতার গ্লানি মাথায় নিয়ে তিনি দেশ ছাড়লেন। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি চাকুরি নিলেন। পরবর্তীতে, মার্কিন নাগরিকত্ব নিলেন এবং এখানে তিনি এখন একটি নামকরা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একজন গুরুত্বপূর্ণ গবেষক! যার নেতৃত্বে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামকরা বিজ্ঞানীদের একটি দল নিত্যনতুন আবিষ্কারের নেশাতে বুঁদ হয়ে দিন রাত খেঁটে যাচ্ছে!

এমন আলম সাহেবের সংখ্যা অগণিত, যারা নিজের দেশকে সেবার জন্য নিজেদের সর্বস্ব বিসর্জন দিতেও প্রস্তুত। যারা শুধু চায় নিজেদের সম্মান ধরে রেখে কাজ করার অধিকার, পদলেহন ব্যাতিত নিজেদের প্রাপ্য বুঝে নেয়ার অঙ্গীকার। কাজের দ্বারা নিজেদের অধিকার আদায় করতে জানা এই মানুষ গুলো আজো দীর্ঘশ্বাস ফেলে এবং দেশে ফিরতে না পারার কষ্ট আজও তাঁদের বুকে জগদ্দল পাথরের চেপে আছে! দিনে দিনে আলম সাহেবদের সংখ্যা বিভিন্ন দেশে গুণোত্তর ধারাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই সাথে দেশে সোহেল সাহেবদের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে দেশের সকল সেক্টরে। এই অনাচারের ফলাফল হল আজকের বাংলাদেশ! এখনও সময় আছে জাতির এই সকল শ্রেষ্ঠ সন্তানদের দেশ গঠনের কাজে লাগানোর, শুধু দরকার একটু শুভ বুদ্ধি এবং সৎ ইচ্ছার। এখনও যদি এই মানুষ গুলোকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়ে জাতি স্বেচ্ছায় পঙ্গুত্ব বরন কারী বিবেক সম্পন্ন সোহেল সাহেবদের দিয়েই দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় তবে তা হবে তাসের ঘরের মতই স্থায়ী এবং অমাবস্যার চাঁদের মত দ্যুতি ছড়াবে সে উন্নয়ন।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৪৮

জাহিদ হাসান রানা বলেছেন: ওত মেধাবী কিনা জানিনা তবে মাইক্রোবায়োলজিতে পড়েও এই পথেই হাটছি।বিসিএস! লাস্ট ডিপার্টমেন্টের ভাইবায় ম্যাম উৎসাহও দিলেন বিসিএসের জন্য।আমার রেজাল্ট কি খারাপ? তাও তো না।
ম্যাম শুভাকাংক্ষী এবং সন্তানের মত ভালবাসেন তাই উনি চান যেন না ঠকে যায়।উনার এক কথা-দেখ বিসিএসের চেয়ে দেশে এখন কোন সম্মানের,ক্ষমতার,অর্থের জব নাই।
মাইক্রোবায়োলজিকে ভালবাসি।কিন্তু..

০৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:০৮

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: নাই দেশে ডুমুরই আপেল।
আমাদের দেশটাও নাই দেশ সুতরাং বিসিএসের চেয়ে সম্মান কোথায় পাবেন?
ওখানে সৎ থাকতে পারলেও তো দেশকে দেয়ার অনেক কিছু পাবেন ইন শা আল্লাহ্‌।

২| ০৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৫০

কলাবাগান১ বলেছেন: জনাব আলম যে আপনি নিজেই সেটা তো সবাই জানে...

আমেরিকায় থাকাকে জায়েজ করার জন্য দেশের সিস্টেম কে সবাই অজুহাত হিসাবে ইউজ করে...আমি নিজেই করেছিলাম... যদি ও এটাই নিয়ম বাংলাদেশে....

০৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:০৬

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ওরে ভাই আপনার চিন্তা ক্ষমতা এত প্রখর!
জনাব আলম আমার মিনিমাম ১০ বছরেরও সিনিয়র।
নিজের স্কেলে সবাইকে মাপা কি ঠিক ভাই?
প্রত্যেকেরই একটি নিজস্বতা থাকে।
ভালো থাকেন।

৩| ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:২৭

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: আপনার পোস্টটি পড়ে নস্টালজিক (স্মৃতিবেদনাতুর) হয়ে গেলাম। লিখেছেন সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা। এগুলো আসলেই সত্যি। একবিন্দু ভুল নেই কোথাও। আপনার সাথে একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আজ থেকে ৮ বছর আগে আমি ঢাবিতে লেকচারার হিসেবে আবেদন করেছিলাম। ১০০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফট। বিজ্ঞাপনে বর্ণিত শর্তাবলীর সাথে সব কিছু মিল থাকা সত্বেও তারা এমনকি আমাকে ভাইভা দিতেও ডাকলো না। তাদের পছন্দমতো একজনকে নিয়ে নিলো। ভাবি, যদি এভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়, তবে আপত্তি নেই কিন্তু বিজ্ঞাপন নাটক করার কি দরকার? আমার ১০০০ টাকা শুধু শুধু নষ্ট।

০৮ ই জুলাই, ২০১৮ ভোর ৬:৩৪

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ, শুধু কি ১০০০ টাকা যে পরিমাণ ফটোকপি করা লাগে তা নাহয় নাই বললাম। যাদের নেয়া হয় তাদের এবং তাদের চেয়ে নিম্ন মানের না হলে সাক্ষাৎকার পত্র ইস্যুই করে না!
আজ দেখলাম একজন এসোসিয়েট প্রফেসর এর টোটাল পাবলিকেশন ৪ টা তাও দুইটা ভুয়া জার্নালে, এবং একই সাথে তার পরিপূর্ণ ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর ২ এর কাছাকাছি! উনারাই আবার আমাদের আবেদন পত্র যাচাই বাছাই করেন!
কি আর করবেন?

৪| ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:৪৮

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: এরকম অনেকের সাথেই হয়েছে। আসলে এ দেশটাতে দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ঘুষের কারণে শীর্ষ পদে যারা বসে আছেন তারা এই অনিয়মগুলোকেই নিয়ম বানিয়ে ফেলেছেন। সহসা মুক্তি পাওয়ারও কোন পথ নেই। তবুও যদি কেউ কেউ রুখে দাঁড়ান তাহলে হয়তো এই চক্র থেকে বের হওয়া যাবে...

৫| ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৫৯

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
জনাব আলম, চিনেছি ওনাকে।
আলম ঠিক ছদ্মনাম না। পার্ট অবদা নেইম।

উনি এখন হিউষ্টনে থাকেন।
তিনি একটি নামকরা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একজন গুরুত্বপূর্ণ গবেষক।
বাংলাদেশে কয়েকটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়েও চাকুরির চেষ্টা করেছিলেন বলে মনে হয় না।
হয়তো ঢাবিতে একবার চেষ্টা করেছিলেন, তবে এত হতাস, আনহ্যাপি বা সিরিয়াস ছিলেন না।
কয়েকবার দেখা হয়েছিল, বাংলাদেশের অনেক গল্প হলেও ওনার মুখে এমন কোন কথা শুনিনি।

০৮ ই জুলাই, ২০১৮ ভোর ৬:৩৬

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: সবাই যদি চিনে ফেলেন তাহলে লেখকের ছদ্মনামের মাহত্য কি থাকল?
আমি যার কথা বলেছি উনি জিবনেও টেক্সাসে কোন চাকুরি করেন নাই!

৬| ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ২:০৮

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: "তবুও যদি কেউ কেউ রুখে দাঁড়ান তাহলে হয়তো এই চক্র থেকে বের হওয়া যাবে..." এই কেউ কেউ টা কে ? বা কারা ? যে বা যারা রুখে দাঁড়াবে তাঁরাই কোপানলে পড়বে। ক্ষমতার সৎ ব্যবহারই পারে অবস্থার পরিবর্তন করতে।

০৮ ই জুলাই, ২০১৮ ভোর ৬:৩৬

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: সহমত, এর পরেও চেষ্টা করে যদি রথ উল্টে দিতে পারি ক্ষতি কি?

৭| ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ ভোর ৬:৫৪

সিগন্যাস বলেছেন: বিজ্ঞান চর্চা এইদেশে সম্ভব না।কারণ স্বয়ং ঢাকার মেয়রও ডিএনএ কি সেটা জানেনা।যে দেশের সরকার ডিএনএ কি সেটা জানেনা সেদেশে কিভাবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ল্যাব বসাবেন?

০৯ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১:২৬

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: অনেক দূরে চলে গেলেন ভাই
কয়জন বায়োকেমিস্ট্রির প্রফেসর এই বিষয়ে ল্যাব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন সেটা একটু খুজলেই অত দূর যেতে হত না!

৮| ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: বিপর্যস্ত জীবনের ভেতর দিয়েও যেন টিএস এলিয়েটের মতো দেখতে পাই প্রাপ্তির নির্মল রশ্মি।

সভ্যতার মতোন তোর আর জীবনের ধ্বংস নেই!

৯| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৬:২০

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: লেখাটি প্রথমআলোর দূরপ্রবাসে পাতাতে প্রকাশিত হয়েছে আজ।
https://www.prothomalo.com/durporobash/article/1553691

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.