নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

শেখ এম উদ্‌দীন

আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।

শেখ এম উদ্‌দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষা এবং শিক্ষক ও একটি জাতির গল্প (৪)

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৫৭

লেখাটি প্রথম আলোর দূরপ্রবাসে পাতাতে প্রকাশিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাথেই বলে দেয়া আছে এখানে যে জ্ঞান বিতরণ করা হবে তা হতে হবে বিশ্বমানের, কারন এ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের নিজকে প্রমানের লড়াইটা কেবল দেশের গণ্ডীতে সীমাবদ্ধ না থেকে বিস্তার লাভ করবে সারা বিশ্বে! লড়াই যখন একই থানাতে থাকে, তখন একটি থানা বা উপজিলা থেকে আমাদের সময় বড়জোর ১০ জন বৃত্তি পেত। তাঁদেরকেই ধরে নেয়া হত ঐ থানার উক্ত ব্যচের শ্রেষ্ঠ মেধাবী। এই বৃত্তি প্রাপ্ত মেধাবীদের মধ্যে ২০-৩০% হয়ত দেশের প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেত। ৫০-৬০% পরবর্তী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বাকি ১০-২০% হয়ত এইচ এস সি এর পরে পড়াশুনা বাদ দিত কিংবা আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য উপজেলা লেভেলে ডিগ্রী কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স কোর্সে ভর্তি হয় বা হত। আবার অনেকের অর্থ থাকলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ভর্তি হয়। এর মধ্যে একটা বড় অংশ যারা ঐ রকম বৃত্তি প্রাপ্ত না হয়েও ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। কারন বিশ্ববিদ্যালয়ের (স্নাতক পর্যায়ের) ভর্তি পরীক্ষাটি হল বিগত ৪ বছর (নবম থেকে দ্বাদশ) শ্রেণীর বইয়ে পঠিত বিষয়গুলোর জ্ঞানের ভিত্তি (বেসিক) মূল্যায়নের এক সুন্দর ছাকুনি। যে ছাকুনি দিয়ে সহজেই বেসিকে গণ্ডগোল থাকা ভালো ফলাফল কিংবা খারাপ ফলাফল ধারীগণ বাতিল হয়ে যায়। এতো চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় নামক এক মহাজ্ঞানের কারখানাতে প্রবেশ করানো হয়।

এই মহাজ্ঞানের কারখানাতে একটি গ্রামের ছেলে প্রথমেই যে ধাক্কাটি খায় তা হল লেকচার থেকে শুরু করে সব ইংরেজিতে পড়তে হয় অথচ অনেকের নিকট ইংরেজি ছিল এক ভয়াবহ আজাবের নাম। মজার বিষয় হল এই ধাক্কা সামলাতে তাঁকে ক্লাসরুমে কিংবা বাইরে কোন প্রকার সাহায্য করতে আমরা দেখি নাই। অধিকন্তু, এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাঁকে নানা ভাবে অপমান অপদস্ত করতে একটুও পিছপা হন না অনেক শিক্ষক মহোদয় গণই! ফলে গ্রামের শিক্ষার্থীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরে, একদল হাল ছেড়ে দেয় আরেক দল দাত কামড়ে বলে দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ের কি জ্ঞান আছে যা আমি জানতে পারব না! প্রথমোক্ত দলের অনেকেই ফেল করে ভর্তি বাতিল হয় কিংবা বহু কষ্টে একটা সার্টিফিকেট নিয়ে ছোট খাট কোন চাকুরি করেই জীবনের সকল স্বাদ আহ্লাদ পূরণ করার আরেক সংগ্রামে নেমে পরে। আর দ্বিতীয় দল তাঁদের যুদ্ধ চালিয়ে যায় অন্তত নিজেদের প্রমান করতে যে আমার খারাপ ফলাফলের পিছনে আমার চেয়ে আমাকে যারা পথ প্রদর্শন করেছেন তাঁদের অবদান অনেক বেশী। উদাহরণ স্বরূপ, এর প্রমান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন ছাত্র যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব পিছনের দিকের ফলাফল করেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী হিসেবে এখন কর্মরত আছেন তাঁর তুলনা দেয়া যেতে পারে। এমন উনি না, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর উদাহরণ টানলে আরও হাজারো ব্যক্তিকে নিয়ে আসা যাবে। এই সকল উদাহরণ গুলো আমাদের সিস্টেমের দুর্বলতার দিকে আঙুল তুলে, এই আঙুল ভেঙ্গে কিংবা মচকে দিতেই পারেন কিন্তু এই মচকানোর মাধ্যমে প্রমান করা যাবে না যে সিস্টেমের ফাঁক গলে অনেক শিক্ষকতাতে অনিচ্ছুক ব্যাক্তি শিক্ষক হিসেবে ঢুকে পরছেন! ফলে বিগত তিন স্তরের জমে থাকা জঞ্জাল মুক্ত হওয়া তো দূরে থাক অনেক ক্ষেত্রে নিত্য নতুন জঞ্জাল যুক্ত হতেও দেখা যায় প্রতিনিয়ত! ফলাফল আবু বকরদের লাশগুলোর চেয়ে বড় কোন প্রমান দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন কি?

উন্নত দেশের, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গণের ক্লাস নেয়া, নিজে কিছু ক্লাস পরিচালনা করা এবং লেকচার তৈরির সুযোগ আমার হয়েছিল। জাপানে আমার পি এইচ ডির সুপারভাইজর ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে তিনবার তিনটি ২ ঘণ্টার ক্লাস নিতেন। ঐ ২ ঘণ্টার ক্লাসে পড়ানোর জন্য উনি প্রায় ক্লাসের এক সপ্তাহ পূর্বে ঐ বিষয়ের সর্বাধিক নতুন বিষয় গুলো অন্তর্ভুক্ত করে নিজের লেকচার তৈরি করতেন। এর পরে ঐ লেকচার আমাদের/আমার সামনে প্রদর্শন করে আরও কিছু অন্তর্ভুক্তি কিংবা কোন ব্যাখ্যা কঠিন হয়ে গেল কিনা তা জানতে চাইতেন। আমরা কোন কিছু বুঝতে অসুবিধা হলে ঐ স্লাইডে আরও সহজ কিছু উদাহরণ যুক্ত করেই তবে ওসাকা যেতেন। এটা যে বছরে তিনবার নেয়ার জন্য করতেন তা নয়, উনি হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস গুলোও এভাবে নিত্যনতুন ভাবে তথ্য সম্পন্ন করেই পরিচালনা করতেন। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম একই টপিকে প্রতিবছর আলাদা চিত্র দিয়ে বুঝাতে হবে কেন তোমাকে? উত্তরে বললেন “কোন শিক্ষার্থী যদি এই কোর্সে আগের বছর ফেল করে পুনরাবৃত্তি করে তাহলে তাঁর কাছে যেন আমার লেকচার বোরিং না হয়ে যায়!” আর আমাদের কোন শিক্ষার্থী কিছু না বুঝলে প্রশ্ন করলেই অনেক ক্ষেত্রে যা হয় তা ভুক্তভুগি মাত্র সবারই জানার কথা!

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর তুলনামুলক নবীন এবং খুব আনকোরা একটি বিষয় (এ বছর রসায়নের নোবেল পুরুস্কার প্রাপ্ত একটি টপিক) পড়াতেন। এই দুই প্রজন্মের এবং দুই দেশের দুইজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের একটি বিষয় কিন্তু একেবারেই মিল ছিল আর তাহল শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে সহজ ইলাস্ট্রেশন ব্যবহার করত নিজেদের লেকচারকে সর্বোচ্চ প্রাণবন্ত করে ফুটিয়ে তোলা। যেহেতু টেনিউর ট্রাকের প্রফেসরগণ ফান্ডিং নিয়ে অনেক বেশী ব্যাস্ত থাকেন সেহেতু মাঝে মাঝেই ঐ ফিল্ডের সবচেয়ে নতুন পেপারটি খুঁজে তার মূলবিষয় গুলো খুঁজে দিতে হত। একটি ক্লাসের অন্তত এক সপ্তাহ আগেই তিনি ফাইনাল করে ফেলতেন ঐ ক্লাসে কি পড়াবেন। সে অনুযায়ী চলত ঘষামাজা এবং নিত্য নতুন উদ্ভাবনী টেকনিক। এই দুই উদাহরনের সাথে আমার একজন ছাত্রের, যে বর্তমানে কোন এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, দেয়া একটি বক্তব্য তুলে ধরব। তুলনা করার দায়িত্ব সম্মানিত পাঠকবৃন্দের। আমার এই ছাত্র আমার উৎসাহে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, একদিন সে বলল, অনেক স্যার কি যে পড়ায় তা বুঝতে বুঝতেই ১০ টার মত লেকচার চলে যায়, এ পর্যন্ত একজনও বলল না এই টপিক করে কি লাভ হবে, কেউ কেউ তো বোর্ড পূর্ণ করে লিখেই জিজ্ঞেস করে কি বুঝলা? আমরা যদি সব বুঝেই যেতাম তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে বাসাতে বসে গ্রাজুয়েশন করলেই হত, তাই নয় কি স্যার! উত্তর দিতে পারিনি কারন উত্তর জানা নাই তা নয়, তবে ওকে আমি আশাহত করতে চাই নি। বলেছি যে কজনা ভালো ভাবে ক্লাস নেন উনাদের থেকে শিখে নিবে আর এমন করেই আমরাও পড়াশুনা করে এসেছি সুতরাং তোমাকেও পারতে হবে। এর চেয়ে ভালো কিছু বলতে পারি নাই, কারন ছাত্র হিসেবে দুইটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করেছি, কিন্তু ওর এই কোথাগুলোকে ডিফেন্ড করার মত নৈতিক সমর্থন আমি কোন অবস্থাতেই মনে করতে পারছিলাম না।

সবাই কি এমন, উত্তরটা হবে ‘না’ তবে এমনের সংখ্যাই এখন অধিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানেই তাঁকে জ্ঞানের সংশ্লেষণ করত সহজিকরন করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে, অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস অনেকেই চোথা কিংবা সেই ১৯৬০ সালের বইয়ের জ্ঞান বিতরণ করেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন, বিশ্ব মানের জ্ঞান বা প্রক্রিয়া তো নির্বাসনে চলার উপক্রম। আর গবেষণার বিষয় নাই বা তুললাম। এঁদের মধ্যে যে কজনা আবার একটু চেষ্টা করেন উনাদের বসার রুম থেকে চেয়ার সব নিয়েই চলে নির্দয় রাজনৈতিক খেলা। মরার উপর খরার ঘা নিয়ে তো এই মহামান্য রাজাদের নীতির নীতি ভ্রষ্টতা রয়েছেই, যা অনেক কে নিজের দায়িত্বের নুন্যতম না পালন করত উহাকে সমাজে সবচেয়ে পূজনীয় ব্যক্তিতে রূপান্তরিত করার এক পরশ পাথর হয়ে জাতির বুকে জগদ্দল পাথরের মত ঝাপটে বসে আছে। যার ভারে জাতি আজ নিঃশ্বাস নিতে নাভিশ্বাস উঠিয়েও কুল পাচ্ছে না। তাহলে কি এই সকল সমস্যাই রয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতে? এর সহজ কোন সমাধান কি আমরা পেতে পারি? হয়ত পারি, কি পারি তা দেখব শেষ পর্বে। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের এই বাঁধাগুলো অতিক্রমের উপায় হিসেবে আপনার কোন পরিকল্পনা থাকলে জানান নিচের ইমেইলে। সবাই মিলেই খুজব এই মহামারীর সহজ সমাধান গুলো আগামী পর্বে। অপেক্ষা করব এ লেখা প্রকাশের সময় থেকে দুই সপ্তাহ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৫২

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: জি অবশ্যই। যথাযথ বলেছেন।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৪:৪৫

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:১২

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৫:২৪

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:৫৫

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.